-----------------------------------
সৈয়দ আবদাল আহমদ
-----------------------------------
বাংলাদেশের নন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভালো নেই। দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, শীর্ষ এই রাজনীতিক গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। দুইবার তার হাঁটুতে অপারেশন হয়েছে। তার চোখেও অপারেশন করতে হয়েছে। এমন শারীরিক অবস্থায়ও তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দু’বছরের বেশি সময় জেলে কাটাতে হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারী দেখা দেয়ায় গত বছরের ২৫ মার্চ তাকে জেল থেকে শর্তযুক্ত মুক্তি দেয়া হয়। শর্ত দেয়া হয় — তাকে বাসাতেই থাকতে হবে, বিদেশে যেতে পারবেন না।
এরই মধ্যে এপ্রিল ১১, ২০২১ তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। কিছু দিন পর সিটিস্ক্যান করে দেখা যায়, তার ফুসফুসে ৫ শতাংশ সংক্রমণ রয়েছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী ছিলেন বাসাতেই চিকিৎসা নিয়ে তিনি সেরে ওঠবেন। কিন্তু ২৭ এপ্রিল অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় মে ৩, ২০২১ খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসায় গঠিত ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছে, তার করোনা পরবর্তী বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, ফুসফুসে তরল জমা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকা এবং কিডনিতে বিষাক্ত রক্ত জমা। এ পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের অনুমতি চাওয়া হয়। খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ৫ মে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে একটি আবেদন করেন।
সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছিল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক খবর হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। যদিও খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে পাসপোর্ট নবায়ন করা, ভিসার জন্য যোগাযোগ করা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমতি লাভ ও হাসপাতালের সাথে কথা বলা হচ্ছিল। তাকে লন্ডন অথবা সিঙ্গাপুরে নেয়ার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছিল।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। গত শুক্রবার জুমাতুল বিদার নামাজে তার রোগমুক্তি কামনায় দেশব্যাপী মসজিদে মসজিদে দোয়া করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার অগণিত ভক্ত, বিএনপির নেতাকর্মী এবং দেশের মানুষ সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ছিল। সরকারের নেতিবাচক সিদ্ধান্তে দেশের মানুষ হতাশ হয়েছে।
কারাভোগের বেশির ভাগ সময়ই তাকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্যাঁতস্যাঁতে কক্ষে থাকতে হয়েছে। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। আজ তার অবস্থা এমন হয়েছে যে, হাসপাতালে তিনি জীবনের কঠিন সময় পার করছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতির এক অনন্য, সাহসী নাম খালেদা জিয়া। দেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে। তাদের কাছে তিনি ‘দেশনেত্রী’। খালেদা জিয়াও দেশকে ভালোবাসেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে বন্দিশিবিরে ছিলেন। স্বামী মুক্তিযোদ্ধা বীরোত্তম জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর জনগণের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে আসেন। অবতীর্ণ হন এক সংগ্রামী জীবনে। ৯ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এরপর ১৯৯১ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। যমুনা সেতুর মতো বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তিনি পরিচালনা করেছেন। আজ দেশে নারীর জাগরণ হয়েছে। লাখ লাখ মেয়ে শিক্ষায় এগিয়ে এসেছে। এতে তার অবদান রয়েছে। মেয়েদের জন্য তিনিই প্রথম উপবৃত্তি চালু করেন। প্রথমে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত, পরে এসএসসি পর্যন্ত। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার একটি পা গুরুতর অসুস্থ। আপামর জনসাধারণ চাচ্ছে তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অধিকার থেকে খালেদা জিয়া আপনি বঞ্চিত হয়েছেন। মহান আল্লাহই আপনার ভরসা। আপনার করোনা নেগেটিভ হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসবেন।
খালেদা জিয়ার জননী, জন্মভূমি!
