Search

Thursday, January 17, 2019

টিআইবির রিপোর্টে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আঁতে ঘা লেগেছে — বিএনপি


টিআইবির রিপোর্টে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আঁতে ঘা লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারি, নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

রিজভী আহমেদ বলেন, সরকারের সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণের ঘন অন্ধকার ভেদ করে টিআইবি রিপোর্টে ভোট ডাকাতির মহাসত্য প্রকাশ হওয়াতে সরকারের মন্ত্রীরা ও নির্বাচন কমিশন মুখ লুকাতে পারছে না। সেজন্য আর্তচিৎকার করে সত্য লুকানোর চেষ্টা করলেও কোন লাভ নেই। মানুষ যা জানার নির্বাচনের আগের দিন রাত থেকেই জেনেছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন সংগঠন নির্বাচনে মহাভোট ডাকাতি নিয়ে প্রতিবেদন, মন্তব্য ইত্যাদি করেছে। বিশ্বের নানা গণতান্ত্রিক দেশ বলেছে- এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এই ভুয়া  ভোটের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং তদন্ত দাবি করেছে।

নিচে সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ দেওয়া হল - 

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে গতকাল আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। নজীরবিহীনভাবে তাঁকে কারাগারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। এই আটকিয়ে রাখার পেছনে ব্যক্তির প্রতিহিংসা পূরণের সাধ মেটানো হচ্ছে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে কোন আবেদনই কারাকর্তৃপক্ষ রক্ষা করেনি, বরং সরকারের প্ররোচণায় কারাকর্তৃপক্ষ বেগম জিয়ার অসুস্থতাকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দেয়ারই চেষ্টা করেছে। চিকিৎসা শেষ না হতেই হাসপাতাল থেকে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়েছে কারাগারে। তাঁর অসুস্থতা সত্ত্বেও সেটিকে আমলে না নিয়ে বারবার আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। হয়রানী ও শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়ার জন্যই সরকারের সাজানো অসত্য মামলায় বেগম জিয়াকে ঘনঘন আদালতে উপস্থিত করা হচ্ছে। সরকারের কারসাজিতেই বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা ও জীবন এখন গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

সাংবাদিক বন্ধুরা,
জনগণের টাকা ব্যাংক ও সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে লোপাট করে এখন আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের আলমারীতে টাকা, লকারে টাকা, তোশকের নিচে টাকা, আর বেশীর ভাগ উড়ে গেছে বিদেশে টাকা। চারিদিকে তাদের গিজগিজ করছে টাকা। তাই নিশীথ রাতে ভোটের তেলেসমাতির হোতাদের মোটা অংকের উৎকোচ ও ভুড়িভোজের পাশাপাশি এখন বীরত্বের পদক দেয়া হবে বলগাহীন উচ্ছাসে। অর্থাৎ ভোট ডাকাতির জন্য এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেয়া হবে, যা নজীরবিহীন। আসলে শেখ হাসিনার কথন, বলন সবই নজীরবিহীন। শেখ হাসিনার পুলিশ-র‌্যাবের ভোট ডাকাতির দক্ষতা নজীরবিহীন। তাঁর সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের অম্লানবদনে ডাহা মিথ্যা কথা বলা নজীরবিহীন। বিরোধীদের প্রতি শেখ হাসিনার রণং দেহী ভাব নজীরবিহীন। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে আদালত, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের তথাকথিত নিরপেক্ষতার গুঞ্জন নজীরবিহীন। কথায় কথায় বিরোধী দলের প্রতি ধমক ও হুমকি নজীরবিহীন। ভোটারদের ভোট-বঞ্চনা করতে দীর্ঘ সময়ব্যাপী পরিকল্পনা নজীরবিহীন। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য ‘ড্রাকোনিয়ান’ আইন তৈরী করা হয়েছে যা নজীরবিহীন।

সাংবাদিকবৃন্দ,
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার পর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে শুরু করে থানায় থানায় উৎসব চলছে। কেন এই উৎসব ? এখন তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক দেয়া হবে কেন, এগুলো জাতি তা জানতে চায়। এটা কি গায়েবী মামলার পুরস্কার ? মৃত ব্যক্তিকে আসামী করার পুরস্কার ? বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে জেলে ঢোকানোর পুরস্কার ? বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে এলাকা ছাড়া করার পুরস্কার ? বিরোধী দলকে নির্বাচনী মাঠে নামতে না দেয়ার পুরস্কার ? পোষ্টার লাগাতে না দেয়ার পুরস্কার ? ধানের শীষের প্রার্থীদের গুলি করা, হামলা করা, জেলে ঢোকানোর পুরস্কার ? ধানের শীষের এজেন্টদের গ্রেফতার করা, কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, মারধর করার পুরস্কার ? সর্বোপরি ভোটের আগের রাতে ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারদেরকে বাধ্য করে রাতভর ব্যালটে সীল মেরে বাক্স ভর্তি করার পুরস্কার ? বাংলাদেশ থেকে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার কৃতিত্বের জন্যই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে বলে জনগণ বিশ^াস করে।

