Search

Thursday, November 30, 2017

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কাছে টানার চেষ্টায় বিএনপি


মাহমুদ আজহার



নতুন প্রজন্মকে নিয়ে ভাবনায় বিএনপি। একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর তরুণ নেতৃত্বকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।

বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ৪৩ লাখ নতুন ভোটারকে কাছে টানার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। সেজন্য প্রযুক্তিনির্ভর ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে সামনে রেখেই তৈরি করা হয়েছে দলের গঠনতন্ত্র। নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনার  বিভিন্ন দিক নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছেন ভিশন-২০৩০। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি ও তরুণদের নিয়েই দলের চিন্তাধারা তুলে ধরা হয়েছে। তরুণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে বেশকিছু সম্পাদকীয় পদও সৃষ্টি করা হয়েছে। বিএনপি-প্রধান বেগম জিয়ার বক্তৃতা-বিবৃতিতেও এখন সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব।

জানা যায়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের কথা মাথায় রেখেই বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটিতে একঝাঁক তরুণ নেতাকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটিতেও এবার ঠাঁই পেয়েছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব।

দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানও তরুণ। তার চিন্তাধারাও প্রতিফলিত হচ্ছে বিএনপির সর্বস্তরে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলোতেও তরুণ নেতৃত্বের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতৃত্বেও তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বেগম জিয়াও দলের তরুণ নেতা-নেত্রীদের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। অবশ্য বিএনপি বলছে, পুরনো নেতাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই তরুণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হচ্ছে। বিএনপি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ৮০ ভাগ ভোটার তরুণ। সুতরাং তরুণদের বিরাট একটি অংশ ভবিষ্যতে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। তাদের ভোট খুবই মূল্যবান। তাদেরই আশা-আকাঙ্ক্ষা যে দল পূরণ করতে পারবে, সে দলকেই তারা ভোট দেবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গতকাল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তরুণদের ঘিরেই। সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বে তারাই আমাদের ভরসা। আজকের এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সারা বিশ্বে যে উন্নয়নের জোয়ার সেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে তরুণরা। সুযোগ-সুবিধা করে দিলে তারাই বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়েছেন। সেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নতুন প্রজন্মকে। তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, তাদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা, তাদের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও জ্ঞানভিত্তিক তরুণসমাজ আমরা দেখতে চাই। তাদের জন্য সেই পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টির দায়িত্ব আমাদের। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর। ’ বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক তরুণ নেতা আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী তরুণদের জয়জয়কার। এ ক্ষেত্রে বিএনপিও তরুণদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটি এমনকি তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বেও তরুণদের দেখা যাচ্ছে। প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক লড়াইয়ে পুরনোদের পেছনে ফেলে তরুণরাই এগিয়ে। ’ নতুন প্রজন্মকে সামনে রেখেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার ভিশনে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ভিশনে বলা হয়, সেবা খাতনির্ভর উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সংগতি রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে রূপান্তর করা হবে। আউটসোর্সিং ও সফটওয়্যার খাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিদেশ থেকে অর্জিত অর্থ দেশে আনয়নের ক্ষেত্রে সকল প্রকার অযৌক্তিক বাধা দূর করা হবে। খালেদা জিয়ার ভিশনে ভিওআইপি উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ইন্টারনেটের ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা হবে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে বিশেষ করে মফস্বলে উচ্চগতির ফোর-জি কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। উচ্চগতির ইন্টারনেট কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার শিল্পে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল উপাদানগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে দেশে উৎপাদন উৎসাহিত করা হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, হাইটেক পার্ক, এডুকেশন পার্ক, কম্পিউটার ভিলেজ, আইটি ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞান বিকাশ ও দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো হবে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার সমর্থিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। বেগম খালেদা জিয়া বলেন, প্রত্যেক জেলায় একটি করে ‘স্মার্ট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এসব স্কুল অন্যান্য স্কুলের জন্য মডেল প্রযুক্তি প্রদর্শকের কাজ করবে। প্রতি জেলায় একটি করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ প্রাথমিক স্তরে প্রশিক্ষিত শিক্ষক, হার্ডওয়্যার, ল্যাবরেটরিসহ সব দিক থেকে উন্নততর আইটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বিএনপি জনগণের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে বলে তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবিষয়ক সব আইনের অগণতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক ধারাসমূহ সংশোধন করবে। বিএনপির তরুণ নেতারা বলছেন, বিএনপির হাইকমান্ড ভিশন সামনে রেখে এগোলেই আগামীতে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধিশালী দেশে পরিণত হবে। কারণ, বিশ্বব্যাপী এখন তরুণদের জয়জয়কার।
- উৎসঃ bd-pratidin.com 

