Search

Sunday, August 19, 2018

ট্যানারি সংকটে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা


রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে আগেই স্থানান্তর হয়েছে। এ স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় প্রায় ২২৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কিছু কারখানা পরে চালু হলেও ছোট-বড় দেড় শতাধিক ট্যানারি এখনো বন্ধ। একই অবস্থা চট্টগ্রামেও। বন্দরনগরীতে একসময় ২২টি ট্যানারি থাকলেও ২১টিই একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে চালু আছে মাত্র একটি, যার প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা ওই অঞ্চলে সংগৃহীত মোট চামড়ার ২০ শতাংশেরও কম। সব মিলিয়ে ট্যানারি সংকটে দুশ্চিন্তা বাড়ছে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে।

প্রতি বছর ৭-১০ শতাংশ হারে বাড়ছে দেশে চামড়া উৎপাদন ও সংগ্রহ। কয়েক বছর আগেও এক মৌসুমে ১ কোটি ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ পিস চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে পারত কারখানাগুলো। এ শিল্পের সংগঠনের তথ্যমতে, এখন তা নেমে এসেছে ৭০-৮০ লাখ পিসে। সক্ষমতার এ ঘাটতিতে চামড়া পাচারের আশঙ্কাও করছেন অনেকে।

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা থাকলেও সক্ষমতার অভাবে আমরা তা দিতে পারছি না। আমাদের জন্য শিল্পনগরী দেয়া হলেও সেটি প্রস্তুত নয়। পরিস্থিতির কারণে গতবারের চামড়াই এখনো প্রক্রিয়াজাত করতে পারিনি। এতে সংগৃহীত কাঁচা চামড়ার গুণগত মান কমে যাচ্ছে। নতুন চামড়া সংরক্ষণে স্থান সংকট রয়েছে। অনেক ট্যানারি এখনো উৎপাদনে যায়নি। এসব কারণে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা এবারো থাকছে।

জানা গেছে, সাভারের চামড়া শিল্পনগরী এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারেনি। চালু করা যায়নি স্থানান্তরিত সব ট্যানারি। খালি নেই চামড়া শিল্পনগরীর ডাম্পিং ইয়ার্ডও। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) প্রস্তুত তো হয়ইনি, চামড়া কাটার পর বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে, নির্ধারণ হয়নি সেটিও। চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি আছে বর্তমানে ১৫৫টি। এর মধ্যে ১১৫টি উৎপাদনে সক্ষম।

উৎপাদনে থাকা চট্টগ্রামের একমাত্র ট্যানারি রিফ লেদারের বছরে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা বছরে এক লাখ পিস। যদিও কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রামে এবারের কোরবানিতে চামড়া সংগ্রহ হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ পিস। বাকি সাড়ে চার লাখ পিস চামড়া বিক্রির জন্য ঢাকার ট্যানারি মালিকদের ওপরই নির্ভর করতে হবে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের।

রিফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড সেলস) মোখলেসুর রহমান বলেন, একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদেরও কাঁচামালের নির্দিষ্ট চাহিদা আছে। সে অনুযায়ী কোরবানির মৌসুমে আমরা প্রায় এক লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করি। এটা কোরবানির মৌসুমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সংগ্রহ করা চামড়ার মাত্র ২০ শতাংশ। বাকি চামড়া বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হবে।

যদিও ঢাকার ট্যানারিগুলোর চামড়া প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতাও কমে গেছে। সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরের ধাক্কা তারা এখনো সামলে উঠতে পারেননি বলে দাবি এ খাতের ব্যবসায়ীদের। হাজারীবাগের অনেক ট্যানারি বন্ধ হলেও এখনো চালু হয়নি সেগুলো।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে বড় ধরনের বিনিয়োগের ধাক্কায় পড়েছে অনেক ট্যানারি। এ ধাক্কা কটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে। ব্যবসা ভালো না যাওয়ায় অনেক ট্যানারি গতবার চামড়া কিনতে নেয়া ঋণের অর্ধেকও পরিশোধ করতে পারেনি। ট্যানারি মালিকদের সক্ষমতা বাড়াতে অর্থায়ন ঘাটতি দূর করার বিকল্প নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চামড়া যাতে পাচার না হয়, সেজন্য সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের কোরবানি ঈদে চামড়া সংগ্রহের জন্য দেয়া প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণের বেশির ভাগই আদায় হয়নি। যদিও এবার কোরবানিতে পশুর চামড়া কিনতে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক থেকে ট্যানারি মালিকদের ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছরের ঋণের অর্থ আদায় না হওয়ায় এ ঋণ বিতরণ নিয়েও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বণিক বার্তাকে বলেন, এ শিল্পে খেলাপি ঋণের পরিমাণ তুলনামূলক কম। বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের জুতার সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে। এসব বিবেচনায় যেসব ট্যানারি মালিক গত বছরের টাকা পরিশোধ করেছেন, তাদের চাহিদামতো ঋণ দেয়া হবে। ট্যানারি মালিকদের আগের নেয়া ঋণ পরিশোধ করার পরই নতুন করে বিতরণের সুপারিশ করা হচ্ছে। শেষ সময়ে এসে ট্যানারি মালিকরা ব্যাংকের দেয়া শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে ঋণের পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, সারা বছর দেশে প্রায় ২ কোটি ৩১ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। এর অর্ধেকই হয় কোরবানির ঈদে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া মিলিয়ে দেশে এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ।
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ আগস্ট ১৯,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment