Search

Thursday, January 17, 2019

ক্রিসেন্ট গ্রুপের ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা পাচার!

জনতা ব্যাংক ও ক্রিসেন্টের ১৭ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক 

জেসমিন মলি 

রফতানি বিলের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপ কর্তৃক ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকটির ১১ কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধান সূত্র জানিয়েছে, জনতা ব্যাংকের ১১ কর্মকর্তা ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ছয়জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের সুপারিশ করে শিগগিরই একটি প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হবে। কমিশনের অনুমোদন পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

দুদকের প্রাথমিক তদন্তে জনতা ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে তারা হলেন নোট প্রস্তুতকারী এক্সিকিউটিভ অফিসার (এসও) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, পরীক্ষণকারী সিনিয়র অফিসার মো. মনিরুজ্জামান, সুপারিশকারী সিনিয়র অফিসার মো. সাইদুজ্জামান, প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন, সিনিয়র অফিসার মো. মাগরেব আলী, সিনিয়র অফিসার মো. খায়রুল আমিন, এজিএম মো. আতাউর রহমান সরকার, অনুমোদনকারী ডিজিএম (বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি) মো. রেজাউল করিম, ডিজিএম ও শাখাপ্রধান মুহাম্মদ ইকবাল, ডিজিএম ও শাখাপ্রধান একেএম আসুদুজ্জামান এবং ডিজিএম ও এফটিডি কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ।

অন্যদিকে গ্রাহকদের মধ্যে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তারা হলেন ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টের চেয়ারম্যান এমএ কাদের, একই প্রতিষ্ঠানের দুই পরিচালক সুলতানা বেগম ও রেজিয়া বেগম, লেসকো লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া, রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান মো. আবদুল আজিজ, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুন জাহান মীরা।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, ক্রিসেন্ট গ্রুপ কর্তৃক জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জনতা ব্যাংকের টাকা পাচার এবং আত্মসাতের ঘটনায় জনতা ব্যাংক কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত ছিলেন। তাই এখানে দুদকের আওতাভুক্ত সম্পৃক্ত ধারার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। জনতা ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এখানে সম্পৃক্ত ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং পরবর্তী পর্যায়ে মানি লন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তাই দুদক ছাড়া অন্য সংস্থার এ বিষয়ে মামলা করার আইনগত ভিত্তি নেই। বর্তমানে দুদকের অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। দুদক দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৭১, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২), (৩) ধারায় শিগগিরই মামলা দায়ের করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে যেকোনো অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা দুদকের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ব্যাংকের পক্ষ থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্তও চলমান। ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য এরই মধ্যে দুই দফায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করার জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে ব্যাংকের নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নতুন ৫৭০টি রফতানি বিল কেনার নামে ক্রিসেন্ট লেদারের চেয়ারম্যানের সহায়তায় ৯৯৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন স্মারকে অনুসন্ধান করার জন্য সহকারী পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ারকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। এখন পর্যন্ত দুদকের অনুসন্ধানে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৬৫৩টি রফতানি বিলের মাধ্যমে পণ্য বিদেশে সরবরাহ করে সে অর্থ বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন না করে ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে দুদকের পরিচালক ও তদারককারী কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, অভিযোগটির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এ কারণে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। তবে দুদকের অনুসন্ধানে অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাপ্ত নথিপত্র বিশ্লেষণ করে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তা হচ্ছে রফতানি এলসি ইস্যুকারী ব্যাংক প্রথম শ্রেণী/আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং আর্থিক সংগতি বিশ্লেষণে গ্রহণযোগ্য কিনা তা ব্যাংকার্স অ্যালামনাক বা অন্য কোনোভাবে শাখা কর্তৃক যাচাই করা হয়নি।

বৈদেশিক ক্রেতার সন্তোষজনক ক্রেডিট রিপোর্ট গ্রহণপূর্বক ক্রেতার স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ, মূল্য পরিশোধের সক্ষমতা সম্পর্কে বৈদেশিক ক্রেতার ব্যাংকের মতামত সংগ্রহপূর্বক তা যাচাই না করে ব্যাংকগুলোর রফতানি নেগোসিয়েশন/বিল ক্রয় করা হয়েছে। ফরেন ডকুমেন্টারি বিল পারচেজ (এফডিবিপি) ক্রয়ের জন্য গ্রাহকের আবেদনপত্রে গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষর যাচাই করেনি ব্যাংক শাখা। শাখায় রক্ষিত শিপিং ডকুমেন্ট প্রেরণের কুরিয়ার রিসিপ্টে ডকুমেন্ট গ্রহণকারীর স্বাক্ষর নেই। বৈদেশিক ব্যাংকে ডকুমেন্ট প্রেরণের প্রুফ অব ডেলিভারি নথিভুক্ত নেই, ফলে ডকুমেন্টগুলো সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক ব্যাংকে প্রেরণ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। ক্রয়াদেশ প্রদানকারী/আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভিন্ন দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত) অবস্থিত হলেও পণ্য রফতানি হচ্ছে হংকং ও চীনের মতো দেশে। এক্ষেত্রে ক্রয়াদেশ প্রদানকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পণ্য গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সমঝোতা/চুক্তি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে শাখা। চুক্তিপত্রের বিপরীতে প্রধান কার্যালয়ের এফডিবিপি লিমিট মঞ্জুরিপত্রে হংকং ও চীনের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মিউচুয়াল ওয়েল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও ম্যাক্রোভাইল লিমিটেডের গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিল নেগোসিয়েশনের অনুমতি দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ওই গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান কিনা এবং চুক্তিপত্রগুলো যথাযথ কিনা তা যাচাই না করেই বিলগুলো ক্রয় করা হয়েছে। 
  • Courtesy: Banikbarta /Jan 17, 2019

No comments:

Post a Comment