Search

Saturday, May 15, 2021

করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারি কালে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দায়িত্বহীনতা

-------------------------------------

— মাকসুদুর রহমান

-------------------------------------

কোভিড নাইনটিন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার খোলনলচে চূড়ান্তভাবে উন্মোচিত করেছে। অথচ এই যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশের সামনের সারির গণমাধ্যমসমূহ নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো কিংবা মেট্রোরেলের বগি আমদানির রঙচঙে দৃশ্য তুলে ধরতে। ভাবখানা এমন বাংলাদেশে পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অথচ তারা বছরখানেক যাবৎ করোনাভাইরাস মহামারিকালে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে কি কি অব্যবস্থাপনা রয়েছে এবং তা দূরীকরণে জরুরী ভিত্তিতে যেসকল ব্যবস্থা নেয়া অবশ্যম্ভাবী তা নিয়ে লাগাতারভাবে অনুসন্ধানি রিপোর্ট ও তার ফলোআপ করেনি।


করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারির ফলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি ও টিকা সঙ্কট বিষয়ে মিডিয়া এক্টিভিজম জরুরি। 


গণমাধ্যমসমূহ সেই অর্থে প্রকাশ করেনি দেশের জেলা  শহর গুলোতে আইসিইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন, টেস্টের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও সঙ্কট নিরসনে অগ্রগতি সম্পর্কে। বাংলাদেশের প্রধান ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ প্রবীণ সাংবাদিকরা পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে সরকারের  উন্নয়নের প্রশংসা প্রকাশে  যেভাবে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন, তার ভগ্নাংশ মাত্র আইসিইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশনসহ স্বাস্থ্যপরিষেবার অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেছেন। এটা নিঃসন্দেহে জনগণের মৌলিক বিষয়সমূহ উপস্থাপন থেকে সুচতুরভাবে নিজেদের এড়িয়ে যাওয়ার শামিল। প্রথম আলো, দি ডেইলি স্টারসহ সামনের সারির গণমাধ্যমসমূহ ও নেতৃত্ব প্রদানকারী সাংবাদিকরা কোভিড-১৯ টিকা সংগ্রহে সরকারের অবস্থান, অব্যবস্থাপনা, লুকোচুরি ইত্যাদি বিষয়ে শক্তভাবে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেনি। অথচ জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের প্রতি মনস্তাত্ত্বিক  চাপ সৃষ্টির এটা ছিল গণমাধ্যমসমূহের নৈতিক দায়িত্ব। যে দায়িত্ব পালনে তারা কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথম আলো, দি ডেইলি স্টার, চ্যানেল আই, এনটিভি, ৭১ টভি’র মতো গণমাধ্যম টিকা সংগ্রহে সরকারের নানা কার্যক্রম সম্পর্কে লাগাতারভাবে ওয়াচডগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়নি।

গণমাধ্যমসমূহ ‘সংবাদপত্র করোনা ভাইরাস ছড়ায় না’ এই বিজ্ঞাপন প্রদানে যতটা  স্পেস দিয়েছে তার অনেকাংশে কম প্রশ্ন সরকারের সামনে তুলে ধরেছে টিকা সংগ্রহ, বিতরণ নিয়ে। অথচ এটা গণমাধ্যমের দায়িত্ব ছিলো। কারণ সংবাদপত্রের কাজই হচ্ছে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে লাগাতারভাবে তুলে ধরে সরকারকে চাপের মধ্যে রাখা। 

এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্রিয় অংশগ্রহণে এদেশের মানুষের ভোট ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পরে এদেশের গণমাধ্যমসমূহ অনেকটা দায়সারাভাবে সংবাদ প্রকাশ করেছে।  যার চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক  শাসনব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক যবনিকাপাত। মূলত গণমাধ্যমসমূহের নির্লিপ্ততায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীন সংস্কৃতি গড়ে ওঠায় এর অনেকটা দায় বর্তমান গণবিরোধী সরকারের নিরব  সহযোগী হিসেবে তাদের উপরও বর্তায়। 

গণমাধ্যমের পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে সত্য তুলে ধরা। বলা হয়ে থাকে গণমাধ্যম হচ্ছে জনগণের সংসদ। বাংলাদেশ করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারির দ্বিতীয়বর্ষ অতিক্রম করছে। অকালে বেঘোরে মারা যাচ্ছে সব বয়সের মানুষ। অকাতরে আক্রান্ত হচ্ছে লাখো মানুষ। অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়েছে। দেশ এক অনিশ্চিত পথে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে সরকার যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা গণমাধ্যমের বর্তমানে প্রধান দায়িত্ব। স্বাস্থ্যসেবার বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরা এবং টিকা সঙ্কটকে অব্যাহতভাবে হাইলাইট করা গণমাধ্যের কাজ। 

কিন্তু গণমাধ্যম এই মহামারির ভয়াবহতা বিষয়ে একেবারে উদাসীনতা দেখিয়ে চলেছে গণমাধ্যম। একদিনে অবৈধ সরকারের উদাসীনতা, অন্যদিকে গণমাধ্যমের নির্লিপ্ততা, ফলে দেশ মহাবিপদে।    

গণমাধ্যমের মনে রাখতে হবে তাদের সংবাদসেবার ইউজার হচ্ছে জনগণ। জনগণের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকলে, এর খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে না গণমাধ্যম। আর এই বিশ্বমহামারির সঠিক চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থতার কথা ইতিহাসে কিন্তু লেখা থাকবে। 




লেখক গবেষক।  


No comments:

Post a Comment