Search

Thursday, August 30, 2018

বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুম পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে - এএলআরসি

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পাঠানো এএলআরসির রিপোর্ট


বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুম পরিস্থিতির শুধুই অবনতি হয়েছে। ৩৯তম নিয়মিত অধিবেশন উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কাছে পাঠানো এক রিপোর্টে এসব কথা বলেছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার (এএলআরসি)। 

এতে বলা হয়েছে এ সরকারের মেয়াদে ২০০৯ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৩১ শে জুলাই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৪৩২ জনকে গুম করেছে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলো। লোকজনকে তুলে নেয়া ও গুম করার সঙ্গে অভিযুক্ত হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হলো ডিবি, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমস ইউনিট (সিটিটিসিইউ), র‌্যাব ও একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এএলআরসি আরো বলেছে, নাগরিকদের তুলে নেয়া ও গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অব্যাহতভাবে অস্বীকার করে যাচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। নিখোঁজ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে এক-চতুর্থাংশ মানুষকে পাওয়া যাচ্ছে বন্দি অবস্থায়।

তাদের বিরুদ্ধে আনা হচ্ছে নানা রকম বানোয়াট ফৌজদারি অভিযোগ। এ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে যারা ঘরে ফিরেছেন, তারা কখনো মুখ খোলার সাহস দেখান না। এএলআরসি আরো বলেছে, জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় পর্যায়ক্রমিকভাবে অভিযোগ নিবন্ধিত করতে অস্বীকার করে বাংলাদেশ পুলিশ। তারা বলে অভিযোগ থেকে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সির নাম বাদ রাখতে হবে। এ ছাড়া গুম শব্দটির পরিবর্তে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের দ্বারা অবহরণ অথবা নিখোঁজ শব্দ ব্যবহারে বাধ্য করে অভিযোগকারীকে। এর ফলে অভিযোগ মেকানিজমে পরিপূর্ণ সুবিধা অস্বীকার করায় প্রাথমিকভাবে ধাক্কা খান অভিযোগকারী। অভিযোগ করার মেকানিজমে এই যথাযথ সুবিধা না পাওয়াটা হচ্ছে ন্যায়বিচার না পাওয়ার বিষয়। উপরন্তু অভিযোগকারী ও গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবার অব্যাহতভাবে ভীতির সম্মুখীন হন। তাদেরকে শারীরিক ও ডিজিটাল নজরদারিতে রাখে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। 

এ ছাড়া অভিযোগকারী একই রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। সেখানে অভিযোগের জন্য আইনজীবীর সহায়তা নেয়া বাধ্যতামুলক। কিন্তু নানা রকম প্রতিশোধ নেয়ার কারণে আইনজীবীরা এসব চ্যালেঞ্জ নিতে অনীহা দেখান। পুলিশ স্টেশন অথবা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যেসব অভিযোগ জমা পড়ে তার তদন্ত করে না পুলিশ। তবে ২০১৫ সালে সাতজন মানুষ গুমের একটি ঘটনায় তদন্ত করেছে তারা। ফলে গত ১০ বছরে এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মাত্র একটি ঘটনায় বিচার হয়েছে। তারা জোরপূর্বক গুম করেছিল। এবং পড়ে সেই গুমের শিকার ব্যক্তিদের মৃতদেহ ভেসে উঠেছিল। 

এএলআরসি আরো বলেছে, ২০০৯ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশনে প্রায় ১০টি ‘হাবিয়াস করপাস’ রিট জমা পড়েছে। সুনির্দিষ্ট রিটে হাই কোর্ট রুল দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর ‘বুরোক্র্যাট ও অফিসিয়ালদের’ বিরুদ্ধে। তাদেরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ওদিকে গুমের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এটর্নি জেনারেলের অফিস।  তবে ২০০৯ সাল থেকে যেসব মানুষ অপহৃত হয়েছেন, তারা কোথায় আছেন তা কেউ জানেন না, সেইসব মানুষকে হাজির করার জন্য রাষ্ট্রীয় কোনো এজেন্সিকে কোনো নির্দেশ কখনো দেন নি সুপ্রিম কোর্ট। 

জাতীয় সংসদে এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা নতুন নয়। সারা বিশ্বেই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। তার মতে, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রেও গুম হয় মানুষ। তিনি দাবি করেন, প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে গুম হন দুই লাখ ৭৫ হাজার বৃটিশ নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এমন বক্তব্য গুমের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাওয়াকেই শুধু বাধাগ্রস্ত করে না। একই সঙ্গে যারা এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তারা দায়মুক্তি পেয়ে আরো উৎসাহিত হয়। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ক্ষমতাসীন সরকারের ইচ্ছামতো তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে। এই বাস্তবতা ভিকটিমের অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ায় তার ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগকে অস্বীকার করে। 

এএলআরসি বলেছে, তারা বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের জটিল বাস্তবতা সম্পর্কে অব্যাহতভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ও ওয়ার্কিং গ্রুপ অব এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সে’কে জানিয়ে আসছে। 

এএলআরসি বলেছে, এর প্রেক্ষিতে মানবাধিকার পরিষদ ও নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের ব্যাপকভাবে বোঝা উচিত যে, সরকার গুমের অভিযোগ অস্বীকার করছে, অপরাধকে জাস্টিফাই করছে, এর সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তির গ্যারান্টি দিচ্ছে, অভিযোগকারী ও ভিকটিমের আত্মীয়দের হয়রান বা ভীতি প্রদর্শন করছে, ন্যায়বিচারের মেকানিজমের সুবিধা পাওয়া প্রতিরোধ করছে। এবং এরাই জোরপূর্বক গুমের জন্য দায়ী। এএলআরসি আরো বলেছে, যখন এমন একটি সরকার থাকে তখন গণতান্ত্রিক ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জোরপূর্বক গুমের ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব। উপরন্তু এখানে যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বাস্তবে তা ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা সঙ্কট দিয়ে। এক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিষদের উচিত বাংলাদেশ সরকারের কাছে জানতে চাওয়া যে, অন্য দেশের একটি অপরাধ দিয়ে নিজের দেশের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে ছাড় দেয়া বৈধ কিনা। এ অবস্থায় মানবাধিকার পরিষদের প্রতি এএলআরসি আহ্বান জানাচ্ছে স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর অন বাংলাদেশের জন্য একটি ম্যান্ডেট সৃষ্টির জন্য, তারা প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং করবে। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ আগস্ট ৩০,২০১৮ 

‘গুম হওয়ার চেয়ে কারাবাস ভালো’

শেখ সাবিহা আলম

  • আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবস
  • ২০০৯ সাল থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ‘গুম’ হয়েছেন ৪৩২ জন
  • ফিরে আসা ব্যক্তিরা অপহরণকারীদের ব্যাপারে মুখ খোলেননি
  • গুমের শিকার পাঁচ ব্যক্তি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে

বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল সেদিন। গাড়ি ধরবেন বলে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন কেবল, হঠাৎ ছয়-সাতজন লোক কিছু না বলে একরকম ছোঁ মেরে তাঁকে মাইক্রোবাসে তুলে ফেলেন। চোখ আর হাত দুটো বাঁধা হয়ে যায় মুহূর্তে। কিন্তু ব্যাপারটা কী? কেউ কোনো কথার জবাব দিচ্ছেন না। রাতের ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় শুধু গাড়িটা ছুটছে। একপর্যায়ে তিনি কোনো এক গন্তব্যে পৌঁছালেন। তখনো জানতেন না এই অজ্ঞাতবাসেই ছয় মাস কাটাতে হবে তাঁকে।

যাঁর কথা বলা হচ্ছে, তিনি ২০১৬ সালে ছয় মাসের বেশি সময় গুম হয়েছিলেন। আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবস। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত এমন মানুষের সংখ্যা ৪৩২। তাঁদের মধ্যে খোঁজ পাওয়া গেছে ২৫০ জনের। অজ্ঞাতবাস থেকে যাঁরা ফিরেছেন, তাঁরা আর অপহরণকারীদের ব্যাপারে মুখ খোলেননি। অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে চিকিৎসাধীন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে, পরিবার, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, র‍্যাব, ডিবি ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে তাঁদের স্বজনদের তুলে নেওয়া হয়েছে। অনেক সময় তাঁরা জিডিও করতে পারেননি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বরাবর গুমের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, যখনই কোনো নিখোঁজ সংবাদ আসে, তখনই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আইনি পন্থায় তাঁকে খুঁজে দিতে বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।

গুমের শিকার হওয়া পাঁচ ব্যক্তি সম্প্রতি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এই পাঁচজনই ২০১৬ ও ২০১৭ সালের বিভিন্ন সময় গুমের শিকার হন। জীবন নিয়ে ফিরে আসা এই মানুষগুলো বলেছেন, গুম হওয়ার চেয়ে তাঁদের কাছে কারাবাস ভালো।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের কথা 

প্রথমে যাঁর কথা বলা হলো তিনি গাড়ির ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর চোখ খুললে এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, কিছু খেতে চান কি না। এরপর জেরা শুরু হয়। বাসস্থান, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পরিবার, মুঠোফোনের অ্যাপস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতায়াত, বন্ধুবান্ধব, আওয়ামী লীগ-জামায়াত-জঙ্গিগোষ্ঠীর তুলনামূলক বিচার নিয়ে প্রশ্ন করেন তাঁরা। কিছুতেই তিনি প্রশ্নকর্তাদের সন্তুষ্ট করতে পারছিলেন না। বারবারই তাঁর মনে হয়েছে চোখে চোখ রেখে একবার কথা বলতে পারলে হয়তো অপহরণকারীদের বোঝাতে পারতেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি, ছয় মাসের বেশি সময় তাঁর চোখ আর হাত বাঁধা ছিল। শুধু যেদিন মাছ খেতে দেওয়া হতো, সেদিন বাঁধনটা একটু আলগা করে দেওয়া হতো। অনেক দূরে কোথাও তিনি টিমটিমে একটা বাতি জ্বলতে দেখেছিলেন। শুতেন কোথায়, কী খেতেন? খাওয়াদাওয়া ভালো ছিল, থাকতেন ছোট্ট একটা অন্ধকার কক্ষে, শুতে দেওয়া হয়েছিল মেঝেতে কম্বল পেতে।

যাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, তাঁদের খুব চৌকস মনে হয়েছে। ছাড়া পাওয়ার প্রক্রিয়াটা কেমন ছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা পর্যায়ে জেরা কমে আসে। মাঝেমধ্যে তিনি চিৎকার করে জানতে চাইতেন তাঁর অপরাধটা কী? বেশির ভাগ সময় কোনো জবাব তিনি পেতেন না। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এসে চুপ করতে বলতেন। একদিন কেউ একজন এসে তাঁকে জানান, ওই জায়গা থেকে তাঁকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে। গাড়িতে ওঠার পর বেশ লম্বা একটা ভ্রমণের পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যাত্রাপথে শুধু গাড়িচালককে দিকনির্দেশনা দিতে শুনেছেন তিনি, লেফট ও রাইট।


গুম তো একরকম কারাবাস, এমন প্রশ্নের জবাবে একজন বলেছেন, ‘গুম হয়ে থাকার চেয়ে ১৪ বছর জেলে থাকা ভালো। অন্তত জানতে তো পারলাম আমি কোথায় আছি, কেন আছি। আমার চোখটা তো খোলা থাকছে, হাত দুটোও। আমার জীবনের অনেক দিন কোথায় পার হয়ে গেল, আমি জানলামও না।’

এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি 

অজ্ঞাতবাস থেকে ফিরে এসে চিকিৎসা নিতে হয়েছে কাউকে কাউকে। একজন বলেছেন, বছরখানেক আগে কয়েক মাস গুম থাকার পর তাঁর আত্মীয়বাড়ি ফেরেন। তিনি আর আগের মতো কথা বলেন না। তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আটকে রাখা হয়েছিল কয়েক মাস। বারবার একই প্রশ্ন করে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল অপহরণকারীরা। তাঁরও চোখ ও হাত বাঁধা ছিল। তবে মারধর করেনি কেউ। ফিরে আসার পর তাঁর প্রথম যে সমস্যাটা হলো তা হলো অনেক দিন চোখ বাঁধা থাকায় তাঁর ফটোফোবিয়া হয়ে গিয়েছিল। বর্ণগুলো বড় করে লিখে দিলে পড়তে পারতেন। সারাক্ষণ অস্থির থাকতেন, ভয় পেতেন। এখনো তিনি বাড়ির বাইরে বের হন না। তাঁর কোনো বন্ধুবান্ধব নেই। তিনি যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন, তাঁর কাছে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে গুম হওয়া আরও এক ব্যক্তি আসতেন। তিনি গুম হয়েছিলেন মাত্র কয়েক দিনের জন্য। তবে সেই কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা তাঁর ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

কাছাকাছি সময়ে ঢাকা থেকেই নিখোঁজ হওয়া আরেক ব্যক্তিও ভুগছেন একই সমস্যায়। তিনি বলছিলেন, তাঁকে অপহরণের পর একটি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল। এখন দলবল ছাড়া বাসা থেকে বের হন না। লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে চলেন।

আলোচিত যাঁরা এখনো নিখোঁজ 

২০১০ সালে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চৌধুরী আলম গুম হন। পরের বছরগুলোও রাজনৈতিক নেতাদের গুম হওয়ার বিষয়টি অব্যাহত থাকে। ২০১২ সালে গুম হন বিএনপির সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলী। এখনো নিখোঁজ আছেন যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আজমি ও যুদ্ধাপরাধের দায়ের ফাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাশিম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশিম।

তবে গুমের শিকার হওয়া কিংবা অজ্ঞাতবাস থেকে ফিরে আসা মানুষের তালিকায় এখন আর শুধু রাজনৈতিক নেতারা নন, আছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আইনজীবী, সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধিরাও। পরিবারগুলো আছেন তাঁদের ফিরে আসার অপেক্ষায়।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ৩০,২০১৮ 

বিশ্বব্যাপী অনাস্থায় ইভিএম

মতবিরোধ খোদ ইসিতেও


শামছুল ইসলাম 


পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ দেশে ই-ভোটিং পদ্ধতি নেই। যে কয়েকটি দেশ এটি চালু করেছিল, তারাও ইতোমধ্যে তা নিষিদ্ধ করেছে। ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ড ই-ভোটিং পরিত্যাগ করে। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে জার্মানির ফেডারেল কোর্ট ইভিএমকে অসাংবিধানিক ঘোষণা দেয়। একই বছর ফিনল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট ইভিএমে সম্পন্ন তিনটি মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের ফলাফল অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।

ড. অ্যালেক্স হালডারমেন নামে এক প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ইভিএমের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ পেয়েছিলেন, আমেরিকায় ভোট কারচুপির প্রতিরোধক (টেম্পার প্রুফ) নয় ইভিএম। ফলে সেই অঙ্গরাজ্যেও ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আমেরিকার ২২টির বেশি অঙ্গরাজ্যে এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অন্যগুলোতেও তা নিষিদ্ধ হওয়ার পথে।

সম্প্রতি ইভিএম তথা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কারচুপি সম্ভব বলে অভিযোগ তুলে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ফের ব্যালট পেপারে ভোটের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। তারা একযোগে নির্বাচন কমিশনের কাছে ইভিএমের মাধ্যমে কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে। এভাবে বিশ্বব্যাপী আস্থা হারাচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)।

অথচ ঠিক এমনই সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেড় লাখ ভোটিং মেশিন কেনার পথে হাঁটছে। এ জন্য ৩৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা। তবে মতবিরোধ রয়েছে খোদ ইসিতেও। একজন কমিশনার ভিন্নমত দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। আরো দুই কমিশনার জানেনই না ইভিএম ক্রয়ের খবর।

এ দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে পুরোপুরি বিপরীত মেরুতে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনে ইভিএম বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিংয়ের প্রবর্তন বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে নির্বাচনে সরকার ই-ভোটিং রাখতে চায়, যা দুরভিসন্ধিমূলক।

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে খোদ নির্বাচন কমিশনারদের মধেও। পাঁচ কমিশনারের তিনজন এ প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। তাদের একজন আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেছেন, সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার নতুন যে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি; আপনাদের কাছে জানতে পারলাম।

এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, আমি ইভিএমের প্রকল্পের বিষয়ে কিছু জানি না; ইসি সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানেন। যখন এগুলো ব্যবহার করার জন্য কমিশন সভায় আলোচনা হবে, তখন বলব। এর আগে বিষয়টি নিয়ে বলার কিছু নেই, আমি বলতেও চাই না। কমিশনার কবিতা খানম বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে তা আরপিওতে সংযুক্ত করতে হবে। তারপর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে ইভিএম ব্যবহার করবে কি না। ইভিএম কেনার নতুন প্রকল্পের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে আরপিও সংশোধন করা হচ্ছে- সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে একজন কমিশনার ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি এটি প্রস্তুত করেছেন।

এতে বলা হয়েছে, গত ২৬ আগস্ট আরপিও সংশোধনের জন্য কমিশন সভায় তিন ধরনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ওই দিন দু’টি প্রস্তাব বাদ দিয়ে শুধু একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আলোচনার জন্য সীমাবদ্ধ রাখা হয় এবং ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কমিশন সভা মুলতবি করা হয়। স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় এরই মধ্যে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও ভোটারের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথম থেকে বলে আসছেন- রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হলে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে। সরকারে প থেকে স্বাগত জানালেও বিরোধী রাজনৈতিক প থেকে এর বিরোধিতা করা হয়েছে। তাই একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অধিকতর আলোচনা প্রয়োজন ছিল।

২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইভিএমের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেখানকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় ইভিএম বন্ধ হয়ে যায়। তার পর এটি সারানো আর সম্ভব হয়নি। ফলে ওই কেন্দ্রে আবার ভোট গ্রহণ করতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন। এসব সমস্যা চিহ্নিত করতে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটকে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তারা সমস্যা চিহ্নিত করেনি, বরং ইসি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ তোলে বুয়েট।

ইভিএম নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল আগের কমিশনেও। সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক সিইসির কাছে এক ইউও (আনঅফিশিয়াল) নোটে লেখেন, কমিশনে যে ইভিএম রয়েছে তাতে ভোট সংখ্যার কাগজ রেকর্ডের ব্যবস্থা নেই; ভোটারের পরিচিতি শনাক্তকরণেরও ব্যবস্থা নেই। ফলে এ যন্ত্র দিয়ে ভোটে কারচুপি রোধ করা সম্ভব নয়।

এ দিকে পাশের দেশ ভারতে ইভিএমের বিরোধিতা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বিজেপি অবশ্য ইভিএম বজায় রাখারই পক্ষপাতী, তবে ভারতের নির্বাচন কমিশন সব দলেরই মতামত খতিয়ে দেখবে বলে কথা দিয়েছে।

গত চার বছরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ইভিএম নিয়ে কারসাজির অজস্র অভিযোগ তুলেছে একাধিক বিরোধী দল। এবারে নির্বাচন কমিশনের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে গিয়ে কংগ্রেসসহ একাধিক বিরোধী দল দাবি জানিয়েছে ইভিএম পদ্ধতিটাই বাতিল করে দেয়া হোক।

কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি বলেছেন, শুধু আমরাই নই। দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ রাজনৈতিক দলই মনে করে যত দ্রুত সম্ভব কাগজের ব্যালট আবার ফিরিয়ে আনা উচিত। এই দাবিতে আমরা অনড় থাকব। কারণ ইভিএমের ওপর আমাদের বিশ্বাস টলে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জালিয়াতির সুযোগ থাকায় ইভিএমে এক চাপে ৫০টি ভোট দেয়া সম্ভব। বিদেশের মাটিতে বসেও ইভিএম হ্যাকিং করা যায় এবং একটি ইভিএম হ্যাকিং করতে এক মিনিটের বেশি সময় লাগে না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, কোনো প্রযুক্তি গ্রহণের আগে তার ভালো-মন্দ খতিয়ে দেখা উচিত। আর নির্বাচনের অন্যতম স্টেক হোল্ডার হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। যে প্রযুক্তিই গ্রহণ করা হোক না কেন তা রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়েই করা উচিত।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জে. (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ছোট পরিসরের নির্বাচনে ইভিএম যৌক্তিক হতে পারে, কিন্তু সংসদ নির্বাচনের মতো ক্ষমতা বদলের নির্বাচনে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা এখনো অর্জন করতে পারেনি কমিশন নির্বাচন। এ ছাড়া, খোদ ইভিএম উদ্ভাবনকারী দেশগুলোও এই প্রযুক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/আগস্ট ৩০,২০১৮ 

Wednesday, August 29, 2018

৪২ সেকেন্ডে ফিটনেস পাচ্ছে যানবাহন!

