Search

Thursday, August 9, 2018

নির্বাচনের আগেই অনিয়ম মেনে নিলেন সিইসির?

সম্পাদকীয়

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা শুরু থেকে নির্বাচন নিয়ে এত স্ববিরোধী, বালখিল্য ও কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য করে এসেছেন যে তা আমাদের মধুসূদন দত্তের প্রহসনগুলোর কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা অনায়াসে তাঁর এসব বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য বলে উড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু এই বক্তব্য তো কোনো ব্যক্তির নয়, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের, যিনি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করার কথা বলে দায়িত্ব নিয়েছেন।

সিইসি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তবে অনিয়ম হলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের প্রধান চুরি ঠেকাতে মোটেই উৎসাহী নন; চুরি হওয়ার পর চোরের পেছনে ধাওয়া করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর এই আশ্বাসে দেশের মানুষ আদৌ আশ্বস্ত হতে পারে, এ রকম কোনো আলামত দেখি না।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম–কারচুপির পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকেরা সিইসিকে প্রশ্ন করেছিলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনেও অনুরূপ অনিয়ম–কারচুপি হবে কি না। তিনি প্রকারান্তরে অনিয়ম হবে, সে কথাই স্বীকার করে নিয়েছেন। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যা হয়েছে, তাকে অনিয়ম বললে সত্য আড়াল করা হয়। তিনি বলেছেন, বরিশালে বেশি অনিয়ম হয়েছে বলে সেখানে বেশি ব্যবস্থা নিয়েছেন। কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? ১০–১২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছেন। এটাই তঁার ব্যবস্থা!

কিন্তু বরিশালের অভিজ্ঞতা কী? দুপুর ১২টার আগেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকেরা অধিকাংশ কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে ইচ্ছামতো সিল মেরেছেন। বিরোধী দলের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। এ কারণে সেখানে পাঁচজন মেয়র প্রার্থী দুপুরেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই নির্বাচনী প্রহসন দেখার জন্য বরিশালের ভোটার তো বটেই, দেশবাসীও প্রস্তুত ছিলেন না। কমিশনের প্রথম ও প্রধান কাজ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। ভোটের দিন কিংবা আগে সেটি করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

সিইসি নির্বাচনে অনিয়মের কথা বলেছেন। কিন্তু ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্সে পাইকারি সিল মারা, বিরোধী দলের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া কি নিছক অনিয়ম? তিনি এত দিন বলে আসছিলেন নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে। এরপরও পাঁচ সিটিতে ব্যাপক অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও দখলদারির মহড়া দেখা গেল। এখন তিনি বলছেন অনিয়ম পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। তাহলে নির্বাচন কমিশনের কী প্রয়োজন? প্রার্থীদের মধ্যে যাঁর যেখানে গায়ের জোর আছে, সেখানকার কেন্দ্র দখল করে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেবেন।

নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা ও রংপুরে মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের কাছে যে আস্থা অর্জন করেছিল, পরবর্তী পাঁচ সিটিতে অনিয়ম–কারচুপির 

নির্বাচন করে সেটি হারিয়ে ফেলেছে। জনগণ তাদের কার্যক্রমে শুধু হতাশ হয়নি, অনেকটা বিরক্তও। যেখানে বাংলাদেশে নির্বাচন একদা উৎসব হিসেবে গণ্য হতো, সেখানে সেটি এখন আতঙ্কে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

নির্বাচন কমিশনের পদাধিকারীরা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের কথা বলে দেশবাসীর কাছে শপথ নিয়েছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন বলে তঁারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আবারও কমিশনকে সেই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে এবং ভোটারদের মনের শঙ্কা দূর করা গেলে নির্বাচন–পরবর্তী অনিয়ম নিয়ে এখনই মাথা না ঘামালেও চলবে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ৯,২০১৮

No comments:

Post a Comment