আহমাদ ইশতিয়াক
ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের (ফেব্রুয়ারি ১৯৭১)। ছবিটি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, (বীরপ্রতীক) এর কাছ থেকে পাওয়া। |
সময়টা ১৯৬৯ সালের ১৪ নভেম্বর। সবে লেফটেন্যান্ট থেকে ক্যাপ্টেন হয়েছেন আফতাবুল কাদের। নিয়োগ তখন তার পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদের ৪০ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে। এর মধ্যে কদিন পরপর চিঠি আসে দেশ থেকে। তার ভালোবাসার মানুষ জুলিয়ার চিঠি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়া মুর্শেদা বাহার জুলিয়া আত্মিয়তার সম্পর্কে খালাতো বোন। দারুণ সুন্দর জুলিয়া। আফতাব কাদেরও কম নন, তার গলায় ইংরেজি গান শুনে অন্যান্য অফিসাররা তাকে বিখ্যাত হলিউডের নায়ক রক হাডসনের নামে ‘রকি’ বলে সম্বোধন করতেন।
জুলিয়ারা তখন থাকে চট্টগ্রামের দেওয়ান বাজারের সিরাজ-উদ-দৌলা রোডে। আর আফতাবের বাবা ছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল কাদের। যদিও তারা থাকতেন পুরাতন ঢাকার ফরিদাবাদ এলাকার লালমোহন পোদ্দার লেনে।
জুলিয়া এবং আফতাব দুজনের পরিবারেরই ইচ্ছে বিয়েটা সেরে ফেলার। কারণ সেনাবাহিনীর চাকরি, সহসা ছুটি মেলে না। ১৯৭১ এর জানুয়ারি মাসে তাই এক বছর ছুটির জন্য আবেদন করলেন ক্যাপ্টেন আফতাব। কিন্তু ছুটি মঞ্জুর হলো দুই মাসের। পাঁচ ফেব্রুয়ারি দেশে এলেন আফতাব। ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ মহা ধুমধাম করে জুলিয়াদের বাড়ি চট্টগ্রামের দেওয়ান বাজারের সিরাজ-উদ-দৌলা রোডে বিয়ে হলো তাদের। এরই মধ্যে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেল। ২৫ মার্চ গণহত্যার রাতে নববধূসহ ঢাকার বাড়িতেই ছিলেন আফতাব। গণহত্যার পর আফতাব সিদ্ধান্ত নিলেন আর ফিরে যাবেন না পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মস্থলে। মার্চের ২৮ তারিখ আফতাব ঢাকা ছেড়ে ফিরে গেলেন চট্টগ্রামে।
বিয়ের মাত্র একমাস পার হয়েছে মাত্র। প্রিয় মানুষ জুলিয়াকে নিয়ে মায়ার সংসার। অথচ এক রাতে সব মায়া ত্যাগ করে দেশমাতৃকার টানে বাড়ি থেকে চলে গেলেন আফতাব কাদের। শুরু করলেন এক অনির্দিষ্ট পথে যাত্রা। লক্ষ্য দেশ স্বাধীন করার। চট্টগ্রাম তখনো মুক্তাঞ্চল। ঢাকা চটগ্রাম মহাসড়ক জুড়ে বিভিন্ন পজিশনে ক্যাপ্টেন রফিক (পরবর্তীতে মেজর এবং ১ নং সেক্টর কমান্ডার) এর নেতৃত্বে ইপিআর বাহিনী নিয়েছিল শক্ত অবস্থান। 'জান দেব, তবু রাস্তা ছাড়বো না' -এই মূলমন্ত্র নিয়ে মাটি কামড়ে প্রতিরক্ষা ব্যুহগুলোতে স্বল্প রসদে লড়ে যাচ্ছিল সেদিন হাজার হাজার ইপিআর।
১৩ এপ্রিল, ১৯৭১
এদিন দুপুরে রামগড় থানার ওসির অফিসে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এইচ টি ইমাম আর ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান আলোচনায় ব্যস্ত। এমন সময় থানায় এলেন ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির এক সুঠামদেহী যুবক। এসেই মিলিটারি কায়দায় সালাম ঠুকে বললেন, ‘ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের, আর্টিলারি, রিপোর্টিং প্রেজেন্ট স্যার।’ মেজর জিয়া পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে আফতাবের কোর্সের প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন। ইতোমধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের ৮ ইস্ট বেঙ্গলের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে মহালছড়িতে ডিফেন্স নিলেন।
সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত দ্বিতীয় লে. আফতাবুল কাদের। ছবিটি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, (বীরপ্রতীক) এর কাছ থেকে পাওয়া। |
সেই যুদ্ধের আগে এই দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়টা বলে নিই। ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের ইকবালের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর শহরে। যদিও তাদের পৈত্রিক নিবাস ছিল লক্ষ্মীপুর জেলাএ রামগঞ্জ থানার তেওড়ি গ্রামে। তার বাবা আবাস গড়ে তোলেন পুরান ঢাকার ফরিদাবাদ এলাকার লালমোহন পোদ্দার লেনে। সে বাড়িতেই শৈশব কেটেছিল আফতাবুল কাদেরের। বাবা আব্দুল কাদের ছিলেন ইংরেজ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। আর মা রওশন আরা বেগম গৃহিনী।
বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে দেশের নানা জায়গায়। ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং আনন্দমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। কিন্তু সে বছরই পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেন আফতাব কাদের। দু বছর পর ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশনপ্রাপ্ত হলেন আর এর পরের বছর ১৯৭০ সালে হায়দারাবাদ ক্যান্টনমেন্টে ৪০ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দিলেন।
ক্যাপ্টেন কাদির যখন এই ইপিআর সৈন্যদের সঙ্গে ফেনীর ছাগলনাইয়ার শুভপুর প্রতিরক্ষায় যোগ দিলেন। পাকিস্তানিরা হেলিকাপ্টারের সাহায্যে শুভপুরে সৈন্য নামানোর সময় গ্রামবাসীদের সহায়তায় ধরে ফেলেন একজন সৈন্যকে। পরবর্তীতে তিনি রামগড় ফিরে আসেন। এখানে তিনি ৫০০ জন তরুণকে নিয়ে গড়ে তোলেন একটি মুক্তি ক্যাম্প। এসব তরুণদের তিনি নিজ হাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলেন।
নিজের অধীনস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জ্বীবিত করতে একটা কথা প্রায়ই বলতেন ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের। “একজন পাকিস্তানি সৈন্যকে খতম করার অর্থ হলো এদেশের অন্তত এক লক্ষ নিরীহ মানুষ ও নারীকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা।”
ফেনীতে গিয়ে তিনি শুভপুরের যুদ্ধে ইপিআর বাহিনীর সাথে যোগ দেন। শুভপুর ব্রিজ এলাকায় তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হেলিকপ্টারের সাহায্যে ছত্রী সেনা নামাচ্ছিল। পাকিস্তানি ছত্রীসেনাদের একজনকে ক্যাপ্টেন আফতাব গ্রামবাসীর সহায়তায় ধরে ফেললেন। বন্দি ছত্রীসেনাকে নিয়ে ২ এপ্রিল ১৯৭১ রাতে পৌঁছান রামগড় শহরে।
২৪ এপ্রিল ১৯৭১
সেদিন খবর এলো মেজর শওকতের কাছ থেকে। এখনই তাকে মহালছড়িতে ফিরে যাবার নির্দেশ দেয়া হলো। নির্দেশ মতো ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের রওনা দিলেন মহালছড়ির উদ্দেশ্যে। বুড়িঘাটে এসে দেখা হলো লেফটেন্যান্ট মাহফুজ, ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান, হাবিলদার সায়ীদ এবং হাবিলদার তাহেরসহ আরো অনেকের সাথে। বুড়িঘাট থেকে রওনা হয়ে যখন ক্যাপ্টেন কাদেরদের লঞ্চটি একটি দ্বীপে (কাপ্তাই লেকের মধ্যে পাহাড়গুলোকে দ্বীপের মতোই মনে হয়) এসে ভিড়লো তখনই পাক বাহিনীর একটি ধাবমান লঞ্চ এসে পৌঁছাল সেখানে। বন্দুকভাঙ্গায় ক্যাপ্টেন আফতাব এর বাহিনীকে না পেয়ে শত্রুপক্ষ কয়েকটি লঞ্চে করে পুরো লেক এলাকায় তাদেরকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। শত্রুপক্ষের অতর্কিত আক্রমণে ক্যাপ্টেন আফতাব কাদেরের কোম্পানির সদস্যরা এদিক সেদিক ছিটকে পড়লেন।
