Search

Friday, February 23, 2018

HRW urges govt to scrap draconian elements of Digital Security Act


New York-based international human rights organisation Human Rights Watch on Friday said the government of Bangladesh should review and reform the proposed Digital Security Act instead of enacting the law in its current form.

On January 29, the cabinet approved a draft law, intended to replace the much-criticised Information and Communication Technology Act. The draft is even broader than the law it seeks to replace and violates the country’s international obligation to protect freedom of speech, HRW said in a statement.

‘The proposed law totally undermines the government’s claim that it has no intention of curbing the right to freedom of speech,’ said Brad Adams, Asia director of HRW.

‘With at least five different provisions criminalising vaguely defined types of speech, the law is a license for wide-ranging suppression of critical voices.’

After the repeated abuse of Section 57 of the ICT Act to prosecute journalists and others for criticising the prime minister, her family, or her government on social media, Bangladesh authorities committed to repeal the law, the rights watchdog said in its report.

Although the proposed new law to replace the ICT Act limits prosecutions for defamation to those that could be prosecuted under the penal code and imposes an intent requirement for certain offenses, it also contains provisions that are even more draconian than those in Section 57, it said.

The report said Section 14 of the draft would authorise sentences of up to 14 years in prison for spreading ‘propaganda and campaign against liberation war of Bangladesh or spirit of the liberation war or Father of the Nation.’

The United Nations Human Rights Committee, the independent expert body that monitors compliance with the International Covenant on Civil and Political Rights, to which Bangladesh is a party, has expressly stated that laws that penalise the expression of opinions about historical facts are incompatible with a country’s obligations to respect freedom of opinion and expression.

The HRW said Section 25(a) would permit sentences of up to three years in prison for publishing information which is ‘aggressive or frightening’ – broad terms that are not defined in the proposed statute. The use of such vague terms violates the requirement that laws restricting speech be formulated with sufficient precision to make clear what speech would violate the law. The vagueness of the offense, combined with the harshness of the potential penalty, increases the likelihood of self-censorship to avoid possible prosecution.

Section 31, which would impose sentences of up to 10 years in prison for posting information which ‘ruins communal harmony or creates instability or disorder or disturbs or is about to disturb the law and order situation,’ is similarly flawed, it said.

‘With no clear definition of what speech would be considered to ‘ruin communal harmony’ or ‘create instability,’ the law leaves wide scope for the government to use it to prosecute speech it does not like.’

Section 31 also covers speech that ‘creates animosity, hatred or antipathy among the various classes and communities.’ While the goal of preventing inter-communal strife is an important one, it should be done in ways that restrict speech as little as possible.

The law’s overly broad definition of ‘hate speech’ opens the door for arbitrary and abusive application of the law and creates an unacceptable chill on the discussion of issues relating to race and religion.

The reports said Section 29, like section 57 of the ICT Act, criminalises online defamation. While Section 29, unlike the ICT Act, limits defamation charges to those that meet the requirements of the criminal defamation provisions of the penal code, it is nevertheless contrary to a growing recognition that defamation should be considered a civil matter, not a crime punishable with imprisonment.

‘The Digital Security Act is utterly inconsistent with Bangladesh’s obligation to protect freedom of speech,’ said Adams.

‘Parliament should reject the bill and insist on a law that truly respects the right of the country’s citizens to speak freely.’

- Resource: newagebd.net

উচ্চতর গণিতের প্রশ্নপত্রও ফাঁস

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট


ফাঁস হলো উচ্চতর গণিতের প্রশ্নপত্রও। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে উচ্চতর গণিত  ও বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা।  তবে পরীক্ষা শুরুর আগেই উচ্চতর গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শেষে প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে ফাঁস হওয়া সেটের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

উচ্চতর গণিতের বহুনির্বচনি অভীক্ষার খ সেট প্রশ্নপত্রসহ উত্তরপত্র হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া গেছে সকাল ৯টা ৪ মিনিটে। অন্যদিকে ১০টায় বিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র আসে হোয়াটসঅ্যাপে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১২টি বিষয়ের প্রশ্নই ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেলো।

এ বিষয়ে ঢাকা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহেদুল খবির চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রশাসন এখন সজাগ। তারা এই চক্রকে ধরার চেষ্টা করছে। অনেককে ধরেছেও। আজকের প্রশ্নফাঁস হয়েছে কিনা তা জানা নেই। পরীক্ষা শেষে মিলিয়ে দেখা হবে।’

উল্লেখ্য, ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথম পত্রের বহুনির্বচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেট পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল। পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ফেসবুকে প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ৩ মিনিটে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের  নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বচনি) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়।

৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৪৮ মিনিট আগে সকাল ৯টা ১২ মিনিটে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ‘খ’ সেটের গাঁদা প্রশ্নপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে পাওয়া গেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বহুনির্বচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেটের চাঁপা প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে গণিতের ‘খ-চাঁপা’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে হোয়াটসআপের একটি গ্রুপে আইসিটির ‘ক’ সেট প্রশ্ন পাওয়া যায় এবং সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ‘গ’ সেটের প্রশ্নও ফাঁস হয়।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিজ্ঞান বিভাগের ‘পদার্থবিজ্ঞান’, মানবিক বিভাগের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ এবং বাণিজ্য বিভাগের ‘ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং’। এদিন সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে পদার্থবিজ্ঞানের বহুনির্বচনি অভীক্ষার ‘গ সেট’র প্রশ্ন উত্তরপত্রসহ হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া গেছে। আর পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পরেই সকাল ১০টা ৫ মিনিটে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং-এর ‘ঘ' সেট’র প্রশ্নপত্রও পাওয়া যায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে।

১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত রসায়ন, পৌরনীতি ও নাগরিকতা এবং ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে শুধু রসায়নের প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় পরীক্ষার আগে। সকাল ৯টা ৫ মিনিটে রসায়নের ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্রটি হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপে পাওয়া যায়। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে ৯টা ৫ মিনিটে পাওয়া যায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জীববিজ্ঞানের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয় পরীক্ষা শুরুর আগে।


  • তথ্যসূত্রঃ banglatribune.com




প্রশ্নফাঁস: একটি জাতীয় শিল্পের আত্মপ্রকাশ


নিশাত সুলতানা


প্রশ্নফাঁস যেহেতু বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে, যেহেতু এর জন্য কেউ দায়ী নয়, সেহেতু একে এখন মেনে নিলেই হয়! মেনে নেওয়ার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে একে জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণা করা। এই সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম প্রশ্নপত্র ফাঁস শিল্প। এই শিল্প অতি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, জনপ্রিয় ও অপ্রতিরোধ্য। বাংলাদেশ সরকার দাবি করে, তারা এ শিল্প বিকাশের বিরোধী। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হলো, কোনো গবেষণা এবং সরকারের সদিচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই কোনো শিল্পের এ রকম বিকাশ রীতিমতো ঈর্ষণীয়! অবশ্য সদিচ্ছার অভাবই-বা বলি কী করে, সরকারের অনিচ্ছায় গুমের খবর ফাঁস হয় না, সেখানে প্রশ্নফাঁস হয় কী করে? এত বড় অবদানে সরকারের কৃতিত্ব অস্বীকার করা বড়ই অকৃতজ্ঞতা হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত নানা ধরনের গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংখ্যা নেহাত কম নয়। যেমন: প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউট, চাল, ধান, ইক্ষু, চা, আম, রেশম, তুলা—এ রকম কতই-না ইনস্টিটিউট! এই গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ তাদের অভিনব গবেষণালব্ধ জ্ঞান দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করার বেলায় কতটা ভূমিকা রেখেছেন, তা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কাছে ততটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু সরকারি সব উদাসীনতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং কোনো গবেষণালব্ধ জ্ঞান ছাড়াই প্রশ্নফাঁসের যে বিস্ময়কর শিল্প ও সংস্কৃতি বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে, তা তাবৎ দুনিয়াকে তাক লাগানোর মতো।

প্রশ্নপত্র ফাঁস ইতিমধ্যেই যে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, এ বিষয়ে কারও আর কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। এটা সত্য যে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ইতিহাস বাংলাদেশে বেশ পুরোনো। তবে ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশে কোনো পাবলিক পরীক্ষা ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ছাড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে হয় না। এ প্রক্রিয়া এতটাই শৈল্পিক যে তা মানছে না শিক্ষার্থীর বয়স, শ্রেণি, পরীক্ষার ধরন, ঋতুর বৈচিত্র্য ইত্যাদি! এটি এতটাই অনিবার্য যে একে রোধ করতে পারছে না রাস্তার যানজট, কিংবা ইন্টারনেটের স্পিডজট। সরকারি ঘোষণায় ইন্টারনেটের স্পিড হাঁসফাঁস করে; কিন্তু এরপরও প্রশ্নপত্র দায়িত্বের সঙ্গে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যায়। সরকারি তৎপরতায় যদিও-বা জেএমবির ভয়ংকর জঙ্গি ধরা পড়ে, কিন্তু পুরস্কার ঘোষণার পরও ধরা পড়ে না প্রশ্ন ফাঁসকারী অপরাধী। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষার হলকে মশা-মাছিমুক্ত করতে পারে, কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রশ্নফাঁসমুক্ত করতে পারে না পরীক্ষার হলগুলোকে। পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টারের দরজায় তালা ঝোলে কিন্তু সিলগালা করা প্রশ্নপত্র বাইরে বেরিয়ে এসে নির্লজ্জের মতো হাসতে থাকে। পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে মুঠোফোনের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ হলেও আলাদিনের প্রদীপের জাদুর দৈত্য নাকি ঠিকই পরীক্ষার হলে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে হাজির হয়ে যায়!

এবার বাসভর্তি ফাঁস প্রশ্নপত্র নাকি ঢুকে পড়েছে পরীক্ষাকেন্দ্রে। আর কী বাকি রইল! এ বয়সেই একদিকে প্রশ্নফাঁস ব্যবসায় হাতেখড়ি আর অন্যদিকে হাজতবাসের অভিজ্ঞতা তাদের বাস্তব দুনিয়ার ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করার জন্য আরও বেশি যোগ্য করে তুলছে। এটি কি কেউ তলিয়ে দেখেছে! ভীতসন্ত্রস্ত ক্রন্দনরত ১১ জন পরীক্ষার্থীকে আসামিদের জন্য নির্ধারিত কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে পর্দার অন্তরালে নিশ্চিন্তে ঘুমান সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা এবং প্রশ্নফাঁসের মূল কুশীলবেরা। সরকারিভাবেই তো প্রশ্নফাঁসের জন্য তাঁদের দায়মুক্তি দিয়ে রাখা যখন হয়েছে, তখন কেন তাঁদের এই মহান অবদান জাতীয়ভাবে স্বীকার করা হবে না?

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বশীল সচিব মহোদয় স্বীকার করে নিয়েছেন যে বর্তমান প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো বেশ কঠিন; অনেক কর্মকর্তার ভাষায় যা অসম্ভব। এই যখন বাস্তবতা, তখন শুধু শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানোর জন্য পণ্ডশ্রমের কোনো মানেই হয় না; বরং প্রশ্নপত্র ফাঁস শিল্প বিকাশে এখন প্রয়োজন আরও খোলামেলা সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সহযোগিতা ও বিনিয়োগ। তাই বিষয়টিকে অবিলম্বে ক্রমবিকাশমান শিল্পের স্বীকৃতি প্রদান করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে ‘প্রশ্নফাঁস বিকাশ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট’ স্থাপন করা জরুরি। এত দিনের সৃজনশীল প্রশ্নপত্র উদ্ভাবন ও বিকাশের অভিজ্ঞতাকে এবার প্রশ্নফাঁস শিল্পের সৃজনশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। দ্রুত ও ব্যয়সাশ্রয়ী পন্থায় ফাঁস হওয়া সঠিক প্রশ্নপত্র কীভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে গবেষণা করা অত্যন্ত জরুরি।

আরও একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আর তা হলো যেসব অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে বিবেকের দংশনে ভুগছেন, তাঁদের এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন মূল্যবোধের বিলুপ্তিবিষয়ক উন্নত প্রশিক্ষণ। ইতিমধ্যে তাঁদের কেউ কেউ চাঁদা দিয়ে ফাঁসকৃত প্রশ্ন কেনার তহবিল গঠন করেছেন। সেসব ফাঁসের প্রশ্নের উত্তর তড়িঘড়ি করে খোঁজার জন্য একদল শিক্ষকও অপেক্ষায় থাকবেন। প্রশ্নফাঁসের বিষয়টিকে শুধু প্রশ্নপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে উত্তরপত্রের মধ্যেও কীভাবে বিস্তৃত করা যায়, তার পথ এঁরাই দেখাচ্ছেন। শুধু ফাঁসকৃত আসল প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিলেই চলবে না, তাদের উত্তর লেখার পরিশ্রম থেকেও মুক্তি দিতে হবে। শিক্ষকদের পরীক্ষার হল টহলের ক্লান্তিকর দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে কীভাবে আরও নিবিড়ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে, সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা ও সমন্বয়ের জন্য সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসবিষয়ক অধিদপ্তর’ গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বাইরেও শিল্পটির বাণিজ্যিক বিকাশ, বিপণন আর বাজারজাতকরণে এগিয়ে আসতে হবে দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে। যেহেতু প্রক্রিয়াটির সঙ্গে শুধু শিক্ষার্থীই নয়, সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন তাদের মা-বাবাসহ পরিবার ও সমাজের অনেকেই, তাই তাঁদের কথাও মাথায় রাখতে হবে। প্রশ্নের বাণিজ্যিকীকরণ তাঁরা বিবেচনা করতে পারেন নানান প্যাকেজ, যেমন: পিয়ার প্যাকেজ, প্যারেন্টস প্যাকেজ, ফ্যামিলি প্যাকেজ, কমিউনিটি প্যাকেজ ইত্যাদি। তাঁরা দিতে পারেন ‘প্রশ্নপত্র কিনলে উত্তরপত্র ফ্রি’-জাতীয় অফারগুলো। ইতিমধ্যেই ফাঁস প্রশ্নের আদান-প্রদানের মূল্য পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং রীতিমতো ফুলেফেঁপে উঠেছে। ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোও আনতে পারে আজীবন শিক্ষার্থীদের এমনকি তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ফাঁস প্রশ্ন নিশ্চিতকরণের নানা স্কিম। বাংলা সিনেমার পরিচালকেরা ‘পরীক্ষার্থী কেন আসামি?’ বা এ ধরনের টাইটেলে সিনেমা নির্মাণের কথা ভাবতে পারেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে প্রশ্নপত্র ফাঁস শিল্পের বিকাশে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সমন্বিতভাবে এ বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হলে প্রশ্নফাঁস শিল্পে বিশ্বদরবারে অচিরেই বাংলাদেশ হবে এক নম্বর। আসুন, আমরা প্রশ্নফাঁস শিল্পের বিকাশে যার যার অবস্থান থেকে সর্বান্তকরণে সহযোগিতা করি।

