Search

Sunday, January 20, 2019

বিজয় নয়, গণতন্ত্র হত্যার উৎসব করেছে আ’লীগ — রুহুল কবির রিজভী


ভোটের বিজয় নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যার উৎসব করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার, জানুয়ারি ২০, সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, জনগণের কোটি কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করে গতকাল শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তথাকথিত বিজয়ের উৎসব উদযাপন করেছে সরকার। এটি আসলে বিজয় নয়, গণতন্ত্র হত্যার উৎসব ছিল। ভোট ডাকাতির পর নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য সরকার যা যা করছে তা চরম হাস্যকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল —

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

নির্বাচনের আগের রাতে মহাভোট ডাকাতির পর সেই ভুয়া নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য সরকার যা যা করছে তা চরম হাস্যকর। গতকাল তারা জনগণের কোটি কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করে তথাকথিত বিজয়ের উৎসব উদযাপন করেছে। সারাদেশ থেকে বাসভর্তি ভাড়াটে লোকজন এনেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভরতে পারেনি। সেখানে ‘নিশুতি রাতের ভোটের প্রধানমন্ত্রী’ ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে তাঁর দলকে বিজয়ী করার জন্য জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয়ী র‌্যালীতে। তিনি বলেছেন-জনগণ নাকি এবার স্বত:স্ফুর্ভভাবে ভোট দিয়েছে। শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে জনগণ হাসবে না কাঁদবে তা তারা ভেবে পাচ্ছে না। যখন মহাভোট ডাকাতিতে ভোটাধিকারহারা জনগণ ব্যথিত, বিমর্ষ ও বাক্যহারা, তখন তাদেরকে নিয়ে এধরণের বক্তব্য নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

জনগণ মনে করে-ভুয়া ভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কৃতজ্ঞতা জানানো উচিৎ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। কারণ ভোটের আগের দিন রাতেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের ভোটের অধিকারটা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। তারাই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে রাতভর ব্যালট বাক্সে নৌকা মার্কায় সিল দেয়া ব্যালট পেপারে ভরিয়ে দিয়েছে। ভোট জালিয়াতি করতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতাসীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং গোপনে উৎকোচ দেয়া হলেও প্রকাশ্যে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ ছিল প্রধানমন্ত্রীর।

নির্বোধ স্তাবক’রা ছাড়া কে ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরাধীন মঞ্চে? আপাদমস্তকভীতু, ফন্দিবাজ, পরান্নজীবি, কৃপাপ্রার্থী, উমেদার আর প্রবঞ্চকদের ভিড় ছিল। গতকালকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনগণের পকেটকাটা টাকায় বর্ণাঢ্য র‌্যালী ছিল রাষ্ট্রের মালিক জনগণের সাথে আরেকটি অবজ্ঞাভরা মশ্করা। এই ঐতিহাসিক সোহরাওর্য়াদী উদ্যানকে গতকাল গণতন্ত্র হত্যার উৎসবে পরিণত করা হলো।

গতকাল ভুয়াভোটের সরকারপ্রধান যখন বাংলাদেশে ভোটাধিকার হরণের পর উৎসব করছেন তখন জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম ছিল বাংলাদেশে নির্বাচন অবশ্যই সঠিক ছিল না। বিবিসি’র হেড লাইন ছিল গণতন্ত্র থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্বমিডিয়ায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন ছিল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। এই নির্বাচনকে সিএনএন বলেছে প্রহসন, এই বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিপজ্জনক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর খ্যাতনামা স্কলার’রা বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত স্কলার বলেছেন-বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছে। ভাট চুরির সব নোংরা কৌশল প্রয়োগ করে শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল ৯৭.৬৬ শতাংশ ফলাফল নিজের দলের জন্য ভাগিয়ে নিয়েছেন।

ভুয়া ভোটের মিথ্যা জয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে। কুৎসিত অপকর্ম করতে তারা এখন বেপরোয়া। এরা বিরোধী দলের সহায়-সম্পত্তি দখল ও লুটের পাশাপাশি নারীদের ওপর হানাদার বাহিনীর কায়দায় হিং¯্র লালসায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে সৌজন্যবোধ ও হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। এরা শকুনির দৃষ্টি নিয়ে সারাদেশে নির্ভয়ে শিকার করে বেড়াচ্ছে। এদের হাত থেকে মা-বোন-শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। মিথ্যা জয়ের আনন্দের আতিশয্যে এদের বিভৎস রুপ দেখে দেশবাসী ভীত-শঙ্কিত। এদের নিষ্ঠুরতায় বাংলাদেশ এখন আদিম অন্ধকার যুগে প্রবেশ করেছে। 

ধানের শীষে ভোট দেয়ার অপরাধে নির্যাতিতা পারুল বেগমের আহাজারী ও গোঙানী থামতে না থামতেই নোয়াখালীর কবিরহাটে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে মা ও ছেলে-মেয়েদের জিম্মি করে তিন সন্তানের মা-কে স্থানীয় যুবলীগের কর্মীরা গণধর্ষণ করেছে। ধর্ষিতার স্বামী আবুল হোসেন ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাকে নির্বাচনের আগে দুটি মিথ্যা মামলায় আটক করে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে, অথচ এফআইআর-এ তার নাম পর্যন্ত ছিল না। বন্দী স্বামীর স্ত্রীকে এভাবে ক্ষমতাসীন যুব সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা গণধর্ষণ শুধু হৃদয়বিদারকই নয়, মনুষ্যতহীনতার এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। এরা মানুষরুপী পশু। নিরাপরাধ নারী-পুরুষের রক্তে রঞ্জিত আওয়ামী লীগ নামক সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাত। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আইনের দ্বারা শাসিত না হয়ে ভোট ডাকাতি ও ভোট জালিয়াতিতে ব্যস্ত থাকার পর এখন সরকারের তাবেদারিতে ব্যস্ত থাকায় দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সর্বকালের মধ্যে চরম খারাপ অবস্থায় পতিত হয়েছে। আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে বলেই আওয়ামী যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বেপরোয়াভাব এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভোট ডাকাতির জয়ে ক্ষমতাসীনরা অহংকার আর উন্মত্ততায় বিচার বুদ্ধি হারিয়ে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। নোয়াখালীর কবিরহাটে ঘরে ঢুকে নারী ধর্ষণের ঘটনায় আমি তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আমি এই ঘটনায় নির্যাতিতা আবুল হোসেন এর স্ত্রীর আশু সুস্থতা কামনা করছি এবং দলের নেতাকর্মীদেরকে এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানাচ্ছি।

মহা ভোট ডাকাতির মহা কেলেঙ্কারী আড়াল করতে ভুয়া ভোটের সরকার বৈধতা পেতে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেনদরবার শুরু করেছে। এরকম ভুয়া ভোটের নির্বাচন বিশে^র গণতন্ত্রকামী মানুষ ও তাদের নির্বাচিত সরকারের কাছে এর কোন কানাকড়ি মূল্য নেই। গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষের লড়াই ও অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে ভুয়া ভোটের এই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গত ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এর নির্বাচন এবং ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোন সরকার কখনোই টিকতে পারে না, ভয় দেখিয়েও বেশি দিন টেকা যায় না। ম্যাকিয়াভেলির নীতি অবলম্বন করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
লক্ষীপুর সদর উপজেলার ৭নং বসিকপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নুরুন নবীকে গত ১৮ জানুয়ারী সকালে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে তার ওপর গুলি করে ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জেহাদী। লক্ষীপুরের কোন হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাবে নরুন নবী বর্তমানে গুলিতে গুরুতর আহতাবস্থায় নোয়াখালীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি এই বর্বরোচিত ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

No comments:

Post a Comment