Search

Monday, January 28, 2019

১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ

  • ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ
  • ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা
  • ২০১৮ সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা
  • এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন
  • হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ, নুরজাহানসহ অনিয়মের ঘটনায় জড়িত অনেক গ্রুপ
  • প্রতিনিয়ত বাড়ছে খেলাপি ঋণ


ব্যাংকগুলোতে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর খেলাপি ঋণ কমাতে কার্যকর আছে ঋণ পুনঃ তফসিল, পুনর্গঠনসহ নানা প্রক্রিয়া। অনেক সময় নিয়মের মধ্যে এসব সুবিধা পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ ভালো দেখাতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও যেসব ঋণ দীর্ঘদিন ধরে আদায় করা যাচ্ছে না, তা অবলোপন করছে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। মন্দ বা ক্ষতিকর মানের খেলাপি ঋণকে স্থিতিপত্র (ব্যালান্সশিট) থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ অবলোপন বলে।

২০০৩ থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। তবে এসব অবলোপন ঋণ থেকে ১১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা আদায়ও হয়েছে। এতে অবলোপন ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এ হিসাব গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ে আলোচিত হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ, নুরজাহানসহ অনিয়মের ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেক গ্রুপের ঋণ অবলোপন করা হয়েছে।

আর ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আর গত সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ।

যেসব ব্যাংক অবলোপন ঋণ থেকে বেশি টাকা আদায় করতে পেরেছে, সেগুলোর মুনাফাও তত বেশি হয়েছে। কারণ, অবলোপন ঋণ থেকে আদায় করা অর্থ সরাসরি ব্যাংকের আয়ে যোগ হয়। শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরই ঋণ অবলোপন করা যায়। যেসব ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার মতো অবস্থায় নেই, তারা ঋণ অবলোপন করতে পারে না। মুনাফা থেকেই সেসব ব্যাংকের সঞ্চিতি রাখতে হয়।

এ নিয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ী সেই পর্যায়ে পরিপক্ব হয়নি। এ কারণে অনেকে ব্যবসায় খারাপ করেছে। আবার অনেকে অসৎভাবেও টাকা সরিয়েছে। যেসব ঋণ কোনোভাবে আদায় হয় না, জামানতও সেভাবে থাকে না, অবলোপন করা হয় সেগুলোই।’

মাহবুবুর রহমান বলেন, হিসাব থেকে মুছে ফেলার কারণে এসব ঋণ আদায় হলে তা আয়ে যুক্ত হয় ফি আকারে। যেসব ব্যাংক যত বেশি অবলোপন ঋণ আদায় করতে পারে, তারা তত বেশি লাভবান হয়। এটা ভালো যে ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়ে গেছে। বিশ্বের সব দেশেই এ প্রথা চালু আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আওতায় পাঁচ বছর কিংবা তার বেশি সময় ধরে থাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে তা অবলোপন করা হয়।

তবে মন্দ মানে খেলাপি হলেই অবলোপন করার সুযোগ আছে। ঋণ অবলোপন করতে মামলা থাকতে হয় এবং শতভাগ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। তবে মামলার ব্যয়ের চেয়ে অনেকাংশে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কম হওয়ায় মামলা না করেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপন করা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক এযাবৎ অবলোপন করেছে ৮ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, তবে এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর অগ্রণী ব্যাংক অবলোপন করেছে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। জনতার অবলোপন ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ও আদায় ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অবলোপন ২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ও আদায় ১ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের অবলোপন সবচেয়ে বেশি। এই ব্যাংকের অবলোপন ২ হাজার ১৫৪ কোটি ও আদায় ৪০৭ কোটি টাকা। অবলোপন ও আদায় যথাক্রমে দি সিটি ব্যাংকের ১ হাজার ৯০৩ কোটি ও ২৫২ কোটি টাকা এবং আইএফআইসির ১ হাজার ৮১৪ কোটি ও ৫৪৮ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের অবলোপন ১ হাজার ৬১৯ কোটি, এবি ব্যাংকের ১ হাজার ৫৩৩ কোটি, পূবালীর ১ হাজার ৫২৯ কোটি, উত্তরার ১ হাজার ৩২৫ কোটি, ইস্টার্ণের ১ হাজার ১৪৯ কোটি, ইউসিবির ১ হাজার ১৪১ কোটি, রূপালীর ১ হাজার ১৯ কোটি, ইসলামী ব্যাংকের ৯০৪ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৯৮৯ কোটি এবং ব্যাংক এশিয়ার ৮২৭ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অবলোপনের পর ঋণ আদায়ে জোরদার ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও ব্যাংকগুলোর দিক থেকে তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। বরং অনিয়মের ঋণগুলো অবলোপন করে দোষী ব্যক্তিদের আড়ালই করে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণেই ঋণ অবলোপন করতে হয়, আর এর মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিরাও আড়াল হয়। ব্যাংকগুলোর উচিত এসব ঋণ আদায়ে তদারকি অব্যাহত রাখা ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
  • প্রথম আলো/ জানু ২৮, ২০১৯ 

No comments:

Post a Comment