১৯৯১ সালের ১৩ জুলাই তারিখটি কখনোই ভুলব না। এ দিনটিতেই সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। এর আগে বহুবার তার সাক্ষাৎকার আমি নেই। তবে এই সাক্ষাৎকারটি একান্তই ছিল খালেদা জিয়ার ‘দেশ ভাবনা’ নিয়ে। একসময় তিনি ছিলেন একজন সাদামাটা গৃহিণী। এরপর এলেন রাজনীতিতে। অল্পদিনের মধ্যে হলেন জননন্দিত নেত্রী, যাকে জনগণ ‘দেশনেত্রী’ উপাধিতে ভূষিত করে।
স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে আপসহীন থাকার জন্য তার উপাধি হয় ‘আপসহীন নেত্রী’। স্বৈরশাসনের অবসানের পর দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে হন প্রধানমন্ত্রী। দেশের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। এই দেশকে নিয়ে তার আছে অনেক স্বপ্ন। সে কথা জানতেই সে দিন প্রবেশ করি প্রধামন্ত্রীর কক্ষে।
আমার সাথে একান্তে কথা বলার আগে খালেদা জিয়া কথা বলছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের সাথে। পাশের সোফায় বসে আমি নিয়াজ মোর্শেদের সাথে তার আলাপচারিতা শুনছিলাম। নিয়াজের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গৌরব কেমন করে বাড়ানো যায়। নিয়াজ তাকে জানালেন, খেলাধুলায় আমরা সহজেই ভালো করতে পারি। দাবা ও সাঁতারে রয়েছে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা। দাবায় জিয়া ও রিফাতের মতো কয়েকজন তরুণ গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার যোগ্যতা রাখে। দেশে ওদের আর খেলাধুলার কিছুই নেই। ওদের এখন বিদেশে খেলতে হবে। কিন্তু ওরা বিদেশে খেলতে পারছে না। মুহূর্তেই দেখলাম বিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন খালেদা জিয়া, কেন? নিয়াজ বলেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। এরশাদ শাসনামলে দাবাকে অবহেলা করা হয়েছে। এখনো দাবা অবহেলিত। অবাক হলেন খালেদা জিয়া। বললেন, এ ঘটনা তো আমি জানি না। ঠিক আছে এখন আর অসুবিধা হবে না। অলিম্পিক দাবা থেকে তুমি ফিরে এলে আমরা একসাথে বসব। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী খোকাকেও ডাকব। সব ঠিক হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সম্মান বাড়াতেই হবে।
তার স্বপ্ন তখনই জানা হয়ে গেল। দেশের সুনাম কিভাবে আসবে, কিভাবে আসবে সমৃদ্ধি- বুঝতে পারলাম এটাই চান খালেদা জিয়া।
নিয়াজের পর মুখোমুখি হলাম খালেদা জিয়ার। দীর্ঘদিন নিরলস সংগ্রামের পর অবিস্মরণীয় বিজয়ের জন্য প্রথমেই তাকে অভিনন্দন জানালাম। তিনি জানালেন ধন্যবাদ। এরপর বললেন, আপনারা তো এই ৯ বছরে অনেক ইন্টারভিউ নিয়েছেন। আর কিছু বলার আছে! তাকে বললাম, একজন ব্যক্তি খালেদা জিয়ার ইন্টারভিউ নেইনি। আমরা এবার তার কথা জানতে এসেছি। জানতে এসেছি তার স্বপ্নের কথা। হো হো করে হেসে উঠলেন। বিনয়ের সাথে বললেন, আমাকে মাফ করুন। আমি অপারগ। আপনারা আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন।
বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের একজন সাধারণ গৃহবধূর মতোই রীতিনীতি অনুসরণ করেন খালেদা জিয়া। মাথায় কাপড়। গায়ে জড়ানো ওড়না। রঙে দুয়ের মধ্যে চমৎকার মিল। চোখে চশমা। মুখে অফুরন্ত হাসি। সব মিলে এক মধুর ব্যক্তিত্ব। ‘তোমার কাজের চেয়ে তুমি মহান- এরকম কিছু বলা যায়’।
