Search

Monday, January 21, 2019

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও নড়বড়ে অবস্থা, খেলাপি ঋণ ৭৪৯০ কোটি টাকা!


অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও এখন নড়বড়ে অবস্থা। নানা অনিয়ম করে বিতরণ করা ঋণ আদায় করতে পারছে না তারা। ফলে লাগামহীনভা‌বে বাড়‌ছে খেলা‌পি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন বল‌ছে, ২০১৮ সা‌লের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়ি‌য়ে‌ছে ৭ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। যা এ খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ২০ শতাংশ।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানও নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। তারা একদিকে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে অন্যদিকে ঋণ বিতরণে কোনো যাচাই-বাছাই করছে না। ফলে ত্রুটিপূর্ণ ঋণ আর ফেরত আসছে না। যার কার‌ণে খেলা‌পি ঋণ বে‌ড়েই চল‌ছে।’

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদা‌রির অভা‌বে এসব প্র‌তিষ্ঠানগু‌লো নিয়মনী‌তি না মে‌নে ই‌চ্ছেমতো চল‌ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক য‌দি এখনই এসব প্র‌তিষ্ঠান‌কে নিয়ন্ত্রণ না ক‌রে তাহ‌লে আ‌রো খারাপ অবস্থায় চ‌লে যা‌বে ব‌লে জানান প্রবীণ এ অর্থনী‌তি‌বিদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত খেলাপি ঋণের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গে‌ছে, ২০১৮ সালে আ‌র্থিক প্র‌তিষ্ঠানগু‌লোর প্রতি প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। তিন মাসে ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বেড়ে মার্চ প্রান্তিক শেষে হয় ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিকে আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকায়। সেপ্টেম্বর শেষে তা উঠেছে ৭ হাজার ৪৯০ কোটি টাকায়, যা এ খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ২০ শতাংশ। তিন মাস আগে জুনে এ হার ছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। আর গত বছরের ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।

গেল বছর তিন প্রান্তিকে অর্থাৎ ৯ মাসে খেলা‌পি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা বা প্রায় ৬৬ শতাংশ। এর আ‌গে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত অক্টোবরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনায় গড়ে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ ব্যয় হয়। গত ৪২ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের গড় সুদহার বাড়ছে।

উচ্চ ঝুঁকিতে ১২ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতি তিন মাস অন্তর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা যাচাই প্রতিবেদন প্রস্তুত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশে কার্যরত ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেপ্টেম্বর শেষে রেড জোন বা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

এ‌দি‌কে ব্যাং‌কিং খাত নি‌য়ে খেলাপি ঋণের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর ম‌ধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত জুনে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ।

  • জাগো নিউজ/ জানু ২১, ২০১৯

No comments:

Post a Comment