Search

Thursday, January 24, 2019

ডিআইটি পুকুর ভরাট - রাজউককে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে

সম্পাদকীয়

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার ডিআইটি পুকুরটি দখল ও দূষণের কবলে পড়ে যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলরসহ স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন পুকুরটি দখল করার পাঁয়তারা করছেন এক দশক ধরে। ময়লা-আবর্জনা ফেলে প্রায় ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সেটাকে এখন ছোট ডোবার মতো দেখাচ্ছে। ভরে গেছে কচুরিপানায়। এখন সেখান থেকে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পুকুরের চারপাশের গাছপালা কেটে দোকানপাট, রিকশা গ্যারেজ ও খাবারের হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকান ও হোটেলের বর্জ্য সব পুকুরের জায়গায় ফেলা হয়। এ ছাড়া আশপাশের বাসাবাড়ির বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে এই পুকুরে।

অথচ নব্বইয়ের দশকে এই পুকুরে গোসল করত স্থানীয় লোকজন। রান্নাবান্নাসহ দৈনন্দিন নানা কাজের জন্য পুকুরের পানি ব্যবহার করত বাসিন্দারা। পরবর্তী সময়ে এখানে কয়েক বছর মাছের চাষও হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় কোনো বাড়িতে আগুন লাগলে তা নেভানোর জন্য এই পুকুরের পানি ছিল অন্যতম উৎস।

প্রায় দেড় একরের এই পুকুরের মালিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এভাবে পুকুরটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে অথচ সে ব্যাপারে রাজউক কিছুই জানে না! রাজউকের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাই জানেন না এই পুকুরের অস্তিত্ব। এর চেয়ে বিস্ময়ের আর কী হতে পারে। তার মানে হচ্ছে রাজউক তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন নয়। তা না হলে ১০ বছর ধরে একটি পুকুর চোখের সামনে ভরাট হচ্ছে, অথচ তারা জানেই না। রাজউকের এ ধরনের গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়।

নগরজীবনে পুকুর, খাল থাকাটা খুবই জরুরি। এগুলো বর্ষা মৌসুমে এলাকার জলাবদ্ধতা থেকে নগরকে রক্ষা করে। ঢাকায় একসময় প্রচুর জলাধার, পুকুর ও খাল–বিল ছিল। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ভূমি আগ্রাসনের কারণে অনেক পুকুর ও খাল আজ বিলীন হয়ে গেছে। পুকুরগুলো ভরাটের কারণে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এভাবে পুকুর, জলাশয় ভরাট হতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাবে। এ ছাড়া দেখা দেবে মিঠা পানির সংকট এবং আর্সেনিকের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। নিজেদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই এসব জলাধার আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশে জলাধার সংরক্ষণ আইন রয়েছে। কিন্তু এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। তাই জলাধারগুলো দখল হয়েই চলেছে।

এখন ডিআইটি পুকুরকে রক্ষার জন্য রাজউককে অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করব, রাজউক অবিলম্বে পুকুরটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করে বর্জ্য অপসারণ ও জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করার প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে।
  • Courtesy: Prothom Alo / 24, 2019

No comments:

Post a Comment