তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি
তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা লোপাটের সাথে শুধুমাত্র কর্মকর্তারা জড়িত নয়, এর সাথে মন্ত্রী-এমপি ও উপদেষ্টারাও জড়িত। তাদেরও বিচার করতে হবে।
তিনি রোববার দুপুরে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ফুলবাড়ী গণআন্দোলনের একযুগ ‘ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস’ উপলক্ষে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, তদন্তের নামে অতীতের মতো যদি কয়লা লোপাটের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে গণআন্দোলনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহিৃত করে গণআদালতে তাদের বিচার করা হবে।
তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা লুণ্ঠনের ঘটনা নতুন নয়। সারাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যে লুটপাট চলছে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা লুণ্ঠন তারই একটি অংশ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, শুধু কয়লা লুণ্ঠন হয়নি, ব্যাংক থেকে টাকা লুণ্ঠন, দেশের বিভিন্ন স্বার্থ চুক্তির মাধ্যমে বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে কমিশন বাণিজ্য চলছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়।
তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে আজ সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ আজ হুমকির মুখে। এই জাতীয় সম্পদ রক্ষা করতে হলে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট যেভাবে ফুলবাড়ীতে গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল, এখন সারাদেশে সেই গণআন্দোলন গড়ে উঠার প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা শাহীন রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আনছার আলী দুলাল, কেন্দ্রীয় নেতা এসএম খালেক, আদিবাসী নেতা রবীন্দ্রনাথ সরেন, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম, জাতীয় ক্ষেতমজুর সমিতি ও গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবলু, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির দিনাজপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মোশারফ হোসেন, সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি চন্দন সরকার, সিপিবি দিনাজপুর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মেহেরুল ইসলাম, ফুলবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুজ্জামান জামান প্রমুখ।
এদিকে, ফুলবাড়ীবাসীর সাথে সম্পাদিত ছয় দফা চুক্তির বাস্তবায়ন ও ফুলবাড়ী খনি আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নামে এশিয়া এনার্জির দায়ের মামলা প্রত্যাহের দাবি জানিয়ে পৃথক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পালিত হয়েছে ফুলবাড়ী গণআন্দোলনের একযুগ ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস।
তেলগ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখা ও অরাজনৈতিক সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন পৃথক পৃথক কর্মসূচিতে অভিন্ন দাবিতে দিবসটি পালন করে।
দিবসটি উপলক্ষে রোববার সকাল ১০টায় তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার উদ্যোগে স্থানীয় নিমতলা মোড় থেকে একটি শোক র্যালি বের হয়, র্যালিটি পৌর শহর প্রদক্ষিণ করে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে।
দিনের শুরুতে সকাল সাড়ে ৯টায় ফুলবাড়ী বাজার থেকে সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মানিকের নেতৃত্বে শোক র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়।
পরে সেখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা ও শপথ বাক্য পাঠ করান মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক।
এসময় বক্তব্য দেন, পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য সচিব শেখ সাবীর আলী, ব্যবসায়ী নেতা ফারুক আহম্মেদ, স্বর্ণশিল্পী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মানিক মন্ডল।
এরপরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৭ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন।
উল্লেখ্য ২০০৬ সালের এই দিনে (২৬ আগস্ট) উম্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লা খনি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে এশিয়া এনার্জি নামে একটি বহুজাতিক কোম্পানির ফুলবাড়ী অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান আমিন, সালেকিন ও তরিকুল নামে তিন যুবক। এ ঘটনায় আহত হয় কয়েক’শ মিছিলকারী। এর পর ফুলবাড়ীবাসীর গণআন্দোলনের মুখে ৩০ আগস্ট তৎকালিন সরকার ফুলবাড়ীবাসীর সাথে ছয় দফা শর্তে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
- কার্টসিঃ পরিবর্তন/ আগস্ট ২৬,২০১৮
No comments:
Post a Comment