Search

Thursday, January 31, 2019

বেগম জিয়াকে মুক্ত করাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ — শামসুজ্জামান দুদু


কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু। বৃহস্পতিবার ৩১ জানুয়ারি, রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষকদলের বর্ধিত সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

দুদু বলেন, ‘আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আনা। বেগম জিয়াকে মুক্ত করা এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরে আনাই হলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এই দুটি পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই কেবল মাত্র দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসবে।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,‘আমাদের মাঝে হতাশা যেমন আছে, তেমনি সম্ভবনার পথও আছে। হতাশা থেকেই সম্ভবনার পথ উন্মুক্ত হয়। কৃষকদল সুশৃংঙ্খল সংগঠন, আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই, আমাদের এই ঐক্যকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে।’

বর্ধিত সভায় কৃষক দলের সহ-সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, নাজিম উদ্দীন আলম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তকদির হোসেন, মো. জসিম, জামাল হোসেন মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী, সহ-দফতর সম্পাদক এসকে সাদী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ সেলিম হোসেন, আলিম হোসেন, বংশাল থানা কৃষকদলের সভাপতি আব্দুর রাজি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে দুর্নীতির ভয়াবহ রূপ প্রকাশ হচ্ছে না — রুহুল কবির রিজভী


প্রকাশিত রূপের চেয়ে দুর্নীতির মাত্রা আরও ভয়াবহ বলে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতির মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত বলে সব তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে না। কেবল টিআই-ই নয়, ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি গত সোমবার বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে শুধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর গত ১০ বছরে পাচার হয়েছে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই দুর্নীতির টাকা আওয়ামী ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকেরাই পাচার করেছে। সুতরাং তথ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে ডেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে পারবেন না।’

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ৩১, সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেসব্রিফিং এর পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল -

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন যে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মতোই আগামী উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে সাহায্য করে তিনি বড় ধরণের অপরাধ করার পরেও তাঁর ঐ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সাম্প্রতিক কালের সেরা রসিকতা করলেন । প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার’রা নিজেদের জীবন কোন মূল্যবোধের ওপর গড়ে তোলেন নি। তারা নিজেদের জীবনে মনুষ্যধর্মকে বিসর্জন দিয়েছেন। তারা ভোটের আগের দিন রাতে জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স পূরণের তদারকি করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কতিপয় কমিশনারবৃন্দ নিজেদের জীবন গড়ে তুলেছেন ভোটারবিহীনভাবে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার জন্য। তারা মূলত: আওয়ামী লীগের ইচ্ছায় নির্বাচন-ব্যবস্থা ধ্বংস করার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। মন্ত্রীসভা ও সংসদ বহাল রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে তারা দাবি করেছেন। অথচ এটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দুরে থাক, বরং এটি খানা-খন্দে ভরা মাঠ, সেই বিষয়টি দেখেও নির্বাচন কমিশন তা উপেক্ষা করেছে। তারা ন্যুনতম সুষ্ঠু একটি নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে দিলেন না আওয়ামী সরকারের মোসাহেবী করতে গিয়ে। 

এদের দ্বারা অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রকৃত জনরায়ের প্রতিফলন ঘটানোর দিন শেষ হয়ে গেল। সুতরাং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে এটি সুষ্পষ্ট হলো যে, এই কমিশনের তদারকিতে উপজেলা নির্বাচনগুলোও ভুয়া ভোটের নির্বাচনেরই মহৌৎসবে পরিণত হবে। অর্থাৎ নির্বাচনের আগের রাতেই একই কায়দায় সরকার মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হবে। এবারে নির্বাচন কমিশনের জন্যই ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রাণসংহারী হয়ে উঠেছিল, কারণ নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততায় মহাভোট ডাকাতিতে লিপ্ত পুলিশ প্রশাসন ও সরকারী দলের ক্যাডার’রা উৎসাহবোধ করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত ঝরেছে ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকদের। সুতরাং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে চেয়েছে কিন্তু সুষ্ঠু করতে নয়। ভোট ডাকাতির সাক্ষ্য-প্রমান তারা নিজেরাই রেখে দিয়েছে। 

সাংবাদিকবৃন্দ,
ঐতিহ্যগতভাবেই জনরায়ের প্রতি আওয়ামী লীগের অবজ্ঞা। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী দু:সহ অপশাসনের এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী করে, যাতে তারা সবসময় প্রতিপক্ষের প্রতিশোধ আশঙ্কায় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশকে বন্ধ করে দেয়। মূলত: আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মানবিকতার কোন স্থান নেই। ‘রক্তপাতময় রাজনীতি’ই এদের স্বভাবধর্ম। সব যুগেই এরা নির্বাচনে ভোট ডাকাতির সাথে সহিংসতা ও খুন জখমের পদ্ধতি অবলম্বন করে। দখল, হরণ ও প্রাণঘাতি প্রবণতাই আওয়ামী রাজনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি। খোঁড়া অজুহাতের আশ্রয় নিয়ে তারা বিরোধী দলকে কারাগারে প্রেরণ করে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দিয়ে এরা বিচার ব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে ফেলেছে।

বন্ধুরা,
২৯ ডিসেম্বরের রাতের নির্বাচনে গঠিত ভুয়া ভোটের সরকার আরও জোরালোভাবে রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগকে একই কেন্দ্রের অধীন করলো। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য ক্ষয় হতে হতে এখন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিরোধী দল, মত ও বিশ^াসের ওপর চলছে টার্গেটেড দমন-পীড়ণ। নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সংকুচিত হতে হতে এখন নি:শেষিত হয়ে জনগণকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্বে এসে উপনীত হয়েছে। রাষ্ট্রের মেশিনারিজ ভুয়া ভোটের সরকারের অনুকুলে এখন বিভৎস চেহারায় জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ‘এক ব্যক্তি, এক দল’ নীতির বেপরোয়া আস্ফালন জনগণকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। জনগণকে পরাধীন করে এখন আওয়ামী লীগ উপনিবেশ কায়েম করেছে। দেশে এখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, মানুষ নিজের ছায়া দেখলেই চমকে উঠে।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
গতকাল তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর রিপোর্ট বিএনপি’র আমলে সঠিক ছিল, এখন মনগড়া।’ আসলে তথ্যমন্ত্রী যেন তথ্যযন্ত্রী। তিনি তার তথ্যযন্ত্রের মাধ্যমে এমন তথ্য দেন, তাতে শুধু দেশবাসীই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও স্ববিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়ে। টিআই এর রিপোর্টে বাংলাদেশের দুর্নীতি বেড়েছে, এটি স্বীকার করে নিলে তো তথ্যমন্ত্রীর মন্ত্রীত্ব থাকে না। এজন্য টিআই-এর রিপোর্টের বিরুদ্ধে তাকে অপ-তথ্য দিতে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতির মাত্রা ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত বলে সব তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে না। কেবল টিআই-ই নয়, ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি’ গত সোমবার বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে-শুধু ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর গত দশ বছরে পাচার হয়েছে পাঁচ লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা দুর্নীতির টাকা এবং এই টাকা আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকেরাই পাচার করেছে। সুতরাং তথ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে ডেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে পারবেন না।

কর্মসূচিঃ-
‘গণতন্ত্রের মা’, বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে অন্যায়ভাবে কারান্তরীণ নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৯ শুক্রবার বেলা ২টা সোহরাওয়াদী উদ্যানে বিএনপি’র উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারীর জনসভা সাফল্যমন্ডিত করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে প্রস্ততি গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।    
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

‘ওপরের উনি সব দেখছেন’


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শ্যামপুর গ্রামের বর্গাচাষি মিলন মিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁর নামে দেওয়া হয়েছে নাশকতার মামলা। আগাম জামিন নিতে ঢাকা এসেছেন তিনি। গতকাল হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে।  ছবি: আশরাফুল আলম

  • নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জেলায় গায়েবি মামলা হয়েছে 
  • জামিনের জন্য মানুষ এখন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন
  • মামলার আসামিদের অনেকের বয়স ষাটের বেশি
  • অভিযোগ—মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার


সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স চত্বরে ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য ঘিরে দলে দলে ভাগ হয়ে জামিনের জন্য অপেক্ষা করছেন ‘আসামি’রা। একেক জেলার একেক দল। যশোর জেলার দল থেকে বেরিয়ে আবু বকর মোল্লা বললেন, ‘আমার বয়স এক কম আশি। আমি নাকি ভোটকেন্দ্র দখল করেছি।’

ওই দলে আবু বকর মোল্লা সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ। চোখে ভালো দেখেন না। শীতকালে বার্ধক্যজনিত কষ্ট বাড়ে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মামলার যন্ত্রণা। তবে বৃদ্ধ বয়সে ছেলেকে সঙ্গে পাচ্ছেন। কারণ, একই মামলায় তাঁর একমাত্র ছেলে আবু হানিফাও আসামি। আর সঙ্গে পাড়া–প্রতিবেশী আছেন অনেক। হয়েছিল কী? আবু বকর মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, কীভাবে কী হলো কিছুই বুঝতে পারছেন না। তিনি শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। যখন তিনি ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছি, তখন হঠাৎ গুলির শব্দ শোনেন। ভোট না দিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে। হঠাৎ শোনেন, তিনি ও তাঁর ছেলে দুজনেই ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি।