সামছুর রহমান

  • মিরপুর কার্যালয় ফিটনেস সনদ দিচ্ছে অস্বাভাবিক দ্রুততায়
  • প্রতি ঘণ্টায় দেওয়া হয়েছে গড়ে ৮৬টি সনদ
  • ১৬ কার্যদিবসে দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার সনদ
  • নির্দেশনা মেনে সনদ দিতে লাগার কথা এক থেকে দেড় ঘণ্টা
  • তাড়াহুড়োয় ফিটনেস পরীক্ষা হলে মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়
  • দায়সারা পরীক্ষায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াবে



রাজধানীর মিরপুরের বিআরটিএ কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে ডিজিটাল নম্বরপ্লেট, লাইসেন্স ডেলিভারি বুথের সামনে ভিড় ছিল। তবে নতুন আবেদনের বুথগুলো তুলনামূলক ফাঁকা ছিল।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ের চেহারাই বদলে গেছে। ফিটনেস সনদ নিতে যানবাহনের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। সংস্থাটি কাজও করছে বিদ্যুৎ গতিতে। যেমন ১ থেকে ২০ আগস্ট এই ২০ দিনে মিরপুর কার্যালয় থেকে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়েছে। কর্মঘণ্টা ধরে হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, গড়ে ৪২ সেকেন্ডেই একটি করে যানবাহনকে ফিটনেস সনদ দিয়ে দিয়েছে বিআরটিএ।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিতভাবেই বলছেন, সব প্রক্রিয়া শেষ করে এত কম সময়ে যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক। তাড়াহুড়ো করে ফিটনেস পরীক্ষা সম্পন্ন করা হলে পরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। দায়সারা পরীক্ষায় ফিটনেস সনদ পাওয়া যানবাহন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াবে।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে র‍্যাডিসন হোটেলের সামনে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর থেকে বিআরটিএর কার্যালয়ে ফিটনেস নবায়নের বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়ছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বিআরটিএ বাড়িয়েছে দিনের কর্মঘণ্টা। ৪ আগস্ট থেকে বিআরটিএ কার্যালয়ে লাইসেন্স নবায়ন, গাড়ির ফিটনেস ও নবায়ন কার্যক্রম প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চালু থাকছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারও খোলা রাখা হচ্ছে বিআরটিএ কার্যালয়।

বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার যানবাহনের। সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে এই ২০ দিনে কর্মদিবস ছিল ১৬টি। দৈনিক ১২ কর্মঘণ্টা হিসাবে বিআরটিএর কার্যালয় খোলা ছিল ১৯২ ঘণ্টা। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় দেওয়া হয়েছে গড়ে ৮৬টি ফিটনেস সনদ।

বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ফিটনেস সনদ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট যানবাহন কারিগরি ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। কারিগরি ও বাহ্যিক অন্তত ৬০টি বিষয় বিবেচনায় আনার কথা বলা হয়েছে আইনে। ফলে একটি যানের সনদ দিতে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা লেগে যাওয়া স্বাভাবিক। এক মিনিটের কম সময়ে ফিটনেস সনদ দেওয়া অসম্ভব। শুধু চোখে দেখা ছাড়া এত অল্প সময়ে ফিটনেস সনদ দেওয়া সম্ভব নয়।

তবে এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) মাহবুব-ই-রব্বানি প্রথম আলোকে বলেন, একটি স্ট্যান্ডার্ড (মান) রক্ষা করেই ফিটনেস সনদ দেওয়া হচ্ছে। যে গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়া হচ্ছে, তার অধিকাংশ প্রাইভেট কার। এসব গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষায় বেশি কিছু দেখা লাগে না। অনেকে গাড়ি মেরামত ও রং করে ফিটনেস পরীক্ষার জন্য আসছেন। এটিও দ্রুত পরীক্ষার কাজ শেষ করতে ভূমিকা রাখছে।

বিআরটিএর তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ঢাকায় যানবাহন আছে প্রায় ১৩ লাখ। মোটরযান আইন অনুযায়ী চাকা, ইঞ্জিনক্ষমতা ও ধরন বিবেচনায় নিয়ে যানের নিবন্ধন দিয়ে থাকে বিআরটিএ। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের ফিটনেস সনদ দরকার হয় না। কারসহ অবাণিজ্যিক যানবাহনের বেলায় তৈরির সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের ফিটনেস সনদ একসঙ্গেই দেওয়া হয়। বাস, ট্রাকসহ আর সব যানবাহনের ফিটনেস সনদ নিতে হয় প্রতিবছর।

বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেল রয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার। আর ১০ শতাংশ গাড়ি নতুন। ফলে কমবেশি ৬ লাখ যানবাহনের প্রতিবছরই ফিটনেস সনদের প্রয়োজন হয়।

ফিটনেস পরীক্ষার সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে বিআরটিএর। গাইডলাইন অনুসারে যানবাহনের মালিক প্রথমে আবেদন করেন। আবেদনপত্র গ্রহণের পর তা যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর আবেদন করা যানবাহনটি পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনের কাজ শেষ হলে যাচাই করা হয় যানবাহনের উপযুক্ততা।

বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে দুই ধরনের পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়। ডিজিটাল ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টারে (ভিআইসি) পরীক্ষা করা হয় গণপরিবহন ও ভারী যানবাহনের ফিটনেস। ব্যক্তিগত ও হালকা যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করা হয় খালি চোখে।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভিআইসির সামনে ফিটনেস পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়ানো একটি কাভার্ড ভ্যান। একজন পরিদর্শনকর্মী চালকের আসনে বসে ওজন, টায়ারের বিট বা ঘনত্ব, গতি ও গতিরোধক বা ব্রেক পরীক্ষা দেড় মিনিটের মধ্যে শেষ করেন। নামার আগে ভেতরের আসন, রং ঠিক আছে কি না, সেটি পরীক্ষা করে নেন।

বুথে দায়িত্ব পালনকারী বিআরটিএর একজন মোটরযান পরিদর্শক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ভিআইসিতে পরিদর্শনের ধাপে চার ধরনের পরীক্ষা হয়। ওজন স্কেলে ‘এক্সেল লোড’ পরীক্ষা করা হয়। টায়ারের ঘনত্ব পরীক্ষা করা হয়। এরপর পরীক্ষা করা হয় গতি। সবশেষে গাড়ির গতিরোধক বা ব্রেক পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে পরিদর্শন ধাপটি শেষ করতে ১৮-২০ মিনিট লাগার কথা।

যদিও বিআরটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী, পরিদর্শন ধাপটি শেষ করতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট, প্রয়োজনে ১ ঘণ্টা সময় উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একটি গাড়ির ফিটনেস যথাযথভাবে পরীক্ষা করতে ন্যূনতম ১ ঘণ্টা লাগে। এত কম সময়ে ফিটনেস দেওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি মনে করেন, বিআরটিএ একদিকে টাকা নিয়ে যথাযথভাবে ফিটনেস পরীক্ষা না করে সঠিক সেবা দিচ্ছে না, অন্যদিকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ফিটনেস সনদ পাওয়ায় জনগণের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ছে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ২৯, ২০১৮

ভোটের অধিকার আদায়ে জনগণ এবার রুখে দাঁড়াবে - ড. কামাল হোসেন

শেখ মামুনূর রশীদ

বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না। এমন প্রস্তাব আমাকে কেউ দেয়নি। আমি নিজ থেকে এমন কথা কাউকে বলিনি। এ নিয়ে ন্যূনতম আগ্রহও প্রকাশ করিনি। আমি এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে চাই।

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রকে বিদায় দিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আবারও প্রহসনের নির্বাচন করতে চাইলে জনগণ তা প্রতিহত করতে রুখে দাঁড়াবে। কখন কীভাবে রুখে দাঁড়াবে তা এখনই বলা সম্ভব না। কখন জনগণের ঐক্য হবে, তা-ও আগাম বা অনুমাননির্ভর কিছু বলা সম্ভব নয়। সময়ই সব নির্ধারণ করে দেবে। ইতিহাস বলে বাঙালি যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখনই বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।

কামাল হোসেন আরও বলেন, আইয়ুব খান এবং ইয়াহিয়া গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে তারা বলেছিল- ‘আগে উন্নয়ন, আগে অর্থনৈতিক মুক্তি, পরে গণতন্ত্র।’ এ তত্ত্ব দিয়ে বাঙালিকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে এর বিপরীতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- আগে স্বাধীনতা, আগে ভোটের অধিকার, আগে গণতন্ত্র। এগুলো হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। উন্নয়নও হবে। সম্পদের সুষম বণ্টন হবে। বৈষম্য থাকবে না, ন্যায়ভিত্তিক সমাজও প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন আমরা কার ফর্মুলা অনুসরণ করব? আইয়ুব খান এবং ইয়াহিয়ার ফর্মুলা? নাকি বঙ্গবন্ধুর ফর্মুলা? বাস্তবতা হচ্ছে- আইয়ুব-ইয়াহিয়ার ফর্মুলা দিয়ে সরকারের অনেকে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করছেন। এ ফর্মুলা দিয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের মালিকদের দাবিয়ে রাখা হবে, তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হবে, তাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হবে- এটা বেশিদিন চলতে পারে না। আইয়ুব-ইয়াহিয়া পারেনি, এ সরকারও পারবে না।

