প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনি গণতন্ত্রের আইনায় নিজেকে দেখেন। আর দেখলে আপনি দেখবেন আপনি স্বৈরতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আপনার এই চেহারা গণতন্ত্রের সাথে যায় না, ৭১ সালের স্বাধীনতার সাথে যায় না।’
সোমবার, ২১ জানুয়ারি, দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল সহ- সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিবাদ সভায় শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘৩০ তারিখে যে নির্বাচন হয়েছে এটা লজ্জার নির্বাচন। নির্বাচনের নামে একটি তামাশা হয়েছে দেশে। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না। কোনো সুষ্ঠু স্বাধীন গণতান্ত্রিক জাতি এবং এ দেশের মানুষও এটাকে মেনে নেয়নি।আমাদের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভে তিনি বিজয় উৎসবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আমি তাকে সমর্থন করতাম যদি তিনি নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করতেন।’
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘এদেশের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিটা হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনকে ভোট ডাকাতি বলেন, ভোট চুরি বলেন আর যাই বলেন এরকম একটি নির্বাচনকে যারা জায়েজ করে তারা দুর্নীতির বিচার করতে পারবেন, দুর্নীতি বাদ দিতে পারবেন- এটা আমরা মনে করি না। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনি গণতন্ত্রের আইনায় নিজেকে দেখেন। আর দেখলে আপনি দেখবেন আপনি স্বৈরতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আপনার এই চেহারা গণতন্ত্রের সাথে যায় না, ৭১ সালের স্বাধীনতার সাথে যায় না।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘৩০ তারিখে ভোট হয়নি, ভোট হয়েছে ২৯ তারিখের মধ্য রাতে। ৩০ তারিখ ভোট হলে আপনাকে অভিনন্দন জানাতাম। আপনি পুলিশকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে রেখেছেন, পুলিশ এখন সমাজে মুখ দেখাতে পারে না। আমার প্রশ্ন পুলিশ তো সরকারি চাকরি করে, কেন তাদের এরকম ভাবে ব্যবহার করলেন। আপনারা র্যাব, ডিসি-এসপি, টিওনো যারা মর্যাদাশীল এই চাকরিজীবীদের জাতির সামনে এতো ছোট করলেন কেনো? তাদেরকে কেন বাধ্য করলেন তথাকথিত ভোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি হয়তো এই অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নাই। কিন্তু এ কথা ভাবার কোনো কারণ নাই, আগামী ৫ তারা(সরকার) ক্ষমতায় থাকবে। কারণ যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থায় অসত্যের পতন হয়। সত্য দীর্ঘস্থায়ী হয়। এখন যা চলছে তা অসত্য।’
দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার যদি ডাকাতি করতে পারে তাহলে ব্যবসায়ীরা করতে পারবে না কেনো।’
স্বৈরতন্ত্রের কাছে গণতন্ত্রের পরাজয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বৈরতন্ত্রের কাছে গণতন্ত্রের পরাজয় সার্বজনীন, দীর্ঘকালীন চলতে থাকবে এ কথাটা ঠিক নয়। গণতন্ত্রের কাছে স্বৈরতন্ত্রের পরাজয়-পতন হবে। পূর্বে কেউ ঠিকে থাকতে পারে নাই, এখনও পারবে না। এ জন্য আমাদের সর্বশেষ কথা হচ্ছে উঠে দাঁড়াতে হবে। উঠে দাঁড়ানো অর্থই হচ্ছে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকা। গণতন্ত্র ধারণ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করা।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘সময় থাকতে বুঝবার চেষ্ঠা করেন, আপনার পদত্যাগ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। ২০১৪ সালের নির্বাচন যা ২০১৮ সালের নির্বাচন তা। দেশে আওয়ামী লীগ বলে কিছু নাই, এখন আছে পুলিশ, প্রশাসন, র্যাব। একদিনের জন্য পুলিশ প্রশাসন যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তাহলে আওয়ামী লীগ বুঝবে কত ধানে কত চাল। আসলে পুলিশ দিয়ে তারা শুধু গণতন্ত্রে ধ্বংস করে নাই আওয়ামী লীগকেও ধ্বংস করেছে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন সভাপতিত্বে এবং বিএনপি নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান কামালের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেলিন, মো. শাফিন, জিনাফের সভাপতি লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ বক্তব্য দেন।
- কার্টসিঃ ব্রাকিং নিউজ / জানু ২১, ২০১৯
No comments:
Post a Comment