Search

Sunday, February 19, 2017

কল্পকথার কারিগররা শান্ত হোন

শওকত মাহমুদ 

বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া


লক্ষ করছি, একটা কল্পকথাকে বাস্তবতার পোশাক পরিয়ে খবর বানানোর মতলবি কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে ইদানিং। তবে ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়, ঐ জল্পনা থেকে একটা জনবয়ান গড়াপেটার অপচেষ্টাও আছে একই সঙ্গে। বিশ্বের এক নম্বর পাবলিক ইনটেলেকচুয়াল নোয়া চমস্কি’র ভাষায় যেটা কিনা Consent making - দুরভিসন্ধিমূলক অনুমানকে খবর বানিয়ে ভুয়া মতৈক্য তৈরি করা। ফ্যাসিবাদের ধর্মই হলো, জনমানসকে পরিচালনা করতে গিয়ে খবরকে ঢেকে দেয়া আর খবরকে,  ট্রাম্প গংয়ের মতে, Alternative truth , বানিয়ে তোলা। ক’দিন ধরে ইতি-উতি একটা প্রচারণা দেখছি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নাকি কারাদণ্ড হয়ে যাচ্ছে, তিনি গ্রেফতার হয়ে জেলে ঢুকছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে কাজ চলছে কে বা কারা দলের দায়িত্ব নেবেন, কতক বুদ্ধিজীবী নাকি প্যানেলও বানিয়ে ফেলেছেন ইত্যাদি, ইত্যাদি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে জিজ্ঞেসও করা হয়ে গেছে কবে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে গ্রেফতার করা হবে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় থই থই ভাবের ও. কাদের প্রশ্নকর্তাকে লুফে নিয়ে জবাব দিলেন, না না সরকার করবে না, আদালত যদি দন্ড দেয়, আমাদের কিছু করার নেই। জার্মানিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীও উচ্চস্বরে বেগম জিয়াকে গাল দিয়ে একই কথা বলেছেন। এসব চিত্রনাট্যের মূল টার্গেট, বেগম জিয়াকে অস্থির করে তোলা। আর বিএনপি নেতা কর্মীদের বিভ্রান্ত করা। ভাবখানা হলো, নিশ্চিতই জেলে যাচ্ছেন বেগম জিয়া, বিএনপি নামক দলটা গলাপানিতে ডুবছে।

আসল অবস্থানটা বলছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মোটেও অস্থির নন। বরং আগের চাইতে বেশি সুস্থির ও আত্মবিশ্বাসী। আর নেতাকর্মীরা অনেক উজ্জীবিত। এটা সত্য, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাগুলির বিচারিক গতি বেশ দ্রুত। অসুস্থ নেত্রীকে আদালত ঘন ঘনই ডাকছে এবং বলাই বাহুল্য আদালত ঘিরে জনসমাগমও বাড়ছে। কিন্তু কখন কবে কি সাজা হবে অথবা আদৌ হবে কি না, হলেও এসবের রাজনৈতিক দায় বহন করার সক্ষমতা ফ্যাসিবাদী সরকার রাখে কিনা - সে সব প্রশ্ন আছেই। ঝড় একটা উঠবেই বাংলাদেশ জুড়ে এবং বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদটা আন্তর্জাতিক দুরবিনে আবার স্পষ্ট হবে। এক-এগারোর সময় করা মামলাগুলিতে বেগম জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনাও আসামী ছিলেন। কিন্তু এক যাত্রার পৃথক ফল হয়েছে স্রেফ প্রতিহিংসার কারণে। শেখ হাসিনা নিজে ওসব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, বেগম জিয়া পান নি। কারণ শেখ হাসিনার ফয়সালা হলো, তিনি বেগম জিয়া, বিএনপি তথা বিরোধী দল ও মতকে নির্যাতনে-নিপীড়নে রক্তাক্ত করবেনই। কিন্তু বড় ভুল করে ফেলেছেন তিনি। হয়তো অ-নির্বাচিত শাসনকে প্রলম্বিত করতে পেরেছেন, কিন্তু পরিণতি হচ্ছে আওয়ামীলীগের জন্য এক দীর্ঘ অন্ধকার ভবিষ্যৎ। জনরোষ প্রায় বিস্ফোরোন্মুখ। বিএনপি কিছু পারে না - এমন আত্নতৃপ্তিতে শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে যত ঢেঁকুর তোলেন অন্তরে তাঁর ততই জ্বালা । নইলে হররোজ তিনি শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে অশ্রাব্য ভাষায় গাল-মন্দ করেন কেন? তিনি কি সুরা হুজরাত-এর ১১ নম্বর আয়াতটি পড়েন নি? এতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেছেন,