বন্ধুরা,
টিআইবি রিপোর্টে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আঁতে ঘা লেগেছে। সরকারের সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণের ঘন অন্ধকার ভেদ করে টিআইবি রিপোর্টে ভোট ডাকাতির মহাসত্য প্রকাশ হওয়াতে সরকারের মন্ত্রীরা ও নির্বাচন কমিশন মুখ লুকাতে পারছে না। সেজন্য আর্তচিৎকার করে সত্য লুকানোর চেষ্টা করলেও কোন লাভ নেই। মানুষ যা জানার নির্বাচনের আগের দিন রাত থেকেই জেনেছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন সংগঠন নির্বাচনে মহাভোট ডাকাতি নিয়ে প্রতিবেদন, মন্তব্য ইত্যাদি করেছে। বিশে^র নানা গণতান্ত্রিক দেশ বলেছে-এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এই ভুয়া ভোটের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং তদন্ত দাবি করেছে। বিশ^বাসী এই নির্বাচনকে ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছে। ক্ষমতা চিরদিনের জন্য  কোলবালিশের মতো আঁকড়ে ধরে রেখে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই ভোটারদেরকে ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারীর মধ্যে রেখে, বিরোধী দলকে কারাগারে ঢুকিয়ে, ভোটারদেরকে আতঙ্কের মধ্যে রেখে, নির্বাচন কমিশনে মোসাহেবদের বসিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে পার পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ জীবন উৎসর্গ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে, তারা  প্রয়োজন হলে জীবন দিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবে।  

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সদর উপজেলার রাজঘর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ঐ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী পুলিশ প্রহরায় তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষমান ভোটারদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলি করে ভোটারদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করার চেষ্টায় ব্যর্থ হলে নৌকার প্রার্থী নিজের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি চালালে বিএনপি কর্মী ইসরাইল ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং জাবেদসহ অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মী কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে জাবেদসহ অনেকেই গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। পরবর্তীতে সরকারী দলের প্রার্থী লাশ নিয়ে নিহতের পিতা-মাতাকে হুমকি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। হুমকি দিয়ে সেই নেতা আরো বলে যে, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা না করলে লাশ দেয়া হবে না। অত:পর নিহতের পিতা-মাতা উপায়ান্তর না দেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বাধ্য হয়। বর্তমানে রাজঘর গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসিয়ে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে, গ্রামটি এখন পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে। মহিলাদের উপরও নির্যাতনের কারণে তারা বাড়িতে থাকতে পারছে না। 

বর্তমানে ইরি মৌসুম চলছে, ধান বোনার কাজে কোন নারী-পুরুষ গ্রামে যেতে সাহস পাচ্ছে না। আমি আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর এহেন ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডে ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এধরণের কর্মকান্ড বন্ধের জোর দাবি করছি। নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার অভিযান বন্ধেরও জোর দাবি জানাচ্ছি। নিহত বিএনপি কর্মী ইসরাইলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ জাবেদ এর আশু সুস্থতা কামনা করছি।

কর্মসূচিঃ  
আগামী ১৯ জানুয়ারী মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূণ:প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৮৩তম জন্মবার্ষিকী। শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে -

১। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি বিএনপি কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। 

২। আগামীকাল ১৮ জানুয়ারী বেলা ২-৩০টায় সুপ্রীম কোট বার অডিটোরিয়ামে বিএনপি’র উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। 

৩। আগামী ১৯ জানুয়ারী শনিবার সকাল ১০-০০টায় শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ জিয়ার মাজারে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও নেতাকর্মীরা ফাতেহা পাঠ ও পুস্পার্ঘ অর্পণ করবেন। 

৪। দিবসটি উপলক্ষে ইতোমধ্যেই পোষ্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

৫। ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে।

৬। অনুরুপভাবে সারাদেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে।

ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

No comments:

Post a Comment