ড. কামাল হোসেন বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার খর্ব করে যারা ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ ফর্মুলা দিচ্ছেন, আসলে তারা এর মধ্য দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়ার ফন্দি আঁটছেন। উন্নয়নের ফর্মুলা দিয়েই ব্যাংক লুট করা হচ্ছে। কারা ব্যাংক লুট করছে মানুষ তা জানে। একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধরাই রয়ে গেল। আর্থিক খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। শেয়ারবাজারের চিত্র সবার জানা। বিনিয়োগ নেই। কর্মসংস্থান নেই। বিদেশে টাকা পাচার বাড়ছে। শোনা যাচ্ছে মাত্র কয়েক বছরে এ দেশের কেউ কেউ এখন বিদেশেও অন্যতম সম্পদশালীর মধ্যে একজন। মোদ্দাকথা, উন্নয়নের ফর্মুলায় কিছু লোকের ভাগ্য খুলেছে। সাধারণ মানুষ পথে বসেছে। এই সুবিধাবাদীরা সরকার ও দলের একটু খারাপ অবস্থা দেখলে বিদেশে পাড়ি দেবে। দেশে আজ গণতন্ত্র থাকলে, জবাবদিহতা থাকত। লুটপাটকারীরা ভয় পেত। মানুষের কাছে তাদের জবাবদিহিতা করতে হতো। যা এখন তাদের করতে হয় না।

তিনি বলেন, আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত করে ব্যক্তি, দল ও পরিবারতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। প্রশাসনসহ সবকিছুকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এ অবস্থার অবসান চাই। দেশের মানুষও তাই চায়।

সোমবার যুগান্তরকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর জোট গঠন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব, দুর্নীতি, লুটপাট, বিচার বিভাগসহ নানা ইস্যুতে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও খণ্ডন করেন এ সময় ড. কামাল হোসেন। বলেন দেশ নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা। কেমন সরকার চান, কেমন দেশ চান, কেমন নির্বাচন চান, কেমন হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ- এসব বিষয়েও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন প্রবীণ এ আইনজীবী। সাক্ষাৎকারের পুরো বিবরণ নিচে দেয়া হল-

যুগান্তর : আপনার দৃষ্টিতে দেশের বর্তমান অবস্থা এখন কেমন? কী মনে হয় আপনার?

ড. কামাল : আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বঙ্গবন্ধু একটি লক্ষ্য নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। সেই সংগ্রামের ফসল স্বাধীনতা। তিনি দেশের মানুষের মাঝে স্বাধীনতার সুফল তুলে দিতে চেয়েছিলেন, ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। ঘাতকরা তার স্বপ্নপূরণ করতে দেয়নি। এর পরের ইতিহাস সবার জানা। আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করলাম, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করলাম। সফলতার মুখও দেখলাম। আবার সেই গণতন্ত্র হারিয়ে গেল। ভিন্ন নামে স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসল। দল ও পরিবারতন্ত্র কায়েম হল। দুর্নীতি ও লুটপাট মহামারী আকারে রূপ নিল। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।

আসলে ৫ জানুয়ারির একতরফা প্রহসনের নির্বাচনই সর্বনাশের মূল কারণ। বলা হল- সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার এ নির্বাচন অনিবার্য ছিল। বলা হল- দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে আবার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা হবে। উচ্চ আদালতেরও এমন নির্দেশনা ছিল। শাসক দলের কথায় আমরা বিশ্বাস করলাম। কিন্তু তা আর করা হল না। ক্ষমতাসীনরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে, সবকিছু অস্বীকার করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার আয়োজন করল। ফলাফল যা হওয়ার তাই হল। মানুষ আশাহত হল। ভোটের অধিকার আর গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হল। শুধু তাই না, মানুষের এখন কথা বলার স্বাধীনতা নেই। লেখার স্বাধীনতা নেই। মতপ্রকাশের অধিকার নেই। সবকিছু চলছে গায়ের জোরে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সিমাহীন লুটপাট, অর্থ পাচার। ব্যাংক খালি, শেয়ারবাজারে লোপাট- এসব দেখে মনে হচ্ছে দেশে হরিলুট চলছে। বলার কেউ নেই। দেখার কেউ নেই।

যুগান্তর : এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের উপায় কী?

ড. কামাল : এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের একটাই পথ- আর তা হচ্ছে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দেবে, পছন্দমতো তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে। এই জনপ্রতিনিধিরা জনগণের স্বার্থরক্ষা করবে। ভোটে নির্বাচিত না হয়ে যারা কাগজে-কলমে জনপ্রতিনিধি হন তাদের দায়-দায়িত্ব কম। তারা নিজের আখের গোছানোর কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যারা জনপ্রতিনিধির খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই নিজের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত। তাই সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতেই সুশাসনও প্রতিষ্ঠিত হবে। দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ হবে।

যুগান্তর : কী করে এটা সম্ভব হবে বলে আপনি মনে করেন?

ড. কামাল : জনগণের ঐক্যই এটা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। বঙ্গবন্ধু জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বলেই স্বাধীনতা এসেছিল। নব্বইয়ে জনগণ একবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুফল পেয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে নিয়ে আমরা ১৪ দল করেছিলাম। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলাম, এর সুফলও আমরা পেয়েছিলাম। এবারও যদি জনগণ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে সুফল মিলবে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনগণকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ইতিহাস বলে বাঙালি যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাইলে এবারও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

যুগান্তর : আপনি কি এমন একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবেন? এ ঐক্যে কি বিএনপিও থাকবে?

ড. কামাল : একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমরা গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেছি প্রায় ২৫ বছর হল। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত জনগণের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা ঐক্য চেয়েছি বলেই ২০০৫ সালে আমাদের গরিব পার্টির ভাঙা অফিসে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা এসেছিলেন। শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের তখনকার প্রায় সব বড় নেতা গণফোরামের ইডেন কমপ্লেক্সের অফিসে এসে আমাদের সঙ্গে ঐক্য করতে চেয়েছিলেন। আমরা সে ঐক্যে সায় দিয়েছিলাম বলেই পরবর্তী সময়ে ১৪ দল হয়েছিল। আর ১৪ দলীয় জোট হয়েছিল বলেই ভুয়া ভোটার দিয়ে সেই সময়ের সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করতে চেয়েছিল, তা করতে পারেনি। মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনও হতো না। আগামীতে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন যাতে না হয়- তাই দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা ঐক্য প্রতিষ্ঠার কাজটি এগিয়ে নিতে চাই। কারও ভয়-ভীতিতে আমরা পিছু হটব না।

আরেকটি কথা বলতে চাই, গণফোরাম এবং ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে আমরা জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছি। এ ঐক্যে যে কেউ চাইলে সাড়া দিতে পারেন। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া সবার জন্য ঐক্যের দরজা খোলা। আমরা গণতন্ত্র চাই। আইনের শাসন চাই। সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এসব দাবিতে সমমনাদের ঐক্য হতেই পারে। অনেকেই গণফোরামের সঙ্গে অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের ঐক্যের কথা বলছেন। আসলে আমাদের মধ্যে নতুন করে ঐক্য গড়ার কিছু নেই। আমরা এক সঙ্গে অনেকদিন ধরেই পথ চলছি। আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়। আমরা এক সঙ্গে আছি, থাকব। একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জনগণের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করব।

এ ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপিও চাইলে আসতে পারে। তাদের কয়েকজন শীর্ষ নেতা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দেখা বা কথা হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়েছে। তাই ধারণার ওপর ভর করে এখনই কোনো কথা বলা ঠিক হবে না। বিএনপির সঙ্গে জোট হবে কী হবে না, তা সময়ই বলবে। আমরা আসলে জোট গঠনের চাইতে মানুষে মানুষে ঐক্য প্রতিষ্ঠাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যদিও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য হয়েই আছে। এ ঐক্যকে কাজে লাগিয়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের সংবিধান জনগণকেই রাষ্ট্রের মালিকানা দিয়েছে। সেই মালিকদের দাবিয়ে রাখা হবে, তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হবে, তাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হবে- এটা বেশিদিন চলতে পারে না। আইয়ুব-ইয়াহিয়া পারেনি, এ সরকারও পারবে না। মানুষকে তার অধিকার আজ হোক, কাল হোক ফিরিয়ে দিতেই হবে।

যুগান্তর : এ ক্ষেত্রে আপনার পক্ষ থেকে কোনো রোডম্যাপ দেয়া হবে কিনা?

ড. কামাল : সত্যিকার গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সর্বোপরি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাসহ রাষ্ট্র ও সমাজের অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য আমরা ৭ দফা দিয়েছি। এটাই আমাদের রোডম্যাপ। এই রোডম্যাপ ধরে আমরা এগোচ্ছি। একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। অনেকে এ উদ্যোগে সাড়া দিয়েছেন। আরও অনেকে সময়মতো সাড়া দেবেন। মানুষ কখন কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে, সাড়া দেবে- তা আগাম বলা যাবে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশের তরুণ ছাত্র-যুবকরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছিল, কেউ কি তা আগাম ধারণা করতে পেরেছিল- পারেনি। একইভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ছাত্রী নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে যে শিশু-কিশোর-ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল- তা-ও কি কারও ধারণায় ছিল? হয়তো ক্ষমতার জোরে, লাঠিপেটা করে, পুলিশ দিয়ে, হেলমেট-হাতুড়িসহ দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে শক্তিপ্রয়োগ করে এবারের আন্দোলন থামানো গেছে। বারবার কি লাঠিপেটা করে আন্দোলন দমানো যাবে? গণবিস্ফোরণ আটকে রাখা যাবে?

যুগান্তর : সরকারি দলের নেতারা দাবি করছেন তারা আগের চাইতে এখন আরও অনেক বেশি শক্তিশালী। আগামী নির্বাচনেও তারা জয়ী হবেন এবং সরকার গঠন করবেন। আপনি কী মনে করেন?

ড. কামাল : আমিও শুনেছি সরকারের লোকজন দাবি করছেন, তারা অতীতের চাইতে এখন আরও অনেক বেশি শক্তি সঞ্চয় করেছেন। আগামী নির্বাচনেও তারা জয়ী হবেন এবং সরকার গঠন করবেন। তাদের দাবি, ভোটের মাধ্যমে তাদের বিদায় দেয়া কঠিন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- তারা শক্তিশালী হলে, জনপ্রিয় হলে, নিজেদের ওপর এতটা আস্থা থাকলে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট দিতে ভয় পায় কেন? সব দলকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আপত্তি কোথায় তাদের? সংসদ বহাল রেখে, পদ-পদবি ঠিক রেখে কেন তারা নির্বাচনে যেতে চায়? পৃথিবীর কোথাও কি এভাবে নির্বাচন হয়? এ সরকারের সময় একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। বরিশাল সিটি নির্বাচনে তো সকাল ৮টার আগেই ভোট শেষ হয়ে গেছে। এত জনপ্রিয় সরকার, ভোটে তাদের কেন এত ভয়? আসলে তারা নিজেরাও জানে, দিন দিন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পায়ের নিচে আর মাটি নেই। তাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে লাঠিই একমাত্র তাদের ভরসা।

যুগান্তর : সংসদ বহাল রেখে সরকারি দলের অধীনে নির্বাচন হলে তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে? আপনারা কি এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেবেন?