শুরু হয় বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি বিনিময়। শেষ পর্যন্ত ক্যাপ্টেন আফতাবের পাশে থেকে যান হাবিলদার সায়ীদ এবং হাবিলদার তাহের। এদের দুজনের হাতে ছিল এলএমজি। তিনটি এলএমজির অনবদ্য গুলি বর্ষণের ফলে শত্রুপক্ষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে গেল। এক ঘণ্টা ধরে চলছিল বুড়িঘাটের এই যুদ্ধ। শত্রুপক্ষ পিছু হটে যাবার পর নিজ বাহিনীর সদস্যদেরকে একত্রিত করে মহালছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ক্যাপ্টেন আফতাব। সাথে লেফটেন্যান্ট মাহফুজ, ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানসহ আরো বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিবাহিনীর অবস্থান তখন সুবিধাজনক ছিল না। উপর্যুপরি বিমান আক্রমণ চলছিল। রামগড় দখলে নেবার জন্যও পাকিস্তানি বাহিনী তখন সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মহালছড়িতে তখন বিক্ষিপ্ত সেনা দলগুলোকে একত্রিত করার কাজ চলছিল। উদ্দেশ্য শত্রুপক্ষের উপর শেষ আঘাত হানা।
এদিকে একের পর এক মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড হামলার মুখে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পাকবাহিনী তাদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলো। তাঁরা মিজোরামের দু’টি বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যদের নিজ দলে অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করে। অন্যদিকে স্থল আক্রমণের সাথে সাথে বিমান ও হেলিকপ্টারের সাহায্যেও শুরু করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য অবস্থান-ঘাঁটির উপর প্রবল হামলা। এ অবস্থায় পার্বত্য এলাকায় পূর্ব ট্রেনিংবিহীন মুক্তিযোদ্ধারা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। রসদ এবং গোলাবারুদ সংকটও দেখা দিলো তাদের।
শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরের স্ত্রীর কাছে লেখা
জেনারেল ওসমানীর ডিও লেটার। |
২৭ এপ্রিল ১৯৭১
সেদিন সকাল থেকে মহালছড়ির অবস্থা থমথমে। এই প্রতিকূল ও দুর্বল মুহূর্তে ২৭ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে হানাদার বাহিনীর দ্বিতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের এক কোম্পানি সৈন্য (১৩৬ জন) এবং একটি মিজো ব্যাটালিয়নকে (১০০০ জন) সঙ্গে নিয়ে আক্রমণ চালায় মহালছড়িতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের উপর। মেজর মীর শওকত এবং চন্দ্রঘোনা পেপার মিলের প্রকৌশলী ইসহাকের নেতৃত্বে ওই সময় শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করা হচ্ছিলো। এর মধ্যে হানাদার বাহিনী হেলিকপ্টারযোগে দ্বিতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের আরও এক কোম্পানি সৈন্য এখানে নামিয়ে দিয়ে যায়।
দুই পক্ষের প্রচণ্ড গোলাগুলি। এ যুদ্ধের মধ্যে বেলা ৩টায় ক্যাপ্টেন আফতাবের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপটি মহালছড়ি এসে পৌঁছালেন। সুদক্ষ যুদ্ধ কৌশলে টগবগে তরুণ ক্যাপ্টেন আফতাব সঙ্গীদের নিয়ে নামলেন শত্রু মোকাবিলায়। তাদের এ সম্মিলিত কঠিন প্রতিরোধের মুখে মিজো বাহিনী প্রথম অবস্থায় পিছু হটতে শুরু করে। এতে হানাদারেরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা মিজোদের সামনে রেখে একটার পর একটা আক্রমণ চালিয়ে অগ্রসর হতে থাকলো।