নিশাত সুলতানা: লেখক ও গবেষক। 
purba_du@yahoo.com

Courtesy: prothomalo.com 

Thursday, February 22, 2018

আপিলের সুবিচার দৃশ্যমান হতে হবে - আসিফ নজরুল


বিদেশ থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী সাধারণত সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেন। এবার ইতালি থেকে ফিরেও তাই করেছেন। অন্য দেশে এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধানদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলেন সাংবাদিকেরা। আমাদের সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন কম। তাঁরা বরং কখনো কখনো প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর প্রিয় বিষয়ে কথা বলতে উৎসাহিত করেন, কখনো তাঁর প্রশংসায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন।

তবে সমস্যা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সম্মেলনে উপস্থিত অনেকের মতো উৎসাহিত বা নির্ভার থাকতে পারেননি দেশের মানুষজন; বিশেষ করে এবার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখেছেন। আমার প্রিয় মানুষ আনু মুহাম্মদ লিখেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রীর তো বটেই, সরকারেরও।

আমার এই লেখা অবশ্য অন্য একটি বিষয় নিয়ে। সেটি আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক। আমি বিশ্বাস করি, কোনো সরকারের মধ্যে যদি এই অহমিকা ঢুকে যায় যে যতই অজনপ্রিয় হোক, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না, তাহলে সেই সরকার ব্যাংক লুট, প্রশ্নপত্র ফাঁস, যানজট, গুম-খুন-কোনো কিছুরই পরোয়া করবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকলে ক্ষমতা হারানো এবং অপকর্মের জন্য বিচারের ভয় থাকে। তখন সরকার কিছুটা হলেও জনগণকে না চটানোর চেষ্টা করে।

এ রকম একটি নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অবশ্যই বিএনপির অংশগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিচার ও শাস্তির মধ্য দিয়ে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না গেলে সরকারের কিছু করার নেই। 

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মনে হয় এ রকম: রায়টা তো আমি দিইনি। রায় দিয়েছেন আদালত। আর মামলা করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার দুদক। তিনি এই ধারণা দিতে চেয়েছেন যে তাঁর সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে চলা বিচারটি হয়েছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে। এই বিচারের কারণে ভবিষ্যতে একতরফা নির্বাচন হলে এতে তাঁর সরকারের কোনো দায় নেই। তিনি হয়তো চাইছেন বিষয়টি এভাবেই দেখুক সবাই।

২. 

বাস্তবতা আসলে ভিন্ন। বাস্তবতা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে মামলা বা বিচার হলে কখনো তা বিশ্বাস করেন না এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশে তো নয়ই; এমনকি তুলনামূলকভাবে অনেকাংশে স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দেশ ভারতেও এটি হয় না। বিচারিক আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে বা মামলার দীর্ঘস্থায়ী কালিমা ললাটে নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার ঘটনাও এসব অঞ্চলে ঘটেছে বেশ কয়েকবার। কারণ, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে বিচার এসব দেশে কতটা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য করা হয়, কতটা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করার জন্য, তা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ থেকে যায়।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের পরও তা-ই হয়েছে। বিএনপি ও তার সঙ্গীরা এসব প্রশ্ন তুলছে। তুলছে এমনকি রাজনৈতিকভাবে তুলনামূলকভাবে আওয়ামী লীগঘেঁষা বাম দলগুলোও। খালেদা জিয়ার রায়ের পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ ও বাম মোর্চার যুক্ত বিবৃতি এর প্রমাণ। বিবৃতিতে তারা রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে সব দুর্নীতিবাজের শাস্তি চেয়েছে। তারা বলেছে: ‘জনসম্মতিহীন অগণতান্ত্রিক সরকারের স্বেচ্ছাচারী শাসন, ক্ষমতার প্রবল দাপট, বিপুল লুটপাটের অভিযোগ ইত্যাদির কোনো সুরাহা না করে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের অতি উৎসাহের কারণে দেশবাসীর মধ্যে এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে।’