Monday, November 27, 2017

আজ শহীদ মিলন দিবস - বিচারের বাণী কাঁদে নীরবে নিভৃতে

কাদের গনি চৌধুরী 


শহীদ ডা. মিলন দিবস আজ। ১৯৯০ সালের এই দিনে সাক্ষাত স্বৈরাচার  হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের (এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত) লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসী বাহিনী গুলি করে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বিএমএ’র তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব ডা. শামসুল অালম খান মিলনকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ রোষে বিষ্ফোরিত হয় গোটা বাংলাদেশ। আজকের এই দিনে ডা. শামসুল অালম  খান মিলন যখন বিএমএ নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সঙ্গে রিক্সায় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির চত্বর অতিক্রম করছিলেন-ঠিক তখন এরশাদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের বুলেট দীর্ণ করে ডা. মিলনের বুক। মুহূর্তে তিনি রিক্সার ওপর ঢলে পড়েন। রিক্সা বেয়ে রক্তধারা প্রবাহিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পিচঢালা রাস্তায়। ছাত্র-জনতা  ধরাধরি করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ডা. মিলন মৃত্যুবরণ করেন। পেশাজীবী সংগঠনের তরুণ নেতা ও প্রগতিবাদী রাজনীতির সমর্থক এবং একজন চিকিৎসকের গুলিতে শহীদ হওয়ার ঘটনা মুহূর্তেই ’৯০-এর চলমান স্এরশাদ বিরোধী আন্দোলন স্বৈরাচারীপ মৃত্যুশেল  গণ অভ্যুত্থানে পরিণত করে। রাজধানী ঢাকা সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভ এবং উত্তাল মিছিল নগরীতে পরিণত হয়। ক্যাম্পাসে বের হয় খণ্ড  মিছিল। মিছিল ছড়িয়ে যায় সারাদেশে। পুলিশ ও এরশাদের ঘাতকবাহিনীর সাথে বিক্ষুব্ধ জনতার লড়াই শুরু হয়। অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে গোটা দেশ। 

এর পরপরই সন্ধ্যার দিকে ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের প্রধান দুই শীর্ষ নেত্রী বেগম  জিয়া ও শেখ হাসিনাকে গৃহবন্দী করে স্বৈরাচারী এরশাদ।  সন্ধ্যার পরে রাজধানী ঢাকা শহরে কার্ফ্যু জারি করা হয় এবং কাফ্যু ভেঙে জনগণ এরশাদ পতনের আন্দোলন শুরু করে। গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়। স্লোগান ওঠে-শহীদ ডা. মিলনের রক্ত-এরশাদ পতনের মন্ত্র’‘,এরশাদের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’ ও  রশি ধরে মার টান, গদি হবে খান খান ইত্যাদি। 

কয়েক দিনের টানা গণ অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে ’৯০-এর ৪ ডিসেম্বর জনতার রায়ের কাছে মাথা নত করেন। সাধের তখত ছাড়তে হয়। শহীদ হওয়ার সময় ডা. শামসুজ্জামান খান মিলন বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক ছিলেন। 

১৯৯০ সালের ২৭ নবেম্বর-এর   এই শোকাবহ ঘটনার স্মরণে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি বছর শহীদ ডা. মিলন দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ডা. শামসুল আলম খান মিলনকে সচরাচর শহীদ ডা. মিলন সম্বোধন করা হয়।  মৃত্যুকালে পেশায় চিকিৎসক শামসুল আলম খান মিলন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এ ছাড়া ওই সময় তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) যুগ্ম-মহাসচিবও ছিলেন।

ডা. মিলনের জন্ম ১৯৫৭ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। ১৯৭৩ সালে তিনি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে শিল্পকলা (ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টস) বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন নটরডেম কলেজের ছাত্র হিসেবে। এরপর চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন (ব্যাচ কে-৩৪)। ১৯৮৩ সালে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন ও ডাক্তারি পেশায় যোগ দেন।

সেদিন দেশব্যাপী রাজপথ-রেলপথ অবরোধ আন্দোলন চলছিল। ঘটনার দিন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের একটি সভায় যোগ দিতে রিকশাযোগে পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) যাচ্ছিলেন ডা. মিলন।  ডা. মিলনকে  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে দাফন করা হয়।

তবু গুম হওয়ারা ফিরছে কই?




‘বাবা মারা গেলে সন্তান কবরের পাশে গিয়ে জিয়ারত করে। কিন্তু গুমের শিকার আমার বাবা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, আমি জানি না। আমার মতো দুর্ভাগা আর কেউ নেই।’

কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন শাহরিয়ার কবির—কুমিল্লার লাকসামের বিএনপি নেতা হুমায়ুন পারভেজের ছেলে। চার বছর ধরে তাঁর বাবার খোঁজ নেই। শুধু শাহরিয়ার কবির নন, তাঁর মতো আরও দুটি পরিবার তাদের স্বজনসহ গুমের শিকার সবাইকে ফিরে পেতে অাকুল আকুতি জানায়। কার কাছে? বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার ফোরাম আয়োজিত ‘গুম, খুন ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে গুমের শিকার পরিবারগুলো উপস্থিত ছিল। গতকাল ২৬ নভেম্বর রোববার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর কুমিল্লার লাকসাম থেকে তাঁর বাবা হুমায়ুন পারভেজ এবং রাজনৈতিক সহকর্মী সাইফুল ইসলাম ও জসিমউদ্দিন অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে র‍্যাব-১১-এর একটি দল কুমিল্লার হারিসপুরে অ্যাম্বুলেন্সের গতি রোধ করে। একপর্যায়ে র‍্যাবের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্স থেকে তিনজনকে নামিয়ে তঁদের গাড়িতে তুলে নেন। পরদিন জসিমউদ্দিনকে লাকসাম থানায় হস্তান্তর করা হলেও হুমায়ুন পারভেজ চার বছর ধরে নিখোঁজ। এ ব্যাপারে লাকসাম থানায় মামলা হয়েছে। জসিমউদ্দিন এলাকায় অাছে। তবু  পুলিশ বলছে, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

হুমায়ুন পারভেজের স্ত্রী ও অনুষ্ঠানের সভানেত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, সন্তানের শোকে তাঁর শ্বশুর মারা গেছেন। স্বামীকে ফেরত পেতে তিনি ঘর থেকে বেরিয়েছেন। তিনি সব গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

একই ঘটনায় গুমের শিকার সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফসানুল ইসলাম দাবি করেন, চার বছর আগে গুমের মামলা করলেও তা এগোয়নি। মামলা নিয়ে পুলিশও কোনো কথা বলেনি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকাশকসহ এ নিয়ে ৪০০ ব্যক্তি গুম হয়েছেন।

চার বছর আগে রাজধানী থেকে গুম হন সাজেদুল ইসলাম। গতকাল সেমিনারে তাঁর বোন আফরোজা ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর র‍্যাব রাজধানীর বসুন্ধরার আবাসিক এলাকা থেকে তাঁর ভাই সাজেদুল ইসলামসহ ছয়জনকে এবং বাসা থেকে আরও দুজনকে ধরে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। র‍্যাব সদর দপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে স্বজনেরা খুঁজে চলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি বলেন, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আফরোজা ইসলাম মনে করেন, যাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাঁদের তুলে নেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইনজীবী রফিক সিকদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি রবিউল হোসেন।


স্মরণ - শহীদ ডা. মিলন ও আজকের গণতন্ত্র

সেলিনা আখতার 


আজ ২৭ নভেম্বর, শামসুল আলম খান মিলনের ২৭তম শাহাদত দিবস। ১৯৯০ সালের এই দিন বেলা আনুমানিক ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে গণগ্রন্থাগারের কোনায় মিলন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়। মিলনের শহীদ হওয়ার সংবাদে তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনরত সব পেশাজীবী সংগঠন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠে। জেনারেল এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের দুর্নীতি আর দুঃশাসনের কারণে সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ সেদিন রাজপথে ফেটে পড়ে। গণরোষ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ফলে এরশাদ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। গণমানুষের বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গণতন্ত্রের শুভ সূচনা হয়।

প্রতিবছর এই দিনে মিলন সম্বন্ধে স্মৃতিচারণামূলক কিছু না কিছু লিখতে হয় আমাকে। মিলনের বিষয়ে লিখতে হলে প্রাসঙ্গিকভাবেই মিলনের রাজনৈতিক চেতনা ও জীবনাদর্শ প্রসঙ্গ চলে আসে। কিশোর বয়স থেকেই মিলন ছিল সমাজসচেতন, স্বাধীন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দৃঢ় চরিত্রের একজন মানুষ। ১৯৬৯ আর ১৯৭১-এর আন্দোলনমুখর আগুন ঝরানো দিনগুলোর ছোঁয়া মিলনকে স্বদেশের প্রতি বিশ্বস্ত একজন বিপ্লবী দেশপ্রেমী করে তুলেছিল। কৈশোর থেকে ক্রমেই নিজেকে উন্নীত করেছিল দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন সংগ্রামী যুবকরূপে। এরপর ওর রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটতে দেখি।

১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর যতগুলো রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছিল, তার প্রতিটিতেই মিলনের অংশগ্রহণ ছিল অবধারিত। ১৯৮২ সালে মজিদ খান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন, ১৯৮৪ সালে সামরিক শাসনের অবসান ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গণ-আন্দোলন, ১৯৮৬ ও ৮৭-র আন্দোলন নিয়ে মিলন ডায়েরিতে লিখেছিল ‘মুক্তিপাগল মানুষের স্রোত নেমেছে রাজপথে। সেই স্রোত ব্যর্থ হয় ষড়যন্ত্রের নীলনকশায়। ১৯৮৭-তেও ব্যর্থ হয় লাগাতার হরতাল। নূর হোসেনের আত্মদান ব্যর্থ হয়ে যায়। ওই মিছিলে দেখেছি রাজনীতির মুখোশ পরা কিছু মানুষ।’ মনে পড়ে সেই মিছিল থেকে মিলন বাসায় ফিরেছিল পিঠে পুলিশের লাঠিপেটার চিহ্ন নিয়ে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করে মিলন জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। স্বপ্ন দেখেছে, বাংলাদেশ হবে সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী একটি রাষ্ট্র, যেখানে শ্রেণিবৈষম্য থাকবে না, বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। তাই জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি চিকিৎসকদের পেশাগত আন্দোলনও সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। তাই তো এরশাদ সরকার প্রণীত গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধাচরণ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এ সময় ডায়েরিতে লিখেছিল ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো একটি মৌলিক ইস্যুকে কিছুতেই গণবিরোধী সরকারের খেয়াল-খুশির ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না।’ দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘ ২৬ বছর নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালিত হলেও আজও জনগণের কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়েছে সেনাশাসকদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কারণে। সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো ভূলুণ্ঠিত হয়েছে পদে পদে। বারবার আমাদের টগবগে তরুণ সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে গণমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আমাদের সন্তানদের রক্তস্রোতে অর্জিত জাতীয় অর্জনগুলো আজও ভূলুণ্ঠিত। বারবার আশাহত সাধারণ মানুষ আজ রাজনীতির প্রতি, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তরুণেরা আজ অসুস্থ ও সুবিধাবাদী রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

বর্তমানে দেশ বহুমুখী সমস্যায় নিমজ্জিত। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে হঠাৎ করেই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত—এই দুই শ্রেণির মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করায় সাধারণ মানুষের জীবনে আজ দুর্ভোগ নেমে এসেছে। দেশবাসী যেন ব্যবসায়ীদের হাতে একপ্রকার জিম্মি। প্রশাসনিক কোনো আইন বা নিয়ম এদের বিচলিত করে না। দেশে একটা শ্রেণির কাছে ক্ষমতার লোভ, অর্থের লোভ মানুষের জীবনের চেয়েও বড় বলে মনে হয়। সুবচন আজ নির্বাসিত। দেশে চলছে বিচারহীনতা, দলবাজি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি আর দখলবাজির সংস্কৃতি। শ্রদ্ধেয় প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর মৃত্যুর আগে এক নিবন্ধে তাই লিখেছিলেন, ‘দেশ আজ বাজিকরের দেশে পরিণত হয়েছে।’ গুম, খুন, নারী ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞজনদের মতে, প্রশাসনিক দুর্বলতা আর বিচারহীনতার কারণে এই ঘটনাগুলো ঘটা সম্ভব হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালের রোহিঙ্গা ইস্যু ‘গোদের ওপর বিষফোড়ার’ মতো জাতির ওপর চেপে বসেছে।