প্রথমেই জানতে চাইলাম তার স্বপ্নের কথা। বললেন, ‘স্বপ্ন ছাড়া কি মানুষ আছে। প্রত্যেক মানুষেরই কিছু না কিছু স্বপ্ন থাকে। আমার স্বপ্ন এই মানুষের চেয়ে আলাদা নয়। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে এই বাংলাদেশের সর্বত্র আমি ঘুরেছি। দেখেছি মানুষের সমস্যা। দেখেছি ভাঙা সেতু, ভাঙা রাস্তা। মানুষের সাথে কথা বলে জেনেছি তাদের স্বপ্নের কথা। তারা শান্তি চায়, মঙ্গল চায়। চায় সাধারণভাবেই বেঁচে থাকতে। এই দেশ, এই মাটি, এই মানুষ আমার খুব প্রিয়। যেদিন দেখব, এই দেশের উন্নতি হয়েছে, মানুষগুলো সুখী হয়েছে, সে দিন ওদের স্বপ্নের সাথে অংশীদার হতে পারব আমি। আমার স্বপ্ন এদের চেয়ে বিচ্ছিন্ন নয়।’
জানতে চেয়েছিলাম তার নিজের সম্পর্কে, তার পছন্দ অপছন্দের কথা। বললেন, "গত ৯ বছর রাজপথে ছিলাম। তবে এখন আমি যেখানেই থাকি না কেন, আমি সেই আমার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করছি না এবং মনেও করছি না। একজন মা, একজন বোন হিসেবে সাধারণ পরিচিতি আমার বেশি পছন্দ। জনগণের সাথে থাকতে, জনগণের বন্ধু হয়ে থাকতে আমার বেশি পছন্দ। কেননা, মানুষের জীবন আর জীবনের ঘটনাই যে আমাকে বেশি আকর্ষণ করে।"
তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আন্দোলনের বিজয়কে তিনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন। বললেন, “আমি যখন জনগণের হয়ে রাজপথে নেমেছি, তখন থেকেই আমি এ কথাই বলেছিলাম, অন্যায় এবং যেকোনো অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। আমার বিশ্বাস ছিল, এ দেশের মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং অন্যায়কে সবসময় প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই সে জন্য আমরা জনগণকে সাথে পেয়েছিলাম এবং তাদের সহযোগিতায় বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। আগামী দিনে আমরা নিশ্চয়ই জনগণের সে আশা-আকাঙ্খা অর্থাৎ গণতন্ত্র, যে গণতন্ত্র ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ ছিনিয়ে নিয়েছিল, যা আমরা পুনরুদ্ধার করেছি এবং ইনশাআল্লাহ আমরা আশা রাখি এ দেশ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারব।”
এরশাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই বললেন, “জানেন। আমরা ধ্বংস্তূপ থেকে শুরু করেছি। এরশাদ সব ছারখার করে দিয়ে গেছে। সারা বাংলাদেশ ঘুষ আর দুর্নীতি ছড়িয়ে দিয়েছিল এরশাদশাহী। বাংলাদেশে উৎপাদনের নামে বিদেশী ঋণ-এনে সেগুলোকে দেশের কাজে না লাগিয়ে ব্যয় করেছিল দলীয় ও ব্যক্তিগত কাজে। বাংলাদেশের মানুষকে করেছে ঋণগ্রস্ত আর নিজেরা হয়েছিল টাকার মালিক, কোটিপতি। তার সময় ব্যাংকগুলোতে লুটপাট হয়েছে। আর্থিক অনিয়ম চরম আকার ধারণ করেছে। দেশ ভরে গিয়েছিল চোরাকারবারিতে। বিচার বিভাগ, শিক্ষাসহ এ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল মানুষের আজন্ম লালিত মূল্যবোধ। এই ছিল এরশাদশাহীর রাজত্ব।”
একজন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। হেসে বললেন, “আমার জনপ্রিয়তা দলের নেত্রী হিসেবেই এবং দল আছে বলেই। আন্দোলনের দীর্ঘ আট বছর এবং নির্বাচনের সময় হাজার হাজার জনসভা করেছি। রাত ৩টা-৪টা পর্যন্ত বক্তৃতা করেছি। শুধু আমরা জনপ্রিয়তার জোরে নয়, সংগঠনের কর্মীরা লোকজন ধরে রাখতে পেরেছে বলেই।”
