Search

Thursday, February 22, 2018

আপিলের সুবিচার দৃশ্যমান হতে হবে - আসিফ নজরুল


বিদেশ থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী সাধারণত সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেন। এবার ইতালি থেকে ফিরেও তাই করেছেন। অন্য দেশে এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধানদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলেন সাংবাদিকেরা। আমাদের সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন কম। তাঁরা বরং কখনো কখনো প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর প্রিয় বিষয়ে কথা বলতে উৎসাহিত করেন, কখনো তাঁর প্রশংসায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন।

তবে সমস্যা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সম্মেলনে উপস্থিত অনেকের মতো উৎসাহিত বা নির্ভার থাকতে পারেননি দেশের মানুষজন; বিশেষ করে এবার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখেছেন। আমার প্রিয় মানুষ আনু মুহাম্মদ লিখেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রীর তো বটেই, সরকারেরও।

আমার এই লেখা অবশ্য অন্য একটি বিষয় নিয়ে। সেটি আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক। আমি বিশ্বাস করি, কোনো সরকারের মধ্যে যদি এই অহমিকা ঢুকে যায় যে যতই অজনপ্রিয় হোক, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না, তাহলে সেই সরকার ব্যাংক লুট, প্রশ্নপত্র ফাঁস, যানজট, গুম-খুন-কোনো কিছুরই পরোয়া করবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকলে ক্ষমতা হারানো এবং অপকর্মের জন্য বিচারের ভয় থাকে। তখন সরকার কিছুটা হলেও জনগণকে না চটানোর চেষ্টা করে।

এ রকম একটি নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অবশ্যই বিএনপির অংশগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিচার ও শাস্তির মধ্য দিয়ে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না গেলে সরকারের কিছু করার নেই। 

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মনে হয় এ রকম: রায়টা তো আমি দিইনি। রায় দিয়েছেন আদালত। আর মামলা করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার দুদক। তিনি এই ধারণা দিতে চেয়েছেন যে তাঁর সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে চলা বিচারটি হয়েছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে। এই বিচারের কারণে ভবিষ্যতে একতরফা নির্বাচন হলে এতে তাঁর সরকারের কোনো দায় নেই। তিনি হয়তো চাইছেন বিষয়টি এভাবেই দেখুক সবাই।

২. 

বাস্তবতা আসলে ভিন্ন। বাস্তবতা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে মামলা বা বিচার হলে কখনো তা বিশ্বাস করেন না এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশে তো নয়ই; এমনকি তুলনামূলকভাবে অনেকাংশে স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দেশ ভারতেও এটি হয় না। বিচারিক আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে বা মামলার দীর্ঘস্থায়ী কালিমা ললাটে নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার ঘটনাও এসব অঞ্চলে ঘটেছে বেশ কয়েকবার। কারণ, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে বিচার এসব দেশে কতটা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য করা হয়, কতটা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করার জন্য, তা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ থেকে যায়।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের পরও তা-ই হয়েছে। বিএনপি ও তার সঙ্গীরা এসব প্রশ্ন তুলছে। তুলছে এমনকি রাজনৈতিকভাবে তুলনামূলকভাবে আওয়ামী লীগঘেঁষা বাম দলগুলোও। খালেদা জিয়ার রায়ের পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ ও বাম মোর্চার যুক্ত বিবৃতি এর প্রমাণ। বিবৃতিতে তারা রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে সব দুর্নীতিবাজের শাস্তি চেয়েছে। তারা বলেছে: ‘জনসম্মতিহীন অগণতান্ত্রিক সরকারের স্বেচ্ছাচারী শাসন, ক্ষমতার প্রবল দাপট, বিপুল লুটপাটের অভিযোগ ইত্যাদির কোনো সুরাহা না করে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের অতি উৎসাহের কারণে দেশবাসীর মধ্যে এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে।’

দেশবাসীর মধ্যে সত্যি সত্যি এমন ধারণা থাকতে পারে। থাকলে তাদের দোষও দেওয়া যাবে না। আমাদের সবার মনে থাকার কথা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টসহ আরও কতগুলো দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা হয়েছিল আরও বেশি। তিনি ক্ষমতায় আসার পর প্রধানত বাদীপক্ষের (যেমন দুদক) দুর্বলতার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাগুলো উচ্চ আদালতে একের পর এক খারিজ হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে বাদী কর্তৃক মামলা প্রত্যাহারের ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বেড়েছে, কোনো কোনো দুর্নীতি মামলার নতুন বা অধিকতর তদন্ত হয়েছে।

সমস্যা এখানেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেমন হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে স্বয়ং তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তকারীরা ও আইনজীবীরা একই মাত্রার স্বাধীনতা ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেছেন-এটি বিশ্বাস করা খুবই মুশকিল যে কারও পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, সরকারের সঙ্গে লতায়-পাতায় সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিদের (লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার, হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ও শেয়ার মার্কেট লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের) বিরুদ্ধেও দুদককে আমরা লেশমাত্র ভূমিকা পালন করতে দেখি না, যা দেখেছি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তাদের অতি উত্সাহী কর্মকাণ্ডে।

দুদক বা পুলিশ যে-ই করুক, মামলার তদন্ত আর সরকারি আইনজীবীদের আইনি লড়াই মামলার ভাগ্য গড়ে দেয় অনেকাংশে। বাকি থাকেন আদালত। এটি ঠিক যে এ দেশে বহুবার আদালত তাঁর স্বাধীন সত্তা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর মামলাগুলোতে এখন তা আর কতটা করা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর মামলার রায়কে কেন্দ্র করে মাত্র কয়েক মাস আগে স্বয়ং প্রধান বিচারপতি দেশ ও চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গত বছর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটি মামলা চলাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের লোকজন নানা বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিচারিক আদালতের রায় তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে মেলেনি বলে সেই বিচারককে তিরস্কৃত হতে হয়েছিল, রায় দেওয়ার পর তাঁকেও দেশত্যাগ করতে হয়েছিল।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি রাজনৈতিকভাবে আরও স্পর্শকাতর। এই মামলা চলাকালীন বহুবার ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন’ এই বক্তব্য দিয়ে সরকারের লোকজন তাঁদের পছন্দের বা প্রত্যাশিত রায় কী তা স্পষ্ট করেই বলেছেন। এমন এক প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার মামলায় বিচারিক আদালত কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। এমন এক প্রেক্ষাপট আপিল আদালতের স্বাধীনতার জন্যও অনুকূল নয়।

৩. 

খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের কপি মাত্র তাঁর আইনজীবীরা হাতে পেয়েছেন। ইতিমধ্যে এই রায়ের কিছু দিক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠছে। উচ্চ আদালতে আপিলের সময় এই রায়ের আরও চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে।

এই আপিল নিষ্পত্তিতে খালেদা জিয়ার সাজা নিশ্চিত হতে পারে, আবার তিনি খালাসও পেতে পারেন। আপিল নিষ্পত্তির আগেই তিনি জামিন লাভ করতে পারেন এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগও পেতে পারেন। সিদ্ধান্তগুলো যা-ই হোক না কেন, খালেদা জিয়ার মামলায় আপিল প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে সুবিচার হয়েছে-এটি মানুষের কাছে প্রতিভাত হওয়া প্রয়োজন। কারণ, ন্যায়বিচারের দর্শন হচ্ছে ন্যায়বিচার শুধু করলে হবে না, এটি যে ন্যায়বিচার হয়েছে তা দৃশ্যমান ও সন্দেহাতীতভাবে দেখানোর প্রয়োজনও রয়েছে।

খালেদা জিয়ার বিচারের ক্ষেত্রে এই প্রয়োজন আরও বেশি মামলাটির রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে। এই বিচার যদি শেষ পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধই থাকে, তাহলে বিএনপির অন্য নেতাদেরও প্রশ্নবিদ্ধভাবে নির্বাচনের আগে সাজা দেওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
এ ধরনের আশঙ্কা না থাকলে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের কথা নয়।

আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • Courtesy: Prothom Alo/22-02-2018



খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় ‘জরুরি অবস্থা’



বেগম খালেদা জিয়ার জীবন থেকে জরুরি অবস্থা যেন ফুরাচ্ছেই না। জরুরি অবস্থার সময় একবার জেলে গেলেন, দ্বিতীয়বার গেলেন ৫ জানুয়ারির সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকারের আমলে, ২০১৮ সালে। মামলাটাও আবার সেই জরুরি আমলেই করা। কিন্তু ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরের আটকের চাইতে এখনকার পরিস্থিতি আলাদা। সেবার দেশের প্রধান দুই নেত্রীই বন্দী হয়েছিলেন, এখন খালেদা জিয়া একাই দণ্ড ভোগ করছেন। নাজিমুদ্দিন রোডের নির্জন কারাগারের নিঃসঙ্গ দণ্ডিত এখন একজনই।

জরুরি অবস্থার সময়ের রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রথমে শিথিল ও পরে বাতিল হলেও তার সুফল বিএনপির ঘরে আসেনি। ২০০৯ সাল থেকে মহাজোট সরকার বিএনপিকে যেভাবে হামলা-গ্রেপ্তার-নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাতে বিএনপি যেন এখনো ‘জরুরি অবস্থা’র মধ্যেই আটকে আছে। সেবার খালেদা জিয়াকে কারাগারে কাটাতে হয়েছিল ৩৭২ দিন। এবার তা কত হবে তার দিনগণনা শুরু হয়েছে কেবল।

শুধু খালেদা জিয়া বা বিএনপির হাজারো নেতা–কর্মীই নয়, দলটির সমর্থকদের জীবনেও এটা এক জরুরি অবস্থার মতোই। স্বাধীন রাজনৈতিক কার্যকলাপ তাঁরা করতে পারছেন না, জেল-জুলুম-হুলিয়ার খাঁড়া তাঁদের জীবনের ওপর। একেকটি ঘটনা ঘটে আর কয়েক শ বা হাজার বিএনপি কর্মী আটক হন। খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের ঘটনায়ও প্রায় পাঁচ হাজার নেতা–কর্মী আটক হয়েছেন। যদি দেশের অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষও দলটির সমর্থক হন, তাহলে বলতে হবে বিপুলসংখ্যক মানুষের রাজনৈতিক অধিকার জরুরি অবস্থার সময়ের মতোই খর্ব হচ্ছে। কার্যত না হলেও মানসিকভাবে তাঁরা এখনো জরুরি অবস্থার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছেন।

তাঁরাই কি শুধু আলাদা করে ভুক্তভোগী? যেকোনো প্রতিবাদই এখন হুমকিতে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথমে ৫৭ ধারা, তারপর ৩২ ধারার পর সাংবাদিক নিপীড়নের আইন বানানো ও বিভিন্নভাবে হুমকিতে রাখার ঘটনা বলে দেয়, রাজনীতি, সমাবেশ এবং মতপ্রকাশের অধিকার সবার জন্য খোলা নেই। যঁারাই বাধা পাবেন, ভয় পাবেন, স্বাধীন নাগরিকের জীবন পাবেন না, তাঁরাই ২০০৭-০৮ সালের জরুরি অবস্থার জ্বালা বর্তমানেও বোধ করবেন।

বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা নতুনও নয়, হয়তো শেষও নয়। সাংবিধানিক ধারা-উপধারায় লিখিত সংজ্ঞা দিয়ে একে বোঝা যাবে না। বরং সেসব সংজ্ঞাকে একটু প্রসারিত করে নিলে দেখা যায়, এক স্থায়ী জরুরি অবস্থাই যেন বাংলাদেশের জন্ম থেকে বিরাজ করছে। কেবল রাজনৈতিক দুর্যোগই নয়, সামাজিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণের বড় অংশের জীবন সর্বদাই ‘বিপদের সম্মুখীন’। আর জনগণের অজুহাতই হয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের প্রধান সরকারি যুক্তি।

সংবিধানের ১৪১ গ(১) উপধারা অনুসারে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির সময় বলা হয়েছিল, ‘...দেশে এখন এক জরুরি অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন।’ একজন বিদেশি কূটনীতিক সে সময় দাবি করেছিলেন, ‘আমাদের উন্নয়নকাজের স্বার্থ রক্ষায় এটাই ছিল একমাত্র পথ’ (Restoring Democracy in Bangladesh, Asia Report, ICG, 28 Apr 2008)। অনেকে তা মেনেও নিয়েছিলেন। বর্তমানেও বিরোধী পক্ষকে দমনের পক্ষে সেই উন্নয়নের যুক্তিও কেউ কেউ মানতে রাজি।

যাহোক, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থা জারির কারণ হিসেবে যে অভ্যন্তরীণ গোলযোগকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, বারবার সেই গোলযোগের ঝুঁকির মধ্যেই তো বাংলাদেশ পড়ছে! ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরের বড় একটা সময় সেই গোলযোগ চলেছিল। এখনো জাতীয় নির্বাচনের দিকে যত এগোচ্ছে বাংলাদেশ, ততই সে রকম গোলযোগের ভয় পাকছে।

বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং অন্যদের অনেকেই প্রায় বিনা ভোটে ‘নির্বাচিত’ বলে ঘোষিত হওয়ায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বশীলতার সংস্কৃতির বড় রকমের ধাক্কা খায়। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার যুক্তি দেওয়া হলেও কার্যত এটা হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতার ধারাবাহিকতা। এভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার একমাত্র উপায় হলো বলপ্রয়োগ। যেকোনো জরুরি অবস্থায় রাষ্ট্র প্রধানত আইনের শাসনের বদলে বলপ্রয়োগের হাতিয়ারের ওপরই বেশি নির্ভরশীল থাকে।

গণতন্ত্রে বলপ্রয়োগের হাতটা আইনের দস্তানায় ঢাকা থাকে, পর্দার আড়ালে থাকে; সামনে থাকে আলোচনা-সমঝোতার হাত। নির্বাচন এ রকম এক সমঝোতা, যেখানে বিনা বলপ্রয়োগে ক্ষমতার পালাবদল হবে, সরকারের নবায়ন হবে। যার সমর্থন বেশি তাকে বলপ্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় না। কিন্তু যে শাসন সমর্থনের চাইতে দাপটের ওপর বেশি নির্ভরশীল, তাকে বলে সমর্থনহীন দাপট (ডমিন্যান্স উইদাউট হেজিমনি)। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে আমরা এ রকম মান্যতাহীন (হেজিমনিহীন) দাপটের (ডমিন্যান্স) শাসনেই ছিলাম।

প্রশ্ন হলো সমঝোতার সুযোগ যখন দুই পক্ষেরই হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, তখন আবারও কি আমরা বলপ্রয়োগের খেলায় প্রবেশ করলাম? দৃশ্যত, বিএনপি সরকারের নতুন পর্যায়ের বলপ্রয়োগকে এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই মোকাবিলার কৌশল নিয়েছে। গণহারে গ্রেপ্তার-নির্যাতনের মধ্যে এই ‘শান্তি’ আসলে কতটা টেকসই হবে? যে নামেই ডাকি গোলাপ সুবাস ছড়াবেই, যে নামেই ডাকি গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন লাগবেই। আর তার জন্য চাই এমন পরিবেশ, যাতে কারও পিঠই একেবারে দেয়ালে গিয়ে না ঠেকে। নড়াচড়ার কিছুটা জায়গা, আলোচনার কিছুটা পরিবেশ লাগবেই।

শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নয়, রাষ্ট্রের সবগুলো স্তম্ভের মধ্যে এমন গণতান্ত্রিক লেনদেন ও আলোচনা আপনা–আপনি হবে না। যখন সবাই বুঝবেন যে মীমাংসা করে নেওয়াই মঙ্গলজনক, তখনই সেটা হবে। বিগত জরুরি অবস্থার শেষ সময়ে আমরা দেখেছি অনেকটা বাধ্য হয়েই রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক পক্ষ দেশে ও বিদেশে আলোচনায় বসেছিলেন। সেই সমঝোতার ফল ছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন। সেই সমঝোতার ফল যদি ভালো হয়, আবার কেন সে রকম কিছু হতে পারবে না?

দুই নেত্রীর জেলে থাকার অবস্থাতেই কিন্তু সেই সমঝোতা হতে পেরেছিল। সুতরাং, খালেদা জিয়া অন্তরীণ বা জেলে থাকা অবস্থাতেও তাঁর বা তাঁর দলের সঙ্গে আলোচনার পথ বন্ধ করা ঠিক হবে না।

  • Courtesy: ProthomAlo Feb 21, 2018




A knee-jerk reaction

Another new exam system!



The logic of the education ministry taking one hasty decision after another in a spate of few weeks to stop the leakage of SSC question papers beats us.

Not very long ago in these columns we had counselled against taking any hasty decision to address a problem that has taken an epidemic proportion. The latest version of the leakage has been value-added by adding the answers to the questions. That the question papers come with answers only shows that all those hurried measures, including turning off of all internet services 20 minutes before exams, were not only ill-advised but also ineffective.

It seems that we have been completely helpless in pinpointing the real culprits even if the stages of the leaks have been identified. If such a matter of a few taking advantage of technology cannot be identified, how do we expect more serious matters related to our direct security to be combatted effectively?

The education ministry cannot afford to be reactive to this problem, and must go deep into the matter. All education systems are exam-based and every country has its own system of taking exams. The system should evolve, of course, to suit our psyche keeping in mind the negative proclivities of a few and should be able to realistically assess the quality of the education system and the level of knowledge of the examinees. Apparently, the current education system introduced over the last decade is flawed. The latest decision to do away with MCQ from next year is proof of that.

We would urge the government to shun knee-jerk reactions. We submit that the exact system of exam is not for bureaucrats but be left to educationists and experts to determine. The sooner that is done the better. 

  • Courtesy: The Daily Star Feb 22, 2018

Settle rule on Marma sisters in 6 weeks - Supreme Court



The Supreme Court today asked the High Court to hear and settle off the rule by six weeks regarding the confinement of two Marma sisters -- one of whom was allegedly raped and another assaulted by security forces last month.

The Marma sisters - aged 18 and 13- were admitted to the Rangamati Sadar Hospital on January 22 after one was allegedly raped and the other sexually assaulted in their village Bilaichari.

Today, the four-member bench of the appellate division headed by Chief Justice Syed Mahmud Hossain, passed the order during hearing a petition filed by rights activists Sultana Kamal seeking stay on a High Court order.

Following a writ petition, the High Court bench led by Justice Naima Haider on February 13 ordered the government and Rangamati Sadar Hospital to hand over the girls to their father.

The High Court also issued a rule asking the authorities to explain why the confinement of the girls should not be declared illegal.

On February 15, the two Marma sisters were handed over to their parents in presence of police.

The same day Sultana Kamal filed a petition with the Supreme Court seeking stay on the High Court order.

In the petition, she claimed that the girls wanted to go under the custody of Chakma Circle Chief Raja Debashish Roy, who would ensure their security.

The elder sister has recently sent a letter to the civil surgeon of Rangamati to this end and a writ petition over this issue has been pending with the High Court, Sultana said in the petition.

Today, the barrister Rokanuddin Mahmud, the lawyer for the writ petitioner told the apex court that the two sisters are now under the custody of their parents. 

  • Courtesy: The Daily Star Feb 22, 2018

Govt puts democracy into grave - Mirza Alamgir



Bangladesh Nationalist Party secretary general Mirza Fakhrul Islam Alamgir on Wednesday said the government has put democracy into grave by snatching people's all rights.

‘We on behalf of our Chairperson Khaleda Zia , paid tributes to language martyrs .We are unfortunate that we are observing the day at a time when democracy was put into grave destroying all democratic institutions and snatching people's all rights, including the voting one,’  he said while talking to reporters after placing wreath at the Central Shaeed Minar.

BNP central leaders, led by Mirza Fakhrul Islam Alamgir and its standing committee member Khandaker Mosharref Hossain, went to the Central Shaheed Minar around 11:30 am to pay tributes to the language martyrs.

Fakhrul demanded immediately release of Khaleda Zia from jail. He said they are observing the day with a broken heart and anger as their Chairperson was sent to jail in a graft case.

The BNP leader renewed his party's call to people for forging a national unity to restore democracy. ‘We hope we will be able to wage a movement uniting people to free democracy and our leader. We must wage a mass movement to oust the government and defeat it,’ he said.

Fakhrul said they will continue to put their efforts for forging a national unity until it is not created and the fascist government's fall is ensured.

  • Courtesy: new Age Feb 21, 2018

পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে ধর্ষণ


  • স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ কিশোরীর পরিবারের
  • মামলায় পুলিশ কৌশলে ওই নেতার নাম বাদ দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে        



নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে যুবলীগের এক স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই নেতাসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ মামলার এজাহার থেকে তাঁকে (যুবলীগ নেতা) বাদ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরীর স্বজনেরা। এদিকে ধর্ষণের ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।

অভিযোগ ওঠা যুবলীগ নেতার নাম মজিবুর রহমান ওরফে শরীফ। তিনি উপজেলার নোয়াখোলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই কিশোরী তার পরিবারের সঙ্গে নোয়াখোলা ইউনিয়নের এয়াছিন বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকে। ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ পরিচয়ে পাঁচ-ছয়জন যুবক ওই বাড়িতে ঢোকেন। তাঁরা ওই ঘর থেকে ওই কিশোরীকে তুলে নিয়ে যান। পরে ওই কিশোরীকে পাশের বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে বাড়ির সামনে ফেলে যান। 

কিশোরীর মা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরের দিন ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নোয়াখোলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ওরফে শরীফসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। কিন্তু তিন দিন পর শরীফের নাম বাদ দিয়ে দুজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি রেকর্ড করে পুলিশ। এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। এ অবস্থায় শরীফ ও আসামিরা তাঁদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতেও তাঁদের বাড়ির সামনে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

কিশোরীর বাবা বলেন, শরীফ ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় এলাকায় কেউ তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। এ ঘটনায় মেয়ে ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন।

তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন যুবলীগ নেতা মজিবুর রহমান শরীফ। গতকাল বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, তিনি ধর্ষণ বা হুমকি দেওয়া কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। স্থানীয়ভাবে যুবলীগের দুটি পক্ষ রয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় তাঁকে জড়ানোর পেছনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাত থাকতে পারে বলে তিনি সন্দেহ করছেন। 

উপজেলা যুবলীগের একাংশের আহ্বায়ক ও চাটখিল পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ উল্যাহ পাটোয়ারী বলেন, তদন্তে শরীফ যদি অপরাধী প্রমাণ হন, তাঁর বিচার হবে। যদিও একটি মহল এই মামলায় শরীফকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল আনোয়ার বলেন, ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ নিয়ে কিশোরী ও তার মা ৮ ফেব্রুয়ারি নয়, ১০ ফেব্রুয়ারি থানায় আসেন। ওই দিনই তাঁদের দেওয়া অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। বাদীর অভিযোগে যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। পরের দিন ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে, তবে এখনও প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ওসি আরও বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে শরীফের নাম এলে তাঁকেও আসামি করা হবে বলে জানান ওসি।

  • Courtesy: ProthomAlo Feb 22, 2018

Tuesday, February 20, 2018

প্রধানমন্ত্রীর এতিম ফান্ড ছিলই না, তাহলে টাকা তছরুপ হবে কী করে?

শামসুল আলম


জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত একটি বানোয়াট মামলার রায়ে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন কারান্তরীণ। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য পদাধিকারীরা জোরছে আওয়াজ করে বেড়াচ্ছেন- ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন, তাই তার জেল হয়েছে।’ বিনা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদ অধিবেশনে এমন কথাও বলছেন, ‘তাঁর রাজনীতি শেষ করে দেয়া হয়েছে, তিনি আর কখনও নির্বাচন করতে পারবেন না, ক্ষমতায় আসতে পারবেন না!’ ৭৩ বছর বয়স্ক একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দু’শ বছরের পুরাতন এক নির্জন এলাকার পরিত্যাক্ত বাড়িতে সলিডারি কনফাইনমেন্টে রাখার পরেও কত প্রতিহিংসা-জিঘাংসার উৎকট রূপ দেখল জাতি! এরা নাকি রাজনীতিবিদ! খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেছেন, কী করেননি সে প্রশ্নের উত্তরে পরে আসছি। তবে সংসদে যে কথা বলা হয়েছে ‘খালেদা জিয়ার রাজনীতি শেষ করে দেয়া হয়েছে’, এটাই বোধ হয় আসল টার্গেট। সত্য উদঘাটন বা ন্যায় বিচার করা নয়, বর্ণিত লক্ষ্য অর্জন মূল উদ্দেশ্য। 

প্রথমেই নিজের পরিচয় দিয়ে নিই। যে সময়কার ঘটনা ১৯৯১ সালে ৯ জুন, আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সহকারী সচিব পদে কর্মরত। ঐ অফিসে তখন মাত্র ৮ জন সরকারি কর্মকর্তা ছিলাম আমরা। ভারপ্রাপ্ত সচিব কামাল সিদ্দিকী, সাবিহউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর পিএস-১, উপসচিব ম. সাফায়েত আলী (মরহুম), এম এ মোমেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস, তাজুল ইসলাম তথ্য অফিসার, তিনজন সহকারী সচিব আবদুজ জাহের (৮২ ব্যাচ, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব), আমি শামসুল আলম, এবং আলী আহমেদ। আমাদের অফিস ছিল বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বসতেন চার তলার অফিস কক্ষে (সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টের অফিস), আমরা বসতাম দোতলায়।


তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান (মরহুম) কুয়েতের আমিরের নিকট থেকে একটি ফান্ড আনেন শহীদ জিয়ার নামে এতিমখানা বানানোর উদ্দেশ্যে। কুয়েতের আমিরের সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের হিসাব হতে প্রেরিত ১২ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলারের ডিডিতে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ লেখা ছিল বটে, কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ সরকারের ঐরূপ কোনো ফান্ড ছিল না। ওটা একটা বেসরকারি অনুদান হওয়ার পরেও প্রেরকের ভুলের কারণে ঐরূপ হয়। ভারপ্রাপ্ত সচিব কামাল সিদ্দিকীকে ঐ ডিডি দেয়া হলে তিনি তা ভাঙানোর নিমিত্ত সোনালী ব্যাংক রমনা শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলেন। পরে ঐ টাকা (৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা) তুলে সেভিংস/এসটিডি/এফডিআর হিসাব খোলা হয়। ১৯৯৩ সালে সুদসহ তুলে পুরো টাকাটা ২ কোটি ৩৩ লাখ করে সমান দু’ভাগ করে এতিমখানা নির্মাণের নিমিত্ত বাগেরহাট এবং বগুড়ায় দুটি ট্রাস্টকে প্রদান করা হয়। এই চেক দু’টিতে সই করেন একাউন্ট হোল্ডার কামাল সিদ্দিকী। এর আগে দু’টি ট্রাস্ট গঠন ও রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। বাগেরহাটের জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সেটেলার হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এবং বগুড়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের সেটেলার হন তারেক রহমান। বাগেরহাটে মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্টের নামে এতিমখানা নির্মাণ করে যথারীতি পরিচালনা করেন। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা নূর আহমেদ ১১/৬/২০০৮ তারিখে জমা দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ট্রাস্টটি বেসরকারি ট্রাস্ট, এবং ‘বর্ণিত ট্রাস্টের নামে একটি এতিমখানা স্থাপন করা হয়েছে, যা চলমান রয়েছে বিধায় প্রাথমিক অনুসন্ধানে উক্ত ট্রাস্টের কোনো অর্থ আত্মসাতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে দুদকের মামলার অভিযোগকারী এবং তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদও তা মেনে নেন। ফলে বাগেরহাটের এই খন্ড নিয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি বা মামলাও হয়নি (এটা মাথায় রাখবেন)।

এবারে বগুড়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নিয়ে আলোচনা। বগুড়ার জন্য বরাদ্দ করা ২.৩৩ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ট্রাস্টের নামে বগুড়াতে ২.৭৯ একর ধানি জমি ক্রয় করা হয়। বাদ বাকি সব টাকা ট্রাস্টের একাউন্টে আছে, তা স্বীকার করেছেন মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ। ট্রাস্টির সদস্যদের কর্মব্যস্ততার কারণে এই টাকা ব্যবহার করে এতিমখানা নির্মাণ করা হয়নি সত্য, তবে তারেক রহমান এতিমখানার ঐ টাকাকে উচ্চ মুনাফাধারী বিভিন্ন ব্যাংকে রেখে তা তিন গুণ বর্ধিত করেন। ট্রাস্টের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের পরিচিত সলিমুল হক কামালকে দায়িত্ব দেন ঐ টাকা ব্যাংকে রাখার জন্য। কামাল সাহেব তার নিজের নামে এবং তার পরিচিত গিয়াসউদ্দিন ও সৈয়দ আহাম্মদ নামে এফডিআর করেন পরে লাভসহ ভাঙ্গিয়ে সম্পূর্ণ টাকা ট্রাস্টের একাউন্টে জমা করা হয়।

২০০৬ সালে এতিমখানার জন্য ঢাকার কাছে আশুলিয়ায় জমি কেনার উদ্দেশ্যে জনৈক শরফুদ্দিনের সাথে বায়না করে ২টি এফডিআর মূলে অর্থ দেয়া হয়, যাতে মেয়াদান্তে ২.৫০ কোটি পাওয়ার কথা। কিন্তু ১/১১র পরে দেশে ধরপাকড় ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে এবং পরে তারেক রহমান গ্রেফতার হলে ঐ জমির রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হয়নি। ফলে শরফুদ্দিন উক্ত এফডিআর ভেঙে ২.১০ কোটি টাকা ট্রাস্টকে ফেরৎ দান করেন। মূলত এটাই হলো মামলার ২.১০ কোটি টাকার উৎস। বাস্তবে ট্রাস্টের কাছে এখনও ৬ কোটির বেশি টাকা আছে ব্যাংকে। এখানে দুর্নীতির মামলা হলে ৬ কোটির জন্যই হওয়ার কথা। আর কুয়েতি অনুদান সংক্রান্তে মামলা হলে ১২.৫৫ লাখ ডলার বা ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকার উপরে হওয়ার কথা। এর একটিও হয়নি। অর্থাৎ মামলাটি বস্তুনিষ্ট হয়নি, বরং বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়েছে!
মামলার শুরুতে অভিযোগ আনা হয় যে, অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। পরে আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণাদিতে যখন প্রমাণ হয় যে, কোনো টাকা কেউ আত্মসাৎ করেনি, তারপরে সরকারি পক্ষ সেটি ঘুরিয়ে দেয় অন্য দিকে। সরকারি তহবিলের অর্থ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাইভেট ট্রাস্টকে দেয়ার অভিযোগ আনা হয় এবং সেই কারণ দেখিয়ে বানোয়াট কাগজপত্র ও সাক্ষী দিয়ে ধারণার বশবর্তী হয়ে বেগম জিয়াকে সাজা দেয়া হয়।

‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ ছিলনা 

প্রকৃতপক্ষে, ১৯৯১ সালে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম ফান্ড’ নামে সরকারি কোনো তহবিল ছিল না, এখনও নাই। ১৯৯১ সালের জুন মাসে দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্বাহী ক্ষমতা ছিল না। তাই ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বরং এমন কোনো তহবিল সৃজন করতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (এতিমখানা এই মন্ত্রণালয়াধীন) অনাপত্তি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন দেয়ার আবশ্যকতা ছিল। ঐভাবে কোনো তহবিল সৃষ্টি করা হয়েছিল কি? আদতে তেমন কিছু ঘটেনি। ফলে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে কোনো সরকারি তহবিল ছিল না। ফলে ঐরূপ কোনো ফান্ডের টাকা আত্মসাত বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকা সরানো স্রেফ কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ ছাড়া আর কিছু নয়।

কেউ যদি অভিযোগ করে, আমার পকেট থেকে কেউ টাকা চুরি করেছে। পরে খুঁজে দেখা গেলো তার কোনো পকেটই নেই। তাহলে চুরির প্রশ্ন আসবে কী করে? এখানেও তেমন ঘটনা ঘটেছিল। প্রধানমন্ত্রীর এতিম ফান্ড ছিলই না, তাহলে টাকা তছরুপ হবে কী করে? ঐ ফান্ড কে সৃষ্টি করলো? এরকম কিছু গঠন হয়ে থাকলে সরকারি গেজেট কোথায়? অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি কোথায়? রাষ্ট্রপতির অনুমোদন কোথায়? সরকারি ফান্ড হলে প্রতিবছর তার অডিট হওয়ার কথা। এমন কিছু হয়েছিল কি? কোনো নিরীক্ষা হয়েছিল কি? হয়ে থাকলে সেই অডিট রিপোর্ট কই? আছে কি এমন কিছু? কিছুই নেই। তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ নিজেও তা স্বীকার করেছেন

  • লেখক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। 

ম্যাডাম থেকে মমতাময়ী মায়ের আসনে বেগম জিয়া


মোবায়েদুর রহমান 


বেগম জিয়াকে সাজা দেওয়ার পরবর্তী ১১ দিনের ঘটনাবলী দেখে আওয়ামী লীগ ও সরকারী নেতাদের রীতিমত আক্কেল গুড়ুম। তারা ভাবলেন কি, আর হলো কি। খালেদা জিয়ার সাজাকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত কোথাকার পানি কোথায় দিয়ে দাঁড়াবে সেটা এখনও সঠিক ভাবে বলতে পারা না গেলেও ঘটনা প্রবাহ যেভাবে গড়াচ্ছে তার ফলে আওয়ামী লীগের সব হিসেব লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ফলে তারাও এসব বিষয় নিয়ে নতুন করে হিসাব নিকাশ করতে বসেছে এবং দাবার ছক নতুন করে সাজাতে শুরু করেছে। একজন শিক্ষিত ভদ্রলোক আমাকে বললেন যে আওয়ামী লীগ এই খেলায় প্রথম রাউন্ডে প্রচন্ড হোঁচট খেয়েছে। গত ১৭ তারিখ বিকালে গুলশান যাচ্ছিলাম। কথা প্রসঙ্গে ড্রাইভার বললেন যে, আওয়ামী লীগ নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি প্রশ্ন করলাম, কেন? তার উত্তর, আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের ছকটি সাজানো ছিল এভাবে: বেগম জিয়ার ৫ বছরের জেল হবে। জেল হওয়ার রায়টি শুনেই তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে শুরু হবে হুলুস্থুল কান্ড। বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল সহ বেগম জিয়ার নেতা কর্মী ও সমর্থকরা সাথে সাথেই আন্দোলনের নাম করে ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক তৎপরতায় মেতে উঠবে। তারা বেপরোয়াভাবে গাড়ি ভাংচুর করবে, গাড়ি ঘোড়ায় আগুন লাগিয়ে দেবে, পুলিশের প্রতি অবিরাম ইষ্টক বর্ষণ করবে এবং সারা শহরে বোমা বা ককটেল ফাটাবে। তাদের এসব কর্মযজ্ঞের ফাঁক দিয়ে এজেন্ট প্রোভোকেটিয়ারা মিছিল বা জনতার মাঝে অনুপ্রবেশ করবে এবং পেট্রোল বোমা বা গুলি করার মতো নাশকতা চালাবে। ফলে সহানুভ‚তির পরিবর্তে বেগম জিয়া তথা বিএনপির প্রতি জনগণের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হবে। এই সুযোগে সরকার ঢাকা মহানগরী থেকে শুরু করে গ্রামে গঞ্জে পর্যন্ত সন্ত্রাস দমনের নামে বিএনপির বিরুদ্ধে চিরুনী অভিযান চালাবে এবং হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করবে। ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই কদম ফোয়ারার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ২ শত নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের এখনও মুক্তি দেওয়া হয়নি। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই নতুন করে নাশকতার বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেককেই এর মধ্যেই রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের পর বিএনপি যদি হরতাল বা অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতো তাহলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্তও জাল বিছিয়ে বিএনপির নেতা কর্মীদেরকে ছেঁকে তোলা হতো। এদেরকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে জেলে রাখা হতো এবং ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ইলেকশনের আগে মুক্তি দেওয়া হতো না। এভাবে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে সমানে গোল দিতো। 

কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার প্রাজ্ঞ ও দুরদর্শী নেতৃত্ব তাদেরকে সেই সুযোগ দেয়নি। গত ১১ দিন ধরে বেগম জিয়ার রায়ের পরে বিএনপি যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে সেটি এক কথায় কারান্তরীণ নেত্রীর অসাধারণ দুরদর্শিতার পরিচায়ক। নিয়মতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে বিএনপি রাজপথ থেকে পালিয়ে যায়নি। বরং অতীতের যেকোনো সময়য়ের চেয়ে আরো বেশি সংখ্যায় রাজপথ সরব রেখেছে। এবার শুধু জনগণ নয়, আওয়ামী লীগ এবং সরকারের কাছেও স্পষ্ট প্রতিভাত হলো যে, বিএনপির এই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পেছনে রয়েছে জনগণের সর্বাত্মক সমর্থন। সেই সাথে একটি সাধারণ ধারণা সব শ্রেণীর জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে যে সরকার বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে একটি ভিত্তিহীন ও সাজানো মামলার মাধ্যমে দন্ড দিয়েছে যাতে করে বেগম জিয়া এবং তার দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যায়। এখন এটি ওপেন সিক্রেট যে বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় এবং জনগণ যদি ভোট কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে পারে তাহলে শাসকদল শুধু যে হারবে তাই নয়, তাদের হারাটা হবে একেবারে গো-হারা। 

এখন বেগম জিয়ার কারাদন্ড আওয়ামী লীগ এবং সেই সুবাদে তাদের সরকারের জন্য হয়েছে শাঁখের করাত। এধারেও কাটে, ওধারেও কাটে। এখন তারা কি করবেন? বিভিন্ন ছলছুতা করে বেগম জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করবেন? নাকি তার জামিনের পেছনে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না? এই দুইয়ের দোলাচলে এখন দুলছে আওয়ামী লীগ। 

\দুই\
আওয়ামী লীগ ৬৫ বছরের একটি পুরাতন পার্টি। রাজনীতির বাতাস তারা মোটামুটি বুঝতে পারে। এই ১১ দিনেই তারা বুঝে গেছে যে কারাদন্ড দেওয়ার ফলে প্রতিটি দিন যাচ্ছে আর বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা হবে হিমালয়ের মত উঁচু এবং তিনি হবেন মহা নেতা। ইতোমধ্যেই তিনি সম্মান, সহানুভ‚তি এবং জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে অনন্য উচ্চতায় উঠে গেছেন। এখন তার লাখ লাখ নেতা ও কর্মী তাকে আর ম্যাডাম ডাকে না। জেলে যাওয়ার পর থেকেই তিনি রূপান্তরিত হয়েছেন এক মমতাময়ী মাতৃ রূপে। অন্যের কথা বাদই দিন, এমনকি কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি মেজর আকতারুজ্জামান পর্যন্ত মিছিল করছেন এবং আওয়াজ তুলেছেন তিনি এবং তার সমর্থকরা তাদের মাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনবেনই। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে মেজর আকতারুজ্জামান বিএনপির এমপি ছিলেন। কিন্তু তার কিছু কার্যকলাপ দলীয় স্বার্থের পরিপন্থী হওয়ায় তিনি দল থেকে বাদ পড়েন। এখন সেটি ভুলে যেয়ে তিনিও দেশনেত্রীকে মা হিসেবে মেনে নিয়েছেন এবং মায়ের মুক্তির জন্য রাস্তায় নেমেছেন। দেশনেত্রী বা ম্যাডাম থেকে মায়ের মর্যাদায় আসীন হওয়া বাংলাদেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে আমরা দেখিনি। তার প্রতি সমর্থন এবং দরদ যে কি পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেটা যে কতটা গভীর তার কিছু নজির দেওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে আমি অনেক কিছুই বলতে পারতাম। কিন্তু তাতে করে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তবুও দুয়েকটি ঘটনা না বললেই নয়। 

ধানমন্ডি এলাকার একটি এ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটে আমি থাকি। এখানকার অধিকাংশ ফ্ল্যাট মালিকদের স্ত্রীরা গৃহীনি। তারা উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু তারা পেশাজীবি বা চাকুরিজীবি নন। গত রবিবার ৪জন গৃহীনি এসে বললেন, আমরা তো বেগম জিয়ার জন্য কিছুই করতে পারছি না। বলুন তো ভাই আমরা যদি তার মুক্তির দাবিতে লিখিত গণস্বাক্ষরে সই দেই তাহলে কি তিনি মুক্ত হবেন? আমি বললাম, মুক্ত হবেন কিনা জানি না, তবে আপনাদের যতটুকু করার ততটুকু তো করলেন। ঐ মহিলারা অতঃপর ৪ জনে একটি গাড়িতে উঠে নয়াপল্টনে গিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে এসেছেন। বনানীর একটি বহুতল বিশিষ্ট এ্যাপার্টমেন্টের কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী এবং ফ্ল্যাট মালিকদের কয়েকজন ড্রাইভার নিজেরা কন্ট্রিবিউট করে জেল গেটে গিয়েছিলেন খাবার নিয়ে। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় তাদেরকে ফিরে আসতে হয়েছে।

এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে মনে হয় সেদিন আসছে, যেদিন এই ঢাকা মহানগরীতেই গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ের কিছু ঐতিহাসিক ও বিপ্লবী ঘটনা গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ এবং নিয়মতান্ত্রিক পথে ফিরে আসতে পারে। 

এসব দেখে শুনে শাসকদের চিত্ত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ১১ দিন ধরে মামলার সার্টিফায়েড কপি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। হয়তো এই লেখাটি যেদিন প্রকাশিত হলো তার আগের দিন অর্থাৎ সোমবার তাদেরকে কপি দেওয়া হবে এবং আজ হয়তো তারা আপিল করবেন এবং জামিন চাইবেন। কেন রায়ের এই নকল নিয়ে এমন টালবাহানা করা হলো? এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজ্ঞ এবং আন্তার্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনবিদ ড. কামাল হোসেন বলেছেন যে নকল নিয়ে যা করা হলো সেটি ছিল একটি প্রহসন। এসব রায়ের কপি পেতে তিন দিনও লাগে না। আর এরা ১০ দিনেও সেটি দেয় না। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। বেগম জিয়াকে হয়রানী করা। 

\তিন\
প্রথম রাউন্ডে হেরে গিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে শাসক দল একটি নতুন খেলা শুরু করেছে। টেলিভিশন টকশোগুলোতে ৩ জন করে আলোচক আনা হচ্ছে। এরা হলেন একজন আওয়ামী লীগার, একজন জাতীয় পার্টির আরেকজন বিএনপির। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি তো একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। সুতরাং তারা হয়ে যাচ্ছে দুই, আর বিএনপি হচ্চে এক। বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতা বা অভিজ্ঞ আলোচক আসছেন না। বরং বলা যায় আসতে পারছেন না। এলে পরেই তো টক শো শেষে একেবারে লাল ঘরে। আসল কথা হলো, সরকারের পরিকল্পনা। দুষ্ট লোকে বলে যে আগামী নির্বাচনে সরকার জাতীয় পার্টিকে দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্টি এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে সাজাতে চায়। আর বিএনপিকে থার্ড পার্টি। তবে ইংরেজীতে একটি কথা আছে না Man proposes God disposes. 

সেজন্য আওয়ামী লীগের সব ধরণের নেতা এবং টেলিভিশন টকশোর আওয়ামী এবং জাপা পন্থী আলোচকদের মুখে এখন শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার। একটি কথা টকশোতে প্রায়ই বলা হচ্ছে যে বেগম জিয়া যেমন কাজ করেছিলেন তেমন ফল পাচ্ছেন। বেগম জিয়া নাকি এরশাদকে গ্রেফতার করেছিলেন। এখন তিনিও গ্রেফতার হয়েছেন। এদের অজ্ঞতা দেখে করুনা হয়। এরা জ্ঞান পাপী। তাদের জানা উচিৎ যে এরশাদকে বেগম জিয়া গ্রেফতার করেননি। তাকে গ্রেফতার করেছিলেন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপিত সাহাবুদ্দিন আহমেদ। এরশাদ পদত্যাগ করেন ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। সেই দিনই প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দন আহমেদ অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালের ১২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট এরশাদ অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হন। আর খালেদা জিয়া প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ। অর্থাৎ এরশাদ গ্রেফতার হওয়ার ২ মাস ৭ দিন পর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। তবে দুঃখের বিষয়, এসব তথ্য জনগণের কাছে পরিস্কারভাবে বলতে পারে না বিএনপি। মনে হয় না তাদের কোনো থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আছে। অতীতেও ছিল না। এখনও নাই। 

আরেকটি তথ্য আমার জানা ছিল না। তথ্যটি পরিবেশিত হয়েছে শনিবার ১৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোর ১১ পৃষ্ঠায়। প্রকাশিত নিবন্ধের এক স্থানে বলা হয়েছে, জনতা টাওয়ার মামলায় আপিল বিভাগ এরশাদের সাজা বহাল রাখলে তিনি ২০০০ সালের ২১ ডিসেম্বরে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং মাননীয় বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ জানিয়ে চার দলের শীর্ষ নেতারা যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তাতে খালেদা জিয়ারও সই ছিল। আজ বিএনপি নেতারা যেমন বলছেন, সাজানো মামলায় খালেদাকে ফাঁসানো হয়েছে, সেদিন জাতীয় পার্টির নেতারাও দাবি করেছিলেন, চারদলীয় জোটে যাওয়ার কারণেই সরকারের রোষের শিকার হয়েছেন এরশাদ। এই ঘটনা থেকে এটি পরিস্কার হয়ে যায় যে বেগম জিয়া কোনো সময় নিচু ও সংকীর্ণ মনের মানুষ ছিলেন না। তাই এরশাদের শাস্তির বিরুদ্ধেও তার মুক্তি চেয়ে প্রদত্ত বিবৃতিতে তিনি সই দিয়েছিলেন। অথচ সেই জাতীয় পার্টিই আজ সমস্বরে এই মর্মে মিথ্যাচার করছে যে বেগম জিয়াই নাকি তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। ওপরে যেসব ঘটনা বিবৃত করলাম সেসব ঘটনা থেকে একটি বিষয় পরিস্কার হয়ে যায় যে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতির প্রধান ভিত্তিই হলো মিথ্যাচার এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই আজ আলোচনা করা সম্ভব হলো না। সেটি হলো বেগম জিয়ার জামিন পেতে কত সময় লাগবে? এই সব মামলা মোকদ্দমা পেরিয়ে তিনি কি আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন? এ সম্পর্কে আমি লেখার ইচ্ছে রাখি আগামী মঙ্গলবার। অবশ্য এর মধ্যে যদি ভিন্ন ঘটনা ঘটে যায় তাহলে ভিন্ন কথা। 

আজকে এটুকু বলছি যে বেগম জিয়ার ইলেকশন করা না করার ব্যাপারে আমি কয়েকটি উদাহরণ দেবো। এরমধ্যে থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জেনারেল এরশাদ, ভারতের পরলোকগত জয় ললিতা জয়ারাম, ম খা আলমগীর, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এমপি বদি প্রমূখ।

  • Email: journalist15@gmail.com
  • উৎসঃ dailyinqilab.com 


দিল্লি নির্বাচনে বিএনপিকে দেখতে চায়


ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মূল্যায়ন



ওমর শাহ 

ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়াান এক্সপ্রেস জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডাদেশ লাভের ঘটনাকে আইনের শাসনের দিক থেকে নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করেছে। মিডিয়া পরিষ্কার করেছে যে, খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ সত্ত্বেও দিল্লি আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ দেখতে আগ্রহী।

ভারতীয় মিডিয়া সাধারণভাবে বলেছে, মিসেস জিয়ার দণ্ডাদেশকে সরকারিভাবে দিল্লি ‘পাথুরে নীরবতা’য় উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু তারা বেশি উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, এই মামলার কারণে যদি খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, আর তার পরিণতিতে বিএনপি যদি নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ একটি ‘কম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে’ রূপান্তরিত হতে পারে। বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়া এবং ইসলামী রেডিক্যালদের মনোভাব বিবেচনায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, আওয়ামী লীগের কোনো কোনো অংশের আপত্তি অগ্রাহ্য করে যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, সেই তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে।

গত ৯ই ফেব্রুয়ারি ‘একটি সংকীর্ণতম মাঠ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলেছে, ‘দুর্নীতি মামলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর জেল হয়েছে। কিন্তু জনসাধারণের দৃষ্টিতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, খালেদা জিয়ার কারাবরণের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপক রাজনৈতিক ক্ষমতা আরো বেশি সংহত করার পথ তৈরি করে দেবে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি নেত্রী ও তার দলকে যদি অংশগ্রহণ করতে না দেয়া হয়, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ অনুরূপ অবাধ ক্ষমতা আরো সুসংহত করতে পারে। অনেকের মতে, এমনকি তিনি বাংলাদেশকে একটি কম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে আগ্রহী হতে পারেন।’

এক্সপ্রেস লিখেছে, ‘‘অবশ্যই সেই দিনটি এখনো বেশ দূরে। কিন্তু বাস্তবতা এটাই রয়ে গেছে যে, ১৯৭৫ সালে আততায়ীর বুলেটে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে একজন তেজদ্দীপ্ত সাহসী নারী হিসেবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকারীর ভাবমূর্তি থেকে দ্রুত সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। একটি রক্তস্নাত যুদ্ধ থেকে জন্ম নেয়া দেশটি তখনো পর্যন্ত তারুণ্য উদ্দীপ্ত ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশিরা ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কারণ এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, তিনি স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতি এবং উপদলীয় কোন্দলকে মার্জনা করেছেন এবং তার ক্রমশ অজনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে এসব অবদান রেখেছে। সার্বিক বিচারে মিসেস জিয়ার বিরুদ্ধে তিনি নিজকে তার ভয়ানক ব্যক্তিগত বৈরিতার ঊর্ধ্বে উঠাতে সক্ষম হননি। তিনি বিশ্বাস করেন যে, জামায়াতে ইসলামী, যে দলটির কিছু সদস্য স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তানি শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিএনপির আঁতাত রয়েছে। এর কিছু অভিযোগের সত্যতা থাকতে পারে। শেখ হাসিনার ব্যাপক মানসিক আঘাত এবং প্রতিশোধের জন্য তার একটি ব্যক্তিগত অভিপ্রায় হয়তো বোধগম্য। কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, যার হাতে দেশটির নেতৃত্ব, তিনি যদি ঘৃণার বেদিতে দেশটির ভবিষ্যৎ সমর্পণ করেন, তাহলে তা শুধুই তাকে ম্লান করতে পারে এবং তার দেশকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

শেখ হাসিনা একটি গণতান্ত্রিক স্পেস বা স্থান সৃষ্টি করতে অসামর্থ্যের পরিচয় দিচ্ছেন। যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশের জনগণ বিচার করতে পারবে। আর এর ফলে এমন একটি ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে, যাতে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওই স্বাধীনতা যুদ্ধে খালেদা জিয়ার স্বামী তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান, যিনি ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন, তিনিসহ অধিকাংশ বাংলাদেশি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাঁধে কঁাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। শেখ হাসিনা যদিও সন্ত্রাসী এবং ইসলামী উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তদুপরি তাকে দেখা হবে এমন একটি পরিস্থিতি তিনি সৃষ্টি করছেন, যা মিসেস জিয়াকে টেনে নামানোর এবং যাতে প্রকারান্তরে একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রের বীজ বপন করা হবে। দুর্নীতির দায়ে বেগম জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত ভালোই করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আরো গভীরভাবে তলিয়ে দেখা দরকার যে, আজ তার দরকার একটি গণতান্ত্রিক এবং সহানুভূতিপ্রবণ জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে নেতৃত্ব দেয়া।’’

উল্লেখ্য যে, দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গত ৮ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের দিনেই পত্রিকাটির কনসাল্টিং এডিটর জ্যোতি মালহোত্রা লিখেছিলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর জেল হওয়ার কারণে ঢাকা ঝড়ের মধ্যে পড়েছে। দিল্লিকে করেছে উদ্বিগ্ন। জিয়ার দণ্ডাদেশ লাভে দিল্লিতে চলছে পাথুরে নীরবতা। দিল্লি বিশ্বাস করে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন আরো অধিকতর ক্ষমতার পরিধি বিস্তার করার ঝুঁকি নেবেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ শাসনে শেখ হাসিনাই ‘বেস্ট বেট’ (শ্রেষ্ঠ বাজি) রয়ে গেছেন। মালহোত্রা মনে করেন, খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বাংলাদেশকে একটি ঝড়-তুফানের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তার আশঙ্কা, আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে।

দুই নেত্রীর মধ্যে তিক্ততার গভীরতার দিকে আলোকপাত করতে গিয়ে মালহোত্রা উল্লেখ করেছেন যে, ‘দেশটির সবচেয়ে দুই ক্ষমতাধর নারীর মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তীব্রতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেন, “তিনি আজ কোথায়”? মালহোত্রা অবশ্য স্পষ্ট করেছেন যে, মিসেস জিয়াকে যদি আগামী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় এবং এর আগের নির্বাচনের মতো বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ কোনো প্রকৃত বিরোধী দল ছাড়াই দেশ শাসন করবে। কিন্তু সেটা হবে দিল্লির অসন্তোষের কারণ। তার কথায়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দিল্লিতে ঢাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী একটি স্টাবলিশমেন্ট, তারা ইসলামী উগ্রপন্থিদের তরফের চাপ এবং টানাপড়েনে মনোযোগী এবং একটি দ্রুত প্রভাবশালী হয়ে ওঠা চীন কর্তৃক ঢাকার প্রতি আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘটনাবলী সত্ত্বেও তারা এটা স্পষ্ট করেছে যে, ভারত শেখ হাসিনার ‘‘গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগের’’ প্রতি সমর্থন দেবে। কিন্তু দিল্লি একইসঙ্গে শান্তভাবে শেখ হাসিনার প্রতি এই আহ্বান রেখেছে যে, বিরোধী দল বিএনপি, যার সঙ্গে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছেন; সেই দলটি যাতে দৃষ্টিগোচরভাবে আসন্ন নির্বাচনে ন্যূনতম অংশগ্রহণ করে, যাতে তা তিনি নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে দিল্লির যুক্তি হলো, একটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশটির গণতান্ত্রিক ভিন্নমত সিস্টেমের মধ্যে থেকে উত্তমরূপে মোকাবিলা করতে পারবে, বিরোধী দলকে বাইরে রেখে নয়।

মালহোত্রা আরো লিখেছেন, এটি একটি যুক্তি যে, যদিও শেখ হাসিনা তার প্রধানমন্ত্রিত্বের গত চার বছরে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, বেসামরিক স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর উপস্থিতি সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশে চীনাদের স্বাগত জানানোর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠলেও দিল্লির ওই পরামর্শের প্রতি সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচারণ করবে না। মালহোত্রার মতে, দিল্লি নির্দিষ্টভাবে ২০১৫ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর থেকে দ্রুত চীনা প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি নজর রাখছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার সফরকালে ২৬ বিলিয়ন ডলারের একটি চেক কেটে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেই থেকে বাংলাদেশিরা চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছেন এবং চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় চীনা কোম্পানিগুলোকে কিছু অবকাঠামো গড়ে তুলতে দিয়েছেন। দিল্লি এসব বিষয়কে একটি ‘পয়েন্ট’ হিসেবে নিয়েছে। সেকারণে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মিসেস জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগের একটি অংশ বলেছিল, মিসেস জিয়ার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের সাক্ষাৎ করা ঠিক হবে না।

মালহোত্রা তার উপসংহার টেনেছেন এই বলে যে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় মিসেস জিয়ার দণ্ডাদেশ এবং যে মামলায় ২১ মিলিয়ন টাকা তছরুপের দায়ে তার ছেলে তারেক রহমানকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়, সেসব ঘটনাকে শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা আরো সংহত করার পথ হিসেবে নেবেন। তিনি এবং তার আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করেন যে, দুর্নীতি দমন আদালত থেকে মা ও তার ছেলে উপযুক্ত শাস্তিই পেয়েছে। আদালত ব্যাখ্যা করেছে যে, বিদেশি অনুদান লাভ করার ঠিক আগে কেন ওই ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল?


  • উৎসঃ amadershomoy.com 



A narrower field

Jailing of Khaleda Zia revives questions about Sheikh Hasina’s pursuit of absolute power in Bangladesh 


Editorial/ The Indian Express/ February 9, 2018 12:16 am



The sentencing of former Bangladesh Prime Minister and Bangladesh Nationalist Party (BNP) leader Khaleda Zia to five years in jail is on charges of corruption. In public perception, however, Zia’s incarceration paves the way for a further consolidation of Prime Minister Sheikh Hasina’s vast political power. If the BNP leader is not allowed to participate in general elections scheduled for December this year, and her party boycotts the polls like it did five years ago in 2013, then Hasina and her Awami League party may accumulate such untrammelled power that, many feel, she may be tempted to transform Bangladesh into a state less democratic.

Of course, that day is still far away. But the fact remains that Hasina’s reputation at home has rapidly deteriorated — from the brave courageous woman who returned home despite the fact that her family members, including her father, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rehman, were killed by the assassin’s bullet in 1975. The nation was still so young, then, just born of a bloody war. But in the past five years, during her second term as prime minister, Bangladeshis are angry that she has seemingly condoned nepotism, corruption and faction-fighting, and this has contributed to her growing unpopularity. By all accounts, she has not been able to let go of her terrible personal animosity against Zia. She believes the BNP is hand in glove with the Jamaat-i-Islami, several of whose members once colluded with the enemy, Pakistan, in the liberation war. Some of this may even be true. Hasina’s enormous trauma and perhaps even a personal desire for revenge may be understandable. But for a prime minister to be seen to stake her country’s future at the altar of hate can only diminish her — and drag her country down.

Hasina’s inability to create the democratic space that will allow her opponent to be judged by the people of Bangladesh risks undermining the spirit of the liberation war in which most Bangladeshis — including Khaleda’s husband, then Major Ziaur Rahman, who read the declaration of independence on behalf of Sheikh Mujib on March 27, 1971 — fought shoulder to shoulder with each other, against Pakistan. For Hasina, otherwise so brave in fighting both terrorists and radical Islamists, to be seen to be actively creating the conditions to bring Zia down, is to sow the seeds of a brittle state. The courts did well to convict Zia for corruption. But Bangladesh’s prime minister needs to dig deeper into her reserves to build the sinews of a democratic and compassionate nation today.