Search

Saturday, June 27, 2020

করোনায় এত চিকিৎসকের মৃত্যু কেন

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ


সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। তার মধ্যে অর্ধশতাধিক চিকিৎসক! সঠিক পরিসংখ্যান জানা না থাকলেও প্রায় সবাই একমত, কভিড আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর বিপরীতে চিকিৎসক মৃত্যুর হার বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের মতো প্রতি দেড় হাজার মৃত্যুতে ৫০ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হলে আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোয়া লাখ মৃত্যুর বিপরীতে চিকিৎসক মারা যাওয়ার কথা চার হাজারের বেশি। ব্রাজিল বা যুক্তরাজ্যে প্রায় দুই হাজার করে চিকিৎসকের মৃত্যু হওয়ার কথা করোনায়। এমনকি পাশের দেশ ভারতে ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচশ চিকিৎসকের মৃত্যু হওয়ার কথা। কিন্তু ওইসব দেশে চিকিৎসক মৃত্যুর হার তেমন নয়। ৩১ মে পর্যন্ত ভারতে ৩১ চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর দিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম। করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসক ও নার্স মারা গেছেন বলে আলোচনায় আসে। কিন্তু সেই ইতালিতেও ৯ এপ্রিল পর্যন্ত যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন চিকিৎসক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০০ জন। ওই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নার্স মারা গেছেন ৩০ জন (এনডিটিভি, ৯ এপ্রিল ২০২০)।

১৫ এপ্রিল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ কভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেটিই বাংলাদেশে কভিড আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো চিকিৎসকের মৃত্যু। এর ১৮ দিন পর ৩ মে করোনা কেড়ে নেয় অধ্যাপক ডা. অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মনিরুজ্জামানকে। তারও আট দিন পর এ তালিকায় যুক্ত হয় অত্যন্ত পরিচিত মুখ রেডিওলোজিস্ট অধ্যাপক ডা. অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবুল মুকারিম। তারপর থেকে দ্রুত বাড়তে থাকে চিকিৎসক মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিনই এ তালিকায় যোগ হচ্ছে কোনো না কোনো চিকিৎসকের নাম। তাদের প্রায় সবাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে তরুণ চিকিৎসক, কেউ বাদ যাননি করোনার হাত থেকে। তাদের সবারই যে অন্য কোনো রোগ ছিল এমনও নয়। একেবারেই নীরোগ সুঠামদেহী তরতাজা চিকিৎসকও হেরে গেছেন করোনার কাছে।


                        সায়ন্থ সাখাওয়াৎ

কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে অস্বাভাবিকভাবে এত ব্যাপকসংখ্যক চিকিৎসক প্রাণ হারাচ্ছেন কেন? এর আংশিক উত্তর পাওয়া যাবে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ নামে একটি সংগঠনের জরিপের ফলাফল থেকে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের ২৬ শতাংশ মে মাস পর্যন্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী বা পিপিই পাননি। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিইর মান এবং ব্যবহারের প্রশিক্ষণ না থাকায় উদ্বিগ্ন। নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ করোনাভাইরাস মহামারীতে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর করা গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ করেছে। হেলথ ওয়াচের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ (প্রথম আলো, ২০ জুন ২০২০)।

রিপোর্টে আরও লেখা হয়, মে মাসে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা তখন পর্যন্ত পিপিই পাননি। তাদের মধ্যে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ এমবিবিএস চিকিৎসক, ৫০ শতাংশ নার্স ও মিডওয়াইফ এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ প্যারামেডিকস।

স্বাস্থ্যকর্মীদের মনের ওপর চাপ বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে গবেষণায় বলা হয়, বিশেষ করে চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বাড়তে থাকা চাপ কমাতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানের পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেজন্য গবেষণায় পিপিইর পরিমাণ ও গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণ প্রদান, সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্র্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এই সুরক্ষাসামগ্রী না দেওয়া বা এর মান নিয়ে যারাই প্রশ্ন তুলেছেন, তারা ভোগ করেছেন শাস্তি। যেখানে শিষ্টের দমন আর দুষ্টের পালনের দিকে সরকার বেশি মনোযোগী সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন, সেটাই তো স্বাভাবিক।

আমরা জানি, সরকারি মাস্ক সরবরাহ না থাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নিজ উদ্যোগে চিকিৎসক-নার্সদের মাস্ক কিনে ব্যবহার করতে বলায় তাকে পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নিম্নমানের মাস্ক গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকেও বদলি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পাবনার হেমায়েতপুরের মানসিক হাসপাতালে। এন৯৫ মাস্কের প্যাকেটে নকল মাস্ক সরবরাহ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে করা হয়েছে ওএসডি! নিম্নমানের পিপিই নিয়ে প্রশ্ন তোলায় নোয়াখালীতে শোকজ করা হয়েছে চিকিৎসককে। এমন বহু উদাহরণ আছে আমাদের সামনে।

বহু জায়গায় এমন নিম্নমানের বা নকল পিপিই সরবরাহের অভিযোগ আছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা মহানগর হাসপাতালে মাস্ক নিয়ে নয়ছয় হওয়ার বিষয়ে অবহিত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন দেশবাসীকে। এসব নিয়ে তিনি তার ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অবহিত হওয়ার পরও যেসব চিকিৎসক অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন, তাদের শাস্তি পেতে দেখেছি আমরা। আর যারা অভিযুক্ত, তাদের কী শাস্তি হয়েছে, তা আজও জানা গেল না!

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য মতে, জুনের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে অর্ধশতাধিক চিকিৎসকের মৃত্যু ছাড়াও চার হাজারের বেশি চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা যে আরও বেশি, তা বলাই বাহুল্য। কারণ অনেক প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারই আক্রান্ত হওয়ার পর বাড়িতে অবস্থান করেন এবং খুব সিরিয়াস অবস্থা না হলে কাউকে জানান না।

সুরক্ষাসামগ্রীর অপ্রতুলতা ও নিম্নমানের কারণে চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার বাংলাদেশে এত বেশি বলে অনেকেই মনে করেন। সেই সঙ্গে আছে পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের অভাব। এসব সুরক্ষাসামগ্রী কীভাবে ব্যবহার করবেন এবং তার ডিসপোজাল কীভাবে করতে হবে, তার জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। সারা দেশের চিকিৎসকদের এ বিষয়ে যথাযথ ট্রেনিং দেওয়া হয়নি বলে অনেক চিকিৎসক যথাযথ নিয়মে এসব সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন না বলেও অনেকে ধারণা করেন। চিকিৎসকদের এ ট্রেনিংয়ের ঘাটতির কথাটা উঠে এসেছে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের জরিপেও।

আমরা জানি, কভিড আক্রান্ত হলে তার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। উপসর্গ ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা বিবেচনায় নিয়ে কভিড রোগীদের চিকিৎসা চালাতে হয়। এ ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মনোবল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে থেকে যে শত্রু আক্রমণ করবে, তার শক্তি-সামর্থ্য ও তার বিরুদ্ধে শরীরের ভেতরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারার সক্ষমতার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে একজন রোগীর কী পরিস্থিতি হবে। এই দুয়ের যোগফল কখনো হবে শূন্য। অর্থাৎ কভিড হলেও কোনো উপসর্গ থাকবে না। কখনো দেখা দিতে পারে মৃদু উপসর্গ। আবার কারও বেলায় ভয়াবহ জটিলতা, এমনকি হতে পারে মৃত্যুও!

অন্যান্য দেশে উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী থাকার পরও বহুসংখ্যক চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মনোবল দুর্বল করে দিয়েছে শুরুতেই। আর চিকিৎসকদের চাকরি ও প্র্যাকটিসের ধরন পৃথিবীর খুব কম দেশেই বাংলাদেশের মতো পাওয়া যাবে। এখানে একজন চিকিৎসক সকালে হাসপাতালে যান। বিকেলে যান প্রাইভেট প্র্যাকটিসে। কখন বাসায় ফিরতে পারবেন তা নির্ভর করে কার রোগীর সংখ্যা কত, তার ওপর। সার্জনরা আবার এই দুয়ের মধ্যে দুপুরে বা রাতে করেন প্রাইভেট ওটি। ফলে তাদের শারীরিক ব্যায়াম ও বিনোদন বলতে তেমন কিছু নেই। অথচ ফিজিক্যাল ফিটনেস ও বিনোদন একজন মানুষের ইমিউনিটি তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে চিকিৎসকরা জাতির স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, তারাই করেন অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। শুধু অর্থ উপার্জন আর ভালো খাবার খেয়েই যে শরীর-মন ফিট রাখা যায় না, সেটা কে না জানেন। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জীবনযাপন পদ্ধতিও তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা বাড়িয়ে তুলেছে, সেটাও ভেবে দেখা উচিত।

দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা জীবনযাপনের ধরন হয়তো সহসাই পরিবর্তন করা যাবে না। শরীর-মনে যে জঞ্জাল বাসা বেঁধেছে, সেটাও হয়তো এখনই দূর হবে না। তাই চিকিৎসকদের বাঁচাতে আমাদের হাতে আছে মূলত দুটি জিনিস। এক. মানসম্পন্ন করোনাপ্রতিরোধী সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিতকরণ ও দুই. যথাযথ প্রশিক্ষণ। এই দুটি বিষয় নিশ্চিত করা গেলে নিঃসন্দেহে চিকিৎসকদের মনোবল বাড়বে, কমবে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকি।।

মনে রাখতে হবে, কভিড মূলত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বাঁচাতে না পারলে আমরা কেউ বাঁচব না।


  • সায়ন্থ সাখাওয়াৎ- লেখক, চিকিৎসক ও কলামনিস্ট
  • কার্টসি - দেশরূপান্তর

Monday, June 22, 2020

অন্ধকারে ঢিল ছোড়া ও ভিন্নমত দমন

কামাল আহমেদ


করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তাকে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো বলে বর্ণনা করেছেন চীনা বিশেষজ্ঞ দলের নেতা ডা. লি ওয়েন ঝিও। বাংলাদেশে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেওয়ার জন্য এই বিশেষজ্ঞ দল সপ্তাহ দুয়েক ধরে অবস্থান করছে এবং বিভিন্ন হাসপাতালের পরিস্থিতি, রোগ শনাক্তকরণ পদ্ধতি পরিদর্শন করেছে। তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে। এই সপ্তাহেই তারা দেশে ফিরে যাবে। ডা. লির কাছে যুগান্তর পত্রিকা জানতে চেয়েছিল, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কোন মাত্রায় আছে এবং ভবিষ্যতে এর চেয়েও ভয়াবহ হবে কি না। যাতে না হয়, সে ক্ষেত্রে চীনের পরামর্শ কী হবে। এ ছাড়া যদি হয়, তাহলে চীন কীভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে।

প্রশ্নগুলো আমাদের সবার। তবে এ রকম নিষ্ঠুর সত্য উচ্চারণ করা এখন যে ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে, তার আলামত মেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের হিড়িক দেখে। ফেসবুকে সমালোচনামূলক মন্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগে সক্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের পরিণতির কথা মোটামুটিভাবে বেশ আলোচিত হয়েছে। প্রতিদিনই এ রকম অনেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন, যাঁদের কথা আলোচনায় নেই এবং আমরা অনেকেই তাঁদের কথা জানি না। তবে সে প্রসঙ্গ থাক। চীনা বিশেষজ্ঞ লির বক্তব্য কী ছিল, সেটা আগে জেনে নেওয়া যাক। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রায় ১৫ সপ্তাহ পর একটা নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন পাওয়া যায় এই সাক্ষাৎকারে (বাংলাদেশে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো কাজ হচ্ছে। যুগান্তর, ২০ জুন ২০২০।)

ডা. লি বলেছেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। চীনে যেটা হয়েছে যে শত্রু কোথায়, অর্থাৎ করোনাভাইরাস কোথায় আছে, সেটা আমরা জানি। ফলে শত্রু দমনে আমরা সুরক্ষা মেনে যথাযথভাবে কাজ করতে পেরেছি। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি আলাদা। এখানে সমস্যা হলো করোনাভাইরাস কোথায় আছে, সেটাই জানা দুষ্কর। বলা যায়, জানা যাচ্ছে না। এখানে কাজ হচ্ছে অনেকটা অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। এভাবে ভাইরাস মোকাবিলা করা সত্যি দুষ্কর। আমরা মনে করি, যদি কার্যকর লকডাউন, দ্রুত পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো যায়, তবে উত্তরণ সম্ভব। তা ছাড়া চীনের আর্থসামাজিক কাঠামো বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন। চীনে লকডাউন মানে শতভাগ লকডাউন। করোনা উপদ্রুত এলাকাগুলোকে উচ্চ ঝুঁকি, মাঝারি ঝুঁকি ও স্বল্প ঝুঁকি এলাকায় ভাগ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চীন কন্টাক্ট ট্রেসিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেও ভালো ফল পেয়েছে। যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়, তাদের সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটর করা হয়। ফলে উপসর্গ অনুযায়ী তাদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা সহজ হয়েছে।’

করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. লি ভাইরাস মোকাবিলায় যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন, সেগুলো অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শের মতোই। তিনি পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানোর বিষয়ে, তা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আর বলেছেন দক্ষতা বাড়ানোর কথা। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য পিপিই পরা থেকে শুরু করে সুরক্ষার জন্য যত বিষয় আছে, সব বিষয়ে আরও প্রশিক্ষণের কথা বলেছেন।

বাংলাদেশে ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার প্রায় চার মাস বা পনেরো সপ্তাহ পর পরিস্থিতি অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। এ রকম দুরবস্থা অন্য দু-চারটি দেশে যে হয়নি, তা নয়। তবে সে জন্য সেসব দেশে অনেককে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। জিম্বাবুয়েতে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) কেনায় দুর্নীতির জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন। মহামারির গোড়ার দিকে গত মার্চেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারার দায়ে কসোভোয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদে আস্থা ভোটে হেরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগও করতে হয়েছে। আমাদের কথা অবশ্য আলাদা। মহামারি শুরুর পর থেকে রাজনীতিকেরা কার্যত নিষ্ক্রিয়—মন্ত্রিসভার চার ভাগের এক ভাগ মন্ত্রীও গণছুটির সময়ে সক্রিয় ছিলেন কি না, তা বোঝা যায়নি। সংকটমুক্তির জাতীয় উদ্ধার কার্যক্রমে চালকের আসনে আছেন আমলারা। কিন্তু পরিকল্পনাহীনতা, প্রস্তুতিশূন্য বাগাড়ম্বর ও নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগের পরিণতি হয়েছে পদোন্নতি আর বদলি।

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা কিংবা যেকোনো ধরনের চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের হয়রানি ও দুর্ভোগের যেসব ছবি গণমাধ্যমে উঠে আসছে, তাতে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার লক্ষণগুলো অবশ্য বুঝতে কষ্ট হয় না। সমালোচক আর ভিন্নমত প্রকাশকারীদের দমনের বাড়াবাড়ি পুলিশি ব্যবস্থাও তার অন্যতম লক্ষণ। বাস্তবতা যে ছবির চেয়েও কঠিন, তা কেবল তাঁরাই বুঝতে পারছেন, যাঁরা করোনা অথবা করোনা নয়, কিন্তু গুরুতর অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন। ভিআইপিদের সিএমএইচে স্থান সংকুলান হবে এমন ধারণাও যখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তখন তিন মাস বসিয়ে রাখা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল তাঁদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বিত্তবানদের চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাতে এখন পালাক্রমে শহরের তারকাওয়ালা হাসপাতালগুলোয় করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রভাবশালী পেশাগুলোর সদস্যদের জন্যও আলাদা আলাদা কিছু করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সীমিতসংখ্যক সরকারি হাসপাতালগুলোয় সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় সামলানোর প্রশ্ন এলে, সব তৎপরতা যেন থমকে যাচ্ছে।

নতুন স্থায়ী বা অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো, আইসিইউ প্রতিষ্ঠা, ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করার প্রকল্প হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বিদেশি দাতাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতির দিকে তাকিয়ে। অথচ এসব কাজ ছয় মাস আগে জানুয়ারিতে শুরু করার কথা না ভাবতে পারলেও, মার্চ-এপ্রিলে উদ্যোগ নেওয়া হলে এত দিনে সেগুলো সচল হয়ে যেত। ‘আগে খরচ, পরে আয়ের চিন্তা’ এমন অঙ্গীকার প্রবৃদ্ধির স্বপ্ন পূরণের জন্য ঘোষিত হতে পারলে মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কেন উচ্চারিত হয়নি, সেই প্রশ্ন নিশ্চয়ই উপেক্ষণীয় নয়।

সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে গেছে বলে একটি ভাষ্য প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু যাঁরা এ কথা বলছেন, তাঁরা এই সত্য আড়াল করছেন যে বিভ্রান্তিকর ও পরস্পরবিরোধী তথ্য ও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণেই সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছিল। সবচেয়ে বড় যে সত্য আড়ালে পড়ে যাচ্ছে, তা হলো দায়িত্বশীলদের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতা। নিজেদের সামর্থ্যের ঘাটতি কাটানোর জন্য প্রশাসন এবং দলের বাইরে আরও যাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে, তাঁদের সংগঠিত করার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। গত তিন থেকে পাঁচ বছরে যেসব সরকারি ডাক্তার ও নার্স অবসরে গেছেন, তাঁদের জাতীয় প্রয়োজনে কাজে ফিরিয়ে আনার মতো ন্যূনতম উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারলে যে মানবিক দায়িত্ব পালন কতটা অর্থবহ হতে পারে, তার নজির দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির একজন কাউন্সিলর এবং অন্য একজন নেতার স্বেচ্ছায় করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন-সৎকারের কাজে। স্বেচ্ছাসেবায় সারা দেশে এগিয়ে এসেছেন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও মানুষ। সংকট মোকাবিলায় একটা জাতীয় ঐক্যের একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে আরও অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। অথচ সেই দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। উপরন্তু সরকারের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরার পরিণতি হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ আর বিরোধীদের নিন্দা।

সমালোচনা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ সারা বিশ্বেই রাজনীতিচর্চার একটি স্বীকৃত বিষয়। এমনকি রাজনীতিকেরা মৃত্যুর পরও সমালোচনার শিকার হয়ে থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হিটলারের বিরুদ্ধে বিজয়ী নেতাদের মধ্যে উইনস্টন চার্চিলকে ঘিরে এখন কী ধরনের বিতর্ক হচ্ছে, তা নিশ্চয়ই কারও দৃষ্টি এড়ায়নি। আরেক নেতা জোসেফ স্তালিনকে এখন রাশিয়াতেও অনেকে নিষ্ঠুর কসাইয়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। সুতরাং মহামারির কালে সমালোচক কিংবা সাংবাদিকদের জেলে ভরে সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

  • কামাল আহমেদ - সাংবাদিক
  • কার্টসি - প্রথম আলো/ জুন ২২, ২০২০ 

Sunday, June 14, 2020

করোনা মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার 'ষোলকলা' পূর্ণ!

মির্জা আব্বাস

এবার সবিনয়ে জানতে চাই, 'কাফনের কাপড়ের ডিলারশিপ কে পাবে' ?


  • মৃত্যুর হার কমাতে এখনি সর্বসাধারণের জন্য হাসপাতাল, আইসিইউ বেড ও অক্সিজেন এর ব্যাবস্থা করুন 
  • করোনা উপসর্গে অসুস্থদের দ্রুত পরীক্ষা নিশ্চিত করুন




করোনা মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থতার 'ষোলকলা' পূর্ণ করে ফেলেছে, সারাদেশে শুরু হয়ে গেছে লাশের মিছিল। এখন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না, তার উপর এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গুলো নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তি গোষ্ঠী কিংবা সংস্থার জন্য একপ্রকার দখলে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পত্রিকার পাতায় প্রায় প্রতিদিনই ছাপা হচ্ছে কোন না কোন হাসপাতালে অক্সিজেনের জন্য হাহাকারের খবর।  অসুস্থ অবস্থায় এসে ভর্তি হতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্সে ঘুরে ঘুরেই জীবন দিতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। করোনা উপসর্গে অসুস্থরা দিনরাত ঘুরেও পরীক্ষাটি পর্যন্ত করাতে পারছে না, এদিকে মর্গের লাশের হিসেবের সংখ্যার সাথে মিলছেনা সরকারি হিসেব। কবরস্থানে সারিবদ্ধ ভাবে খোঁড়া হচ্ছে গণকবর। সত্যিই এক ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে চারিপাশে।

এসবের মধ্যে গত ক'দিন ধরে কাছের কয়েকজন মুমূর্ষু স্বজনের জন্য প্রয়োজন পড়ে আইসিইউর বেড। পরিচিত-অপরিচিত সমস্ত হাসপাতালগুলোতে অনেক চেষ্টা তদবির করেও মিলাতে পারিনি একটি আইসিইউ বেড। মনোকষ্টে নির্ঘুম যাচ্ছে রাত। অনেক চেষ্টা তদবির করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর সুযোগ হয়, আইসিইউ খালি হওয়া মাত্রই আমার একজন রোগীকে তারা উঠাবে এই শর্তে।

এখানে কি বা করার আছে আমাদের, যেখানে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আশেপাশে গেলেই এখন শোনা যায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য স্বজনদের হাহাকার। দেখা যায় হাতে পায়ে ধরে মিনতির চিত্র। সাধারণ মানুষের এই আর্তিতে বিব্রত হন চিকিৎসকরা। কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তাদেরও। আইসিইউ বেডের অভাবে চোখের সামনে রোগীকে মরতে দেখার চিত্র এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে।

খোদ চিকিৎসকরাই পাচ্ছেন না আইসিইউ বেড। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন নিজের কর্মস্থলেই আইসিইউ পাননি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হলে গত ১৫ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান তিনি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন একই কারণে মারা গেছেন। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) হেড অব অ্যাকাউন্ট মো. মনিরুজ্জামান। শ্বাসকষ্টের কারণে তাকে ভর্তি হতে হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। গত ২ জুন সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালে কোনও আইসিইউ বেড না থাকায় বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পরই তিনি মারা যান।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আরও আছে, কিডনির জটিলতায় অসুস্থ অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারকে নিয়ে একের পর এক (মোট আটটি) হাসপাতাল ঘুরে মৃত্যুর কাছে পরাজয় বরণ করতে হলো। অপরদিকে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যিনি হর্তাকর্তা, স্বয়ং তিনি এবং তার পরিবারই পেলেন না যথাযথ চিকিৎসা! করোনা আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে চট্টগ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।


বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতাল ঘুরেও সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে গাড়িতেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগীরকে। বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করেও চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে মারা গেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আলমদী গ্রামের মেধাবী ছাত্রী ইসরাত জাহান উষ্ণ।

প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে শুক্রবার বিকালে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান।

সাধারণত প্রতিনিয়ত অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও আইসিইউ প্রয়োজন হয়, কিন্তু হাসপাতালগুলো ঘুরে এলেই বোঝা যায় আসলেই কতজন সেবা পায়। প্রত্যেকটি কোভিড হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা পেতে দির্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয় একাধিক রোগীকে।

অন্যদিকে  হাসপাতালগুলোতেও চলছে একপ্রকার দখলে রাখার প্রতিযোগিতা, কোন কোন হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে শুধুমাত্র বিশেষ মানুষের জন্য, আবার কোন কোন হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে বিশেষ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। এভাবে যদি এক এক করে হাসপাতালগুলো বিভিন্ন বেড়াজালে আটকে ফেলেন তবে চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষগুলো কোথায় যাবে ?

অপরদিকে, করোনা পরীক্ষার নামে আমরা দেখছি নাটক। যে করোনা পরীক্ষা আমরা করাতে পারতাম মাত্র ৩০০ টাকায়, সেখানে এখন ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকায় করাতে হচ্ছে।

যদি চিকিৎসকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে এই করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেত তবে সাধারণ জনগণের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো। কিন্তু সেটাও আজ আপনারা একটি গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন। আমরা দেখলাম রাজধানীতে শুধুমাত্র পাঁচটি জায়গায় এই করোনা পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে কেন আরো বেশি জায়গায় এ পরীক্ষা ব্যবস্থা করা গেল না ? অতএব এখানে ধরেই নেয়া যায় এই মহামারীতেও কমিশন বাণিজ্যের কথা !

তাই অনেক কষ্ট নিয়েই আমাকে আজ বলতে হচ্ছে, যদি সবকিছুতেই ব্যবসা আর মুনাফা খুঁজেন, তবে এবার দয়া করে জানিয়ে দিবেন, কাফনের কাপড়ের ডিলারশিপটা কাকে দিবেন। যাতে সেই প্রতিষ্ঠানের কাফনের কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড়ে দাফন করতে মানুষ না পারে ! তাহলে এখান থেকেও একটা ভালো ব্যবসা হবে!

সম্প্রতি একটি সচিত্র প্রতিবেদনে দেখলাম রায়েরবাজার বধ্যভূমি কবরস্থানে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে, প্রতিবেদনটিতে দেখা যায় একদিকে করোনার রোগীদের দাফন হচ্ছে অন্যদিকে ভেকু দিয়ে সারিবদ্ধভাবে নতুন নতুন কবর তৈরি হচ্ছে। আমার এলাকা খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানেরও একই চিত্র দেখা গেছে ।

পরিশেষে দাবি জানাচ্ছি,  আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে জনগণকে এভাবে আর আঁধারে না রেখে, মৃত্যু কমাতে দয়া করে এখনি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডসহ অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করুন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা সকল অসুস্থ রোগীর পরীক্ষা দ্রুত নিশ্চিত করুন, প্লিজ একটু গুরুত্ব দিন, একটু ভাবুন।

Monday, June 1, 2020

Post COVID19 world politics: Implications for Bangladesh-India relations


A new world order?

The world is certain to be a different place post COVID19. It will take some time for the world political economy to overcome the shock of the devastating impact that COVID19 will have on the world system. People across the world will face challenges with a sharp break from the recent past of day to day life. Thus, it is no surprise to conclude the politics of international affairs will be different or more so conducted and balanced in a different paradigm. One of the key questions will be, would a post Covid19 world move backwards or forwards in visioning a global future? Another will be, whether the future will be a globally connected one or a draw back to the old Realpolitik narrative of States? Unquestionably, the US as the leading superpower will see its designation challenged in the balance of international politics or amongst equals with a powerful and influential China as a leading political and economic counter balance. 

I believe, Post COVID19 will provide further opportunity for countries to integrate and engage rather than disintegrate and disengage from global connectivity. The US and the Western democracies albeit incapacitated by economic pressures must not move away from the sponsorship of the democratic project.

The more the US integrates and embraces itself with democracies around the globe, the more likely it is to remain an influential and impactful force in great power politics. It will need to adjust its foreign policy to collectively leading on the universal values of democracy and human rights rather than attempting to do anything in isolation. Simply speculating that China’s post COVID19 dominance is as an ill intended project will not get the global traction it may desire. Rather the US should reach out on the values of freedom, democracy and rights with more priority globally. China with its economic resources on the other hand, has already started on a goodwill programme following the outbreak of the pandemic by offering support to countries across the region and beyond by placing the importance of people before regime, as part of its outreach to connect globally.

The recent example of Beijing distributing masks across political parties in Bangladesh regardless of ideological considerations further qualifies this approach to building diplomatic goodwill and empathy. Post-COVID provides for different kinds of opportunities to integrate, connect and maintain 34 relevance for powerful state actors rather than choosing the path of disconnection.

Therefore, I foresee big powers in world politics moving more toward projecting a collective approach to leadership rather than a simplified state centric approach to foreign and economic policy in balancing their influence across the globe.

Where do Bangladesh-India relations sit post-COVID19?


Neither Bangladesh nor India or any other country in the world had any idea that such a devastating pandemic was on the way.

Therefore, to plan to deal with such a crisis in advance of that magnitude was not possible. This pandemic has shown how important it is for countries to establish trust and legitimacy with its citizens in re-assuring the security and future of its people and territory. India in this regard to an extent has been able to establish some of the governance infrastructure to deal with such problems by turning to its own scientific community of experts, on the other hand we have seen a contradictory approach in Bangladesh, where the government has lacked co-ordination and failed to work in a joined up way with scientific experts to establish transparency and trust with its people and instead opting for malign influence which may arouse internal and external security concerns. Without dwelling further on internal politics, I would like to stress on the opportunities and challenges post-COVID presents to strengthen relations between our respective countries.

Bangladesh in some way is fortunate to share geographical proximity with two big powers like India and China providing its sovereign space does not become the battleground of power struggles between these regional powers. The people of Bangladesh in my view would welcome connectivity and integration providing it does not infringe on their right to development and advancement. India like the US was founded on the principles of liberty and freedom and right to self-determination.

Post COVID19 provides an opportunity for South Asian countries to give leadership on formulating and promoting an ‘ethical foreign policy’. Should India integrate its founding principles within its foreign policy and push for an outward looking ethical foreign policy to reach out to nations across the neighbourhood and its people, then it can become an influential leader in the region and beyond, given its size, capacity and resources to connect and lead widely across the globe as well. Political parties in Bangladesh and India will come and go from office, the people and the State will always remain.

Therefore, it is important that both India and Bangladesh exercise an ethical dimension within their foreign policy that is based on national security interests and international values of human rights at the heart of it. Such a policy position will ensure that people to people relations remain intact regardless of internal political scenarios.

Therefore, Post-COVID19 provides India with an opportunity to become a regional leader in striking an embracing foreign policy entrenched by the values in her formation putting emphasis on people to people outreach to strengthen and sustain relations with Bangladesh and the world. Bangladesh on the other hand, cannot hedge between regional powers. It must look to its own interests for the development of its people by encouraging trade, development and cooperation with important development partners to ensure its national interest and regional security.

Therefore, the exercise of ‘soft power influence’ at all levels of the Bangladesh-India relationship might be a more sustainable option for strengthening sustainable relations between both countries in a Post-COVID world.

  • — Humaiun Kobir, Secretary for International Affairs, National Executive Committee, Bangladesh Nationalist Party (BNP) and Special Adviser to Tarique Rahman, Acting Chairperson - BNP.
  • — Policy Watch.