হাইকোর্ট চত্বরে গতকাল আবু বকর মোল্লার কথা শেষ হতে না হতেই ষাটোর্ধ্ব আরও তিন–চারজন ব্যক্তি জটলা থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের একজন আবু তালেব খান। তাঁর বিরুদ্ধেও ভোটকেন্দ্রে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগ। বললেন, ‘এজাহারে সব অভিযোগই আছে। যেসব নিয়ে হামলা কইরেছি বলে বলছে, সেসব তো চোখে দেখিনি। এখন মামলার কাগজে দেখছি। ককটেল, গুলি আরও কী কী সব।’

এই মানুষগুলোর বড় অংশই এলাকায় চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকাছাড়া। তাঁদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত চটপটে ও অল্প বয়স্ক কয়েকজন জানান, যশোরের মনিরামপুর থেকে এক মামলায় ৪০ জন, যশোর সদরের দুই মামলায় ১৫০ জন, অভয়নগরে ৭৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শার্শা উপজেলাতেও একই ধরনের মামলায় আসামি অনেক। তবে তাঁরা সংখ্যা বলতে পারেননি।

এই ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা কতটুকু? যশোর জেলার পুলিশ সুপার মঈনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁদের সম্পৃক্ততা আছে বলে মনে হয়েছে। সে কারণেই মামলা হয়েছে। তদন্তে তাঁদের অপরাধ প্রমাণিত না হলে নাম বাদ যাবে।

যশোর জটলায় বৃদ্ধদের সঙ্গে আলাপের ফাঁকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকজন এলেন। বাহাত্তর বছর বয়সী মো. আবদুল হাইয়ের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া। মামলা কিসের জানতে চাইলে বলেন, ‘কইতারি না গো। মামলার পরও বাড়িতেই রইসি। পুলিশের পাশ দিয়া গেছি। চিনছেও না। তাও আইসি। হগলে জামিনের কথা কইতাছে।’

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আবদুল আজিজ ওরফে আজিজ মুন্সি শুধু নিজেই মামলার ঝামেলায় জড়িয়েছেন তা নয়, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে প্রায় অচল মানুষ শামসুল হককে। শামসুল কানেও ভালো শোনেন না। দু–একটি কথা চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করতে জবাব দেন তিনি, তারপর থেমে যান। তাঁর হয়ে আজিজ মুন্সিই কথা বলছিলেন। তাঁদের মামলায় আসামি ৫১ জন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঘাটাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলার। যে মানুষ নড়তেচড়তে পারেন না, অত দূরে গিয়ে তিনি হামলা করবেন কীভাবে?

বৃহত্তর ময়মনসিংহ জটলা থেকে জানা গেল, আইনজীবীর খরচ, বাড়ি থেকে আদালতে আসা, থাকা–খাওয়ার খরচ সবাই মিলে বহন করছেন। কিন্তু শামসুল হকের জন্য খরচটা বেশি। তিনি বাসে যাতায়াত করতে পারেন না। তাঁর জন্য আট হাজার টাকা খরচ করে মাইক্রোবাস ভাড়া করতে হয়েছে। ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন বয়সের মানুষগুলোর মতো এই বৃদ্ধরা কয়েক দিন ধরে আদালত চত্বরে ন্যায়বিচারের আশায় ঘুরছেন। হাতে টাকা নেই, বেশির ভাগের পরনে জীর্ণ পোশাক, পায়ে চপ্পল, দিন কাটে মুড়িমাখা বা বাদাম খেয়ে। তবু আশা, জামিন নিয়ে বাড়ি ফিরে নিজের বিছানায় ঘুমাবেন। ফেরার সময় ঘাটাইলের আজিজ মুন্সি বললেন, ‘দোয়ার দরখাস্ত রাখলাম। এক বিন্দু অপরাধ করি নাই। ওপরের উনি সব দেখছেন।’
  • প্রথম আলো/ জানু ৩১, ২০১৯ 

আন্দোলনের শাস্তি ঢালাও ছাঁটাই!


সাভারের নিট এশিয়া কারখানার এক শ্রমিক কালের কণ্ঠকে যখন চাকরি হারানোর কথা বলছিলেন, তাঁকে দেখাচ্ছিল একই সঙ্গে হতাশ ও আতঙ্কিত। নিজের নাম প্রকাশ করতেও রাজি হননি সদ্য সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এই শ্রমিক। চাকরি খোয়ানোর সকালটির স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, “অফিসে গেলে আমাকে অফিসের গেটে আটকে দেওয়া হয় এবং দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়। তখন আমার সাথে আরো কয়েকজন ছিল। পরে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে কার্ডটি রেখে দিয়ে বলে, ‘চলে যাও। আর কখনো কারখানায় আসবা না।’” 

একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান সাভারের আরেক কারখানা এআর জিন্সের অন্য এক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘শুধু ছাঁটাই নয়, আমাদের নামে মামলাও করেছে কারখানার মালিক। পুলিশ বাড়িতে গিয়ে গিয়ে খুঁজছে।’

চলতি মাসের শুরুতে ত্রুটিমুক্ত নতুন মজুরি ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনকারী হাজারো শ্রমিক এভাবেই চাকরি থেকে বরখাস্ত কিংবা হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে তথ্য মিলছে। তৈরি পোশাক শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে ফিরলেও বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের নোটিশ ঝুলছে বলে দাবি শ্রমিক নেতাদের। একজন নেতা দাবি করেন, এই পর্যন্ত সাভার-আশুলিয়ার ১২ থেকে ১৫টি তৈরি পোশাক কারখানায় প্রায় দেড় হাজার শ্রমিককে এই ছাঁটাইপ্রক্রিয়ায় কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। অনেক কারখানার গেটে ঝুলছে ছাঁটাইয়ের নোটিশ। 

কোনো কোনো সূত্র মতে, ছাঁটাই বা মামলার শিকার শ্রমিকের সংখ্যা সাত হাজারেরও বেশি। শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক সংগঠন এবং পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রও এমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করছে। এমনকি আরো ছাঁটাই এবং কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছে খাতসংশ্লিষ্টরা। গত মঙ্গলবার ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনেও বলা হয়, মজুরি নিয়ে আন্দোলনের পর বাংলাদেশের পোশাক খাতের পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক তাদের কর্মস্থল থেকে বহিষ্কার হয়েছে। দেশের শ্রমিক নেতাদের দাবি এই সংখ্যা সাত হাজারেরও বেশি। তাঁরা বলছেন, মালিকরা শ্রমিকদের ঠকাতে এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করতেই দমন-পীড়ন-নির্যাতন ও ছাঁটাই করছেন। মালিকরাও অস্বীকার করছেন না ঘটনা, তবে তাঁরা বলছেন, ছাঁটাই নয়, সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে।

আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার এআর জিন্স প্রডিউসারের জেনারেল ম্যানেজার র‌্যাক লিটন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের ছাঁটাই করিনি। আমরা তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের প্রতিষ্ঠানে মোট ১৪৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে শ্রমিকদের কাছে ডাকযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠানো হয়েছে। এই নোটিশের উত্তর পাওয়ার পর কোন শ্রমিক কাজ করতে পারবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং আইনিভাবে যে সিদ্ধান্ত হবে আমরা সে সিদ্ধান্তই  গ্রহণ করব।’

সাভার ও আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, এখন পযন্ত ১১টি পোশাক করাখানা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করেছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মতো আটক রয়েছে।

সাভার মডেল থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, কোনো নিরপরাধ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়নি, হবেও না। কারখানা ভাঙচুর বা অন্য কোনো গুরুতর অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

গামেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, মালিকরা জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। মজুরি না বাড়াতে এই দমন-পীড়ন, ছাঁটাই ও নির্যাতন করছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিককে ছাঁটাই করেছেন মালিকরা। রাজধানীর লোমান ফ্যাশন ও লোপা গার্মেন্ট বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। অথচ অন্যদিকে মালিকদের রপ্তানি আয় বাড়ছে, বড় বড় কারখানার সংখ্যাও বাড়ছে। সিএম (কাটিং ও মেকিং) কমাতে না পারলেও শ্রমিকদের মজুরি কম দিতে নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে।

এদিকে রাজধানীর কাকরাইলের ইয়লক গার্মেন্টের অপারেটর রিনা আকতার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো অনুসারে একজন হেলপারের বেতন আট হাজার টাকা হলেও তিনি গত ডিসেম্বর মাসে অতিরিক্ত কাজের মজুরিসহ মোট বেতন পেয়েছেন মাত্র সাত হাজার টাকা। সরকারের ঘোষিত মজুরি দেওয়ার দাবি জানালে মালিক তাঁকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।