দেশবাসীর মধ্যে সত্যি সত্যি এমন ধারণা থাকতে পারে। থাকলে তাদের দোষও দেওয়া যাবে না। আমাদের সবার মনে থাকার কথা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টসহ আরও কতগুলো দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা হয়েছিল আরও বেশি। তিনি ক্ষমতায় আসার পর প্রধানত বাদীপক্ষের (যেমন দুদক) দুর্বলতার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাগুলো উচ্চ আদালতে একের পর এক খারিজ হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে বাদী কর্তৃক মামলা প্রত্যাহারের ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বেড়েছে, কোনো কোনো দুর্নীতি মামলার নতুন বা অধিকতর তদন্ত হয়েছে।

সমস্যা এখানেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেমন হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে স্বয়ং তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তকারীরা ও আইনজীবীরা একই মাত্রার স্বাধীনতা ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেছেন-এটি বিশ্বাস করা খুবই মুশকিল যে কারও পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, সরকারের সঙ্গে লতায়-পাতায় সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিদের (লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার, হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ও শেয়ার মার্কেট লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের) বিরুদ্ধেও দুদককে আমরা লেশমাত্র ভূমিকা পালন করতে দেখি না, যা দেখেছি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তাদের অতি উত্সাহী কর্মকাণ্ডে।

দুদক বা পুলিশ যে-ই করুক, মামলার তদন্ত আর সরকারি আইনজীবীদের আইনি লড়াই মামলার ভাগ্য গড়ে দেয় অনেকাংশে। বাকি থাকেন আদালত। এটি ঠিক যে এ দেশে বহুবার আদালত তাঁর স্বাধীন সত্তা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর মামলাগুলোতে এখন তা আর কতটা করা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর মামলার রায়কে কেন্দ্র করে মাত্র কয়েক মাস আগে স্বয়ং প্রধান বিচারপতি দেশ ও চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গত বছর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটি মামলা চলাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের লোকজন নানা বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিচারিক আদালতের রায় তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে মেলেনি বলে সেই বিচারককে তিরস্কৃত হতে হয়েছিল, রায় দেওয়ার পর তাঁকেও দেশত্যাগ করতে হয়েছিল।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি রাজনৈতিকভাবে আরও স্পর্শকাতর। এই মামলা চলাকালীন বহুবার ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন’ এই বক্তব্য দিয়ে সরকারের লোকজন তাঁদের পছন্দের বা প্রত্যাশিত রায় কী তা স্পষ্ট করেই বলেছেন। এমন এক প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার মামলায় বিচারিক আদালত কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। এমন এক প্রেক্ষাপট আপিল আদালতের স্বাধীনতার জন্যও অনুকূল নয়।

৩. 

খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের কপি মাত্র তাঁর আইনজীবীরা হাতে পেয়েছেন। ইতিমধ্যে এই রায়ের কিছু দিক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠছে। উচ্চ আদালতে আপিলের সময় এই রায়ের আরও চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে।

এই আপিল নিষ্পত্তিতে খালেদা জিয়ার সাজা নিশ্চিত হতে পারে, আবার তিনি খালাসও পেতে পারেন। আপিল নিষ্পত্তির আগেই তিনি জামিন লাভ করতে পারেন এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগও পেতে পারেন। সিদ্ধান্তগুলো যা-ই হোক না কেন, খালেদা জিয়ার মামলায় আপিল প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে সুবিচার হয়েছে-এটি মানুষের কাছে প্রতিভাত হওয়া প্রয়োজন। কারণ, ন্যায়বিচারের দর্শন হচ্ছে ন্যায়বিচার শুধু করলে হবে না, এটি যে ন্যায়বিচার হয়েছে তা দৃশ্যমান ও সন্দেহাতীতভাবে দেখানোর প্রয়োজনও রয়েছে।

খালেদা জিয়ার বিচারের ক্ষেত্রে এই প্রয়োজন আরও বেশি মামলাটির রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে। এই বিচার যদি শেষ পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধই থাকে, তাহলে বিএনপির অন্য নেতাদেরও প্রশ্নবিদ্ধভাবে নির্বাচনের আগে সাজা দেওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
এ ধরনের আশঙ্কা না থাকলে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের কথা নয়।

আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • Courtesy: Prothom Alo/22-02-2018



খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় ‘জরুরি অবস্থা’



