সম্পাদকীয়
রাষ্ট্রায়ত্ত লাভজনক ব্যাংক হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করা বেসিক ব্যাংক এখন খেলাপি ঋণে নিমজ্জিত। আর এর পেছনে দায়ী ঋণ জালিয়াতি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। টাকার অংকে দেশের ইতিহাসে এককভাবে এটাই সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি হলেও দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে আসার পর একে ঘিরে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা আরো হতাশাজনক। বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ মেলে ২০১১ সালেই। অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক)। ২০১৫ সালে দুদক এ কেলেঙ্কারি নিয়ে ৫৬টি মামলা দায়ের করেই দায়িত্ব শেষ করে। এখন পর্যন্ত একটি মামলারও তদন্তকাজ শেষ করতে পারেনি দুদক। সংশ্লিষ্ট আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হলেও কয়েকজন কর্মকর্তার বদল ছাড়া দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই নেয়নি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এ নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। তার পরও তদন্ত শেষ করতে দুদকের এত সময় কেন প্রয়োজন হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। এক হতে পারে তাদের সামর্থ্যের ঘাটতি, আরেক হতে পারে সদিচ্ছার অভাব। আমরা মনে করি, দুদকের যে আইনি কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য, সেটা যদি তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে, তাহলে এ ধরনের কেলেঙ্কারি দ্রুতই নিষ্পত্তি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আদালত যথার্থই বলেছেন যে দুদকের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার অভাব আছে। আমরা বলতে চাই, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ঘটনায় রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদক কর্মকর্তাদের ন্যূনতম দক্ষতারও প্রয়োজন নেই। তারা শুধু স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলেই চলে। দক্ষ কর্মকর্তাও যদি তার কাজে স্বচ্ছ না হন, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী দুর্নীতি সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগের তদন্তের শেষ ভরসাস্থল দুদকের কাছে নিয়মের ব্যত্যয় কাম্য নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, যেসব কর্মকর্তার কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, তাদের জবাবদিহি কেন করা হচ্ছে না। তবে কি শর্ষের মধ্যেই ভূত আছে? আমরা বলতে চাই, শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে দুর্নীতি দূর হবে না। দুর্নীতি তাড়াতে হলে আগে দুদককে শর্ষের ভূত তাড়াতে হবে। তার কর্মকর্তাদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আদালতের মতো আমরাও মনে করি, দুদককেই তার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মূলহোতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে দুদক তার নিরপেক্ষতা প্রমাণের কাজ শুরু করতে পারে।
আর্থিক কেলেঙ্কারি তদন্তে দুদক এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপই নিতে পারেনি। এর সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক কারণ এখন পর্যন্ত তারা দেখাতে পারেনি। এ কথা সত্য, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা রাজনৈতিকভাবেও শক্তিশালী। কিন্তু সাত বছরেও একটি মামলার তদন্তকাজ শেষ করা যাবে না, এমনটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অধিকাংশ বিষয়ই পরিষ্কার হয়েছে গণমাধ্যমের কল্যাণে। কিন্তু দুদক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য চেয়ারম্যানকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, এমনকি কোনো মামলার আসামি হিসেবে তার নামও নেই। হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়ার পর দুদক উদ্যোগ নেয় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের। এখান থেকেই দুদকের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
অন্যান্য আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলার মতো এ মামলাগুলোর অগ্রগতি হিমাগারে চলে যাবে বলেই মনে করছেন অনেকে। কিন্তু আমরা দুদকের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করি, শিগগিরই তারা বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তকাজ শেষপূর্বক চার্জশিট প্রদান করবে। এর মাধ্যমে আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিচারকাজ শুরু হচ্ছে, এ বার্তা বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্থায়িত্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
- Courtesy: Banikbarta/ Jan 17,2019
No comments:
Post a Comment