রামপুরার লোমান ফ্যাশনে কাজ করেন চায়না আকতার। তিনি জানান, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে বেতন দেন না কারখানার মালিক। নতুন কাঠামোতে মজুরি দাবি করলে মালিক কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন নিয়মিত।

শ্রমিক অধিকার নিয়ে সক্রিয় সংগঠন ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশের (আইবিসি) সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নিয়ে আন্দোলনের পর শ্রমিকরা কারখানায় ফিরে যেতে চাইলেও তা পারছে না। অনেক কারখানার ফটকে গিয়ে দেখে, তাদের ছবিসহ চাকরিচ্যুত কর্মীদের তালিকা টাঙিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সাভার ও আশুলিয়া থানায় বিভিন্ন কারখানার পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলোয় আসামি করা হয়েছে হাজার হাজার শ্রমিককে।

নতুন মজুরি পোশাকশিল্প খাতে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে মত দিয়ে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সংশোধিত নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে মজুরি দেওয়ার সক্ষমতা নেই অনেক পোশাক কারখানার মালিকদের। ফলে মালিকরা বিভিন্ন আগাম সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছেন, মজুরি নিয়ে যেন সামনে শ্রম অসন্তোষ তৈরি না হয়। এর ফলে কারখানা থেকে অতিরিক্ত শ্রমিক কমিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়াসহ শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সবাইকে শ্রম আইন মেনেই তা করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

মামলার তথ্য দিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু (কে এম মিন্টু) কালের কণ্ঠকে বলেছেন, কারখানায় ভাঙচুরসহ মারপিট করে ক্ষতিসাধন, চুরি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বেশ কিছু কারখানা মালিক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের দেওয়া তথ্য মতে, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও উত্তরা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি শ্রমিক নেতা জয়নাল আবেদীন, উত্তরা আঞ্চলিক নেতা মাসুদ, সাজুসহ ৪০-৫০ জন শ্রমিক গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে সাভার-আশুলিয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২০-২৫ জন। হাজার হাজার শ্রমিক গ্রেপ্তার অতঙ্কে আছে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের অনেক নেতা পুলিশের নজরদারিতে আছেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে।
  • kalerkontho/ jan 31, 2019 

Wednesday, January 30, 2019

আওয়ামী লীগ নেতার সুদের ফাঁদে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার


সুদখোর আওয়ামী লীগের মৎস্যজীবী লীগ নেতার ঋণের জালে পড়ে নিঃস্ব গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর শতাধিক পরিবার। নিয়মিত সুদের টাকা না দেওয়ায় মারধর, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান রাসেলের ‘প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন’ সংস্থা নামে একটি সমিতি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তাদের এ অবস্থা।  সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে তা বাড়ে।  সেই টাকা দিতে না পারলে ঘরের আসবাবপত্র, গরু, ছাগল ও ভ্যান যা পায় নিয়ে যায়। করা হয় মিথ্যা মামলাও।

পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর ও নয়াবাজার গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিম্নআয়ের ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। স্থানীয়দের অভিযোগ, জীবিকার প্রয়োজনে তারা চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয় দাদন ব্যবসায়ী ও উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি রাসেলের  ‘প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন’ সংস্থার কাছ থেকে। এক হাজার টাকায় মাসিক ২০০ টাকা সুদ দিতে হয়। এই সুদ কেউ দৈনিক বা সপ্তাহে দিতে সম্মত হয়ে সাদা কাগজে সই করে। দিন বা সপ্তাহে কিস্তির টাকা দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়ে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, টাকা পরিশোধ করলেও অনেক সময় নির্যাতন, অত্যাচার করা হয়। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন জানার পরও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের দৌরাত্ম  বেড়েছে।

তারা আরও জানায়, কিস্তি দিয়ে মাস শেষে টাকা পরিশোধ না করলে প্রথমে হুমকি দেওয়া হয়।এরপর ঘরের মালামাল, গরু-ছাগল নিয়ে যায়। এছাড়া মারধরসহ নির্যাতন করা হয়। সুদের টাকা দিতে না পেরে অনেকে ভিটেমাটি ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে গেছে। টাকা দিতে না পারায় মনিরুজ্জামান ও তার পরিবার কয়েকজনের নামে তাদের বাড়িতে ডাকাতির মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।








সুদখোর আওয়ামী লীগ নেতা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান রাসেল

ভুক্তভোগীদের কয়েকজনভুক্তভোগী সাহেদ মিয়ার অভিযোগ, ‘অভাবের কারণে রাসেলের কাছে দৈনিক কিস্তিতে ১০ হাজার টাকা নেই। কিছুদিন ঠিকভাবে কিস্তি দেওয়ার পর হঠাৎ কিস্তি দিতে পারিনি। কিস্তির টাকা না পেয়ে রাসেল নানাভাবে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে রাসেলের মা আমাকে আটক করে মারধর করে।’

মিজবুল আকন্দ নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রথমে রাসেলের কাছে ছয় হাজার টাকা নেই। দুই মাস কিস্তি দিয়ে ছয় হাজার টাকার লাভ দেই ১২০০ টাকা। পরে আবারও ছয় হাজার টাকা নেই। কিছুদিন কিস্তি দিতে না পারায় রাসেলের মা আরজিনা বেগম আমাকে বেদমভাবে মারধর করে আহত করেন।’

আঙ্গুরা নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘ব্যবসার জন্য রাসেলের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেই। সুদে আসলে মিলে তাকে প্রায় দেড় লাখ টাকা দেই। এরপর তার কাছে আর টাকা না নেওয়ায় বারবার রাসেল হুমকি দিয়ে বলেন, কেন টাকা নিবি না? টাকা নিলেও হুমকি দেয়, না নিলেও দেয়। তাদের অত্যাচারে ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে পারেন না।’ বিষয়টি দ্রুত প্রতিকারের দাবি করেন তিনি।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সমিতি বা দাদন ব্যবসার সঙ্গে আমি ও আমার পরিবার জড়িত নয়। মূলত আমার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং হেয় করতে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা।’

ভুক্তভোগীদের কয়েকজনএ বিষয়ে মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মনীতি তোয়াক্কা না ভুয়া সমিতির নামে সুদখোর মহাজনের সুদ ব্যবসার বিষয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে রাসেল বাড়িতে ডাকাতির মিথ্যা অভিযোগও করছেন। যা তদন্তে ইতোমধ্যে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।’ তবে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও প্রশাসনের নিকট দাবি জানান তিনি।

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি বলেন,  ‘রাসেলের  সুদের ব্যবসার অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের সত্যতাও পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত রাসেলের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগও মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাউল হোসেন বলেন,  সমবায় সমিতির বাইরে এবং অনুমোদন ছাড়া কেউ ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তারপরেও কেউ সমিতির নাম ব্যবহার করে বা ব্যক্তিগত সুদ ব্যবসা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • বাংলা ট্রিবিউন/ জানু ২৯, ২০১৯ 

গায়েবি মামলা — আতর বিক্রেতা ‘প্রতিবন্ধী’ ইউসুফের নামে নাশকতার ১১ মামলা!









আতর বিক্রেতা ইউসুফ আলী (ডানে)।

তালাবদ্ধ ছোট্ট কাঠের বাক্স। দৈর্ঘ্য দুই হাত, প্রস্থ এক হাত। বাক্সের পাশে রাখা একটা কাঠের টুল। লোহার শিকল দিয়ে বাক্সের সঙ্গে টুলটি বাঁধা। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় প্রায় তিন মাস ধরে এভাবে পড়ে আছে বাক্স-টুল। এর মালিক ইউসুফ আলী (৫৪) নাশকতার ১১ মামলায় এখন কারাগারে। ২৫ বছর ধরে তিনি বায়তুল মোকাররম এলাকার হকার। আতরসহ নানা জিনিস বিক্রি করেন। ইউসুফের বয়স যখন ১০ বছর, তখন তিনি ট্রেন দুর্ঘটনায় বাঁ হাত হারান। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি ভাতাও পাচ্ছেন ইউসুফ।

ইউসুফের স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, সেদিন ছিল শনিবার (৩ নভেম্বর, ২০১৮)। সকালে দোকানে যান তাঁর স্বামী। বেলা দুইটার পর মোবাইল ফোনে খবর পান, তাঁর স্বামী ইউসুফকে বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গেছে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। থানায় যাওয়ার পর পুলিশ তাঁকে জানায়, নাশকতার মামলায় তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার অংশ হিসেবে সরকারবিরোধী নাশকতামূলক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগের মামলায় ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ আদালতকে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে ইউসুফের নাম বলা হয়েছে—ইউসুফ ওরফে হাতকাটা ইউসুফ।

ইউসুফের স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, আইনজীবীরা বলছেন, ১১টি মামলায় আলাদা আলাদা জামিন নিতে হলে অনেক টাকা লাগবে। একটি মামলায় জামিনের জন্য কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সে হিসাবে দুই লাখ টাকার বেশি লাগবে, যা খরচ করার সামর্থ্য তাঁদের নেই। তাই স্বামী কবে মুক্তি পাবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না।

নাশকতার একটি মামলায় [মোহাম্মদপুর ৫৪ (৯) ১৮] পুলিশ অভিযোগ করেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে মোহাম্মদপুর থানার বছিলার শাহজালাল হাউজিং ১ নম্বর রোডের মাথায় খালি জায়গায় ইউসুফ আলীসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ–সংগঠনের ২০০ থেকে ২৫০ জন নেতা-কর্মী জড়ো হন। নির্বাচন বানচাল করার জন্য নাশকতামূলক কার্যকলাপ ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রে অংশ নেওয়ার জন্য গোপন সভার জন্য সেখানে তাঁরা একত্র হন।

বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় পড়ে আছে ইউসুফের বাক্স-টুল।

আদালত ও আইনজীবী সূত্র বলছে, গত বছরের ৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইউসুফকে মোহাম্মদপুর থানার ১১টি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলাগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে করা।

ইউসুফের আইনজীবী মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইউসুফের বাঁ হাত নেই। তিনি একজন অ্যাজমা রোগী। হাতে তাঁর সব সময় থাকে নেবুলাইজার। এমন একজন বয়স্ক শারীরিক প্রতিবন্ধী অসুস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ এতগুলো হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে জেলে ভরে রেখেছে। কোনো রাজনীতির সঙ্গে ইউসুফ জড়িত নন।

মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন জানান, ইউসুফ জামিন আবেদন করেছেন একাধিকবার। কিন্তু জামিন হয়নি তাঁর।

ইউসুফের মুক্তি চান 

ইউসুফ থাকেন মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লার বস্তিতে। গত শনিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে পাওয়া গেল ইউসুফের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে। ছোট্ট ঘর। এই ঘরে স্ত্রী আর ছয় বছরের ছোট্ট মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে থাকেন ইউসুফ।

মনোয়ারা বললেন, তাঁর স্বামী ইউসুফ কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। দিন এনে দিন খান। তাঁর আয়ে সংসার চলে। অথচ পুলিশ বিনা দোষে তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করে একের পর এক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে। 

মনোয়ারা ইউসুফের দ্বিতীয় স্ত্রী। আগের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ১২ বছর আগে তিনি মনোয়ারাকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে আছে তিন ছেলে আর দুই মেয়ে। 

ইউসুফের মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার মোহাম্মদপুর থানার ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বাবা ইউসুফ রাজনীতি করেন না বলে দাবি ইয়াসমিনের। তিনি বলেন, তাঁর বাবা বহু বছর ধরে বায়তুল মোকাররম এলাকায় ব্যবসা করেন। তিনি কোনো দিন দেখেননি, তাঁর বাবা ইউসুফ বিএনপির কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। মিথ্যা মামলায় তাঁর বাবাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইউসুফ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি ভাতা পান বলে জানান তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।

তবে একটি মামলার বাদী মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে যদি দেখা যায় ইউসুফ নির্দোষ, তাহলে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

ইউসুফকে অনেক আগে থেকে চেনেন চান্দু হাওলাদার। ইউসুফের মোহাম্মদপুরের বাসার সামনের চান্দুর দোকান। তিনি বলেন, ইউসুফ আওয়ামী লীগের সমর্থক। কোনো রাজনীতি করেন না। বায়তুল মোকাররম এলাকায় হকারি করেন। 

গত রোববার দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের নিচতলার গিয়ে ইউসুফের ছোট্ট দোকানের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যবসায়ী এনামুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ বছর ধরে চেনেন ইউসুফকে। অনেক আগে থেকে ইউসুফ বায়তুল মোকাররম এলাকায় ব্যবসা করে আসছেন। তিন মাস হলো ইউসুফের দোকান বন্ধ আছে। শুনেছেন, রাজনৈতিক মামলায় ইউসুফ কারাগারে আছেন।

ইউসুফের দোকানের বাঁ পাশের দোকানদার মনির হোসেন। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে তিনি চেনেন ইউসুফকে। তাঁকে তিনি ভালো মানুষ হিসেবে জানেন।

ইউসুফের স্ত্রী মনোয়ারা জানান, স্বামী জেলে যাওয়ার পর থেকে পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, যতবার তাঁর (স্বামী) সঙ্গে দেখা হয়েছে, ততবার স্বামী দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে তাঁকে বলেছেন, বিনা দোষে আর কত দিন তাঁকে জেল খাটতে হবে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী ইউসুফের মুক্তি দাবি করেন মনোয়ারা। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে সুমাইয়া রোজ রাতে বাবার কথা মনে করে কান্নাকাটি করে।’

শারীরিক প্রতিবন্ধী ইউসুফের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ইউসুফের বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন।
  • প্রথম আলো/ জানু ৩০, ২০১৯ 
  • https://goo.gl/yJx42w

বাংলাদেশের একটি কলঙ্কময় দিন আজ — ড. মঈন খান


একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ায় আজকের ৩০ জানুয়ারি, বুধবার দিনটিকে বাংলাদেশের একটি ‘কলঙ্কময়’ দিন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। তিনি বলেন, এই দিনে এমন একটি সংসদ বসতে যাচ্ছে, যে সংসদের সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি নয়, তারা বিনা ভোটের প্রতিনিধি।

বুধবার, ৩০ জানুয়ারি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ভুয়া ভোটের’ সংসদের প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু করার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি।

মঈন খান বলেন, আমরা এটা বলবো না ৩০ তারিখে (৩০ ডিসেম্বর) নির্বাচন হয়েছে। এটা বলবো, ২৯ তারিখ রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আজকে এই সংসদ গঠন করা হয়েছে। এটা আমার কথা নয়, এটা বিশ্বের বড় বড় মিডিয়ার কথা। তারা বলেছে, বাংলাদেশে এটা কোনো নির্বাচন হয়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট ডাকাতি হয়েছে মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, একাদশ সংসদ কোনো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ১১ ডিসেম্বর (২০১৮) প্রথম প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে এই সংসদ গঠন করা হয়েছে। যারা ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছে তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। তারা সন্ত্রাসের প্রতিনিধি। এই নির্বাচন দেশের ১৭ কোটি মানুষ মেনে নেয়নি, নেবেও না।

এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, আমরা দাবি করছি আগামীতে সত্যিকারের জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটি সংসদ গঠিত হোক। এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে তার নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদের যৌথ সঞ্চালনায় মানববন্ধনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এছাড়া যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
  • জাগো নিউজ / জানু ৩০, ২০১৯ 

গণতন্ত্রকে ধংস করে ৭৫’র মতো দখলদারিত্বের সংসদ গঠন করেছে — মির্জা আলমগীর


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দেশের জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে গণতন্ত্রকে ধংস করে দিয়ে এই রাষ্ট্রকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার সকল ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করেছে। ১৯৭৫ সালে তারা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ধংস করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ঠিক একই কায়দায় আজকে তারা জনগণের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একদলীয় দখলদারিত্বের সংসদ গঠন করেছে।’

বুধবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে প্রথম সংসদ অধিবেশন বসার প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। 

নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনের সাথে সাথে ফলাফল প্রত্যাখান করেছি। তখনই আমরা বলেছিলাম, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের রায়ের মধ্যে দিয়ে একটি সরকার গঠন করতে হবে। আজকে আমরা আবার তারই পুনরাবৃত্তি করছি। আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেখানে জনগণ যেন সুষ্ঠুভাবে তাদের রায় দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে একটা সংসদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। গত ৩০ ডিসেম্বর একটি ভোট ডাকাতির ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ ভোট ডাকাতির মধ্যে দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করে দখলদারি সংসদ ও দখলদারি সরকার বসিয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই নির্বাচনের পূর্বে থেকেই জনগণ যেন অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছে। প্রায় এক বছর আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একইভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।’

দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ যাদের মিথ্যা মামলায় আটক রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমরা আহবান জানাতে চাই সকল দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের অধিকার, ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংসদকে বাতিল করে একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সরকার গঠনের আহবান জানাচ্ছি। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।’

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, মোর্তাজুল করিম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, আকরামুল হাসান, বিলকিস জাহান শিরিন প্রমুখ।

মানববন্ধন পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ।
  • ব্রেকিংনিউজ/৩০ জানুয়ারি ২০১৯ 
  • https://www.breakingnews.com.bd/bangla/type/politics/article/92724

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে প্রায় ৫০০০ গার্মেন্ট শ্রমিক চাকরিচ্যুত

এএফপি’র রিপোর্ট


বাংলাদেশে এ মাসে বেতন বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ধর্মঘটে যোগ দেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে তা সহিংস হয়ে ওঠে। এ ধর্মঘটে যোগ দেয়ার কারণে নিম্ন বেতনভুক্ত এসব শ্রমিকের প্রায় ৫০০০ জনকে চাকরিচ্যুত করেছেন কারখানার মালিকরা। বিশ্বের বিভিন্ন ব্রান্ডের পোশাক সেলাই করতেন এসব শ্রমিক। মঙ্গলবার এসব তথ্য দিয়েছে পুলিশ। সারাদেশে গার্মেন্ট কারখানায় কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক কয়েক দিনের এ ধর্মঘট, প্রতিবাদে কারখানা ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এতে ৩০০০ কোটি ডলারের এ শিল্পে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ওই প্রতিবাদ বিক্ষোভে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে।

ঢাকার উপকণ্ঠে আশুলিয়া হলো এ শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। সেখানে বড় বড় খুচরা ক্রেতাদের জন্য পোশাক সেলাই করা হয়। সেখানে সংঘর্ষে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন।

পুলিশ বলেছে, প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলাকালে লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগে কয়েক হাজার শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো অভিযোগ করেছে, এ শিল্পে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখন পর্যন্ত ৪৮৯৯ জন শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। একটি কারখানা থেকেই বরখাস্ত করা হয়েছে কমপক্ষে ১২০০ শ্রমিককে। তাদের বেতন মাসে ৯৫ ডলার থেকে শুরু হয়ে আরো উপরে। কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বলছে, বরখাস্ত করা শ্রমিকের বাস্তব সংখ্যা আরো অনেক বেশি, যা ৭ হাজারের কাছাকাচি। এ ছাড়া আরো একশত শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন স্বপন বলেছেন, অনেক শ্রমিক কাজে ফিরতে ভয়ে আছেন। তিনি বলেন, অজ্ঞাত ৩০০০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে পীড়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শ্রমিক কারখানায় না যাওয়াকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন। 
বাংলাদেশে রয়েছে ৪৫০০ তৈরি পোশাক কারখানা। এতে কাজ করেন ৪১ লাখ শ্রমিক। চীনের পরেই এ দেশটি সারা বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ। বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই আসে এই পোশাক বিক্রি থেকে। তাই এই শিল্প উল্লেখযোগ্য শক্তি রাখে।

শ্রমিকদের ধর্মঘট বন্ধ করতে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশ। তবে ওই ধর্মঘট মাত্র তখনই শেষ হয় যখন সরকার বেতন সামান্য বৃদ্ধি করতে রাজি হয়। এই বৃদ্ধি এতটাই সামান্য যে, কোনো কোনো শ্রমিকের জন্য তা মাসে মাত্র কয়েক সেন্ট (১০০ সেন্ট সমান এক ডলার)। সোমবার আমস্টার্ডাম ভিত্তিক শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংগঠন ক্লিন ক্লোথস ক্যাম্পেইনের বেন ভ্যানপেপোরস্ট্রেইটি বলেছেন, প্রকৃত সত্য হলো সাম্প্রতিক সংশোধনীর পরও বাংলাদেশের এসব শ্রমিক এখনও খুবই কম মজুরি পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের ভীতি প্রদর্শনেেক বেছে নিয়েছে এবং তাদের যেকোনো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাকে দমন করছে। 
  • মানবজমিন / ৩০ জানুয়ারি ২০১৯
  • http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=157086

৯০,০০০ বন্দির মানবেতর জীবন

মানবজমিন অনুসন্ধান


এক ব্যক্তির ঘুমানোর স্থানে ঘুমাচ্ছে দুই থেকে তিন জন। শীতের রাত যেন এক একটি বছর। কাঁথা নেই, কম্বল নেই। মশারি নেই। দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে কাটে প্রতিটি রাত। শৌচাগারে দীর্ঘ লাইন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েও অমানবিক দুর্ভোগ। মামলায় হাজিরা দিতে গেলে দিনভর থাকতে হয় না খেয়ে।

‘রাখিব নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ’ স্লোগানে চলা দেশের কারাগারগুলোর চিত্র এটি। ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দি নিয়ে চলা কারাগারগুলোতে যেন সমস্যা আর সংকটের শেষ নেই। বাড়তি বন্দির কারণে বাড়তি সমস্যা। অসুস্থ হলেও চিকিৎসা পেতে পোহাতে হয় ঝক্কি। হাসপাতালে নিতে গেলে প্রহর গুনতে হয়। এম্বুলেন্স সংকট। কারাগারে থাকা বন্দিদের বেশির ভাগেরই সাজাপ্রাপ্ত না। তারা সত্যিকার অর্থে অপরাধী কি-না তাও প্রমাণ হয়নি। বন্দিদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক মামলার আসামি। 

আর একক মামলা হিসেবে মাদকের মামলার আসামি মোট বন্দির এক-তৃতীয়াংশের বেশি। অনেকেই বন্দি হয়েছেন ‘গায়েবি’ মামলায়। জামিন হলে কেউ কেউ মুক্ত হচ্ছেন। যাদের জামিন হয়নি তারা প্রহর গুনছেন মুক্তির। সারা দেশে রয়েছে ৫৫টি জেলা কারাগার ও ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার মিলে মোট ৬৮টি কারাগার। কারাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার ৬শ’ ৬৪ জন। কিন্তু ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ, তিন গুণ বন্দি থাকেন কোনো কোনো কারাগারে। স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ সংখ্যক বন্দি ছিল গত বছরের শেষদিকে। গত সোমবারের হিসাব অনুসারে সারা দেশে কারাগারে বন্দি রয়েছে ৯১ হাজার ৭শ’ ৪২ জন। তার আগের দিন রোববারে এই সংখ্যা ছিল ৯২ হাজার ১শ’ ৭৭ জন। এর মধ্যে মাদক মামলার আসামি ২৯ হাজার ৬৩ জন। নারী আসামি ৩ হাজার ৩ শ’ ৩২। গত ডিসেম্বরে কারাবন্দির সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ। 

কারা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের আগস্ট মাস থেকেই সারা দেশে কারাবন্দির সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। তাদের বেশির ভাগই নাশকতা, বিস্ফোরক ও আইনি কাজে বাধার অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার। আগস্টে সারা দেশে বন্দি ছিল ৮৩ হাজার ৫ শ’ ৬ জন। সেপ্টেম্বর মাসে বন্দির সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ৯ শ’ ৭৫ জন। বন্দির সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় তখন চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ লঘু অপরাধে আটক প্রায় ৭ হাজার জনকে মুক্তি দেয়া হয়। তারপরও বন্দির সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। অক্টোবরে ওই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫ হাজার ৬শ’ ২৫ জনে।  ঢাকা বিভাগের ১৭ কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১১ হাজার ৩৪২ জনের। গত আগস্টে এসব কারাগারে বন্দি ছিল ২৮ হাজার ৩শ’ ৪৯ জন। নভেম্বরে বন্দির সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬শ’ জনে।

এই বিপুল সংখ্যক বন্দিকে মানবিক সুবিধা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কারা কর্তৃপক্ষ। দেশের অনেক কারাগারে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। শীতের রাতে ঘরের বাইরেও থাকতে হয়েছে বন্দিদের। কাঁথা জুটে তো বালিশ জুটে না। নিচের বিছানার জন্য কম্বল জুটলেও গায়ের উপরে কম্বল জুটছে না। এসব কম্বলকে ব্যবহার অনুপযোগী বলছেন বন্দিরা। এভাবেই কাটছে বন্দি জীবন। কারা ইতিহাসে বন্দির বালিশ ছিল না। গত নভেম্বর থেকে কারাবন্দিদের মধ্যে বালিশ বিতরণ করা হচ্ছে। খাবার নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত কারাবন্দিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে দেয়া হয় পুরনো আটার একটি রুটি ও ছোট এক টুকরো গুড়। দুপুরে নিম্নমানের চালের ভাত, পাতলা ডাল ও সবজি। রাতে সবজি ও মাছ। সপ্তাহে একদিন গরু ও মুরগির মাংস দেয়া হয়। 

জেল থেকে বের হয়েছেন এমন বন্দিদের অভিযোগ, সপ্তাহে একদিন মাংস দেয়া হলেও বেশির ভাগের পাতে যায় শুধু  ঝোল। আর মাংস পেলেও বোঝা যায় না তা কিসের মাংস। 

জুনায়েদ মিয়া নামের কারামুক্ত একজন জানান, কারাগারের খাবার খাওয়ার মতো না। মনে হয় সিদ্ধ সবজি, যেন মসলাহীন রান্না। এমনকি লবণও ঠিকমতো  দেয়া হয় না। সাধারণ কারাবন্দিদের এভাবেই থাকতে হয়। তবে টাকা ব্যয় করলে আছে ভিন্ন ব্যবস্থা।

বিকাল ৫টা থেকে ৫টা ৩০ মিনিটের মধ্যে কয়েদিদের রাতের খাবার সরবরাহ করা হয়। যাদের আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যাওয়া হয় তারা বঞ্চিত হন কারাগারের খাবার থেকে। তারা কারাগারে পৌঁছানোর আগেই খাবার বিতরণ শেষ হয়। 