ড. কামাল : এ ক্ষেত্রে গণফোরাম এবং ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, বর্তমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হবে না। ভোট হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে। ভোট হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দেশ-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। ভোটের আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে যে ভোট সুষ্ঠু হয় না, তা বর্তমান সরকার বারবার প্রমাণ করেছে। তাই ভোট হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আর তা হলে জনগণের রায় প্রতিফলিত হবে। যদি সরকার এসব দাবি-দাওয়া না মেনে ৫ জানুয়ারির মতো আরও একটি প্রহসনের নির্বাচন করতে চায়, তাহলে জনগণ এবার রুখে দাঁড়াবে। জনগণ কীভাবে রুখে দাঁড়াবে তা এখনই বলা সম্ভব না। এটা সময়ই বলে দেবে। আমরা কী করব- এটাও তখন বলতে পারব। অনুমাননির্ভর কথা বলাটা ঠিক হবে না।

যুগান্তর : জাতীয় নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি নেই। অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার। ডিসেম্বরে নির্বাচন। অনেকে বলছেন, আপনার নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বৃহত্তর একটি জোট গঠিত হচ্ছে। এ জোট এক সঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে সরকার গঠন করবে। আপনি হবেন আগামী দিনের সরকারপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী। এসব বক্তব্যের সত্যতা বা সম্ভাবনা কতটুকু?

ড. কামাল : এখানে আমার একক নেতৃত্ব বলে কিছু নেই। আমরা সবাই মিলে একটি উদ্যোগ নিয়েছি মাত্র। বর্তমান সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা একটি ঐক্যের ডাক দিয়েছি। আরও অনেকে যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যের ডাক দিয়েছে। এই ঐক্যের উদ্যোগ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়- তা সময় বলে দেবে। সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোটের বিষয়টি মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে। বাস্তবে এটি এখনও তেমন কোনো রূপ লাভ করেনি। তাই এ বিষয়ে আগাম মন্তব্য করা কঠিন। তবে আমরাও চাই যথাসময়ে নির্বাচন হোক। আর এ নির্বাচন হোক সব দলকে নিয়ে। দেশবাসী আরেকটা প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। আমি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছি বা হতে চাই এটাও ঠিক না। আমি এমন আগ্রহ বা ইচ্ছার কথা কখনও কোথাও কারও কাছে প্রকাশ করিনি। কেউ আমাকে এমন প্রস্তাবও দেয়নি। তবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আমাকে আগামী দিনে সরকারপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়ার বিষয়ে তার আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন। এটি একান্তই তার নিজস্ব চিন্তা এবং মতামত।

যুগান্তর : আপনি আগামীতে কী ধরনের সরকার দেখতে চান?

ড. কামাল : আগামীতে আমরা একটি গণমানুষের সরকার দেখতে চাই। যেখানে রাষ্ট্র জনগণের রক্ষক হবে। রাষ্ট্র জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, লুটপাট, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বন্ধ হবে, বিনিয়োগ হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, মাদক, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে, রাষ্ট্র হবে কল্যাণকর, ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র এবং সরকার জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। উৎপাদন বাড়ছে, রেমিটেন্স বাড়ছে। বাস্তবতা হচ্ছে- এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই, কৃতিত্ব নেই। সব কৃতিত্ব সাধারণ মানুষের। খেটে খাওয়া দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক তার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত টাকা পাঠাচ্ছে। গার্মেন্ট শ্রমিকরা রাত-দিন পরিশ্রম করছে বলেই প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। রাষ্ট্র কেবল লুটপাটকারীদের পাশে থেকেছে। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের জন্য তাদের অবদান শূন্য। আমরা সত্যিকারের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের বাংলাদেশ দেখতে চাই। এখানে আমাদের কোনো বিশেষ চাওয়া-পাওয়া নাই। আমরা মনে করি, দেশের মানুষের সামনে উজ্জ্বল একটি ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। এ ভবিষ্যৎ যারা নষ্ট করছে, তাদের বিদায় জানাতে হবে। সর্বশেষ কোটাবিরোধী আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন আমাদের নতুন বার্তা দিয়েছে। এ বার্তা হচ্ছে- গুটিকয়েক লুটেরা, ব্যাংক ডাকাত, ঋণখেলাপি, দলবাজ, মতলববাজ ছাড়া এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনও বিবেকবোধসম্পন্ন। তারা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন চায়। আমরা এই চাওয়াটকে এগিয়ে নিতে চাই।

যুগান্তর : আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ। কাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন? কী ঘোষণা দেবেন এ সমাবেশ থেকে?

ড. কামাল : জামায়াতে ইসলামী ছাড়া সব দলকে আমরা আমন্ত্রণ জানাব। আমরা কার্যকর গণতন্ত্র, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং ভোটাধিকার রক্ষার দাবি জানাব। ভবিষ্যতে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চাই, তা বলব। কালো টাকা, পেশিশক্তি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও দলীয় প্রভাবমুক্ত বাংলাদেশ চাই, তা বলব। আমরা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা, গ্রামে-গঞ্জে মানুষে মানুষে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলব।

যুগান্তর : ক্ষমতাসীন দলের একাধিক শীর্ষ নেতার অভিযোগ- আপনি ভোটের রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গভীর রাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এখন বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এসব সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কী বলবেন?

ড. কামাল : দেখুন সরকারি দলের নেতারা কোথায় ষড়যন্ত্র দেখছেন, তা তারা ভালো বলতে পারবেন। আমি কখনও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, এখনও নেই। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। সরকার পারলে প্রমাণ করুক- কোথায়, কীভাবে আমি ষড়যন্ত্র করছি। মানুষের অধিকার রক্ষার পক্ষে কথা বলার অর্থ কি ষড়যন্ত্র করা? আর বিএনপির সঙ্গে আমার হাত মেলানোর কিছু নেই। ভোটের অধিকার রক্ষায় এক সময় আওয়ামী লীগ আমার কাছে এসেছিল, বিএনপিও চাইলে আসতে পারে। আরেকটি কথা- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো আমাদের শত্র“দেশ না। তাই না? তাদের দেশের রাষ্ট্রদূতের বিদায় উপলক্ষে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার তার বাসায় ডিনারের আয়োজন করেছিলেন। আমাকে আমার স্ত্রীসহ তিনি দাওয়াত দিয়েছেন। আমি সেখানে গেছি। খাওয়ার টেবিলে সৌজন্য সাক্ষাৎ আর কথাবার্তা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক বিষয় আলোচনার টেবিলে ছিল না। এখানে ষড়যন্ত্রের কথাটা এলো কীভাবে, বুঝলাম না। বরং নিচে নেমে এসে দেখলাম হেলমেট বাহিনী ধাওয়া করছে। এটা কেমন আচরণ?

যুগান্তর : আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. কামাল : আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • কার্টসিঃ যুগান্তর/ আগস্ট ২৯,২০১৮ 

কারাগারে নীরব চাঁদাবাজি!

ধারণক্ষমতার তিন গুণ বন্দী আছে পানির সমস্যা


মনির হোসেন 
কেরানীগঞ্জের নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে বেশির ভাগ বন্দী আরামে থাকা-খাওয়া সুবিধার পাশাপাশি টিভি বিনোদনেরও সুযোগ পাচ্ছেন। তবে তাদের প্রতি টিভির বিপরীতে মাসিক হারে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে।

কারাগারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুরো কারাগারে চার শতাধিক ওয়ার্ড (সেল) রয়েছে। বেশির ভাগ ওয়ার্ডে এলইডি টেলিভিশন আছে। আর এসব টেলিভিশন চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে পেনড্রাইভ। তবে প্রতিটি প্যান ড্রাইভ অনুমোদনের জন্য কারাগারের সুবেদারকে ৩০০০ হাজার করে টাকা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া পেনড্রাইভ দিয়ে টেলিভিশন দেখার সুযোগ দেয়ার জন্য মাসিক ১৫০০ টাকা করে বন্দীদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। ওই সুবেদারের চাহিদা মোতাবেক সব বন্দী নীরবে টাকা পরিশোধ করছেন বলে কারাগারে কর্তব্যরত একাধিক কারারক্ষী ও বন্দীর স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু কি তাই, নিয়ম বহির্ভূতভাবে কারা অভ্যন্তরে টাকা পাঠাতেও চলছে বাইরের কারা ক্যান্টিন থেকে রমরমা বাণিজ্য।

অভিযোগ রয়েছে, বাইরে থেকে কোনো স্বজন বন্দীর কাছে ৫০০ টাকা পাঠালে ভেতরে সেই টাকা হয়ে যাচ্ছে ৪০০ টাকা। কমিশন বাবদ ১০০ টাকা কারাক্যান্টিনে কেটে নেয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন নানা কৌশলে একটি চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অপর দিকে হাসপাতালে থাকতে হলেও একজন বন্দীকে গুনতে হচ্ছে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। যদিও ধারণক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বন্দী বর্তমানে কেরানীগঞ্জের কারাগারে অবস্থান করছে।

পেনড্রাইভের মাধ্যমে টেলিভিশন দেখা এবং অবৈধভাবে নগদ টাকা কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে ও পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সদ্য যোগ দেয়া সিনিয়র জেল সুপার মো: ইকবাল কবীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। সুবেদার হাবিবের সাথে যোগাযোগ করে তাকেও পাওয়া যায়নি।