প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা জবাব দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে শত্রুদের। মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বেপরোয়া গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে যায়। তিন চারগুণ অধিক সংখ্যক শত্রুপক্ষ বীভৎস উল্লাস ধ্বনি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে। চরম এ বিপজ্জনক অবস্থায় সহযোদ্ধারা পিছু হটার পরামর্শ দেয় ক্যাপ্টেন আফতাবকে।
কিন্তু ক্যাপ্টেন আফতাব তার সহযোদ্ধা ছাত্র শওকত, ফারুক এবং দুই ইপিআর সৈনিককে সঙ্গে নিয়ে তিনটি এলএমজির অবিরাম বৃষ্টির গুলিবর্ষণে কোণঠাসা করে ফেলে শত্রুদের। এই চরম মুহূর্তে হঠাৎ এক সহযোদ্ধার এলএমজির ফায়ারিং বন্ধ হয়ে গেল! শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার জীবনকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার তিনটি এলএমজির একটি অচল হয়ে পড়ায় অস্থির হয়ে উঠলেন ক্যাপ্টেন আফতাব।
মেরামতের জন্য দ্রুত অস্ত্রটি তার কাছে নিয়ে আসার নির্দেশের পরও সহযোদ্ধা শওকতের আসতে খানিক দেরি হওয়ায়, ক্যাপ্টেন আফতাব নিজেই ক্রলিং করে এগিয়ে যেতেই শত্রুর অস্ত্রের কয়েকটি গুলি এসে বেধে তার ডান বগলের কয়েক ইঞ্চি নিচে এবং পেটের বাম পাশে।
বৃষ্টির মতো গোলাগুলির মধ্যেই গুরুতর আহত আফতাবকে বহন করে একটু নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন শওকত, ফারুক ও ইপিআরের ড্রাইভার আববাস। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য জিপ গাড়িযোগে রামগড় আসার পথে শহীদ হন অসম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। অথচ শহীদ আফতাব কাদেরের হাতের মেহেদীর রঙ তখনো শুকায়নি।
ক্যাপ্টেন আফতাব শহীদ হওয়ার পরে তার রক্তভেজা শার্ট আর বিয়ের আংটি সহযোদ্ধারা জেড ফোর্স হেডকোয়ার্টার্সে পাঠিয়ে দেন। যুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালের শেষের দিকে মায়ের হাত হয়ে জুলিয়ার হাতে আসে শহীদ স্বামী আফতাবের শার্ট ও আংটি। সেই শার্ট আর আংটিই ছিল শহীদ স্বামীর একমাত্র স্মৃতি।
সময়ের পরিক্রমায় ১৯৭৫ সালে আবার বিয়ে হয়েছিল জুলিয়ার। স্বামী ড. শামসুল হুদা যুক্তরাষ্ট্রের জেভিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক। আজও প্রতিবছর একবার হলেও দেশে আসেন জুলিয়া আর শামসুল হুদা। এয়ারপোর্টে নামার আগেই এয়ারপোর্টের বাইরে অপেক্ষায় থাকে সেনাবাহিনীর একটি জিপ। প্রথমেই তারা সেই জিপে করে ছুটে যান খাগড়াছড়ির রামগড়ের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে। যেখানে শুয়ে আছেন ক্যাপ্টেন আফতাব। স্বামীর কবরের সামনে দাঁড়ান জুলিয়া। যেখানে শেষ আশ্রয় বাংলার নক্ষত্র বীর সেনানী ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরের। মুক্তিযুদ্ধের ২৭ এপ্রিল আজকের দিনে শহীদ হয়েছিলেন কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আফতাবুল কাদের (বীর উত্তম)। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততোদিন শহীদ আফতাবুল কাদের থাকবেন চির ভাস্বর হয়ে। শহীদ হওয়ার দিনে এই দুর্ধর্ষ বীর যোদ্ধার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
তথ্যসূত্র -
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের (বীরউত্তম)/ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। ( বীরপ্রতীক)
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস- প্রথম খণ্ড (মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী)
- লেখক আহমাদ ইশতিয়াক। ইমেইল ahmadistiak1952@gmail.com
No comments:
Post a Comment