Search

Wednesday, January 30, 2019

আওয়ামী লীগ নেতার সুদের ফাঁদে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার


সুদখোর আওয়ামী লীগের মৎস্যজীবী লীগ নেতার ঋণের জালে পড়ে নিঃস্ব গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর শতাধিক পরিবার। নিয়মিত সুদের টাকা না দেওয়ায় মারধর, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান রাসেলের ‘প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন’ সংস্থা নামে একটি সমিতি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তাদের এ অবস্থা।  সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে তা বাড়ে।  সেই টাকা দিতে না পারলে ঘরের আসবাবপত্র, গরু, ছাগল ও ভ্যান যা পায় নিয়ে যায়। করা হয় মিথ্যা মামলাও।

পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর ও নয়াবাজার গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিম্নআয়ের ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। স্থানীয়দের অভিযোগ, জীবিকার প্রয়োজনে তারা চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয় দাদন ব্যবসায়ী ও উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি রাসেলের  ‘প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন’ সংস্থার কাছ থেকে। এক হাজার টাকায় মাসিক ২০০ টাকা সুদ দিতে হয়। এই সুদ কেউ দৈনিক বা সপ্তাহে দিতে সম্মত হয়ে সাদা কাগজে সই করে। দিন বা সপ্তাহে কিস্তির টাকা দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়ে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, টাকা পরিশোধ করলেও অনেক সময় নির্যাতন, অত্যাচার করা হয়। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন জানার পরও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের দৌরাত্ম  বেড়েছে।

তারা আরও জানায়, কিস্তি দিয়ে মাস শেষে টাকা পরিশোধ না করলে প্রথমে হুমকি দেওয়া হয়।এরপর ঘরের মালামাল, গরু-ছাগল নিয়ে যায়। এছাড়া মারধরসহ নির্যাতন করা হয়। সুদের টাকা দিতে না পেরে অনেকে ভিটেমাটি ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে গেছে। টাকা দিতে না পারায় মনিরুজ্জামান ও তার পরিবার কয়েকজনের নামে তাদের বাড়িতে ডাকাতির মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।








সুদখোর আওয়ামী লীগ নেতা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান রাসেল

ভুক্তভোগীদের কয়েকজনভুক্তভোগী সাহেদ মিয়ার অভিযোগ, ‘অভাবের কারণে রাসেলের কাছে দৈনিক কিস্তিতে ১০ হাজার টাকা নেই। কিছুদিন ঠিকভাবে কিস্তি দেওয়ার পর হঠাৎ কিস্তি দিতে পারিনি। কিস্তির টাকা না পেয়ে রাসেল নানাভাবে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে রাসেলের মা আমাকে আটক করে মারধর করে।’

মিজবুল আকন্দ নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রথমে রাসেলের কাছে ছয় হাজার টাকা নেই। দুই মাস কিস্তি দিয়ে ছয় হাজার টাকার লাভ দেই ১২০০ টাকা। পরে আবারও ছয় হাজার টাকা নেই। কিছুদিন কিস্তি দিতে না পারায় রাসেলের মা আরজিনা বেগম আমাকে বেদমভাবে মারধর করে আহত করেন।’

আঙ্গুরা নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘ব্যবসার জন্য রাসেলের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেই। সুদে আসলে মিলে তাকে প্রায় দেড় লাখ টাকা দেই। এরপর তার কাছে আর টাকা না নেওয়ায় বারবার রাসেল হুমকি দিয়ে বলেন, কেন টাকা নিবি না? টাকা নিলেও হুমকি দেয়, না নিলেও দেয়। তাদের অত্যাচারে ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে পারেন না।’ বিষয়টি দ্রুত প্রতিকারের দাবি করেন তিনি।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সমিতি বা দাদন ব্যবসার সঙ্গে আমি ও আমার পরিবার জড়িত নয়। মূলত আমার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং হেয় করতে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা।’

ভুক্তভোগীদের কয়েকজনএ বিষয়ে মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মনীতি তোয়াক্কা না ভুয়া সমিতির নামে সুদখোর মহাজনের সুদ ব্যবসার বিষয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে রাসেল বাড়িতে ডাকাতির মিথ্যা অভিযোগও করছেন। যা তদন্তে ইতোমধ্যে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।’ তবে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও প্রশাসনের নিকট দাবি জানান তিনি।

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি বলেন,  ‘রাসেলের  সুদের ব্যবসার অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের সত্যতাও পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত রাসেলের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগও মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাউল হোসেন বলেন,  সমবায় সমিতির বাইরে এবং অনুমোদন ছাড়া কেউ ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তারপরেও কেউ সমিতির নাম ব্যবহার করে বা ব্যক্তিগত সুদ ব্যবসা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • বাংলা ট্রিবিউন/ জানু ২৯, ২০১৯ 

No comments:

Post a Comment