কারামুক্ত ইকবাল চৌধুরী জানান, তাকে একটি ‘গায়েবি’ মামলায় ধানমণ্ডি থেকে গত বছরের ১০ই ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। স্থান হয় কেরানীগঞ্জে কারা ওয়ার্ড পদ্মায়। কারাগারের কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, রাত গভীর হলে বাড়ে শীতের তীব্রতা। কাঁপতে থাকেন বন্দিরা। বয়স্কদের অবস্থা করুণ। ফ্লোরে ঢালাও বিছানায় ২০ জনের স্থানে ৫০ জনকে ঘুমাতে হয়। প্রায় জড়াজড়ি অবস্থা। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসেরও উষ্ণতাও শীতের প্রভাবকে মুক্ত করতে পারে না। ঘুমের ঘোরে শীত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই পাশের ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরেন। ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হন অনেকে। সর্দি-কাশি, জ্বর লেগেই থাকে। একটি ওয়ার্ডের ৪৫-৫০ জনের জন্য একটি মাত্র  শৌচাগার। দিনে-রাতে লাইন লেগেই থাকে। রাতের গভীরেও কেউ না কেউ থাকেন সেখানে। করাগারে কী দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন বন্দিরা। দিনটা  যেমন তেমন কাটে, রাতটা দুঃসহ। শীতের রাতে গরম কাপড়, কম্বল বলতে কিছু নেই। 

অনেকেই বাইরে থেকে কম্বল কিনেছেন। কিন্তু দরিদ্র বন্দিদের করুণ অবস্থা। কেঁপে-কেশে রাত কাটে তাদের। পাশে শুয়ে অন্য কারও কম্বলে আশ্রয় নেন তারা। একে তো শীতের কষ্ট সেই সঙ্গে আছে মশার উপদ্রব। সারারাত মশার কামড়। সহজে ঘুম আসে না। এই অবস্থায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা চিকিৎসক জানান, কারাগারে থাকা কয়েদিরা প্রায়ই চুলকানি জাতীয় চর্মরোগ, পুষ্টিহীনতা, শ্বাসকষ্ট, শারীরিক দুর্বলতা, মনোবিকৃতির মতো জটিলতায় ভোগেন। তবে হঠাৎ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে। কারাগারে রয়েছে চিকিৎসক ও এম্বুলেন্স সংকট। দেশের ৬৮টি কারাগারে রয়েছে মাত্র আট জন চিকিৎসক ও ১১টি এম্বুলেন্স। এমনকি বন্দির সংখ্যা লাখ ছুঁয়ে গেলেও বন্দিদের সেবা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জনবল সংকট রয়েছে। 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক কারাগার পরিস্থিতি নিয়ে মানবজমিনকে বলেন, ৪০ হাজার বন্দির স্থানে রাখা হচ্ছে ৯০ হাজারেরও বেশি লোককে। এতে তাদের  মৌলিক অধিকার রক্ষার সুযোগ থাকছে না। বন্দিরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারাগারের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। সেখানে পানির অভাব আছে, বন্দিরা রোগাক্রান্ত হচ্ছেন। জায়গার অভাবে বন্দিরা পালাক্রমে ঘুমাচ্ছেন। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।  দণ্ডপ্রাপ্তদের সংশোধন করতে কারাগারে নানা ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে ইমাম আছেন, বই পাঠের জন্য লাইব্রেরি আছে। এমনকি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে। 

এতকিছুর পরও আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে কারাগারে মরণনেশা মাদক ঢুকছে। মাদক কারাগারে ঢোকার সুযোগ থাকলে অনেকক্ষেত্রেই সংশোধনের আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যাবে। এসব বিষয়ে অবশ্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে জানান তিনি।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারা বিভাগে ১২ হাজার ১শ’ ৭৩টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১ হাজার ৫শ’ ৮৯টি। এসব বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন মানবজমিনকে বলেন, নানা সংকটের মধ্য দিয়েই সেবা দিচ্ছে কারাকর্তৃপক্ষ। শীতে যাতে কারাবন্দিদের কষ্ট না হয় এজন্য অতিরিক্ত ২৫ ভাগ কম্বল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কারাগারে ঘরের বাইরেও অনেক বন্দির রাতযাপন সম্পর্কে তিনি বলেন, বন্দির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। দু’একটি কারাগারে স্থানের সমস্যা হয়েছে। এটা স্থায়ী কোনো সমস্যা না। 

  • মানবজমিন/ ২০১৯, বুধবার 
  • http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=157085

Tuesday, January 29, 2019

সৃজনশীলতা হারিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত এনসিটিবি

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মূল কাজ হচ্ছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রম নিয়ে গবেষণা ও সৃজনশীল বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া। অথচ গবেষণা ও সৃজনশীল পাঠ্যবই তৈরির পরিবর্তে এই প্রতিষ্ঠানের এখন মূল কাজ হয়ে গেছে কেনাকাটা ও বই নিয়ে বাণিজ্যের অংশীদার হওয়া। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।

এতে এনসিটিবি তার মূল চরিত্র হারিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। গড়ে উঠেছে নানামুখী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন এনসিটিবির শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীরাও। এমনটিই বলেছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০১৭ সালে এনসিটিবি নিয়ে তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে খোদ সরকারও কোটি কোটি শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এদের সাথে সমঝোতা বা তাদের দাবির কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরের প্রাথমিকে পাঠ্যবই ছাপার পুনঃটেন্ডার করতে গিয়ে। পুনঃটেন্ডার করে প্রাথমিকের পাঠ্যবই বিদেশে ছাপাতে হয়েছে। অথচ দেশীয় মুদ্রাকররা এর তীব্র বিরোধিতা করলেও এনসিটিবির শীর্ষপর্যায় থেকে ছাপার কাজ বিদেশীদের হাতে দেয়ার জন্য সব ধরনের নাটক সাজানোর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি টেন্ডারের শর্ত ও বিধি লঙ্ঘন করে এ কাজ করা হয়েছে।

এনসিটিবির সামগ্রিক চরিত্র ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী নয়া দিগন্তকে বলেন, এনসিটিবি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষাবিদেরা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম ও কারিকুলাম নিয়ে গবেষণা করবে। নতুন নতুন ধারণা ও সৃজনশীল মেধা দিয়ে শিক্ষাবিদদের পরামর্শ অনুসারে কারিকুলাম সাজাবে। পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও কারিকুলাম এখনো সেকেলে।

অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আক্ষেপ করে বলেন, এনসিটিবি প্রতি বছর পাঠ্যবই ছাপার বাণিজ্যের সাথে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে। অথচ তাদের দায়িত্ব ছিল, প্রতি কয়েক বছর পরপরই পাঠ্যবইয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কিছু দেয়া। এনসিটিবি পাঠ্যপুস্তকের গবেষক ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে বৈঠক না করে, বই ছাপার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের সাথে বৈঠক করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে তা পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করা হয়। তার আগে হয়েছিল ১৯৯২ সালে। পাঠ্যবইয়ের কারিকুলামের পরিবর্তন আগামীতে কবে হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই নীতিনির্ধারক মহলের। তবে এনসিটিবির শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, নতুন সরকারের নতুন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী কারিকুলামের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দু-এক বছরের মধ্যে কিছু একটা হতে পারে। কী হবে তার কার্যক্রম শুরু হবে নির্দেশনা পাওয়ার পর।

এনসিটিবির প্রশাসনিক বিন্যাস সম্পর্কে হচ্ছে বিভিন্ন কথা প্রচলিত থাকলেও, এখানে যারা নিয়োগ পান তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আত্মীয় স্বজন বলেই পরিচিত। এ ছাড়া রয়েছে প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরের পদায়ন। কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ, গবেষণা কর্মকর্তাসহ নানা পদে যারা নিয়োজিত তাদের কারোরই অতীত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এখানে রয়েছেন, অর্থনীতিতে পাস করা কর্মকর্তা, যিনি প্রাথমিকের বাংলা বইয়ের সম্পাদনা করেন। এরূপ বিভিন্ন ধরনের জগাখিচুড়ি নিয়ে চলছে এনসিটিবি বছরের পর বছর। সরকার পরিবর্তন হলে শুধু বদলায় এর কর্মকর্তা। গত তিন দফায় একই সরকার ক্ষমতায় থাকায় এবং টানা দুই টার্মে একই ব্যক্তি শিক্ষামন্ত্রী থাকায় এখানে গড়ে উঠেছে বড় ধরনের অনিয়মের সিন্ডিকেট।

প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে জুনিয়র কর্মকর্তার শাসন কায়েম হয়েছে। উপসচিব (কমন) এবং ঊর্ধ্বতন ভাণ্ডার কর্মকর্তা হিসেবে ২৪তম বিসিএস কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই দু’টি পদে এর আগে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হতো। উৎপাদন নিয়ন্ত্রক পদেও অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তা পদায়ন পেয়েছেন। বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এবং তার সাবেক এপিএস মন্মথ রঞ্জন বারৈ নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট এখানেও সক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ প্রতিষ্ঠানে (এনসিটিবিতে) কর্মরতদের বেশির ভাগই বছরের পর বছর একই পদে চাকরি করছেন।

