দেশের ২২টি মহাসড়ক থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা সাতদিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ১১ জানুয়ারি এ নির্দেশনা দেয়ার পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো মহাসড়কের দুই পাশে বহাল আছে সিংহভাগ অবৈধ স্থায়ী স্থাপনা।
গতকাল একাধিক মহাসড়ক সরেজমিন ঘুরে বেশির ভাগ স্থাপনা অপরিবর্তিতই দেখা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘুরে কোথাও এ নির্দেশনার প্রতিফলন চোখে পড়েনি। মহাসড়কের পাশে হাটবাজার রয়েছে, এমন এলাকাগুলোয় সড়কের ১০ মিটারের মধ্যে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা আগের মতোই আছে। বিশেষ করে আমিনবাজার থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকার বেশির ভাগ অবৈধ স্থাপনাই অপসারণ করা হয়নি।
এ মহাসড়কের ৯০ কিলোমিটারে ৪৩টি স্থায়ী হাটবাজার রয়েছে, যেগুলোর একাংশ সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী অবৈধ। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে মহাসড়কটির অন্তত ১২টি স্থানে প্রতিদিন তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে।
একই অবস্থা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের। মহাসড়কটির বরিশাল নগরী অংশে গড়িয়ারপাড় মোড় থেকে সিঅ্যান্ডবি রোড, সাগরদী বাজার, রূপাতলী এলাকায় আগের মতো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত সড়কাংশে ২২ জানুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান চালায় বরিশাল মহানগর পুলিশ। অভিযানের পর সড়কটির এ অংশে মোটামুটি শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তবে এ ধরনের অভিযানকে যথেষ্ট হিসেবে মনে করছে না স্থানীয়রা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এর বাইরে মহাসড়কটির কয়েকটি পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। তবে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে নারায়ণগঞ্জ অংশের বেশির ভাগ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে আগের মতোই।
দেশের অন্যান্য মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পুলিশ অভিযান চালালেও স্থায়ী স্থাপনাগুলো অপসারণ হয়নি। এগুলোর বদলে মহাসড়কের পাশে রাখা নির্মাণসামগ্রী, যানবাহন, অস্থায়ী দোকান অপসারণেই বেশি নজর ছিল পুলিশের। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, অবৈধ স্থাপনা অপসারণ আমাদের রুটিন কাজগুলোর অন্যতম। মন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই এ কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে মানুষ এর সুফলও পেতে শুরু করেছে।
আইন অনুযায়ী, মহাসড়কের মালিকানাধীন জায়গায় বা ক্ষেত্রমতে মহাসড়কের ঢাল থেকে উভয় পাশে ১০ মিটারের মধ্যে অবৈধভাবে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা যেমন হাটবাজার, দোকান ইত্যাদি নির্মাণ করা যাবে না। মহাসড়কে নিরাপদে মোটরযান চলাচল নিশ্চিত করতে সওজ অধিদপ্তরকে অবৈধভাবে নির্মিত কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা তাত্ক্ষণিক অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন আইনে। এ ক্ষমতাবলে ২২টি মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সাতদিনের ‘নোটিস’ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। মন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর একাধিক সড়ক বিশেষজ্ঞ সেটিকে গতানুগতিক দিকনির্দেশনা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। সাতদিনে এসব স্থাপনা অপসারণ কঠিন বলেও মত দেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে ঘোষণা দিয়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, এর আগেও অবৈধ স্থাপনা অপসারণে একাধিকবার ঘোষণা এসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সাময়িকভাবে হয়তো অস্থায়ী স্থাপনাগুলো সরেছে, যেগুলো কিছুদিনের মধ্যে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। সাম্প্রতিক উচ্ছেদ কার্যক্রমেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বার বার নির্দেশ দেয়ার পরও মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না, তা আগে খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
- Courtesy: Banikbarta /Jan 28, 2019
No comments:
Post a Comment