Search

Wednesday, January 25, 2023

ফ্যাসিবাদের পতনকে ত্বরান্বিত করুন

———————————— 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 

২৫ জানুয়ারি বাকশাল কায়েমের দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করুন।

গণতন্ত্রের মুখোশধারী একদলীয় বাকশালী শাসন মানি না।

ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ চাই।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন চাই।

 জনগণের গণতন্ত্র চাই।


প্রিয় দেশবাসী, আসসালামুয়ালাইকুম। 

সচেতন দেশবাসী তথা বিশ্ববাসী জানে আপনাদের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক জীবন আজ  ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের লুটতন্ত্রের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পতিত হয়েছে। একটি ক্ষুদ্র লুটেরা গোষ্ঠির হাতে আজ দেশের সিংহভাগ সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। আপনাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে বিগত নির্বাচনসমূহের সাজানো নাটক আর রাষ্ট্রীয় ডাকাতির মাধ্যমে। 

বিনাভোটের পার্লামেন্ট, ভোটবিহীন সরকারের পক্ষে একের পর এক গণবিরোধী আইন তৈরী করছে। প্রধান বিচারপতিকে অপমান করে দেশান্তরিত হতে বাধ্য করে প্রমাণ করেছে বিচার বিভাগের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ। সকল ধরনের গণমাধ্যম একচেটিয়া ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেলফ সেন্সরশিপ কায়েমে বাধ্য করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর মাধ্যমে নাগরিকদের ডিজিটাল স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্র ক্ষমতার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে পরিণত করা  হয়েছে ফ্যাসিবাদের নির্মম কার্যকর হাতিয়ারে। গোটা সমাজকে আজ বিভক্ত করা হয়েছে হিংসার ভিত্তিতে।

আজকের এই পরিস্থিতি — ১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন আওয়ামীলীগ জাতীয় সংসদে মাত্র ১১ মিনিটে স্বৈরাচারীভাবে ৪র্থ সংশোধনী জারি করে সংবিধানের মৌলিক চরিত্র বিকৃত করে যে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল, তারই আধুনিক প্রতিফলন। 

ঐ ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল পদ্ধতি কায়েম করে স্বাধীনতার চেতনার মূলমন্ত্রসমূহকে গলাটিপে হত্যা করা হয়ে ছিল। 

সব রাজনৈতিক দল বাতিল করে কেবল একটি মাত্র দল ‘বাকশাল’ গঠন করা হয়েছিল। জাতীয় সংসদ জনপ্রতিনিধি তথা সকল ক্ষমতা ও স্বাধীনতা  সমর্পণ করা হয়েছিল রাষ্ট্র প্রধান ও বাকশাল প্রধানের হাতে।  

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে সব পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছিল কেবল ৪টি সরকারি পত্রিকা বাদে।

মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের শেষ রক্ষক বিচার বিভাগের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল সেই ক্ষমতা। বিচারক নিয়োগ ও পদচ্যুত করাসহ তাকে নিয়ন্ত্রণের সকল  ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্র প্রধান ও বাকশাল প্রধানের হাতে। 

রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সকল ক্ষমতা কেবলই দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্র প্রধান ও বাকশাল প্রধানের হাতে। যিনি ছিলেন সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে।

এমনকি নবগঠিত বাকশালের গঠনতন্ত্রও এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছিল যে সেই দল হয়েছিল কেবলই একজন ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা পুরণের হাতিয়ারে। 

এভাবেই দল, রাষ্ট্র ও সমাজকে এক ব্যক্তির হাতে সমর্পন করে রক্তার্জিত স্বাধীন দেশকে পরিণত করা হয়েছিল এক রাজার রাজ্যে। ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েছিল প্রবাসী সরকার প্রধান তাজউদ্দিন আহমেদ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি  জেনারেল ওসমানীর মত মানুষেরা। ক্ষমতার পাদপীঠে চলে এসেছিল তারই বিশ্বস্ত খন্দকার মুস্তাক আহমেদ। তিন চার জন বাদে মুজিব মন্ত্রিসভার সবাইই শপথ নিয়েছিল মুজিব হত্যাকারীদের মন্ত্রিসভায়।

আজ এ কথা ইতিহাস প্রমাণ করে যে গণতন্ত্রের পথ পরিহার করার পরিণাম কত নিষ্ঠুর হতে পারে।

সেদিন ঐ রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের পরপর একমাত্র সামরিক বাহিনীর উপপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান সাংবিধানিক পথে হাটতে চাইলেও সামরিক বাহিনীর তৎকালীন প্রধান জেনারেল শফিউল্লাহর আত্মসমর্পনের কারণে সেদিন তা সম্ভব হয়নি।

খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান ও তাহেরের বিদ্রোহের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতা বিপ্লব ও সংহতির মধ্য দিয়ে জেনেরেল  জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে ফিরে এলে নেমে এসেছিল স্বস্তি,  ফিরে এসেছিল আস্থা ও শান্তি। পর্যায়ক্রমে জনগণ ফিরে পেয়েছিল ভোটাধিকার, পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা গণতন্ত্র।

১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকায় পতন হয় স্বৈরচারী এরশাদ সরকারের। দলনিরপেক্ষ সরকরের অধীনে ১৯৯১ এ দেশনেত্রী বেগম খালেদ জিয়া নির্বাচিত হন প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ সর্বসম্মতভাবে কায়েম করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা। যা নির্বাসিত হয়েছিল বাকশালের মাধ্যমে। ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে দলনিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজিত হয় সংবিধানে।

কিন্তু ২০০৯ এ বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য শুরু করে নানা ফন্দিফিকির। সে লক্ষে তারা বাতিল করে দলনিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। সংবিধানের তিন চতুর্থাংশকে পরিণত করে দলীয় বয়ানে এবং সংশোধনের অযোগ্য। রেফারেন্ডামের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করার জনগণের ক্ষমতাকে করা হয় বাতিল। জনগণের মালিকানা চর্চা ও সংরক্ষনের দলিলের বদলে সংবিধানকে পরিণত করা হয়েছে দলীয় ক্ষমতা রক্ষার দলিলে। প্রকারন্তরে যা বাকশাল ব্যবস্থার চেয়েও ভয়াবহ। অনির্বাচিত এই সরকার এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সকল ধরনের ভিন্ন মতকে দমন করে চলছে নিষ্ঠুরভাবে। শত শত নেতা কর্মীদের গুম, খুন করছে ও নির্যাতন করে চলছে লাখো নেতা কর্মীদের। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান, বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীর নামে চলছে মিথ্যা মামলা। রাষ্ট্রীয় সকল বাহিনীক পরিণত করা হয়েছে দলীয় ক্ষমতা ও স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারে।

এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রানের জন্য আজ এই সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি দলনিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া জনগণের আর কোন বিকল্প নেই। তাই ১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার এই দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে দেশব্যাপী পালন করে চলমান ফ্যাসিবাদের পতনকে তরান্বিত করার আহ্বান জানাই দেশবাসীকে। ইতিহাস বলে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বিজয় অনিবার্য। 

এবারও সে বিজয় অনিবার্য ইনশাল্লাহ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি 

No comments:

Post a Comment