Search

Tuesday, January 22, 2019

প্রভাবশালীদের কারণে আদায় হচ্ছে না খেলাপি ঋণ!


রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ের অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে প্রভাবশালী ঋণ গ্রহীতারা। এই বাধা দূর করতে অর্থ ঋণ আইন সংশোধন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারার প্রধান কারণগুলো তুলে ধরে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় নিয়ে এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। বৈঠকে সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে এ ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ২শ’ ৫৬ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা।

একইভাবে নভেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮৪৭ কোটি টাকা বেড়ে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯শ’ ৬৩ কোটি টাকা। আগের বছর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। ১১ মাসে এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ২৫১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৮ কোটি টাকা। নভেম্বর শেষে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮৫৯ কোটি টাকা। আগের বছর খেলাপি ঋণ ছিল ৭৭১ কোটি টাকা।

একইভাবে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। নভেম্বর শেষে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৬ কোটি টাকায়। ২০১৭ সালে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা।

সরকারি পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি বাড়লেও একই সময়ে ৯৬০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমেছে একমাত্র সোনালী ব্যাংকের।  ২০১৮ সালের নভেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ছিল ১৩ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতারা অনেক প্রভাবশালী। টাকা আদায়ের সব ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হয়। আইনগত জটিলতার কারণে সেই মামলাও স্থগিত করে রাখেন প্রভাবশালীরা। একই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘ হওয়াকেও দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

যোগাযোগ করা হলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সোনালী ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শুধু খেলাপি ঋণ আদায়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপকরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি পর্ষদকে চাপ না দিলে খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। ঋণ দেওয়ার আগে জেনে বুঝে অনুমোদন বন্ধ করা যাবে। খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। ঋণ খেলাপিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি কার্যকর করতে হবে।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকের বরাত দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ নিয়ে এমডিরা অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন। সবগুলো প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণ না বাড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতা নেওয়ার সময় খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়াদে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৬ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। এ সময়ে অবলোপন করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার ঋণ। 
  • বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ জানুয়ারি ২২, ২০১৯

No comments:

Post a Comment