একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর ওপর রাষ্ট্রীয় নৃশংস সন্ত্রাস চালিয়ে এবং সব ধরনের নোংরা কৌশল অবলম্বন করে জনগণের ভোটাধিকার ছিনতাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার, জানুয়ারি ১৫, নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে রিজভী বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের সঙ্গে বরাবরই প্রতারণা করার দল আওয়ামী লীগ। যারা এখন নিজেদের সরকার বলে দাবি করছে, তারা অবৈধ ও ভোট সন্ত্রাসী।
সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল -
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় বন্দী করার মূল কারণই ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে ভোট ডাকাতির এরকম নির্বাচন সম্ভব ছিল না। বেগম জিয়া বাংলাদেশের জনগণের মাঝে উচ্চারিত একজন জনপ্রিয় নেত্রীর নাম। তিনি জীবনে কখনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। পাঁচটি ও সবশেষে তিনটি আসনে তিনি বাংলাদেশের যে প্রান্ত থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সেখানেই তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এই জনপ্রিয়তাই তাঁর জন্য কাল হয়েছে। তাঁর এই জনপ্রিয়তা কোনভাবেই সহ্য করতে পারেনি আওয়ামী লীগ প্রধান ও দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা। বেগম জিয়া সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক। তাই তিনি কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট নন এমন সব অভিযোগ ও মামলায় সুপরিকল্পিতভাবে তাঁকে সাজা দিয়ে বন্দী করে রেখেছে সরকার। বেগম জিয়াকে বন্দী করার অর্থ গণতন্ত্রকে বন্দী করা। এদেশে যে দৃঢ়, অকপট, সত্যবাদী ও প্রতিবাদী তাঁর জায়গা হয় কারাগারে। বেগম জিয়ার মামলায় জামিন নিয়ে টালবাহানা করছে সরকার।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাভোট ডাকাতির পর গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে শিকল পরানো হয়েছে। গণতন্ত্র ও জনগণের সাথে বরাবরই প্রতারণা করার দল আওয়ামী লীগ। যারা এখন নিজেদেরকে সরকার বলে দাবি করছে তারা অবৈধ ও ভোট সন্ত্রাসী। বিরোধী দলগুলোর ওপর সর্বপ্রকার রাষ্ট্রীয় নৃশংস সন্ত্রাস চালিয়ে এবং সবধরণের নোংরা কৌশল অবলম্বন করে জনগণের ভোটাধিকার ছিনতাই করেছে। মানুষের বিশুদ্ধ নি:শ^াস নেয়ার জন্য গণতন্ত্রের মুক্ত বাতাস প্রবাহিত করতে হবে। এজন্য দেশের জনগণের ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য। আর জনগণের ঐক্যের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত হবে।
সাংবাদিক বন্ধুরা,
রফতানী আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস গার্মেন্ট শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। মালিক-শ্রমিকদেরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি গার্মেন্ট শিল্প এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে তা মালিকদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে সরকারের ব্যর্থতা গত কয়েকদিন ধরে ফুটে উঠেছে। বিদেশী কাউকে সুবিধা দিতে এর পেছনে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য কাজ করছে বলেই দেশের জনগণ বিশ^াস করে। অতীতেও আপনারা দেখেছেন-স্বাধীনতার পর কিভাবে আওয়ামী লীগ পাট শিল্পকে ধ্বংস করেছে। বড় বড় পাটের গুদাম ও মিল-কলকারখানা কিভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল তা জনগণ এখনও ভুলে যায়নি। এটা কাদের স্বার্থে করা হয়েছিল সেটাও জনগণ জানে। এখন ভুয়াভোটের সরকার গার্মেন্ট শিল্পকে নিয়ে বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে। বর্তমান ভুয়াভোটের সরকার এই শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার যে পাঁয়তারা করছে তার পরিণাম শুভ হবে না। যারা অর্থনীতির চালিকা শক্তি তাদের ধ্বংস করে অর্থনীতির বিকাশ সম্ভব নয়। গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন দমাতে হত্যা, লাঠিচার্জে ক্ষত বিক্ষত করা ও ব্যাপক গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে কোন সমাধান আসবে না। অবিলম্বে দেশের রফতানী আয়ের প্রধান উৎস এই গার্মেন্ট শিল্পকে রক্ষা করতে সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মানতে হবে এবং আলোচনার ভিত্তিতে উদ্ভুত সমস্য সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধুমাত্র অলীক তৃতীয় পক্ষ বা অন্যের হাত আছে এসব বলে সংকটের সমাধান হবে না।
সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
বর্তমান অবৈধ সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। গত কয়েকদিনেও চালের দাম ফের বেড়েছে কয়েক দফায়। প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। সরকারদলীয় সিন্ডিকেটের লোকেরাই কারসাজি করে এই দাম বৃদ্ধি করেছে। দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে একসময় ভোট চাইলেও বর্তমানে মোটা চালের দামও পঞ্চাশ টাকার নীচে নয়। অন্যান্য চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত পরশু দিন খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন-ইজ্জত রক্ষার্থে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখুন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীর ইজ্জত রেখেছেন চালের দাম আরও বৃদ্ধি করে। জনগণের ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হলে ইজ্জত ঠিকই থাকতো। সিন্ডিকেটের লোকেরা ভোট ডাকাতির নির্বাচনে সহযোগিতা করে এখন ফায়দা নিতেই চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে এ্যকশন নেয়ার ক্ষমতা খাদ্যমন্ত্রীর আছে কি না সেটিই বড় প্রশ্ন। কারণ চারিদিকে সরকারী দুর্নীতির জয়জয়কার। গরীব মানুষের পকেট কেটে বিপুল অর্থ লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। আর এদিকে দেশের জনগণকে দু:সহ জীবন-যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। চালের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিন্ম আয়ের মানুষরা ক্ষুধার্ত থাকছে। এই চালের মৌসুমেও চালের দরের উর্দ্ধগতি সামনের মাসগুলোতে খাদ্য সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে। আমি চালের দাম বৃদ্ধিতে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।
No comments:
Post a Comment