Search

Thursday, January 24, 2019

গায়েবি মামলায় জামিন পেলেন প্রতিবন্ধী তারা মিয়া


হতদরিদ্র তারা মিয়ার বয়স ৪৫। ডান হাত অস্বাভাবিক চিকন, কোনো চেতনা নেই। বাঁ হাতেও সমস্যা। কোনো কাজ করতে পারেন না। পাঁচ সদস্যের সংসার চালান ভিক্ষা করে। অথচ রামদা, হকিস্টিক ও লোহার রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলার আসামি তিনি।

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের ভান্ডা গ্রামের বাসিন্দা তারা মিয়া। আগাম জামিন নিতে গেল সপ্তাহে ঢাকায় আসেন তিনি। বুধবার হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন তিনি। বিচারপতি মো. রইস উদ্দিন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাঁকে জামিন দেন। ছয় সপ্তাহের মধ্যে সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাঁর ভাই সামছু মিয়াসহ আরও ৪৯ জন এই মামলায় জামিন পেয়েছেন।

স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তারা মিয়ার সংসার। জন্ম থেকেই তাঁর ডান হাতটি চিকন। এই হাত দিয়ে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। ভিক্ষা করে ও মানুষের সাহায্যে চলে সংসার।

বিশেষ ক্ষমতা আইনের ওই মামলায় বলা হয়, গত ২৮ ডিসেম্বর পুলিশ খবর পায় উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারের মধ্যবাজার গলিতে কিছু লোক জড়ো হয়ে পঞ্চগ্রাম মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে নাশকতার পরিকল্পনা করছেন। পুলিশ গিয়ে দেখতে পায়, আসামিরা রামদা, হকিস্টিক, লোহার রড, লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের নামে মিছিল করে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। পরে আসামিরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পরদিন পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাটি করে।

বুধবার বেলা আড়াইটায় তারা মিয়াসহ অন্যদের জামিন আবেদন শুনানির জন্য ডাকা হয়। তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ আবিদুল হক ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। পত্রিকাটি হাতে নিয়ে আদালত বলেন, এর মাধ্যমে কী বোঝাতে চাইছেন? তখন আবিদুল হক বলেন, জামিন আবেদনকারীকে (তারা মিয়া) নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর এক হাত সম্পূর্ণ অকেজো, তাঁর পক্ষে কি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করা সম্ভব? এই অভিযোগ যে সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক, তার প্রমাণ এই মামলা। পরে আদালত আদেশ দেন।

জামিন পাওয়ার পর তারা মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতে-ফিরতেই আমার সমস্যা অয়, এক হাত অবশ, আরেক হাত দিয়া তেমন কোনো কাম করতাম পারি না। আমি পুলিশরে কি-লা রামদা দিয়া মারমু। ইতা সব মিছা।’

তবে জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা মিয়া ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামি। তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। আমরা জেনে-বুঝেই তাঁকে আসামি করেছি। তাঁর এক হাতে সমস্যা থাকলেও অন্য হাত দিয়ে সব কাজ করতে পারেন।’

আইনজীবী মোহাম্মদ আবিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে সারা দেশে গায়েবি মামলা হচ্ছে, নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রতিবন্ধী তারা মিয়াও তার শিকার হলেন।

  • Courtesy: Prothom Alo /Jan 24, 2019

No comments:

Post a Comment