গত শনিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কিছু দিন আগে ভেঙে পড়া নির্মাণাধীন কারাগারের গেটটি ওই অবস্থায় পড়ে আছে। পাশে ডিউটি করছিলেন কারারক্ষী হাসান। তিনি আগত বন্দীর স্বজনদের কাছে জানতে চান সাথে ক্যামেরা জাতীয় কিছু আছে কি না। এরপরই ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন। টিনশেড ঘেরা কারা ক্যান্টিন এলাকায় দেখা যায়, টেবিল চেয়ার নিয়ে পাঁচজন কারারক্ষী বন্দীর সাথে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের নাম ঠিকানা লিখে বিনা টাকায় টিকিট দিচ্ছেন। আধঘণ্টা পর পর সাক্ষাৎ করার ডাক পড়ছে। এ সময় কারা ক্যান্টিন থেকে কয়েকজনকে মালামাল ক্রয় করতে দেখা যায়।

নিত্যপণ্যের দাম কেমন- জানতে চাইলে এক বন্দীর স্বজন বলেন, খুব একটা দাম তারা চাচ্ছে না। হাফ হাতা একটি নীল কালারের গেঞ্জি ২০০ টাকা চাচ্ছে। ফ্রুটো জুস ৭০ টাকা। বাইরেও একই দাম। তবে পেছনের কারা ক্যান্টিনে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম ৫-১০ টাকা বেশি বলে জানান বন্দীর স্বজনেরা।

টিনেশেডের পশ্চিম পাশে দেখা যায়, টেবিল চেয়ার নিয়ে কারারক্ষীরা বন্দীর কাছে পিসিতে টাকা পাঠাচ্ছে। এ সময় সাভার থেকে আসা রাজু নামে এক বন্দীর স্বজন শহীদ উদ্দিন (ছদ্মনাম) এ প্রতিবেদককে বলেন, ঈদের আগের দিন সাভারের ডিবি পুলিশ আমার শ্যালককে ইয়াবাসহ ধরে সরাসরি এই জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে কয়েকবার এসে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছি।

তিনি বলেন, ভেতরে থাকার কোনো সমস্যা নেই। তবে খাবারের একটু সমস্যা আছে।

তিনি দাবি করেন, মিথ্যা মামলায় ডিবি পুলিশ তার শ্যালককে বাসা থেকে ডেকে ৪০ পিস ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ‘সে ইয়াবা সেবন তো দূরের কথা, জীবনে সিগারেট পর্যন্ত খায়নি’। এখন তার জামিন করানোর চেষ্টা করছি। এ সময় তিনি তার মোবাইল ফোনটি ইউসুফের ক্যান্টিনে ১০ টাকার বিনিময়ে রেখে সাক্ষাৎ কক্ষে চলে যান।

খিলগাঁও থেকে আসা দুই যুবকের সাথে এক কারারক্ষী কথা বলছিলেন। পরে ওই যুবকের কাছে পরিচয় গোপন রেখে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা সরাসরি দেখা করার কথা বলেছি। তখন ওই কারারক্ষী সরাসরি দেখা হবে, তবে তার জন্য আট হাজার টাকা দাবি করছে। এ সময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্যাকা এখন কাগজ হয়ে গেছে। আমার আসামির যে মামলা ওই টাকা দিয়ে তো তার জামিনই করাইয়্যা ফেলতে পারমু। দুই যুবকের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাই আর বইল্যান না, ঈদের আগের দিন হাট থেকে গরু কিনে রাত ২টায় বাড়িতে ফিরি। এরপর বাড়ির সামনে থেকে খিলগাঁও থানার দারোগা আমিনুল তাকে সন্দেহজনকভাবে ধরে থানায় নিয়ে যায়। তাকে ছাড়িয়ে দেবে বলে এলাকার এক ফর্মা আমাকে টেলিফোন করে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে ঈদের কথা চিন্তা করে ফর্মাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু ১০ হাজার টাকার কমে দারোগা ছাড়বেই না। ৫ হাজার টাকায় ছাড়তে রাজি হয়েছে। তবে আসামির নামে ছোট একটি ধারায় মামলা দেবে। কোর্ট থেকে তাকে ছাড়িয়ে আনতে হবে। তখন আমরা জেদ করে বলেছি, তাহলে তাকে কোর্ট থেকেই আনব। এখন কারাগারে আসছি আর আদালতে দৌড়াচ্ছি।

কারাগারে বন্দীর সাথে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কী আর করুম। দেখা করতে আসি কিন্তু তার চেহারা দেখা ছাড়া কথা তেমন বুঝি না। তারা বলেন, শুনেছি ভেতরে খাবার পানির কিছুটা সমস্যা আছে।

বাইরের কারা ক্যান্টিনে স্লিপ আর কলম হাতে বসে আছেন আরিফ নামে এক কারারক্ষী। কারাগারে নগদ টাকা পাঠানোর জন্য তার কাছে জানতে চাইলে তিনি শুরুতেই বলেন, কত হাজার পাঠাবেন তাড়াতাড়ি বলেন। পিসির মাধ্যমে পাঠাতে চাইলে কোনো টাকা লাগবে না। এখান থেকে দুই ঘণ্টায় টাকা চলে যাবে আপনার লোকের কাছে। ৫০০ টাকা পাঠালে ভেতরে পাবে ৪০০ টাকা। এরপর তাকে জানালাম ১০ হাজার টাকা যদি পাঠাই তাহলে কত টাকা দিতে হবে। তখন তিনি বলেন, তাহলে এক হাজার টাকা দিলেই হবে। তখন তিনি তার মোবাইল নম্বর ও নাম চিরকুটে লিখে দেন এ প্রতিবেদকের হাতে।

জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৯ হাজার ৬০৮ জন বন্দী অবস্থান করছিলেন। এরমধ্যে হাজতী ৭ হাজার ৮৯৯ জন, কয়েদী ১৫৭১ জন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ১২৩ জন, আরপি তিন জন, ৫৪ ধারার চারজন, ডিভিশনপ্রাপ্ত আটজন।

  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ আগস্ট ২৯,২০১৮ 

রাষ্ট্র মেরামতে চাই ‘জাতীয় সনদ’

ড. বদিউল আলম মজুমদার


সাম্প্রতিক কিশোর-তরুণ বিক্ষোভ শুধু নিরাপদ সড়কের দাবিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তারা আমাদের বিরাজমান দুর্নীতিগ্রস্ত, নিবর্তনমূলক ও অসম রাষ্ট্রকাঠামোর ‘মেরামতের’ও তাগিদ দিচ্ছিল। কারণ বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামো যে সাধারণ নাগরিকের পরিবর্তে কোটারি স্বার্থই সংরক্ষণ করে, পরিবহন খাত যার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন কতগুলো সর্বব্যাপী গভীর সংস্কার। আর এমন সংস্কারের জন্য প্রয়োজন হবে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐকমত্য। কারণ, এসব সংস্কার হতে হবে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’।

এক দশকের বেশি সময় ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) পক্ষ থেকে আমরা কতগুলো সুদূরপ্রসারী সংস্কার প্রস্তাবসংবলিত একটি ‘জাতীয় সনদ’ নিয়ে জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছি, যা আমাদের রাজনৈতিক দল ও অন্য স্বার্থসংশ্লিষ্টদের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো:

১. কার্যকর জাতীয় সংসদ: জাতীয় সংসদকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, যাতে এটি নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে। সংসদ সদস্যদের জন্য একটি আচরণবিধি আইন ও সাংবিধানিক নির্দেশানুযায়ী একটি ‘সংসদ ও সংসদ সদস্যদের অধিকার ও দায়মুক্তি আইন’ প্রণয়ন করা।সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো কার্যকর করা।

২. স্বাধীন বিচার বিভাগ: সত্যিকারের পৃথক্‌করণের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং আইনের শাসন কায়েম করা। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ ও অপসারণের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা। আদালতকে, বিশেষ করে নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করার, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা রুজু ও রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের সংস্কৃতির অবসান করা।

৩. নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন: সঠিক ব্যক্তিদের স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী একটি আইন প্রণয়ন এবং তা অনুসরণে কমিশনে নিয়োগ প্রদান করা। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কমিশনকে প্রয়োজনীয় আর্থিক এবং জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা প্রদান ও আইনি কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা।

৪. সাংবিধানিক সংস্কার: সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য সৃষ্টি, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, গণভোটের বিধানের পুনঃপ্রবর্তন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি বড় আকারের ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ গঠন, সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং ‘টার্ম লিমিটে’র বিধান ইত্যাদি হতে পারে সম্ভাব্য সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্র।


৫. গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল: গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন, দলের মনোনয়ন ও অর্থায়নে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা এবং দলীয়করণের সংস্কৃতির অবসান করা। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষ ও সহিংসতা পরিহার করার অঙ্গীকার নিশ্চিত করা। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিলুপ্ত করা।

৬. স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান: সঠিক ব্যক্তিদের নিয়োগ ও যথাযথ আইনি সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।

৭. দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান: বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। বিদেশে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ন্যায়পাল নিয়োগ করা।

৮. যথাযথ প্রশাসনিক সংস্কার: একটি যুগোপযোগী জনপ্রশাসন আইন প্রণয়ন এবং মান্ধাতার আমলের পুলিশ আইনের সংস্কার করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও পেশাদারি নিশ্চিত এবং নিয়োগ-বাণিজ্যের অবসানের মাধ্যমে এগুলোকে সত্যিকারের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। সরকারি কর্ম কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।

৯.বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার: একটি বলিষ্ঠ বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের আলোকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন ও কার্যকর করা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৫০ শতাংশ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যয় এবং উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী স্থানীয় সরকারে সাংসদদের ভূমিকার অবসান করা।

১০. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: যথাযথ আইনি সংস্কারের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের লক্ষ্যে যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি জাতীয় সম্প্রচার বোর্ড গঠন করা।

১১. মানবাধিকার সংরক্ষণ: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাসহ সব নিবর্তনমূলক আইনের সংস্কার করা। গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অবসানের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতির অবসান করা।

১২. একটি নতুন সামাজিক চুক্তি: সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদে তাদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের ঋণ প্রদানে ভর্তুকি দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য যুগোপযোগী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত এবং তাদের জন্য শস্য ও স্বাস্থ্যবিমার প্রচলন করা ইত্যাদি।

১৩. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা: জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। সম্ভাব্য পরিবেশবিধ্বংসী উন্নয়ন প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা।