“কোন নারী অপর কোন নারীকেও যেন উপহাস না করে, কেননা যাহাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হইতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করিও না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডাকিও না। ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যাহারা তওবা না করে তাহারা জালিম।”

হিটলারের “সুহৃদ” স্টালিনের শাসন সম্পর্কে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি চিঠিতে বলেছিলেন,

“মানুষের ব্যষ্টিগত ও সমষ্টিগত সীমা এরা যে ঠিকমতো ধরতে পেরেছে তা আমার বোধ হয় না। সে হিসেবে এরা ফ্যাসিস্টদের মতো। এই কারণে সমষ্টির খাতিরে ব্যষ্টির প্রতি পীড়নে এরা কোন বাধাই মানতে চায় না। ভুলে যায় ব্যষ্টিকে দুর্বল করে সমষ্টিকে সবল করা যায় না। ব্যষ্টি যদি শৃঙ্খলিত হয় তবে সমষ্টি স্বাধীন হতে পারে না। এখানে জবরদস্ত লোকের একনায়কত্ব চলছে। এই রকম একের হাতে দশের চালনা, দৈবাৎ কিছুদিনের মতো ভাল ফল দিতেও পারে, কিন্তু কখনোই চিরদিন পারে না ।”

শেখ হাসিনারও একিই পরিণতি হতে পারে। দুই নেত্রীর একজন দণ্ডিত হলে বা জেলে গেলে আরেকজনের বাইরে থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আর পরিবর্তন হলে? 

সূরা আনআম-এর ৪৭ আয়াতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে বলেছেন,

“দেখো তো, যদি আল্লাহর শাস্তি আকস্মিক কিংবা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর আসে, তবে জালেম সম্প্রদায় ব্যতীত কে ধ্বংস হবে?”

প্রখ্যাত ইসলামী লেখক ইবনে কাসীর জানান,

"হজরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন যখন তোমরা দেখো যে কোনো ব্যক্তির উপর নেয়ামত ও ধনদৌলত বৃষ্টি হচ্ছে, অথচ সে গোনাহ ও অবাধ্যতায় অটল, তখন বুঝে নেবে তাকে ঢিল দেয়া হছে।" 

অর্থাৎ তার এই ভোগ বিলাস কঠোর আযাবে গ্রেফতার হওয়ারই পূর্বাভাস। 

২০০৮-এর নির্বাচনে বেগম জিয়া জামিনে মুক্ত হয়ে অংশ নিয়েছেন। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনা প্যারালে অর্থাৎ সাময়িক মুক্তি নিয়ে ভোটে যান -  যা আইনের শাসনের বোধ করি ব্যত্যয়। এই প্যরোলের ভবিষ্যৎ কি আল্লাহই জানেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বেগম জিয়া এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনও দুর্নীতি করেন নি। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি জিয়া পরিবারের শ্রদ্ধা যেমন প্রশ্নাতীত, তেমন আর্থিক সততায়ও এই পরিবার সন্দেহাতীত। 

বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর দুঃসাহস শেখ হাসিনার হবে কি না জানি না । তবে বেগম জিয়ার মনে সম্ভাব্য কারাদন্ড নিয়ে বিন্দুমাত্র দোলাচল নেই । বিএনপি সমর্থিত কোনো বুদ্ধিজীবীও পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করার ওস্তাগারিতে আছে বলে জানা নেই। কোন কারণে যদি সেই পরিস্থিতি আসে তবে বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানই তো আছেন। প্রবাস থেকে সফলভাবে দল পরিচালনার যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে বিশ্বরাজনীতিতে আর বিএনপির অসংখ্য নেতা ও তৃণমূল কর্মী রয়েছেন যাঁরা এক-এগারোর দুঃসহ সময়ে জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন। তাঁরা অটল, অকুতোভয়, বিশ্বস্ত সঙ্গী। অতএব যারা বানোয়াট খবর বানাচ্ছেন এবং তা দিয়ে হাইকমান্ডের ঘৃণা উস্কে দিচ্ছেন তাদেরকে বলছি - শান্ত হোন।
  • লেখক সাংবাদিক এবং ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। 

No comments:

Post a Comment