এত সমস্যার পরও বাংলাদেশ আজ বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতির কারণে বিশ্বদরবারে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্তু গণতন্ত্রহীনতার কারণে দেশের এই সম্মান ততটা উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। আমরা জানি গণতন্ত্র মানে কেবল নির্বাচনের অধিকার নয়, গণতন্ত্রের অর্থ অনেক ব্যাপক, যা সমাজকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অনেক ঋদ্ধ করে, আজ দেশে যা অনুপস্থিত। দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে গেছে দেশ।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রস্তুতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের মনেও উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ আর ঔৎসুক্যের শেষ নেই। আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই জনগণের প্রত্যাশা। সমাজের সৎ, বিবেকবান, নৈতিকতাবোধসম্পন্ন মানুষ আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হিংসা-বিদ্বেষহীন, সন্ত্রাস, দুর্নীতিবিহীন একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবে, এটাই জাতির স্বপ্ন। জনজীবনে সার্বিক নিরাপত্তা ফিরে আসুক, এটাই দেশবাসীর কাম্য।

শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মাতৃভূমি সম্ভাবনার এক অপার দুয়ার খুলে দিয়েছে আমাদের সম্মুখে। অনেকের মতে, আজকের যুবসমাজের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। যুবসমাজ আজ লক্ষ্যভ্রষ্ট, দিগ্ভ্রান্ত। অথচ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন—সব কটি জাতীয় আন্দোলনের পুরোধায় ছিল ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ। আমাদের রাষ্ট্রীয় যা কিছু অর্জন, তা এই তরুণদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে, এ কথা আমরা ভুলে যেতে পারি না।

প্রিয় মাতৃভূমি আজ বিপর্যস্ত। এই মাতৃভূমিকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে যেতে হবে আমাদের। নবীন-প্রবীণ সব সচেতন বিবেকবান মানুষের মিলিত স্রোতোধারায় এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এ দেশ। তরুণদের উদ্দেশে বলব, ‘এ দেশ তোমার-আমার সবার। ক্ষোভে, অভিমানে মুখ ফিরিয়ে থেকে কালক্ষেপণের সময় নেই আর।’ এখন ‘যৌবন যার, যুদ্ধে যাওয়ার সময় তার’। মনে রাখতে হবে, শহীদদের স্বপ্ন সার্থক করার দায় আমাদের সবার।

  • সেলিনা আখতার: শহীদ ডা. মিলনের মা।


Friday, November 10, 2017

3 Die as Police Clash With Protesters in Bangladesh


STEVEN R. WEISMAN, Special to the New York Times

Nov 10, 1987 


DHAKA, Bangladesh, Nov. 10 — At least three people were shot and killed by the police here today as thousands of rioters set fire to cars and buildings, and threw bricks and homemade bombs in an attempt to force President H. M. Ershad from office.


At the end of the day of running battles between protesters and the police, the streets of the capital's commercial center were strewn with rubble, and the air was tinged with tear gas and smoke. But the likely effect of the unrest was unclear.

Both sides in the disorders proclaimed victory - the opposition parties because they had carried out a protest ''siege'' of the capital in defiance of a ban on demonstrations, and the Government because President Ershad's position appeared unthreatened, at least for now.

Opposition leaders acknowledged tonight that they had been hampered in their ability to mount the protest, originally conceived as drawing two million participants. The actual number of protesters was in the tens of thousands at most.

In addition to outlawing demonstrations, the Government had closed Dhaka University and shut down incoming bus, rail and ferry transportation. 

Opposition Vows to Fight On

The opposition parties vowed to continue their drive until President Ershad was forced from office, but Government officials predicted that it would abate as many protests had in the past.

''The myth has been exploded,'' asserted M. A. Matin, the Home Minister and a close aide to the President. ''They were supposed to force the Government to resign. They couldn't. The so-called siege degenerated into an act of anarchy, vandalism, arson and an attempt to create civil disorder.''

Leaders of the main opposition parties said the attacks on their members were unprovoked. They called for a nationwide protest strike Wednesday and Thursday.


''He will have to resign,'' Khaleda Zia Rahman, the leader of a coalition of seven opposition parties, said of the President. ''It is a matter of time. We will be out in the streets tomorrow and the day after until he goes.''

The opposition said a total of six people, not three as the Government said, had died from police gunfire. But the report was impossible to verify because the police had taken possession of the bodies. Nearby hospitals reported two people with gunshot wounds and dozens of others with injuries from the rioting.

The opposition said dozens were wounded by gunfire. 

A Turbulent History

Bangladesh, one of the world's poorest and most densely populated countries, has had a history of natural disasters, riots, assassinations, coups and coup attempts since it broke from Pakistan to become an independent nation in 1971.

President Ershad was the army's Chief of Staff when he seized power in 1982; he was elected President last October in a day of voting marked by charges of fraud.