১৪. আর্থিক খাতের সংস্কার: আর্থিক খাতে লুটপাট প্রতিরোধে ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার এবং লুটপাটকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও নিবিড় তদারকি নিশ্চিত করা।

১৫. তরুণদের জন্য বিনিয়োগ: জনসংখ্যাজনিত সুযোগ বা ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’কে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে তরুণদের জন্য আরও বিনিয়োগ করা। তাদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুযোগ সৃষ্টি করা। এসবের অভাবে তরুণেরা বিপথগামী হলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ‘ডেমোগ্রাফিক নাইটমেয়ার’ বা দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে।

উপরিউক্ত ১৫ দফাবিশিষ্ট জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলেই রাষ্ট্র মেরামতের তথা সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। তবে জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার। তাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কেও আমাদের ঐকমত্য সৃষ্টি হতে হবে।

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন আবশ্যক। তবে একটি সর্বাধিক শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভবপর নয়, যদি সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সরকার তথা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান না করে; অর্থাৎ একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আবশ্যক (necessary), কিন্তু যথেষ্ট (sufficient) নয়। ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্রমাগত ও লাগামহীন দলীয়করণের ফলে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা এখন আর সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার সম্পর্কেও আমাদের রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি হতে হবে।

সাম্প্রতিক পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে আমাদের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনের আগে কমিশনের পুনর্গঠন জরুরি। ‘না ভোট’–এর বিধান ও হলফনামায় কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও তা যাচাই-বাছাইয়ের বাধ্যবাধকতার বিধানসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ১৯৭২-এ কিছু পরিবর্তনও আবশ্যক। তবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আরও প্রয়োজন হবে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া।

আশা করি, কিশোর-তরুণদের রাষ্ট্র মেরামতের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাদের সম্মানিত রাজনীতিবিদেরা জাতীয় পর্যায়ে আলাপ-আলোচনায় আগ্রহী হবেন। এ ধরনের যেকোনো পর্যায়ের আলোচনায় প্রস্তাবিত জাতীয় সনদটি প্রাথমিক অ্যাজেন্ডা হিসেবেব্যবহৃত হতে পারে। আমরা আরও আশা করি, তাঁরা একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাবেন, একটি জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করবেন এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাবেন। তাহলেই সব ধরনের সংঘাত-সহিংসতা এবং অনিশ্চয়তা এড়িয়ে জাতি হিসেবে আমরা শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারব।

  • ড. বদিউল আলম মজুমদার সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ২৯, ২০১৮ 

তিন ভারতীয় ডাক্তারের ‘অবৈধ’ চেম্বারে ভ্রাম্যমাণ আদালত


চট্টগ্রামের সুপরিচিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার সেনসিভে চেম্বার খুলে নিয়মিত রোগী দেখছেন তিন ভারতীয় চিকিৎসক। অথচ বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তাদের কোন অনুমতিপত্র নেই।

মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে তিন চিকিৎসককে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সনদ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া অনুমতি ছাড়া বিদেশি চিকিৎসক এনে ব্যবসা করার অভিযোগে ইউনিক হেলথ কেয়ার নামে একটি প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইফুল্লাহ হিল আজম, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসৈয়দ মোরাদ আলী অভিযানে অংশ নেন।

তিন ভারতীয় চিকিৎসক হলেন- ডা.অরুণাভ রায়, ডা.নেহা চৌধুরী ও ডা. অভি কুমার।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, অভিযানের সময় সেনসিভে তিন ভারতীয় চিকিৎসককে পাওয়া যায়। তারা দাবি করেছেন- তাদের বিএমডিসি সনদ আছে। কিন্তু সেটা তারা দেখাতে পারেননি। আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিএমডিসি সনদ নিয়ে তাদের সশরীরে হাজির হতে বলেছি। অন্যথায় বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নগরীর জামালখান এলাকায় অবস্থিত সেনসিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাবার আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত একই এলাকায় বেলভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও অভিযান চালায়। সেখানে ইউনিক হেলথ কেয়ার প্যাথলজিক্যাল সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়।

সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ইউনিক হেলথ কেয়ার নামের প্যাথলজিক্যাল সেন্টার বিদেশি ডাক্তার দেশে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তারা বিদেশেও রোগী পাঠায়। কিন্তু তাদের এ সংক্রান্ত কোনো অনুমোদন নেই। তারা কোন অনুমতিপত্রও দেখাতে পারেননি। তাই সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

  • সূত্র: সারাবাংলা/ আগস্ট ২৯, ২০১৮ 

যুগপৎভাবে মাঠে নামতে কাজ করবে সাত দফা - ডা. জাফরুল্লাহ

সাব্বির আহমেদ

মঙ্গলবার রাতে রেইলি রোডের গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নিজ বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত সাত দফাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিএনপি ঘরাণার বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার মতে বিষয়টি সার্বিকভাবে ইতিবাচক। ভাল একটি পদক্ষেপ সাত দফা। এই সাত দফা সংশ্লিষ্ট সকলে যৌথভাবে দুঃশাসনের প্রতিবাদে মাঠে নামতে সহায়তা করবে।

বুধবার দুপুরে সাত দফার পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে এমনটাই জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, সাত দফা মাঠে নামাবে। যৌথভাবে কাজ করবে। দেশে আইনের শাসন অর্থাৎ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে অভিন্ন সুরে কথা বলবে।

‘দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, সুশাসনের সরকার চাই, জনগণের বন্দিদশা থেকে মুক্তি চাই’- এসব বিষয়গুলোই সাত দফার উদ্দেশ্য বলে জানান মঙ্গলবারের বৈঠকে থাকা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করাই সাত দফার উল্লেখযোগ্য বিষয় বলে মন্তব্য করেন ডা. জাফরুল্লাহ।

  • কার্টসিঃ আমাদের সময় /আগস্ট ২৯,২০১৮ 

ফারমার্স ব্যাংক বাঁচাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সহায়তা শেষ হচ্ছে না

হাছান আদনান

ফারমার্স ব্যাংককে বাঁচাতে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন এরই মধ্যে জোগান দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। আগে থেকেই মেয়াদি আমানত ও কলমানি হিসেবে ফারমার্সকে ধার দেয়া চার ব্যাংকের প্রায় ৫৫০ কোটি টাকাও আটকে আছে। কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত ব্যাংকটি বন্ড ছেড়ে ১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিলেও কোনো বেসরকারি ব্যাংক এতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। প্রথম ধাপে ৫০০ কোটি টাকার বন্ড কেনার মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে আরো অর্থ ঢালার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক এবং আইসিবি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের নীতিনির্ধারণী নানা বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ভূমিকা রাখলেও ফারমার্স ব্যাংক উদ্ধার প্রক্রিয়ায় তারা নীরব। এ অবস্থায় ডুবন্ত ব্যাংকটিকে টেনে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ওপরই পড়ছে।

সূত্রমতে, ফারমার্স ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে ১ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুই দফায় ৫০০ কোটি টাকা করে বাজার থেকে এ টাকা সংগ্রহ করবে ব্যাংকটি। এর অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ৫০০ কোটি টাকার বন্ড বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে ফারমার্স ব্যাংক। এ বন্ডের ক্রেতা হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) বেছে নেয়া হয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার বন্ড কেনার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংককে প্রস্তাব দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। প্রস্তাবটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির আগামী পর্ষদ সভায় উপস্থাপনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, অগ্রণী ও রূপালী প্রতিটি ব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি টাকার বন্ড বিক্রির প্রস্তাব পাঠিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। এরই মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ফারমার্স ব্যাংকের ১০০ কোটি টাকার বন্ড কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামস-উল-ইসলাম ফারমার্স ব্যাংকেরও পরিচালক। ব্যাংকটির বন্ড কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফারমার্স ব্যাংক উদ্ধার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অগ্রণী ব্যাংক এরই মধ্যে ১৬৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে। ব্যাংকটির কাছে মেয়াদি আমানত (এফডিআর) ও কলমানি হিসেবে আমাদের ১৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে। তার পরও আমরা ১০০ কোটি টাকার বন্ড কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছি। মূলধন জোগান দেয়ার মাধ্যমে এখন আমরাও ফারমার্স ব্যাংকের অংশীজন। এজন্যই ব্যাংকটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বন্ড কিনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের বন্ড শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কিনবে কেন? বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছেও ফারমার্সের বন্ড বিক্রি করতে হবে। পরিচালক হিসেবে বিষয়টি আমি ফারমার্সের পর্ষদ সভায় উত্থাপন করেছি। আশা করছি, ফারমার্স ব্যাংককে সুস্থ করতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসবে।

তবে বন্ড কেনার আগে কয়েকটি বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে ফারমার্সকে চিঠি দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। চিঠির জবাব পেলে তবেই বন্ড কেনার বিষয়টি পর্ষদে উত্থাপন করা হবে বলে ব্যাংকটি নিশ্চিত করেছে।

রূপালী ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ফারমার্স ব্যাংকের বন্ড কেনার প্রস্তাবে বেশকিছু অসংলগ্নতা রয়েছে। বন্ড কেনার পর সেটির এক্সিট পলিসির বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। ট্রাস্টির ফি বেশি হওয়া, বন্ডের ক্রেডিট রেটিংসহ কয়েকটি বিষয়ে সমস্যা রয়েছে। এজন্য রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফারমার্সে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির জবাব সন্তোষজনক হলে তবেই রূপালী ব্যাংকের পর্ষদে বন্ড কেনার প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।

জনতা ব্যাংকের প্রস্তাবটিও পর্ষদ সভায় উত্থাপনের জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, মূলধন জোগান দেয়ায় আমরাও এখন ফারমার্স ব্যাংকের অংশ। ব্যাংকটিকে দাঁড় করাতে বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা ১০০ কোটি টাকার বন্ড কেনার প্রস্তাব পেয়েছি। জনতা ব্যাংকের পর্ষদ সভায় বিষয়টি উত্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া আইসিবিকে ২০০ কোটি টাকার বন্ড কেনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। এ প্রস্তাবও প্রতিষ্ঠানটির পর্ষদ সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংকের যাত্রা হয় ৪০১ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে। এর মধ্যে ৩৯ জন ব্যক্তি-উদ্যোক্তার বিনিয়োগের পরিমাণ ২৯৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ১০০ কোটি টাকা, যা মোট মূলধনের ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। এছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক ৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ ছিল ফারমার্স ব্যাংকে। ৩৯ জন ব্যক্তি-উদ্যোক্তার মধ্যে ১৬ জন ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে থেকে পরিচালক ছিলেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান তাহের ইমাম এবং আইসিবির প্রতিনিধি।

অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত ফারমার্স ব্যাংককে টেনে তুলতে গত বছরের শেষের দিকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২৭ নভেম্বর ব্যাংকটির পর্ষদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। একই দিন ব্যাংকটির অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীও পদচ্যুত হন।

আরেক পরিচালক ড. মোহাম্মদ আতাহার উদ্দিন ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর বৈঠকে ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদকে চেয়ারম্যান ও মারুফ আলমকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। নতুন করে ব্যাংকটির সবক’টি কমিটি পুনর্গঠন করে ঢেলে সাজানো হয়।

ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পর্ষদের সঙ্গে গত বছরের ২৯ নভেম্বর বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠক থেকে সাতদিনের মধ্যে পরিচালকদের অন্তত ২০০ কোটি টাকার জোগান দিতে গভর্নর ফজলে কবির নির্দেশ দেন। একই দিন ব্যাংকটিকে টেনে তুলতে নতুন পর্ষদকে তিন মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু পরিচালকরা টাকা না দেয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এরপর মোহাম্মদ মাসুদকে সরিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে চৌধুরী নাফিজ সারাফাত দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

দেশের পুরো ব্যাংকিং খাতে ক্ষত সৃষ্টি করা ফারমার্স ব্যাংককে টেনে তোলার দায়িত্ব এককভাবে কাঁধে তুলে নেয় সরকার। ডুবন্ত ব্যাংকটি উদ্ধারে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৭১৫ কোটি টাকা জোগান দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংক ১৬৫ কোটি টাকা করে মূলধন জোগান দেয়। এর বাইরে আইসিবি দিয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। যদিও প্রতিষ্ঠালগ্নেই ফারমার্স ব্যাংকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আইসিবি ৬০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছিল। সব মিলিয়ে চলতি বছরের মে মাসে ফারমার্স ব্যাংকে ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত এ পাঁচ প্রতিষ্ঠান। নতুন করে জোগান দেয়া মূলধন যুক্ত হয়ে ফারমার্স ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।

মূলধন জোগান দেয়ার বিপরীতে চার ব্যাংক ও আইসিবি ফারমার্স ব্যাংকে পরিচালক পদ পায়। বর্তমানে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন চৌধুরী নাফিজ সারাফাত। তিনি ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির পর্ষদে আছেন। ব্যাংকটির অন্য পরিচালকরা হলেন— ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি হাসান তাহের ইমাম, সোনালী ব্যাংকের প্রতিনিধি মো. ওবায়েদ উল্লাহ্ আল্ মাসুদ, জনতা ব্যাংকের প্রতিনিধি মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ, অগ্রণী ব্যাংকের প্রতিনিধি মো. শামস-উল-ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের প্রতিনিধি মো. আতাউর রহমান প্রধান, আইসিবির প্রতিনিধি কাজী সানাউল হক, ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি মো. আবু কায়সার, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের প্রতিনিধি তামিম মারজান হুদা।

মেয়াদি আমানত ও কলমানি হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে জনতা ব্যাংকের। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকটি উদ্ধার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৬৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে জনতা ব্যাংক। তার পরও নতুন করে ফারমার্সের ১০০ কোটি টাকার বন্ড কিনতে হচ্ছে ব্যাংকটিকে।

চলতি বছরের মার্চ শেষে ফারমার্স ব্যাংকের আমানত ছিল ৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণ ছিল ৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা। আমানতের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে ফারমার্স ব্যাংক। এর মধ্যে ৯৬৭ কোটি টাকার ঋণ নাম লিখিয়েছে খেলাপির খাতায়, যা ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ১৯ শতাংশ। বিপর্যস্ত ব্যাংকটি ২০১৭ সালে ৫৩ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। ফারমার্স ব্যাংকে আমানত জমা রেখে ফেরত পায়নি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা না পেয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দফায় দফায় অভিযোগ জানিয়েছে। আমানত তুলতে মুখিয়ে আছে বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ ফারমার্স ব্যাংকে টাকা রাখা গ্রাহকরাও।

এ বিষয়ে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসান খসরুর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তাদের উভয়ের মোবাইল নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ আগস্ট ২৯,২০১৮ 

আওয়ামী লীগ নেতার বিড়াল মারার অভিযোগে দিনমজুর আটক

বন্দরে আওয়ামী লীগ নেতার বিড়াল মেরে ফেলার অভিযোগে এক দিনমজুরকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তির নাম মোস্তফা মিয়া (৫২)। বিড়াল কবুতর মেরে ফেলার পর বিড়াল মরে যাওয়ায় দিনমজুরকে আটকের চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ধামগড় ইউপি কামতাল গ্রামের খামপার এলাকায়। দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে বলে বিড়াল অন্যত্র নিয়ে ফেলে দেয়ায় হযরত আলী নামের কৃষকের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে পুলিশের বিরুদ্ধে। বিড়াল মরে যাওয়ার ঘটনাকে পুঁজি করে পুলিশি হয়রানির সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার।

গ্রামবাসী জানান, ২/৩ মাস যাবৎ কয়েকটি পাগলা বিড়াল গ্রামের হাঁস-মুরগি ও কবুতর মেরে ফেলেছে। বিড়াল এসব ক্ষতি করে বলে মোস্তফা মিয়া একদিন বিড়াল মারার চেষ্টা করেছিল। শনিবার রাত থেকে হযরত আলীর বাড়ির পাশে একটি বিড়াল মরে পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। বিড়াল মরার পচা দুর্গন্ধে আশপাশের বাড়িতে বসবাস করা অযোগ্য হয়ে পড়ে। রোববার সকালে হযরত আলী বিড়ালটি অন্যত্রে নিয়ে ফেলে দেয়। এরপর পাশের গ্রাম চিড়ইপাড়া কলোনির মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন মৃত বিড়ালটি তার নিজের বলে দাবি করে। পরে তিনি কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে মৌখিক ভাবে বিড়াল মারার অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার সন্ধ্যায় এএসআই আমিরুল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দিনমজুর মোস্তফাকে তার বাড়ি থেকে ধরে আনেন। এ সময় কৃষক হযরত আলীকে ধরে নিতে তার বাড়িতেও অভিযান চালায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মোস্তফাকে ছেড়ে দিলেও পুলিশের ভয়ে বাড়িতে আসতে পারছে না কৃষক হযরত আলী। পুলিশ আতঙ্কে রয়েছে তার পরিবার। ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিড়াল মেরে ফেলার ঘটনাটি ইসমাইল আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এবং মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। পরে মোস্তফা মিয়াকে ডেকে এনে উভয়কে মীমাংসা করে দেয়া হয়। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ আগস্ট ২৯,২০১৮ 

EC plans EVMs for 100 seats

JS polls in last week of Dec, says EC secy


Rashidul Hasan


Just about four months before the national polls, the Election Commission is planning to use electronic voting machines (EVMs) in around 100 out of the 300 constituencies.

EC Secretary Helaluddin Ahmed made the disclosure yesterday amid strong opposition from different political parties, including the BNP, regarding the use of EVMs.

"If everything goes well, including legal reforms and the opinions of political parties, the Commission will be able to use electronic voting machines in one-third of the constituencies in the parliamentary polls,” he said, adding that the polls would be held in the last week of December. 

The EC has already sent a proposal to the planning ministry for its approval to procure 1.5 lakh EVMs for around Tk 3,500 crore, he told reporters at the Nirbachan Bhaban in the capital's Agargaon.

According to a Planning Commission document obtained by The Daily Star, no feasibility study on the EVM project has been carried out. A project evaluation meeting was supposed to be held on August 19 but was postponed.

Yet Tk 3,515 crore has already been allocated for the procurement of 1.5 lakh EVMs and other necessary equipment, the document said.  

At present, around 10 crore voters are registered. So if EVMs are used in 100 constituencies, roughly about 3 crore voters will get to vote electronically.

Currently, there is no provision in the Representation of the People Order (RPO) for using voting machines in national elections.

So, to use EVMs in the December polls, the RPO, which regulates elections, must be amended. Also, separate rules have to be formulated allowing electronic voting, the EC secretary said.

Asked, Helaluddin told The Daily Star that they would move to float tenders for the procurement of EVMs upon approval from the Planning Commission.

Earlier on August 26, the EC held a meeting at the Nirbachan Bhaban, chaired by Chief Election Commissioner KM Nurul Huda, and discussed bringing necessary changes to the RPO.

At the briefing yesterday, Helaluddin said the EC would hold a meeting tomorrow to discuss the RPO amendment. Later, they would send the proposal in this regard for law ministry's vetting. 

"Once the law is passed, the Commission will sit with the political parties [to get their opinions regarding EVMs]. The decision will then be taken whether the EVMs can be used in the parliamentary elections or not."

The EC has completed 80 percent of its preparatory work for the national election, he added.

The Commission has a plan to arrange fairs to promote EVM usage in Dhaka city in September, especially to attract young voters. It also intends to do the same in other districts as well.

So far, the EC has procured 380 EVMs and used them on a limited scale in different local body elections.

In the recently held city corporation elections, EVMs were used in three polling centres in Khulna City Corporation with 10,000 voters; two centres in Sylhet City Corporation with 5,413 voters; 11 centres in Barisal City Corporation with 25,000 voters; and two centres in Rajshahi City Corporation with 3,383 voters, sources said. 

In the EC's electoral dialogues last year, 35 of the 40 registered parties, including the BNP and its allies, opposed the idea of using EVMs in the next general election.

The other five -- the ruling Awami League, its allies Workers Party of Bangladesh, Jatiya Samajtantrik Dal faction led by Hasanul Haq Inu and Bangladesher Samyabadi Dal (M-L) and Zaker Party -- supported the use of EVMs.

The BNP has all along been opposing the EC move, alleging that this might facilitate “the government's plan for election engineering”.

  • Courtesy: The Daily Star /Aug 29, 2018