বিতরণ নিয়ন্ত্রণ জিয়াউল হক, ঊর্ধ্বতন ভাণ্ডার কর্মকর্তা আবু হেনা মাশুকুর রহমান, ঊধ্বর্তন বিশেষজ্ঞ মোখলেস উর রহমান, বিশেষজ্ঞ পারভেজ আক্তারসহ অধ্যাপক হাসমত মনোয়ার, আলেয়া আক্তার, মোস্তফা সাইফুল আলম, সৈয়দ মাহফুজ আলী, চৌধুরী মুসাররাত হোসেন জুবেরী, সাহানা আহমেদ প্রমুখ সর্বনিম্ন ছয় বছর থেকে এক যুগ একই পদে ও একই কর্মস্থলে কর্মরত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে ক্যাডার কর্মকর্তা আছেন মোট ৬১ জন। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের হিসেবে মূল চাকরি কলেজে শিক্ষকতা। কিন্তু তারা লেকচারার হিসেবে যোগদান করার পর এখনো একই প্রতিষ্ঠানে থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সূত্র জানান, এনসিটিবি কারিকুলাম গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কখনোই রূপ পায়নি। এখানে যাদের পদায়ন করা হয় গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে, তাদের কারোই গবেষণা কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু এখানে কর্মরত রয়েছেন গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে। এখানে নিয়োজিত গবেষণা কর্মকর্তারা এখন কাজ করেন, ছাপাখানায় বই ছাপা কেমন হচ্ছে তা তদারকিতে। ছাপা বই ঠিকমত ট্রাকে উঠছে কি না, তার নজরদারিতে।

এনসিটিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গবেষণার পরিবর্তে আমার কাজ হচ্ছে প্রতিদিন মুদ্রাকরদের সাথে দেন-দরবারে ব্যস্ত থাকা। তাদের সাথে ঝগড়া মেটানো। কারিকুলাম নিয়ে মনোসংযোগের ফুসরত কোথায়?

এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এনসিটিবি গবেষণা বাদ দিয়ে শুধু বই ছাপা ও সরবরাহের কাজে নিয়োজিত রয়েছে এমনটি নয়। এনসিটিবির আইন ও বিধিমালার মধ্যে রয়েছে, বই ছাপা ও সরবরাহের কাজ করার। আর কারিকুলাম নিয়ে গবেষণা হচ্ছে না, এটিও সঠিক নয়। তিনি জানান, প্রাথমিকের পাঠ্যবই রিভিউর কাজ শেষ হয়েছে। মাধ্যমিকের কাজ চলছে।
  • নয়া দিগন্ত/ ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা!


বাংলাদেশ থেকে ১০ বছরে (২০০৬ থেকে ২০১৫) বাংলাদেশ থেকে ৬১.৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। বর্তমান বি‌নিময় হার অনুযায়ী বাং‌লা‌দে‌শী মুদ্রায় যার প‌রিমাণ প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্য দিয়ে অর্থ পাচারকারী শীর্ষ ৩০ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) সোমবার অর্থ পাচারের এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল ফিন্যানসিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থাটি গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেয়। জিএফআই ১৪৮ দেশের ওপর জরিপ পরিচালনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অর্থ পাচারের হিসাব জানিয়েছে তারা। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চেয়ে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৫ শতাংশ। 

তাদের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৯০ কোটি ডলার অবৈধ উপায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া একই বছরে ২৮০ কোটি ডলার অবৈধভাবে দেশে এসেছে। 

সংস্থাটি অর্থ পাচারের যে সংজ্ঞা দিয়েছে তা হলো, আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করা সেই টাকা যা অবৈধভাবে অর্জিত, ব্যবহৃত অথবা স্থানান্তরিত।

সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুসারে, টাকার অঙ্কের দিক দিয়ে ২০১৫ সালে অর্থপাচারে শীর্ষ ৩০ দেশের একটি ছিল বাংলাদেশ। এ েেত্র দণি এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। জিএফআই বলছে, টাকা পাচারের এ প্রবণতা টেকসই উন্নয়নে বড় বাধা। বাণিজ্যের কথা বলে অবৈধভাবে এসব অর্থ পাচার হয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
  • নয়া দিগন্ত / ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

গায়েবি মামলা — হাঁক এলেই দল বেঁধে ছোটেন তাঁরা

গোলাম মর্তুজা

  • গায়েবি মামলা আসামিরা আগাম জামিন নিতে আসছেন হাইকোর্টে
  • বৃদ্ধ, নিরীহ ও শ্রমজীবী মানুষেরা নজরে পড়ছেন 
  • গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দেড় মাসে সারা দেশে ৪ হাজার ১৮২টি গায়েবি মামলা হয়েছে
  • এসব মামলায় ৮৮ হাজার জনের নাম উল্লেখ আছে



ময়মনসিংহের গৌরীপুর থেকে একদল মানুষ আগাম জামিন নিতে আসেন। গতকাল হাইকোর্টে।  ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীতে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনের বড় গাছগুলোর তলায় মানুষের ছোট ছোট জটলা। ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও মুক্তাগাছা, নেত্রকোনার বারহাট্টা, সিলেটের গোয়াইনঘাট, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, যশোরের মনিরামপুর, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, ঢাকার উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন তাঁরা। প্রতিটি জটলায় আলোচনার বিষয় গায়েবি মামলা। তাঁরা সবাই আসামি; এসেছেন জামিন নিতে। অনেকের পরনে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি। কারও হাতে পোঁটলা; তাতে বিস্কুট, চিড়া-মুড়ি বা পানের ডিব্বা। কেউ বয়সের ভারে ন্যুব্জ, চুল-দাড়ি সাদা।

কিছু সময় পরপর কেউ একজন এসে হাঁক ছাড়েন। তারপর দল বেঁধে ছোটেন জটলার মানুষেরা। ‘গৌরীপুর, গৌরীপুর-সব আউয়াইন’। ২৫-৩০ জনের দলটি গাছতলা থেকে আদালত ভবনের দিকে হাঁটা ধরে।

যশোরের মনিরামপুরের শহীদুল্লাহ সরদারের সঙ্গে দেখা হলো হাইকোর্ট চত্বরে। নাশকতার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় আসামি হয়েছেন। চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ, বয়স সত্তরের কোঠায় বলে জানালেন। তবে মামলায় লেখা ৫৫।

মামলায় কী অভিযোগ আনা হয়েছে, জানতে চাইতেই ক্ষুব্ধ কণ্ঠে শহীদুল্লাহ বলেন, ১৪ জানুয়ারি ঝাপা গ্রামে তাঁর বাড়ির পাশের বালুর গাদায় খেলতে গিয়ে চার ও পাঁচ বছর বয়সী দুই নাতি ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়। শিশু দুটিকে ১০ দিন হাসপাতালেও থাকতে হয়েছে। পুলিশ ২২ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরণের অভিযোগে মামলা করেছে। সেই মামলায় এক নম্বর আসামি শহীদুল্লাহ। ওই মামলায় জামিন নিতে শহীদুল্লাহর সঙ্গে এসেছেন আরও ৯ জন।

তাঁদের মতো নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় আসামি হয়ে কয়েক শ লোক গতকাল সোমবার জামিন নিতে এসেছিলেন হাইকোর্টে। বিএনপি দাবি করে আসছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দেড় মাসে সারা দেশে ৪ হাজার ১৮২টি গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৮৮ হাজার জনের নাম উল্লেখ আছে। আর আসামি করা হয়েছে পৌনে তিন লাখ ব্যক্তিকে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে আসা আশি-ঊর্ধ্ব আমির হামজাও নাশকতা মামলার আসামি। তাঁর সঙ্গে একই মামলার আসামি মধ্য ষাটের আবদুল আলিম। তাঁরা জানান, নির্বাচনের আগে পুলিশের ওপর হামলা, নাশকতার অভিযোগে ৭৪ জনের বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। জামিন নিতে গতকাল তাঁরা ২৪ জন ঢাকায় এসেছেন। জামিনও পেয়েছেন।

গায়েবি মামলার আসামি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের আবদুস ছাত্তার (মাঝে) আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টে আসেন। গতকাল দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো

আমির হামজা বলেন, তিনি কৃষক। আগেও রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ‘এখন ইরি ধানের মৌসুম। আর আমাগেরে এহন এই কোর্ট-কাচারিতে চক্কর দিতে হচ্ছে।’

আমির হামজার সঙ্গে আসা লোকজন জানান, বাসে ও মাইক্রোবাসে তাঁরা সবাই এখানে এসেছেন। আসা-যাওয়ার খরচ তাঁদের। আর মামলা পরিচালনার বিষয়ে বিএনপির একজন নেতা সাহায্য করছেন।

