সম্পাদকীয়
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ জরুরি
সবজি সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার না থাকায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কারও কোনো মাথাব্যথা নেই!
গতকাল রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শিম, বরবটি, ফুলকপি, শসা, টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়। সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার চাষি। আলু সংরক্ষণের জন্য এখানে ১২টি হিমাগার থাকলেও দ্রুত পচনশীল সবজির জন্য কোনো বহুমুখী হিমাগার নেই। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত সবজি একসঙ্গে বাজারে তুলতে হচ্ছে এবং সস্তায় বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এ কারণে সবজি চাষে যে খরচ হয়েছে, তা অনেকেই তুলতে পারছেন না।
শিবগঞ্জ উপজেলা আয়তনের দিক দিয়ে বগুড়া জেলার বৃহত্তম উপজেলা। এ উপজেলা উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবজি উৎপাদনে প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রচুর ধান ও আলু চাষ হয়। অন্যান্য ফসলের মধ্য রয়েছে ভুট্টা, গম, কলা, পাটসহ নানান দেশি-বিদেশি শাকসবজি। প্রায় প্রতিবছর আলুর বাম্পার ফলন হয় বলে এখানে আলু সংরক্ষণের জন্য একে একে মোট ১২টি আলু রাখার হিমাগার তৈরি হয়েছে। অথচ অন্যান্য দ্রুত পচনশীল সবজি সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার গড়ে ওঠেনি। যে অঞ্চলে এত সবজি উৎপাদিত হয়, তার যথাযথ বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের দিকে যে মনোযোগ দিতে হবে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপেক্ষিতই থেকে গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যদি এদিকে নজর থাকত, তবে এত দিনে এর একটা বিহিত হতো। এখানে নিশ্চিতভাবেই পচনশীল সবজি সংরক্ষণের একটি হিমাগার গড়ে উঠত।
শিবগঞ্জে জরুরি ভিত্তিতে সবজির হিমাগার স্থাপনের ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া সারা দেশেই হিমাগারের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের অধীনে সরকারি হিমাগারের সংখ্যা ২১। বেসরকারি হিমাগার আছে ৪০৭টি, এর মধ্যে প্রায় ৩৮৫টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়। স্থানিক প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে অন্যান্য সবজি রাখার জন্য হিমাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সবজি উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) তথ্যমতে, গত এক যুগে দেশে সবজিবিপ্লব ঘটে গেছে। এখন দেশে ৬০ ধরনের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু এসব সবজি সংরক্ষণ করতে না পারলে কোনো লাভ নেই। কৃষকের পাশাপাশি দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গ্রামবাংলার সাধারণ কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের উচিত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনা, গুদামজাত করা এবং প্রয়োজনে বিদেশে রপ্তানি করার মতো উদ্যোগ নেওয়া। দেশের সার্বিক উন্নতির জন্যই এগুলো প্রয়োজন।
- Courtesy: Prothom Alo/ Jan 28, 2019
No comments:
Post a Comment