Search

Tuesday, January 22, 2019

আওয়ামী লীগ মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত — রুহুল কবির রিজভী



আওয়ামী লীগের সত্ত্বা ও স্বরুপ বরাবরই মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার, জানুয়ারি ২২, নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন,  আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও ভুয়া ভোটের সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচনকে জায়েজ করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আলোচনাকে ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। আসলে আওয়ামী লীগের সত্ত্বা ও স্বরুপ বরাবরই মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। 

নিচে সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ দেওয়া হল -

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও ভুয়া ভোটের সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত বলছেন-‘এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি। বিএনপি নেতারা পরাজিত হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।‘ বন্ধুরা, আওয়ামী লীগের সত্ত্বা ও স্বরুপ বরাবরই মিথ্যা দর্শণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আগের রাতে ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা, কৃত্রিম লাইন তৈরী করে ভোটাদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে না দেয়া, মহাজোট ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটের ফলাফল সরকারদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঘোষনা করা, নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হয় কারাগারে নয়তো এলাকাছাড়া করা, এসবই হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ভুয়া ভোটে এমপি-মন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে এখন বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচনকে জায়েজ করতে আওয়ামী নেতারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আলোচনাকে ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। 

বন্ধুরা, 
গত কয়েকদিন আগে সোহরাওয়ার্দীতে আওয়ামী লীগের জনসভায় ও গতকাল ভুয়াভোটের সরকারের মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট ডাকাতিকে এড়িয়ে গেছেন, যা দেখে গণমাধ্যমের কর্মীরাও বিস্মিত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে-শনিবারের জনসভায় বহু মানুষের চোখ ছিল-নির্বাচনে কারচুপির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কি বলেন, কিন্তু তা নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেছেন-বর্তমান সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। দুর্নীতি ও মাদক বিরোধী কথা বলে সবক দিচ্ছেন। 

সাংবাদিক বন্ধুরা, 
মূলত: মহাভোট ডাকাতি, মহাভোট জালিয়াতি ও মহাভোট কারচুপির ইস্যুগুলো ধামাচাপা দিতেই এখন প্রধানমন্ত্রী এসব পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, রাতের আঁধারে ভোট দিয়ে, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনী কাজে ব্যবহার করে, বিরোধী দলকে নির্মূল করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রন করে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হরিলুট করে এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রেখে শেখ হাসিনা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তিনি গণতন্ত্রের সমাধিসৌধের ওপর কোন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান ? আসলে শেখ হাসিনার মুখে সুশাসনের অর্থ হলো দেশব্যাপী মৃত্যুর দোলাচলে এক মরণ-হরণের অভিযান, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে ভরে রাখা। কারণ তিনি নাটকীয় ভঙ্গিতে যা বলেন তার উল্টোটাই বাস্তবায়ন করেন। পৃথিবীতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার রেকর্ড একমাত্র শেখ হাসিনারই। শেখ হাসিনা সাড়ম্বরে এখন ভাল ভাল উদ্যোগের কথা বলে মানুষের মন থেকে তাঁর অপকীর্তি মুছতে পারবেন না। সময় থাকতে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। নইলে সরকারের বিপজ্জনক অবতরণ হবে। তাই দ্রুত নিজে পদত্যাগ করে দেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিন। সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পেতে ঐক্যবদ্ধ।

সাংবাদিক বন্ধুরা,
প্রতিদিন দেখছি-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব সারাদেশে ছোটাছুটি করছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেবের দৌড়াদোড়ি কেবল ফটোসেশনেই সীমাবদ্ধ। বন্ধুরা, প্রতিদিন সড়কে লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়-সড়কে মৃত্যুর মিছিল। স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে পড়ছে সড়কে। সড়ক দূর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হচ্ছে প্রায় ২০ জন মানুষ। দু:শাসনের কবলে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে সড়ক ব্যবস্থা। রাজধানীতে একদিকে তীব্র ট্রাফিক জ্যাম, অন্যদিকে পরিবহন নৈরাজ্যে অতিষ্ঠ মানুষ। নিরাপদ সড়ক দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সরকার লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী তো প্রতিদিন বিরোধী দলকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে থাকেন, তিনি গণপরিবহনে নৈরাজ্য ও অকালে হাজার হাজার প্রাণ ঝরে যাওয়ার রোধ করতে ব্যর্থতার জবাব দেবেন কি ? ওবায়দুল কাদের সর্বকালের ব্যর্থ একজন সড়ক মন্ত্রী। যেহেতু মন্ত্রণালয় চালাতে তিনি ব্যর্থ, তার নেতৃত্বের কারণে সড়কে শুধু লাশের ছবি, সেহেতু এই মূহুর্তে পদত্যাগ করে তাকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ। নইলে সড়কে মৃত মানুষের আত্মা শান্তি পাবে না।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ অসংখ্য বিরুদ্ধে গতকাল একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি অবিলম্বে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

জনপ্রিয় অনলাইন এ্যাক্টিভিষ্ট এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে ফেনীর লালপুল এলাকা থেকে গতকাল র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত তাকে কোথায় রাখা হয়েছে কিংবা তাকে আটকের কথা স্বীকার করা হচ্ছে না। আমি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটাকে জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

No comments:

Post a Comment