দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জনমনে সর্বদা ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত, বর্তমানে তারাই মানুষের জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশে খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আটক করা হয়েছে। ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক দেশব্যাপী যেভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে তাতে দেশবাসীর মধ্যে সর্বদা ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
সোমবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলেন তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল-
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।
জনগণ ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে পারেনি। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোটারবিহীন ব্যালট বাক্স পূর্ণ হয়েছে। সুতরাং নির্বাচনোত্তর সরকার নিজেকে যে নামেই অভিহিত করুক, সেটি অবৈধ সরকার। এই সরকার রাতের আঁধারের ভোটের সরকার। অথচ আওয়ামী লীগ বলছে-তাদের প্রার্থীরা নাকি লাখ লাখ ভোটে বিজয়ী হয়েছে। প্রকৃত ভোটার’রা এই কথায় নিজেদের অধিকার হারিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে।
রাষ্ট্র এমন এক ভয়াবহ একদলীয় রুপ ধারণ করেছে যেখানে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার কোন জায়গা নেই। এত বড় মহাভোট ডাকাতি ও মহাভোট জালিয়াতির নির্বাচন গোটা জাতির সামনে সংঘটিত হলো, অথচ নির্বাচন কমিশন জানালো যে, ‘নির্বাচনে কোন অনিয়ম হয়নি’।
প্রধান নির্বাচন কমিশানারসহ অন্যান্য কমিশনারদের মনে কোন অনুশোচণা নেই। তাহলে অধিকারহারা ভোটার’রা প্রতিকার কার কাছ থেকে চাইবে। সরকার ও তাদের একনিষ্ঠ অনুগ্রহভাজন নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে যে ভূমিকা রেখেছে তাতে গোটা জাতি হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রভূত সাংবিধানিক ক্ষমতার অধিকারী হলেও সেই ক্ষমতা প্রয়োগ না করে শুধু মনিবের কথা রাখতে গিয়ে গোটা নির্বাচনকেই ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে বিক্রি করে দিয়েছে। ন্যুনতম বিবেক-বুদ্ধি এবং মর্যাদার কথা চিন্তা না করে শুধুমাত্র কমিশনের উচ্চ পদের চেয়ার ধরে রাখতে এক মহা প্রশ্নবিদ্ধ ও নজীরবিহীন জালিয়াতি ও সহিংস ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে তারা দ্বিধা করলো না।
আসলে ৩০ ডিসেম্বরের মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের ছদ্দনাম নুরুল হুদা কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের জন্যই গণতন্ত্রের সংকট আরও গুরুতর রুপ ধারণ করলো। কারণ নির্বাচন হচ্ছে-গণতন্ত্রের প্রধান অনুশীলণ। সরকার সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই চূড়ান্তভাবে ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে, আর এই ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের তকমা দিয়েছে এই নির্বাচন কমিশন। ভোটার’রা স্বাধীন ইচ্ছায় তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার দিন শেষ হয়ে গেল। এই দেশে একটি উন্নতর গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করে দিলো এই নির্বাচন কমিশন।
মানুষ আশা-ভরসা-উৎসাহ ও এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্ধকার শ^াসরোধী পরিবেশে মানুষকে নির্বাক করে দেশ এখন একদলীয় দু:শাসন প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পর্বে এসে উপনীত হয়েছে। এখানে এখন টু শব্দ করা যাবে না। ভিন্নমত প্রকাশিত হলে সাথে সাথেই পুলিশী আক্রমণের মুখে পড়তে হবে। মানুষকে রুদ্ধশ^াসে একদল ও এক ব্যক্তির বন্দনা করতে হবে, নইলে কারাবাস বা ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকারও আর থাকবে না সাধারণ মানুষের। কেউ যদি স্বাধীনভাবে চিন্তা করে তাহলে মনে হয় তাকে ‘থট পুলিশ’ এসে হানা দিবে। গণমাধ্যমকে অন্ধকার ছায়া থেকে প্রতিনিয়ত নজরদারী করা হচ্ছে।
সাংবাদিক বন্ধুরা,
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে মহাভোট ডাকাতিতে নিয়োজিত থাকায় তারা সমাজে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের বদলে এখন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়াতে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে অবনতিশীল হয়েছে। সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। কারণ সমাজে শাািন্ত-শৃঙ্খলা বিধানে প্রশাসন ও পুলিশ অপরাধীদের যদি দমন করতে না পারে তাহলে সমাজে দূর্বৃত্তদের উৎপাত বিভৎস রুপ ধারণ করবে। অপরাধীরা যদি রাজনৈতিক কারণে রেহাই পেতে থাকে তাহলে শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা ভয়াবহ সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে।
বর্তমান পরিস্থিতি যেন কেউ দেখার নেই, শোনার নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে খুন, গুম, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো লোমহর্ষক ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এই যে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুরা অপহৃত হচ্ছে, কয়েকদিন পর তাদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে রাস্তা-ডোবা-নালায়। ‘আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পুলিশকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে’ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের এধরণের বক্তব্য এখন কথার কথায় পরিণত হয়েছে। যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের কাজে নিয়োজিত, বর্তমানে তারাই মানুষের জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকালও সারাদেশে খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আটক করা হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক দেশব্যাপী যেভাবে অপরাধমূলক কর্মকান্ড চলছে তাতে দেশবাসীর মধ্যে সর্বদা ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, আইন নিজস্ব গতিতে চলছে না, আইন ক্ষমতাসীনদের হাতের মুঠোয়। এই কারণে আইনের প্রয়োগের বদলে ক্ষমতাসীনদের বেআইনী বলপ্রয়োগের প্রতাপে জনজীবনে অরাজকতার গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে। বন্ধুরা, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের ফাঁড়া কাটবে না। অপশাসনের কলুষ থেকে মানুষের মুক্তি হবে না।
সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
এখনও বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানা চলছে। ২৯ ডিসেম্বরের রাতের ভোটের সরকার সকল সরকারী শক্তি দিয়ে বেগম জিয়াকে কারাগারে আটকিয়ে রাখছে। তাঁর জামিন পেতে আইনী কোন বাধা নেই। তাঁকে আটকিয়ে রাখতে আইনের ফাঁক দিয়ে বেআইনী রাস্তায় নানা চক্রান্ত চলছে। দেশজুড়ে ব্যর্থতা ঢাকতেই বিশেষভাবে ২৯ ডিসেম্বর নিশীথে মহাভোট ডাকাতির মহা কেলেঙ্কারী আড়াল করতেই বেগম জিয়াকে এখনও মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি চাই।
পাশাপাশি নির্বাচনকে একতরফা করার জন্য অন্যায়ভাবে আটক বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে-
- গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান-বিএনপি
- খায়রুল কবির খোকন, যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি
- এ্যাড: শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস
- হাবিব উন নবী খান সোহেল, যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি
- লায়ন আসলাম চৌধুরী-যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি
- ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
- রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
- মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক-বিএনপি
- আনিসুজ্জামান খান বাবু, গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক-বিএনপি
- সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক-যুবদল
- শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
- মাহবুবুল হক নান্নু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
- ডাঃ শাহাদৎ হোসেন, সভাপতি-চট্রগ্রাম মহানগরী বিএনপি
- এ্যাডঃ রফিক শিকদার, সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি
- মামুনুর রশিদ মামুন, সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি ও ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি
- নিপুন রায় চৌধুরী, সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি
- শেখ মোহাম্মাদ শামীম-সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি
- হযরত আলী, সাধারণ সম্পাদক-শেরপুর জেলা বিএনপি
- মোঃ আবুল হাশেম বকর, সাধারণ সম্পাদক, চট্রগ্রাম মহানগরী বিএনপি
- মিয়া নুর উদ্দিন অপু, ধানের শীষের প্রার্থীন-শরিয়তপুর
- মনোয়ার হোসেন, ধানের শীষের প্রার্থী-মাগুরা
সহ দেশব্যাপী হাজার হাজার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি চাই।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।
No comments:
Post a Comment