Search

Monday, January 28, 2019

জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প!

নাভানা, তেপান্তরসহ ২২ কোম্পানির ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা


গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাধার ও নিচু শ্রেণীর জমি ভরাট ও দখল করে প্লট বিক্রি করছে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি। নাভানা রিয়েল এস্টেট, তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডসহ এ ধরনের ২২ কোম্পানির জলাধার দখল ও ভরাট কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গতকাল একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে দুই মাসের মধ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার ২২টি আবাসন কোম্পানির জলাশয়, পুকুর, নিচু ভূমি ভরাট ও দখল বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে ২৪ জানুয়ারি রিট আবেদনটি করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ আবাসন কোম্পানির ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা জারির এ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড ও তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড এ ২৪ কোম্পানির অন্যতম। অন্য কোম্পানিগুলো হলো ইউনাইটেড পূর্বাচল ল্যান্ডস লিমিটেড, এজি প্রপার্টিজ লিমিটেড, নীলাচল হাউজিং লিমিটেড, বাগান বিলাস, রূপায়ণ ল্যান্ডস লিমিটেড, আদর্শ আইডিয়াল লিমিটেড, মেট্রোপলিটন ক্রিশ্চিয়ান কো-অপারেটিভ হাউজিং, মঞ্জিল হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, শিকদার রয়েল সিটি, কপোতাক্ষ গ্রীন সিটি, ডিভাইন হোল্ডিং লিমিটেড, শতাব্দী হাউজিং, স্বর্ণছায়া রিয়েল এস্টেট, ভিশন ২১ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, ওশান হ্যাভেন লিমিটেড, এসএফএল চন্দ্রিমা লিমিটেড, গ্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল, নর্থসাউথ হাউজিং ও ফেয়ার ডিল শিপিং লিমিটেড।

রিট আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পূরবী সাহা। আদেশের বিষয়টি জানিয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের বিধান অনুসারে কোনো এলাকার জলাভূমি, জলাশয়, পুকুর দখল ও ভরাট সম্পূর্ণ নিষেধ। তার পরও কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে জলাশয়, জলাভূমি, নিচু ভূমি ও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি সাইনবোর্ড টানিয়ে মানুষকে প্রতারিত করছে। এ ধরনের ২২ আবাসন কোম্পানি এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় মাটি ভরাট অব্যাহত রেখেছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, এসব যুক্তিতে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। আদালত ২২ আবাসন কোম্পানির দখল ও ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত বছরের ২ নভেম্বর ‘ঐতিহ্যবাহী বেলাই বিল দখল করে আবাসন প্রকল্প’ শিরোনামে বণিক বার্তায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। বেলাই বিলে বালি ভরাট করে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডের প্লট বিক্রির তথ্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। তাতে উল্লেখ করা হয় পরিবেশগত ক্ষতি ও বিলের আশপাশের মানুষের জীবিকা সংকটের চিত্রও।

প্রতিবেদনটি তৈরির আগে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিলের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের অংশে বালি ফেলে এরই মধ্যে ভরাট করা হয়েছে। সেখানে টানানো হয়েছে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডের নামে সাইনবোর্ডও। বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বাগাদুনা খাল। এ খাল থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালি তুলে ফেলা হচ্ছে বেলাই বিলে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে বেলাই বিলের কিছু জমি কেনে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড। এরপর ২০০৮ সালের শুরুর দিকে বিলে বালি ভরাটের কাজ শুরু করে। বালি ফেলার জন্য তারা মূলত বর্ষা মৌসুমকে বেছে নেয়। কারণ বর্ষা মৌসুমে বালি ফেললে তা নির্ধারিত জমির পাশে আরো কিছু জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। পানি নেমে যাওয়ার পর বিলের যতদূর পর্যন্ত বালি দেখা যায়, ততদূর পর্যন্ত নিজেদের জমি হিসেবে পুনরায় ভরাট শুরু করে আবাসন প্রতিষ্ঠানটি।

গাজীপুর ভূমি অফিস থেকে বেলাই বিলের আরএস ও এসএ খতিয়ান তুলে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি দাগে ৯ দশমিক ৭১ একর জমি তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডের নামে জারি হয়েছে। এসব জমির অধিকাংশই বোরো ও আমন শ্রেণীর। কিছু রয়েছে নালা শ্রেণীর। এসব জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করেই বালি ভরাট করে প্লট বিক্রি শুরু করেছে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড।

এর আগে গত ১২ নভেম্বর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ও গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ১৬টি হাউজিং কোম্পানি কর্তৃক জলাশয় ও নিচু জমি ভরাটের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পূর্বাচল সিটি, সিটি ক্লাউড, কানাডা সিটি, জমিদার সিটি, ড্রিমল্যান্ড, হোমল্যান্ড পূর্বাচল সিটি, হোমটাউন পূর্বাচল সিটি, প্রিটি রিয়েল এস্টেট, মাসকট গ্রীন সিটি, পুষ্পিতা এমপায়ার হাউজিং, নন্দন সিটি, বেস্টওয়ে সিটি, মালুম সিটি, মেরিন সিটি ও সোপান সিটি।

  • Courtesy: Banikbarta/ Jan 28, 2019

No comments:

Post a Comment