Anti-Government parties renewed agitation against President Ershad last summer, culminating in 3 days of strikes in which 10 people were killed. But protests subsided when Bangladesh was hit by the worst floods in 40 years.

This fall, the opposition tried to revive the protest drive with what it termed a siege of the capital. The authorities reported arresting more than 1,100 people for political activities in the last few days; the opposition said the number was more than 5,000.

An unusual aspect of these protests was the unity among political parties of all ideologies, except for the ruling National Party of President Ershad. Anatomy of a Protest

The day began peacefully, with small groups marching noisily through the downtown area, occasionally broken up by riot police officers wielding clubs and shields or firing tear gas. By mid-morning, demonstrators were throwing bricks and homemade bombs, and the police were firing back with blanks.

The police later resorted to bullets in ''self-defense,'' Government officials said; opposition spokesmen said the firing was unprovoked.



বাংলাদেশে নিখোঁজদের কেন আর সন্ধান মেলে না?

ফারহানা পারভীন

বিবিসি বাংলা, ঢাকা

নভেম্বর ৯, ২০১৭


নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার পুলিশের কাছ থেকেও প্রত্যাশিত সহযোগিতা পান না বলে অভিযোগ।
 ফটো - MUNIR UZ ZAMAN


বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. মোবাশ্বার হাসান নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পরেও তাঁর কোন হদিশ পাওয়া যায়নি এখনো।

মি. হাসানের এই নিখোঁজের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বাংলাদেশে নিখোঁজ ও গুম হয়ে যাওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।

একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে এই বছরে প্রথম নয় মাসে ৫০ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে তাদের পরিবার পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন এসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ বের করতে পারে না?
২০১১ সালের নভেম্বর মাসে এক সকালে সন্তানকে স্কুলে ছেড়ে আসার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন কে এম শামীম আখতার।

বাসা থেকে বের হয়ে কিছু দূরে যেতেই কয়েকজন তাকে নিয়ে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। আজ ছয় বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু মি. আখতার আর বাড়ী ফেরেন নি।

মি. আখতারের স্ত্রী ঝরনা খানম বলছিলেন ঘটনার পর পরেই তিনি থানায় যান জিডি করতে। কিন্তু মিসেস খানম যে স্বামী নিখোঁজের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন সেভাবে পুলিশ জিডি করতে চায়নি।

পরে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী তাকে জিডি করতে হয়। কিন্তু ঘটনার সাড়ে ছয় বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি তার স্বামীর কোন খোঁজ পাননি।

ঝরনা খানম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবখানে অভিযোগ নিয়ে গেছেন। যদিও তার দাবি মি. আখতারের একটা রাজনৈতিক পরিচয় ছিল সে কারণে হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মি. আখতারকে তুলে নিয়ে গেছে।

বাংলাদেশে নিখোঁজ, অপহরণ,গুম এসবের ঘটনা নতুন না। দেশে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।

বাংলাদেশে একজন নাগরিক নিখোঁজ বা অপহরণের শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ করতে কতটা সক্ষম?

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি মো. নুরুল হুদা বলছেন 'মিসিং পারসন স্কোয়াড' নামে একটা উইং থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে। সেটার মাধ্যমে শত ভাগ না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ৯০ জন গুম হয়েছেন।

আর দেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই নয় মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ৫০ জন।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণে তারা দেখেছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার জিডি করতে গেলেও যথেষ্ট সহযোগিতা পান না।

নিখোঁজদের পরিবারের অনেকের অভিযোগ রয়েছে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদের স্বজনদের নিয়ে যাওয়া হয়।

কিন্তু পরে দীর্ঘ সময়, এমন কী বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না।
সাবেক আইজিপি মি.হুদা বলছিলেন, "অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে সেগুলো বের করা যায় তবে বিষয়টা সত্যিই উদ্বেগজনক।"

এদিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো বলছে গত আড়াই মাসে বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীসহ মোট নয়জন নিখোঁজ হয়েছেন।
x

Wednesday, November 8, 2017

চাল পেঁয়াজ সবজির উল্টোরাজার দেশ, দামেও ‘দুর্বার গতি’র রেশ



বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬১ শতাংশ । দরজায় শীত কড়া নাড়লেও সবজির দামে আগুন। 



কয়েক মাস ধরে চালের বাজার চড়া। সম্প্রতি দাম কমতে শুরু করলেও গতিটা শামুকের। পেঁয়াজের ঝাঁজ আর মরিচের ঝালে ‘দূষণ’ অারও বিষিয়েছে।দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। তপ্ত দামেই শীত কেটে যাবের মনে হচ্ছে । রাজধানীর খুচরা বাজারে সবচেয়ে কম দামে সবজি কিনতেও ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যও ছুটছে যেন তুফান মেল। ভোক্তাদের জন্য ঠেলার নামে বাবাজি ডাকতে হলেও আর কিছুই করার নেই। চালের বাজারে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মাঝে গুজব ছড়িয়ে আরও কিছুটা বেড়েছিল মোটা চালের দাম। এ সময়  দাম বেড়েছে সরু চালেও অস্বাভাবিক। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যে চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, ছয় মাসের ব্যবধানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা।  চালের দাম কিছুটা কমলেও সেটা নেহাত কসমেটিক। কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের বাতচিত হলেও মেটা মুনাফা পকেটস্ত হবার সব লক্ষণ পরিস্কার। খাদ্যমন্ত্রী বুধোর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে খালাস আর ওদিকে স্বল্প এবং সীমিত আয়ের মানুষের উঠেছে নাভিশ্বাস।অার রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য সংস্থা মা‌ের্কটিং ইন্টেলিজেনস-এর লুডো খেলায় বিভোর। 

০৭ নভেম্ব্র মঙ্গলবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর দৈনিক বাজারদরের মূল্য তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর সরু চালের দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

চালের দাম এক লাফে দাম বেড়েছে কিন্তু বাজারের পাটিগণিতের  তেলা বঁাশের বঁাদরটা নামছে রহস্যজনক ‌ঢিমে গতি‌তে। কারণটা জলবৎ তরলং। গরিবে বোঝা বয় কিন্ত ধনীরা বোঝা বইতে মোটেও তৈরি নয়। অার সেটাই স্বাভাবিক।  

রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপ্রিল মাসে দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৪ থেকে ৩০ টাকা। ছয় মাস পর মঙ্গলবার পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। কোথাও ১০০ টাকাতেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর ১৮ থেকে ২০ টাকা দরের ভারতীয় পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। টিসিবির মূল্য তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের মূল্য এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। পেঁয়াজওয়ালারা পেল্লায় দাম হঁাকছেন। কি অাস করা অগত্যা। সাপের ছুঁচো গেলা। ধান চাষের মনো কালচারের ভুত এখনও অামাদের ঘাড় থেকে নামেনি। বাংলাদেশের জন্য এখানেও ভারতীয়‘গোমাতা’ ধন্নান্তরী প্রয়োগ দরকার। পাঁচ থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রায় দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। বৃষ্টি এবং বন্যার অজুহাতে কয়েক মাস ধরেই সবজির দামে চড়া ভাব দেখা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে ও সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় মাস আগে যে করলা প্রতি কেজির দাম ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। শিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। ধনেপাতা ১৪০ টাকা। কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা। চিচিঙ্গা ১০০ থেকে ১১০ টাকা। নতুন আলু ৮০ টাকা। বরবটি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। গাজর, ঝিঙ্গা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আর মাঝারি আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

একই বাজারে খাদ্যপণ্য কিনতে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বাজারে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের যেভাবে দাম বাড়ছে এতে করে জীবনযাপন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কিনতে টাকা থাকছে না। মাস শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসারের জরুরি খরচ বাদ দিয়ে খাবারের জন্য যে টাকা রাখা হয়, তা দিয়ে পুরো মাস চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা যদি প্রতিদিন রাজধানীর সব বাজারে মনিটরিং করত তাহলে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা কমে আসত। আর আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তাদের নিজ দেশে বাস করে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা টানতে হতো না। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। তারা একবার দাম বাড়ালে কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা থাকলেও সেগুলো তেমনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। যার কারণে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিসিবি’র মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেল- এ তিন পণ্য নিয়েই মূলত টিসিবি সারা বছর কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বাজারে এ তিন পণ্যের দাম এখন স্থিতিশীল। পেঁয়াজ নিয়ে বিভিন্ন সময় টিসিবি কাজ করলেও সামনে এর ফলন মৌসুম থাকায় আপাতত টিসিবি কিছু করছে না।

  • তথ্যসূত্রঃ যুগান্তর, বুধবার, নভেম্বর ৮, ২০১৭ 

Saturday, November 4, 2017

তেলভিত্তিক উৎপাদনই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণ - ক্যাব



সবার জন্য সহনীয় দামে বিদ্যুৎ সরবরাহের অঙ্গীকার থাকলেও সরকার কার্যত অগ্রসর হচ্ছে বেশি দামের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে। বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২, সকালে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিবর্তে কমানোর যৌক্তিকতা নিয়ে একটি আলোচনা সভার কিছুক্ষণ পরই বেশি দামের ৪০০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি সই করা হয়েছে।

বিদ্যুতের দাম কমানোর প্রস্তাব নিয়ে সকালে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে আলোচনা সভার আয়োজন করে ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এই সভায় আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল, তেলভিত্তিক উৎপাদন বাড়ানোই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির মূল কারণ।

বেলা একটা নাগাদ এই সভা শেষ হয়। বেলা আড়াইটায় ওই বিদ্যুৎ ভবনেরই মুক্তি হলে দুটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ৪০০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি সই করে। এর মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট ডিজেলভিত্তিক এবং ১০০ মেগাওয়াট ফার্নেস তেলভিত্তিক।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সে সব কথা জানানো হয়নি তা হলো, ডিজেলভিত্তিক যে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি গতকাল করা হয়েছে, তার প্রতি ইউনিটের (এক কিলোওয়াট ঘণ্টা) দাম পড়বে প্রায় ২০ টাকা। আর ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রের প্রতি ইউনিটের দাম হবে সোয়া ৮ টাকার মতো। এই ৪০০ মেগাওয়াটের পর আরও ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের জন্য যে চুক্তিগুলো হবে, তাতেও একই রকম দাম পড়বে বলে পিডিবির সূত্র জানায়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অর্থনীতি ও জনজীবনে এর প্রভাব ভালো হবে না।

২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে পাঁচবার এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তীব্র বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় আশু পদক্ষেপ হিসেবে সরকার তেলচালিত ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপনের পরই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় দ্রুত বেড়ে যায়। ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয়।

Thursday, November 2, 2017

পুলিশ-আমলা নির্ভর সরকা‌রের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয় : ড. শেলী




ক্ষমতাসীদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মন্ত্রী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ, সিভিল সার্ভিস, স্থানীয় সরকার সর্বত্রই দলীয়করণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। শেলী বলেন, এরশাদ সরকারের যখন পতন হয়েছিল তখন বিকল্প সাংবিধানিক কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রথমে উপ-রাষ্ট্রপতি, পরে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি করে নির্বাচন করা হয়েছিল। তাতে গণতন্ত্র বিজয়ী হয়েছিল। গণতন্ত্রের স্বার্থে এখনো সে রকম কিছু করা যায়। কারণ সংবিধান কোন ঐশী বাণী নয়। সবাই মেনে নিলে এটা পরিবর্তন করা যায়।

বুধবার, নভেম্বর ১, ধানমন্ডি নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।

মিজানুর রহমান শেলী বলেন, দেশ এখন গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সরকার জনগণকে বাদ দিয়ে পুলিশ ও আমলা নির্ভর হয়ে পড়েছে। দেশে এক নাজুক পরিস্থিতি চলছে। দেশে বিদেশী হস্তক্ষেপ বেড়ে যাচ্ছে। যা ইতোমধ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটি স্বাধীন দেশে এটা কারো কাম্য হতে পারেনা। এ অবস্থা চলতে থাকলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি সরকারি দল-বিরোধী দল সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এটা থেকে পরিত্রাণে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য। এজন্য দেশের বড় দুই দলকে অবশ্যই ঐক্যমতে আসতে হবে। সমঝোতা করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার মুখে উন্নয়নের কথা বললেও মনে মনে তারাও উদ্বিগ্ন। কিন্তু নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাওয়ার ভয়ে তারা এটা বলতে পারছে না। কারণ ক্ষমতা কেউ সহজে ছাড়তে চায় না।

তিনি আরো বলেন, সরকার ফ্লাইওভার, পদ্মাসেতু, রাস্তা, উঁচু ভবনসহ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করছে। কিন্তু এ উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে কতটা পৌঁছেছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। হয়তো সরকারি দলের কিছু নেতা বিদেশে সেকেন্ড হোম করেছেন, এতে তারা ও তাদের পরিবার ভালো থাকতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই ভালো নেই।

মিজানুর রহমান বলেন, সমাজে সব ক্ষেত্রে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ সব পেশার মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি পুলিশ এবং আমলাদেরকেও দলীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যা রুয়ান্ডার হুটু ও টুটু গ্রুপের মত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা দেশের উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর। এ অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ দরকার। পুলিশ ও আমলা নির্ভর সরকারের ধারণা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন সাবেক এ সচিব।
- নয়াদিগন্ত।