অ্যানেক্স ভবনের ঠিক সামনেই হাঁটাপথের ওপর গোল হয়ে বসেছিলেন লুঙ্গি-পাঞ্জাবি বা গেঞ্জি পরা কয়েকজন। তাঁরা এসেছেন সিলেটের গোয়াইনঘাট থেকে। জানালেন, নির্বাচনের দিন সহিংসতার অভিযোগে গোয়াইনঘাট থানায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। সেই মামলার ২০ জন আসামি এসেছেন জামিনের জন্য। সবাই নিম্ন আয়ের; কৃষি অথবা পাথর কোয়ারির শ্রমিক। আসামিদের মধ্যে তাজিমুল আলীর বয়স ষাটের ওপর।

তাজিমুল বলেন, তাঁদের বাড়ি গোয়াইনঘাটের যাত্রাবা গ্রামে। সেখানে নির্বাচনের দিন একটি ভোটকেন্দ্রে মারামারি হয়েছে বলে শুনেছেন। এরপর তিনি ও তাঁর চার ছেলেকে ওই মামলার আসামি করা হয়েছে বলে জানতে পারেন। কথা বলার সময় তাজিমুলের দন্তহীন মুখ থেকে পানের রস গড়িয়ে পড়ছিল।

ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি সিলেটের তজিমুল ইসলাম (বাঁয়ে)। গতকাল হাইকোর্টে।  ছবি: প্রথম আলো

গোয়াইনঘাট থেকে আসা লোকজন জানান, তাঁরা সবাই শ্রমিক। কৃষিকাজ করে বা পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন। মামলার পর থেকেই তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য বাড়ি বাড়ি আসছে পুলিশ। কেউ বাড়িতে থাকতে পারছেন না, কাজকর্মও করতে পারছেন না। তাঁরা যেহেতু বিএনপি করেন না, তাই বিএনপির নেতারাও তাঁদের সাহায্য করছেন না।

এ প্রসঙ্গে গোয়াইনঘাট পরিদর্শক (তদন্ত) হিল্লোর রায় গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই এলাকার কামাইর কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেন। পুলিশ বাধা দিলে তাদের ওপর আক্রমণ করেন। তাঁর দাবি, বিএনপির নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষকে নিয়ে হামলা করেছেন। তাই মামলার আসামি হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের পেশার পরিচয়টা মুখ্য বিষয় হয়নি।

এসব মামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর কর্মকর্তারা নাম উল্লেখ করে কথা বলতে চান না। তবে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এসব ঢালাও মামলার বিষয়ে নির্দেশনা আসবে বলে তাঁরা শুনেছেন। সে ক্ষেত্রে তদন্ত করে নির্দোষ লোকদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।

তবে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-মিডিয়া) রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এ রকম কোনো উদ্যোগের কথা শোনেননি।
  • প্রথম আলো/ ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

HC summons DG of ACC, 3 govt officials

They have to explain why a person other than the accused spent 3 years in jail



Abu Salek (L) and Jahlam (R). Photo: Collected

The High Court yesterday summoned the director general of the Anti-Corruption Commission (ACC) and three other government officials to explain why a person named Jaha Alam, instead of the real accused, was in jail for the last three years.

They will have to appear before the HC bench of Justice FRM Nazmul Ahsan and Justice KM Kamrul Quader by 10:30am on February 3, HC sources said.

The three government officials were plaintiffs of two of the 33 cases filed against Abu Salek, a businessman. They represented the secretaries of the law and home ministries.

Meanwhile, Judge Sheikh Golam Mahbub of the special court-6 yesterday exempted Alam from the charges.

HOW JAHA ALAM LANDED IN JAIL

Between 2010 and 2011, Salek misappropriated about Tk 18 crore from Sonali Bank's Cantonment branch. Salek used a fake address to open an account with the bank, the ACC said. 

Salek also had an account in another private bank, ACC sources said.

In 2012, the anti-graft watchdog filed the 33 cases over the misappropriation, and Salek was made accused in most of them.

During investigation, the commission asked the banks' officials to identify and trace Salek.

The officials informed the ACC that the address provided by Salek in his bank documents was in Tangail's Nagarpur, ACC sources said.

The commission then summoned Salek to its office where the bank officials, including the account's introducers, were present.

However, the man who appeared before the ACC claimed that the authorities concerned were mistaken and his name was Jaha Alam, not Abu Salek.

“To ascertain further, we sent the photo that Salek used in the bank's Know-Your-Client form to Nagarpur's Union Parishad chairman, who identified him as Jaha Alam,” said an investigation officer preferring anonymity.

Later, the ACC placed a charge-sheet before the court identifying him as Abu Salek alias Jaha Alam.

In 2016, Alam was arrested by police in connection with most of the cases in which Salek was accused.

HOW JAHA ALAM'S IDENTITY WAS KNOWN

Different media outlets reported that Jaha Alam said he was wrongly accused, after which the ACC investigated the matter further.

The commission found Alam's claim to be true.

Contacted, ACC Director General Moyeedul Islam said of the 33 cases, Alam was made accused in most of them.

“We have already urged the court to exempt Jaha Alam from prosecution,” he said, adding that the process was underway.

He, however, said Salek, who was on the run, would remain as the accused in the cases.

Yesterday, the HC bench passed the order in a suo moto move following a report published in the Bangla daily Prothom Alo yesterday under the headline “Wrong accused in jail in 33 cases: Sir, I am Jaha Alam, not Salek.”

Supreme Court lawyer Amit Das Gupta placed the news report before the HC bench for necessary orders in this regard.

HC judges issued the summons after going through the report.

The court also gave a rule asking the authorities concerned to explain why Jaha Alam should not be acquitted of the cases in which he was not an accused, Amit told The Daily Star.

Ealier, the DG of the ACC said that the faces of Abu Salek and Jaha Alam, according to the photograph, were similar.

'JAHA IS INNOCENT'

Speaking to our Manikganj correspondent, Alam's elder brother Shanur said his brother used to work in Narsingdi's Ghorashal Jute Mill in 2003 as a machine operator.

His job was made permanent in 2012, from which he earned Tk 2,000-3,000 per week.

His family is unable to bear the expenses of the cases.

“I demand the release of my brother and [for the] punishment to the real culprits,” he said, adding that the family sought compensation from the government in this regard.

Meanwhile, the ACC learnt from a Facebook post on Salek's profile that he was in Nepal about one month ago. Alam is still languishing in Kashimpur jail.
  • The Daily star/ jan 29, 2019 

$5.9b siphoned off in 2015

Bangladesh second in South Asia, among top 30 countries in world in terms of illicit financial flows

Rejaul Karim Byron

Some $5.9 billion was siphoned out of Bangladesh in 2015 through trade misinvoicing, the Global Financial Integrity (GFI) said in a report yesterday.

Bangladesh ranked second in South Asia in terms of illicit outflows of money, according to the report. 

The Washington-based research and advisory organisation came out with the findings by analysing data of trade in goods of 148 developing countries with advanced economies. The report, based on International Monetary Fund (IMF) data, also said $2.36 billion entered the country in 2015.

The GFI said trade-related illicit financial flows (IFFs) appear to be both significant and persistent features of developing country trade with advanced economies. 

“Trade misinvoicing remains an obstacle to achieving sustainable and equitable growth in the developing world,” said the GFI report titled “Illicit Financial Flows to and from 148 Developing Countries: 2006-2015”.

The GFI defines IFFs as money that is illegally earned, used or moved and which crosses an international border.

Trade misinvoicing is a method of moving IFFs, and includes the deliberate misrepresentation of the value of imports or exports in order to evade customs duties and VAT, launder the proceeds of criminal activity or to hide offshore the proceeds of legitimate trade transactions, among other motivations, it said.

The new study comes more than a year after the GFI's 2017 report which estimated that Bangladesh had lost between $6 billion and $9 billion to illicit money outflows in 2014.

At that time, the GFI analysed discrepancies between bilateral trade statistics and balance of payments data, as reported to the IMF, to detect flows of capital that were illegally earned, transferred, or utilised.

This year, the GFI detected the IFFs by analysing the trade data on over invoicing and under invoicing. 

The GFI found Bangladesh was one of the top 30 of countries, ranked by dollar value of illicit outflows in 2015. These countries not only include resource-rich countries such as South Africa and Nigeria but also European countries such as Turkey and South American nation Brazil.

The Asian countries in the top 30 countries in this category include Malaysia, India and the Philippines. The amount of IFFs from Malaysia was $33.7 billion, $9.8 billion from India and $5.1 billion from the Philippines.

Bangladesh lost the second highest amount of fund through IFFS after India among the South Asian nations. The illegal outflow through trade misinvoicing in other South Asian countries including Pakistan, Sri Lanka was less than a billion dollar.

The research and advisory organisation said increasing trade among developing and emerging market countries is seen by many economists as a primary path to greater development.

“However, high levels of misinvoicing, as a percentage of total trade, indicate that most developing country governments do not benefit from a significant portion of their international trade transactions with advanced economies,” said the GFI.

The GFI data showed that the amount of IFFs from Bangladesh was 17.5 percent of the nation's total trade with advanced countries at $33.73 billion in 2015.

In its previous report, the GFI said Bangladesh lost $75 billion due to trade misinvoicing and other unrecorded outflows between 2005 and 2014.

  • Courtesy: The Daily Star /Jan 29, 2019