সম্পাদকীয়
জ্বালানি তেলের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে গঠিত কমিটি ১২টি সুপারিশ করেছিল। নির্ধারিত সময়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। অনেক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা জ্বালানি তেল বিক্রিতে ওজনে কম দেয়া। প্রতিনিয়তই পেট্রল পাম্পগুলোর মধ্যে গ্রাহক ঠকানোর প্রবণতা বাড়ছে। কিছু দুর্নীতিবাজ পাম্প মালিক প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ির মালিক, চালকসহ গ্রাহকদের ঠকাচ্ছেন। আইনে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেল ওজনে কম দিলে অনূর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং প্রতিটি অপরাধের জন্য অর্থদণ্ডসহ তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনে থাকলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না বলে গাড়ির মালিকদের অভিযোগ। সরকারের উচিত নিজস্ব উদ্যোগে ডিজিটাল মিটার স্থাপন করা। একটি কেন্দ্রের মাধ্যমে জেলাভিত্তিক ফিলিং স্টেশনগুলো তদারকির ব্যবস্থার রাখা। সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস চুরি রোধে ডিজিটাল মিটারের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ফিলিং স্টেশনগুলোর তেল চুরির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ছাড়া তেমন কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। যৎসামান্য জরিমানায় ফিলিং স্টেশনগুলোর টনকও নড়ছে না। এক্ষেত্রে প্রশাসন আরো পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা।
সারা দেশে তেল বিক্রির ফিলিং স্টেশনগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর বিরুদ্ধেই ভেজাল তেল বিক্রি ও ওজনে কম দেয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা পরিশোধ করে আবার দোর্দণ্ডপ্রতাপে ওজনে কম দিয়ে যাচ্ছে তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব অভিযোগের সত্যতাও রয়েছে। এসব রোধে ফিলিং স্টেশনগুলোর লাইসেন্স প্রদান বা নবায়নের ক্ষেত্রে জ্বালানি বিভাগকে আরো কঠোর হতে হবে। কোনো ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাত্ক্ষণিক তার লাইসেন্স বাতিল করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রাখতে হবে। ফিলিং স্টেশনগুলোর তেল বিক্রিতে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় তদারকি আরো জোরদারের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের আদলে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তেল ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া কীভাবে আরো আধুনিক করা যায়, সে বিষয়ে আরো উগ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তেল কোম্পানিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে গোড়া থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হবে। সিস্টেম লস বলে বিপিসি বছরে হাজার কোটি টাকা লোকসান জুগিয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের নৈতিক মানদণ্ডই ভেঙে পড়ছে। সিস্টেম লস কমিয়ে আনা যাচ্ছে না শত চেষ্টায়ও। ফিলিং স্টেশনগুলোও সিস্টেম লস বলে ওজনে কম দেয়াকে চালিয়ে নিলেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানি পদ্মা, যমুনা ও মেঘনার নৈতিক অধিকারই থাকছে না এর বিরুদ্ধে বলার। এক্ষেত্রে ফিলিং স্টেশনের পাশাপাশি জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও দায় রয়েছে। তদারকির দুর্বলতা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজনে কারচুপি করে চলছে ফিলিং স্টেশনগুলো। শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো যাবে না, প্রয়োজন প্রযুক্তির ব্যবহার ও শাস্তির মাত্রা আরো বাড়ানো।
দেশে জ্বালানি তেল ক্রয়-বিক্রয়ে সীমাহীন অনিয়ম রয়েছে। এ নিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগের অন্ত নেই। ফিলিং স্টেশনগুলো ছাড়াও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তেল বিপণন কোম্পানিগুলো সরাসরি ভেজাল তেল বিক্রি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেল ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার মধ্যে আনতে হবে। প্রয়োজন হলে লাইসেন্স প্রদান, পুরনো স্টেশনগুলোর লাইসেন্স নবায়ন এবং তেল ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নীতি ও আইনে সংস্কার আনা চাই।
- Courtesy: Banikbarta/ Jan 21, 2019
No comments:
Post a Comment