Search

Sunday, August 19, 2018

সাতদিন ধরে বিদ্যুত্হীন বিপর্যস্ত চিকিৎসাসেবা

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল


টানা সাতদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার প্রধান এ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। ভেঙে পড়েছে সেখানকার স্যানিটেশন ব্যবস্থাও।

জানা গেছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুত্হীন এ হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে চরম বিপাকে পড়েছে রোগীরা, বিশেষ করে সিজারিয়ান রোগীরা। গরম সইতে না পেরে ভর্তি রোগীরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় পানিও নেই হাসপাতালটিতে। এতে স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। উপচে পড়া মলমূত্রে একাকার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ওয়ার্ড।

সদর হাসপাতালে এক রোগীর আত্মীয় সিদ্দিকুর রহমান জানান, তার এক স্বজন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ১০ দিন আগে ভর্তি হয়েছেন। এরপর এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে বিদ্যুৎ ও পানি নেই। পানির অভাবে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। একটা জেলা হাসপাতালের এমন অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মহব্বত আলী জানান, পাঁচদিন আগে আমার স্ত্রীকে সিজার করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সিজার করানো সম্ভব নয়। তোমার স্ত্রীকে যদি সিজার করতে হয়, তাহলে জেনারেটরের তেল কিনে দিতে হবে। আমি কোনো উপায় না দেখে ১০ লিটার তেল কিনে দিই। তারপর চিকিৎসকরা আমার স্ত্রীকে সিজার করেন।

একই কথা বলেন সাতক্ষীরার সুলতানপুর গ্রামের সেফা খাতুন। তাকে দিয়েও জেনারেটরের জন্য ১০ লিটার ডিজেল কেনানো হয় বলে জানান তিনি।

সদর হাসপাতালের এমন অবস্থা সম্পর্কে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. তওহীদুর রহমান জানান, এক সপ্তাহ আগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ট্রান্সফরমারটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ৫০ কেভি পাওয়ার ট্রান্সফরমার লাগানো হলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। এ বিষয়ে খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ১৫০ পাওয়ার কেভি ট্রান্সফরমার চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নতুন ট্রান্সফরমারটি পাওয়া গেলে অপারেশনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ২৫০-৩০০ জন রোগী ভর্তি আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে অপারেশন করতে আসা রোগীরা ফিরে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ২৪ লাখ মানুষের সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অন্যতম কেন্দ্র হচ্ছে এ সদর হাসপাতাল। ১০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সেখানে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথাও দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিল জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাতক্ষীরার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহিম বলেন, সরকার যখন জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য জোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই লক্ষ করা যাচ্ছে সাতক্ষীরার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জেলার ২৪ লাখ মানুষের আশ্রয়স্থল হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক এ হাসপাতালে সপ্তাহব্যাপী বিদ্যুৎ নেই। সংশ্লিষ্টরা কী করেন এখানে?

সাতক্ষীরা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি কিশোরী মোহন সরকার বলেন, জেলা সদরের সর্ববৃহৎ সরকারি হাসপাতালে টানা সাতদিন বিদ্যুৎ না থাকাটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলার প্রমাণ। দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে চিকিৎসা নিতে না পেরে নাজেহাল হয়ে ফিরে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ অফিস থেকে ৫০ কেভি পাওয়ারের একটি ট্রান্সফরমার লাগানো হয়েছে। নতুন ১৫০ কেভি ট্রান্সফরমারটি দুয়েকদিনের মধ্যে হাতে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন ট্রান্সফরমারটি হাতে পেলে আগের মতো অপারেশনসহ যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হবে বলে তিনি জানান।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ আগস্ট ১৯,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment