এমনিতেই ২৭ শতাংশ কম জনবল নিয়ে চলছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আবার যারা কর্মে নিয়োজিত, তাদেরও বড় অংশ কর্মস্থলে থাকছেন অনুপস্থিত। ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমে নিবন্ধিত দেশের জেলা-উপজেলায় কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিদিনের হাজিরা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এদের ৫৫ শতাংশের বেশি কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ২০১১-১২ সালে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের ৪৭৯টি হাসপাতালে ইলেকট্রনিক টাইম অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম চালু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সারা দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৫ হাজার জনবলের মধ্যে ২৮ হাজার ৩৫১ জন এ সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছেন। তাদের প্রতিদিনের হাজিরার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। চলতি মাসের ২৮ দিনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইলেকট্রনিক টাইম অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমে নিবন্ধিত কর্মীদের গড়ে ৫৫ দশমিক ৭১ শতাংশ অনুপস্থিত ছিলেন।
যারা অনুপস্থিত থাকছেন, তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, চিকিৎসক, নার্স কিংবা অন্যরা কাজ করলেও অনেকেই ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্সে সাড়া দিচ্ছেন না। এ কারণে অনুপস্থিতি বেশি দেখাচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন করা নিয়েও অনীহা আছে অনেকের মধ্যে। তবে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
অন্যান্য হাসপাতালের মতো ইলেকট্রনিক টাইম অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম চালু আছে নড়াইল সদর হাসপাতালেও। গতকাল হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, ১৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে দুজন ছুটিতে। এ হিসাবে দায়িত্ব পালনের কথা ১১ জনের। কিন্তু এদিন কর্মস্থলে ছিলেন মাত্র সাতজন। এ অবস্থা দেশের অধিকাংশ সরকারি জেলা-উপজেলা হাসপাতালেরই।
গতকাল দেশের ৪৭৯টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬৬টির তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্সে উপস্থিতির হার ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ ইলেকট্রনিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমে নিবন্ধিত ৬০ শতাংশ কর্মীই এদিন কর্মস্থলে যাননি। বিভাগভিত্তিক অনুপস্থিতির হার সবচেয়ে বেশি ছিল ময়মনসিংহে, ৭৩ শতাংশ। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে অনুপস্থিতির হার ৬৮, রংপুরে ৬৪, চট্টগ্রামে ৬২ ও ঢাকা বিভাগে প্রায় ৬১ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি রয়েছে খুলনা বিভাগে। এ বিভাগে উপস্থিতির হার ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
২৭ জানুয়ারির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদিন ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল হাজিরার তথ্য প্রেরণ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের ৫৪ শতাংশ কর্মীই কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। ওইদিনও অনুপস্থিতির হারে শীর্ষে ছিল ময়মনসিংহ। বিভাগটির সরকারি হাসপাতালগুলোয় এদিন ৬৭ শতাংশ কর্মী কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। ইলেকট্রনিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমে নিবন্ধিত রাজশাহী বিভাগেরও ৬২ শতাংশ কর্মী ২৭ জানুয়ারি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এসব কর্মীর অনেকেই পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন।
দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন জানান, তার হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৬২ জন কর্মী রয়েছেন। এদের সবাই ইলেকট্রনিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমে নিবন্ধিত। তবে চিকিৎসকদের প্রায়ই ডেপুটেশনে অন্যত্র কাজ করতে হয়। ফলে ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্সে উপস্থিতি কম থাকে।
যদিও ফরিদপুর সদর হাসপাতালে কর্মরত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চিকিৎসকদের অনেকেই কর্মস্থলে বেশি অনুপস্থিত থাকছেন। তারা কোনো রোগীও দেখছেন না।
তদারকির দুর্বলতার কারণে চিকিৎসাসেবায় কর্মস্থলে অনুপস্থিতির হার বেশি বলে মনে করেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে সেবাদানের সঙ্গে জড়িতদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জনগণ যাতে কাঙ্ক্ষিত সেবা পায়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। কিন্তু যৌক্তিক কারণ ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছেন, যা কর্মস্থলে অনুপস্থিতির প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জানা গেছে, সারা দেশের আটটি বিভাগে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪৭৯টি। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট পদ রয়েছে ৭৫ হাজার ৬৪৪টি। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৫৪ হাজার ৯৯৩ জন। আর ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্সে নিবন্ধিত আছেন ২৮ হাজার ৩৫১ জন। এ হিসাবে নিবন্ধনের বাইরে রয়েছেন ২৬ হাজার ৬৪২ জন।
- Courtesy - Bonikbarta Jan 29, 2018