বেগম খালেদা জিয়ার জীবন থেকে জরুরি অবস্থা যেন ফুরাচ্ছেই না। জরুরি অবস্থার সময় একবার জেলে গেলেন, দ্বিতীয়বার গেলেন ৫ জানুয়ারির সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকারের আমলে, ২০১৮ সালে। মামলাটাও আবার সেই জরুরি আমলেই করা। কিন্তু ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরের আটকের চাইতে এখনকার পরিস্থিতি আলাদা। সেবার দেশের প্রধান দুই নেত্রীই বন্দী হয়েছিলেন, এখন খালেদা জিয়া একাই দণ্ড ভোগ করছেন। নাজিমুদ্দিন রোডের নির্জন কারাগারের নিঃসঙ্গ দণ্ডিত এখন একজনই।

জরুরি অবস্থার সময়ের রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রথমে শিথিল ও পরে বাতিল হলেও তার সুফল বিএনপির ঘরে আসেনি। ২০০৯ সাল থেকে মহাজোট সরকার বিএনপিকে যেভাবে হামলা-গ্রেপ্তার-নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাতে বিএনপি যেন এখনো ‘জরুরি অবস্থা’র মধ্যেই আটকে আছে। সেবার খালেদা জিয়াকে কারাগারে কাটাতে হয়েছিল ৩৭২ দিন। এবার তা কত হবে তার দিনগণনা শুরু হয়েছে কেবল।

শুধু খালেদা জিয়া বা বিএনপির হাজারো নেতা–কর্মীই নয়, দলটির সমর্থকদের জীবনেও এটা এক জরুরি অবস্থার মতোই। স্বাধীন রাজনৈতিক কার্যকলাপ তাঁরা করতে পারছেন না, জেল-জুলুম-হুলিয়ার খাঁড়া তাঁদের জীবনের ওপর। একেকটি ঘটনা ঘটে আর কয়েক শ বা হাজার বিএনপি কর্মী আটক হন। খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের ঘটনায়ও প্রায় পাঁচ হাজার নেতা–কর্মী আটক হয়েছেন। যদি দেশের অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষও দলটির সমর্থক হন, তাহলে বলতে হবে বিপুলসংখ্যক মানুষের রাজনৈতিক অধিকার জরুরি অবস্থার সময়ের মতোই খর্ব হচ্ছে। কার্যত না হলেও মানসিকভাবে তাঁরা এখনো জরুরি অবস্থার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছেন।

তাঁরাই কি শুধু আলাদা করে ভুক্তভোগী? যেকোনো প্রতিবাদই এখন হুমকিতে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথমে ৫৭ ধারা, তারপর ৩২ ধারার পর সাংবাদিক নিপীড়নের আইন বানানো ও বিভিন্নভাবে হুমকিতে রাখার ঘটনা বলে দেয়, রাজনীতি, সমাবেশ এবং মতপ্রকাশের অধিকার সবার জন্য খোলা নেই। যঁারাই বাধা পাবেন, ভয় পাবেন, স্বাধীন নাগরিকের জীবন পাবেন না, তাঁরাই ২০০৭-০৮ সালের জরুরি অবস্থার জ্বালা বর্তমানেও বোধ করবেন।

বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা নতুনও নয়, হয়তো শেষও নয়। সাংবিধানিক ধারা-উপধারায় লিখিত সংজ্ঞা দিয়ে একে বোঝা যাবে না। বরং সেসব সংজ্ঞাকে একটু প্রসারিত করে নিলে দেখা যায়, এক স্থায়ী জরুরি অবস্থাই যেন বাংলাদেশের জন্ম থেকে বিরাজ করছে। কেবল রাজনৈতিক দুর্যোগই নয়, সামাজিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণের বড় অংশের জীবন সর্বদাই ‘বিপদের সম্মুখীন’। আর জনগণের অজুহাতই হয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের প্রধান সরকারি যুক্তি।

সংবিধানের ১৪১ গ(১) উপধারা অনুসারে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির সময় বলা হয়েছিল, ‘...দেশে এখন এক জরুরি অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন।’ একজন বিদেশি কূটনীতিক সে সময় দাবি করেছিলেন, ‘আমাদের উন্নয়নকাজের স্বার্থ রক্ষায় এটাই ছিল একমাত্র পথ’ (Restoring Democracy in Bangladesh, Asia Report, ICG, 28 Apr 2008)। অনেকে তা মেনেও নিয়েছিলেন। বর্তমানেও বিরোধী পক্ষকে দমনের পক্ষে সেই উন্নয়নের যুক্তিও কেউ কেউ মানতে রাজি।

যাহোক, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থা জারির কারণ হিসেবে যে অভ্যন্তরীণ গোলযোগকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, বারবার সেই গোলযোগের ঝুঁকির মধ্যেই তো বাংলাদেশ পড়ছে! ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরের বড় একটা সময় সেই গোলযোগ চলেছিল। এখনো জাতীয় নির্বাচনের দিকে যত এগোচ্ছে বাংলাদেশ, ততই সে রকম গোলযোগের ভয় পাকছে।

বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং অন্যদের অনেকেই প্রায় বিনা ভোটে ‘নির্বাচিত’ বলে ঘোষিত হওয়ায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বশীলতার সংস্কৃতির বড় রকমের ধাক্কা খায়। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার যুক্তি দেওয়া হলেও কার্যত এটা হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতার ধারাবাহিকতা। এভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার একমাত্র উপায় হলো বলপ্রয়োগ। যেকোনো জরুরি অবস্থায় রাষ্ট্র প্রধানত আইনের শাসনের বদলে বলপ্রয়োগের হাতিয়ারের ওপরই বেশি নির্ভরশীল থাকে।

গণতন্ত্রে বলপ্রয়োগের হাতটা আইনের দস্তানায় ঢাকা থাকে, পর্দার আড়ালে থাকে; সামনে থাকে আলোচনা-সমঝোতার হাত। নির্বাচন এ রকম এক সমঝোতা, যেখানে বিনা বলপ্রয়োগে ক্ষমতার পালাবদল হবে, সরকারের নবায়ন হবে। যার সমর্থন বেশি তাকে বলপ্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় না। কিন্তু যে শাসন সমর্থনের চাইতে দাপটের ওপর বেশি নির্ভরশীল, তাকে বলে সমর্থনহীন দাপট (ডমিন্যান্স উইদাউট হেজিমনি)। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে আমরা এ রকম মান্যতাহীন (হেজিমনিহীন) দাপটের (ডমিন্যান্স) শাসনেই ছিলাম।

প্রশ্ন হলো সমঝোতার সুযোগ যখন দুই পক্ষেরই হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, তখন আবারও কি আমরা বলপ্রয়োগের খেলায় প্রবেশ করলাম? দৃশ্যত, বিএনপি সরকারের নতুন পর্যায়ের বলপ্রয়োগকে এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই মোকাবিলার কৌশল নিয়েছে। গণহারে গ্রেপ্তার-নির্যাতনের মধ্যে এই ‘শান্তি’ আসলে কতটা টেকসই হবে? যে নামেই ডাকি গোলাপ সুবাস ছড়াবেই, যে নামেই ডাকি গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন লাগবেই। আর তার জন্য চাই এমন পরিবেশ, যাতে কারও পিঠই একেবারে দেয়ালে গিয়ে না ঠেকে। নড়াচড়ার কিছুটা জায়গা, আলোচনার কিছুটা পরিবেশ লাগবেই।

শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নয়, রাষ্ট্রের সবগুলো স্তম্ভের মধ্যে এমন গণতান্ত্রিক লেনদেন ও আলোচনা আপনা–আপনি হবে না। যখন সবাই বুঝবেন যে মীমাংসা করে নেওয়াই মঙ্গলজনক, তখনই সেটা হবে। বিগত জরুরি অবস্থার শেষ সময়ে আমরা দেখেছি অনেকটা বাধ্য হয়েই রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক পক্ষ দেশে ও বিদেশে আলোচনায় বসেছিলেন। সেই সমঝোতার ফল ছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন। সেই সমঝোতার ফল যদি ভালো হয়, আবার কেন সে রকম কিছু হতে পারবে না?

দুই নেত্রীর জেলে থাকার অবস্থাতেই কিন্তু সেই সমঝোতা হতে পেরেছিল। সুতরাং, খালেদা জিয়া অন্তরীণ বা জেলে থাকা অবস্থাতেও তাঁর বা তাঁর দলের সঙ্গে আলোচনার পথ বন্ধ করা ঠিক হবে না।

  • Courtesy: ProthomAlo Feb 21, 2018




A knee-jerk reaction

Another new exam system!



The logic of the education ministry taking one hasty decision after another in a spate of few weeks to stop the leakage of SSC question papers beats us.

Not very long ago in these columns we had counselled against taking any hasty decision to address a problem that has taken an epidemic proportion. The latest version of the leakage has been value-added by adding the answers to the questions. That the question papers come with answers only shows that all those hurried measures, including turning off of all internet services 20 minutes before exams, were not only ill-advised but also ineffective.

It seems that we have been completely helpless in pinpointing the real culprits even if the stages of the leaks have been identified. If such a matter of a few taking advantage of technology cannot be identified, how do we expect more serious matters related to our direct security to be combatted effectively?

The education ministry cannot afford to be reactive to this problem, and must go deep into the matter. All education systems are exam-based and every country has its own system of taking exams. The system should evolve, of course, to suit our psyche keeping in mind the negative proclivities of a few and should be able to realistically assess the quality of the education system and the level of knowledge of the examinees. Apparently, the current education system introduced over the last decade is flawed. The latest decision to do away with MCQ from next year is proof of that.

We would urge the government to shun knee-jerk reactions. We submit that the exact system of exam is not for bureaucrats but be left to educationists and experts to determine. The sooner that is done the better. 