দেশ গঠনে আপনার কর্মসূচি কী? খালেদা জিয়া বললেন, “আমরা শহীদ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচির আলোকে উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়েছি। জিয়ার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার অঙ্গীকার আমাদের রয়েছে। আমরা বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছি। চালু করেছি অবাধ বাজার অর্থনীতি। বেসরকারি খাতে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে আমরা কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। আমাদের শিল্পনীতি ইতোমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে। দুর্নীতি নির্মূলে আমাদের নীতি সুস্পষ্ট। পররাষ্ট্র নীতিতে আমরা বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। সবচেয়ে বড় কথা, এ দেশের মানুষের কল্যাণে আসে এমন কাজই আমরা করতে চাই। এ জন্য আমরা আবার চাইব জনগণের সহযোগিতা। যে সহযোগিতা তারা আমাদের আন্দোলনের সময় করেছেন, নির্বাচনের সময় করেছেন।”
একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেমন লাগছে? মুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন খালেদা জিয়া। বললেন, “প্রধানমন্ত্রী পুরুষ হলে তাকে কি আপনারা পুরুষ প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন করেন?’ আমি লজ্জিত হয়ে পড়লাম। তিনি তা বুঝতে পেরে আবার হেসে বললেন, দেখুন- প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীই। সেখানে মহিলা বা পুরুষ বলে কোনো কিছু নেই। মহিলা এবং পুরুষ মিলেই এই দেশ। এই দেশের উন্নতির জন্য মহিলা-পুরুষ একজন আরেকজনের পরিপূরক। আমি মহিলাদের যেমন প্রধানমন্ত্রী তেমনি পুরুষদেরও। মহিলা-পুরুষ নিয়েই এই দেশটাকে নির্মাণ করতে হবে।”
শহীদ জিয়াউর রহমানের কথা কি আপনার মনে পড়ে? মুহূর্তের মধ্যেই দেখলাম খালেদা জিয়া আনমনা হয়ে গেলেন। দীর্ঘ ২১ বছর জিয়ার সাথে কাটিয়েছেন। তাকে মনে পড়বে না? কত ঝড়-ঝঞ্ঝা গেছে দু’জনের ওপর। একজন আরেকজনকে আগলে রেখে মোকাবেলা করেছেন এগুলো। সেই জিয়াকে মনে পড়বে না? একজন সৈনিক জিয়ার স্মৃতি, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি, একজন রাষ্ট্রনায়ক জিয়ার স্মৃতি, সর্বোপরি একজন উদার মনের স্বামীর স্মৃতি কি ভোলা যায়? না, কোনো দিন ভোলা যায় না। জিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া প্রায়ই ছুটে গেছেন জিয়ার মাজারে। যখনই কোনো বিপদে পড়েছেন, চলে গেছেন জিয়ার মাজারে। খুশির খবর এসেছে, চলে গেছেন জিয়ার মাজারে। গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর তিনি জিয়ার মাজারে গিয়ে মোনাজাত করেছেন, ফুল দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গিয়েছেন জিয়ার মাজারে। নির্বাচনের বিজয়ের পরও তিনি গিয়েছিলেন জিয়ার মাজারে। সেই জিয়ার কথা মনে পড়বে না?
খালেদা জিয়া বললেন, “শহীদ জিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে তার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য কাজ করছি। দোয়া করবেন।”
প্রিয় বাংলাদেশ সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, “নিজের দেশের সবটুকু জানার মধ্যে গর্ব আছে। আছে অনাবিল আনন্দ। আমাদের পাহাড়ের চূড়ায় আছে স্বচ্ছ পানির সরোবর আর চোখ জুড়ানো হ্রদ। সুন্দরবনের মতো বিরল অরণ্য। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। কুয়াকাটা সৈকতে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাই সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য। আর আমরা সমৃদ্ধ নিজস্ব সংস্কৃতিতে। এসব কিছু মিলিয়ে অপরূপ আমাদের বাংলাদেশ।”
দেশকে নিয়ে যার এমন গর্ব তার পক্ষেই এ দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা সম্ভব।
লেখক — সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক