Search

Sunday, January 20, 2019

তদন্তের ফল প্রকাশ করুন-নিম্নমানের ভিটামিন ‘এ’

সম্পাদকীয়


৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর নির্ধারিত কর্মসূচি আকস্মিকভাবে স্থগিত করার ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানো গেছে, কিন্তু এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির ব্যবস্থাগত দুর্বলতা ও ঝুঁকি উন্মোচিত হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল, সে জন্য মাঠপর্যায়ে ক্যাপসুল পাঠিয়ে দেওয়াও হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মনে হয়, সরবরাহ করা ক্যাপসুলগুলোর গুণগত মান ঠিক নেই। তাঁরা এই সন্দেহের কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৯ জানুয়ারি নির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে।

এখানে এই কর্মসূচির ব্যবস্থাগত ত্রুটির দিকটা হলো এই যে ক্যাপসুলগুলোর গুণগত মান নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে মাঠপর্যায়ে, অর্থাৎ একদম শেষ পর্যায়ে গিয়ে। এটা সৌভাগ্যের বিষয় যে তাঁদের মনে সন্দেহ জেগেছিল। কিন্তু শিশুদের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এত বড় একটা জাতীয় কর্মসূচির নিরাপত্তার বিষয়টি কেন ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল হবে? মাঠপর্যায়ে পাঠানোর আগেই ক্যাপসুলগুলোর গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হলো না কেন? স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন জাগছে, জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় শিশুদের যেসব টিকা বা ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়, সেগুলোর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়মিতভাবে পালন করা হয় কি না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ভাষ্য অনুযায়ী, কয়েকটি এলাকায় মাঠকর্মীরা ক্যাপসুলগুলো জোড়া লাগানো অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন। আর প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি জেলার সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাঁরা ক্যাপসুলে ছত্রাক দেখতে পেয়েছেন। উভয় বক্তব্য থেকেই প্রতীয়মান হচ্ছে, ক্যাপসুলগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করাসহ সেগুলোর গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখার নিয়মিত ব্যবস্থা হয় অনুপস্থিত রয়েছে, নয় অকার্যকর। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি।



বিষয়টি তদন্ত করার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ক্যাপসুলগুলোর মান খারাপ ছিল কি না, তা পরীক্ষা করা হবে। প্রথম আলোয় গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ক্যাপসুলের মান সম্পর্কে সন্দেহের কথা কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে দেশের ৩০ শতাংশ এলাকা থেকে।



 সুতরাং তদন্ত করতে হবে সততার সঙ্গে, সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায়। এ দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং তার ফল জনসমক্ষে প্রকাশ না করা গতানুগতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে তদন্তগুলো আদৌ কোনো কাজে আসে কি না, তা–ও জানা যায় না। তাই জনমনে এমন সংশয় কাজ করে যে তদন্ত কমিটিগুলো আদৌ কিছু তদন্ত করে কি না।

শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুলগুলোর মান ঠিক ছিল কি না, তদন্তের পরই তা বলা যাবে—স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এই উক্তি থেকে মনে হয়, দেশের ৩০ শতাংশ এলাকা থেকে আসা অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হতে পারে। আমরা মনে করি, তদন্তের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে থাকা উচিত নয়, নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত। বিষয়টিতে আদালতও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেন, কারণ যে বিদেশি কোম্পানি ভিটামিন এ ক্যাপসুলগুলো সরবরাহ করেছে, তারা ওই কাজ পেয়েছিল আদালতের নির্দেশেই। অথবা একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিও গঠন করা যেতে পারে।

বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর, এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অবশ্যই রোধ করতে হবে। নইলে জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির বিষয়ে জনমনে দ্বিধা–সংশয় দেখা দিতে পারে।

Source: Prothom Alo Jan 20, 2019

No comments:

Post a Comment