পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ১০ পশ্চিমা দূতের বৈঠক
মিজানুর রহমান
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বেশ
কয়েকজন পশ্চিমা কূটনীতিক দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। গতকাল দিনের শুরুতে ১০ জ্যেষ্ঠ
কূটনীতিকের একটি দল পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান।
ওই দলে ২৮ রাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের ঢাকাস্থ কার্যালয়ের চার্জ দ্য
অ্যাফেয়ার্সসহ ওই জোটের সদস্য ৮ দেশের আবাসিক মিশনের প্রধান এবং ভারপ্রাপ্ত
মার্কিন রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে- পশ্চিমা দূতরা নিজে থেকেই
সচিবের সঙ্গে দেখা করেন।
সচিবের দপ্তর সংলগ্ন সভাকক্ষে তারা বৈঠকে মিলিত
হন। এক ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি,
সন্দেহভাজনদের আটক-রিমান্ড, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা,
সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি নিয়ে
আলোচনা হয়। সূত্র মতে, এই মুহূর্তে পশ্চিমা বেশির ভাগ রাষ্ট্রদূতই
ঢাকায় নেই।
মূলত চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সরাই সচিবের সঙ্গে
কথা বলেন। তারা মোটা দাগে সরকারের প্রতি যে বার্তাটি দেয়ার চেষ্টা করেন তা হলো-
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যেভাবে তার সীমান্ত এবং হৃদয় খুলে দিয়ে বিশ্বব্যাপী
সমাদৃত হয়েছে কোনো একটি ঘটনা বা কঠিন পরিস্থিতি যেন সেই অর্জনকে ম্লান করে না দেয়।
পশ্চিমা কূটনীতিকরা ‘ডিফিক্যাল্ট চ্যালেঞ্জ’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন জানিয়ে বৈঠকে
উপস্থিত ঢাকার এক কূটনীতিক মানবজমিনকে বলেন- আসলে তারা সম-সাময়িক ঘটনাগুলোর প্রতি
ইঙ্গিত করেছেন। আরো স্পষ্ট করে বললে- নিরাপদ সড়কের দাবিতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই বুঝিয়েছেন তারা।
তারা এ নিয়ে তাদের হেড কোয়ার্টারের বেশ চাপে
আছেন বলেও জানান বিদেশি কোনো কোনো কূটনীতিক। তবে প্রায় সব কূটনীতিকই আন্দোলন
চলাকালে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের ওপর হেলমেটধারী বাহিনীর আক্রমণের
নিন্দা জানান। তারা এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের অনুরোধ জানান। যদিও সরকারের তরফে
ছাত্রদের ব্যাগ থেকে চাপাতি নিয়ে আক্রমণের সচিত্র তথ্য তুলে ধরা হয়। কূটনীতিকরা
আক্রমণকারীদের গ্রেপ্তার না করে সাধারণ ছাত্র এবং যারা শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনে
সমর্থন দিয়েছিল তাদের হয়রানির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এদিকে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়ি বহরে হামলার বিষয়েও জানতে চান ইউরোপীয় ইউনিয়নের
প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে এ ঘটনা পরবর্তী সরকারের পদক্ষেপ বিষয়েই জানার আগ্রহ ছিল
তাদের। এ নিয়ে এক কূটনীতিক বলেন- আলোচনায় বিষয়টি তুলেন ইউরোপের এক কূটনীতিক।
সম-সাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই
বিষয়টি আসে। এ নিয়ে আলাদা কোনো কথা হয়নি। পররাষ্ট্র সচিব কূটনীতিকদের বলেছেন-
হামলার ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত এবং দুঃখজনক। বিশ্বব্যাপী
‘বিদেশী বান্ধব বাংলাদেশ’ এর যে ঐতিহ্য ও সুনাম রয়েছে, এ হামলা তার
সম্পূর্ণ বিপরীত।
সচিব প্রশ্ন রাখেন মোহাম্মদপুর এলাকায় মার্কিন
রাষ্ট্রদূতের নৈশভোজে যাওয়ার বিষয়টি কেন আগে থেকে পুলিশকে অবহিত করা হয়নি? যদিও
পুলিশের ত্বরিত পদক্ষেপেই রাষ্ট্রদূত এবং তার সহযাত্রীরা নিরাপদে অক্ষত অবস্থায়
প্রস্থান করতে পেরেছেন। সচিব এ-ও বলেন, একজন কূটনীতিকের গাড়িতে হামলা বরাবরই
নিন্দনীয়। সরকার আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
No comments:
Post a Comment