  • Courtesy: The Daily Star Feb 22, 2018

Settle rule on Marma sisters in 6 weeks - Supreme Court



The Supreme Court today asked the High Court to hear and settle off the rule by six weeks regarding the confinement of two Marma sisters -- one of whom was allegedly raped and another assaulted by security forces last month.

The Marma sisters - aged 18 and 13- were admitted to the Rangamati Sadar Hospital on January 22 after one was allegedly raped and the other sexually assaulted in their village Bilaichari.

Today, the four-member bench of the appellate division headed by Chief Justice Syed Mahmud Hossain, passed the order during hearing a petition filed by rights activists Sultana Kamal seeking stay on a High Court order.

Following a writ petition, the High Court bench led by Justice Naima Haider on February 13 ordered the government and Rangamati Sadar Hospital to hand over the girls to their father.

The High Court also issued a rule asking the authorities to explain why the confinement of the girls should not be declared illegal.

On February 15, the two Marma sisters were handed over to their parents in presence of police.

The same day Sultana Kamal filed a petition with the Supreme Court seeking stay on the High Court order.

In the petition, she claimed that the girls wanted to go under the custody of Chakma Circle Chief Raja Debashish Roy, who would ensure their security.

The elder sister has recently sent a letter to the civil surgeon of Rangamati to this end and a writ petition over this issue has been pending with the High Court, Sultana said in the petition.

Today, the barrister Rokanuddin Mahmud, the lawyer for the writ petitioner told the apex court that the two sisters are now under the custody of their parents. 

  • Courtesy: The Daily Star Feb 22, 2018

Govt puts democracy into grave - Mirza Alamgir



Bangladesh Nationalist Party secretary general Mirza Fakhrul Islam Alamgir on Wednesday said the government has put democracy into grave by snatching people's all rights.

‘We on behalf of our Chairperson Khaleda Zia , paid tributes to language martyrs .We are unfortunate that we are observing the day at a time when democracy was put into grave destroying all democratic institutions and snatching people's all rights, including the voting one,’  he said while talking to reporters after placing wreath at the Central Shaeed Minar.

BNP central leaders, led by Mirza Fakhrul Islam Alamgir and its standing committee member Khandaker Mosharref Hossain, went to the Central Shaheed Minar around 11:30 am to pay tributes to the language martyrs.

Fakhrul demanded immediately release of Khaleda Zia from jail. He said they are observing the day with a broken heart and anger as their Chairperson was sent to jail in a graft case.

The BNP leader renewed his party's call to people for forging a national unity to restore democracy. ‘We hope we will be able to wage a movement uniting people to free democracy and our leader. We must wage a mass movement to oust the government and defeat it,’ he said.

Fakhrul said they will continue to put their efforts for forging a national unity until it is not created and the fascist government's fall is ensured.

  • Courtesy: new Age Feb 21, 2018

পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে ধর্ষণ


  • স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ কিশোরীর পরিবারের
  • মামলায় পুলিশ কৌশলে ওই নেতার নাম বাদ দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে        



নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে যুবলীগের এক স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই নেতাসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ মামলার এজাহার থেকে তাঁকে (যুবলীগ নেতা) বাদ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরীর স্বজনেরা। এদিকে ধর্ষণের ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।

অভিযোগ ওঠা যুবলীগ নেতার নাম মজিবুর রহমান ওরফে শরীফ। তিনি উপজেলার নোয়াখোলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই কিশোরী তার পরিবারের সঙ্গে নোয়াখোলা ইউনিয়নের এয়াছিন বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকে। ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ পরিচয়ে পাঁচ-ছয়জন যুবক ওই বাড়িতে ঢোকেন। তাঁরা ওই ঘর থেকে ওই কিশোরীকে তুলে নিয়ে যান। পরে ওই কিশোরীকে পাশের বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে বাড়ির সামনে ফেলে যান। 

কিশোরীর মা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরের দিন ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নোয়াখোলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ওরফে শরীফসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। কিন্তু তিন দিন পর শরীফের নাম বাদ দিয়ে দুজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি রেকর্ড করে পুলিশ। এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। এ অবস্থায় শরীফ ও আসামিরা তাঁদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতেও তাঁদের বাড়ির সামনে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

কিশোরীর বাবা বলেন, শরীফ ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় এলাকায় কেউ তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। এ ঘটনায় মেয়ে ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন।

তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন যুবলীগ নেতা মজিবুর রহমান শরীফ। গতকাল বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, তিনি ধর্ষণ বা হুমকি দেওয়া কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। স্থানীয়ভাবে যুবলীগের দুটি পক্ষ রয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় তাঁকে জড়ানোর পেছনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাত থাকতে পারে বলে তিনি সন্দেহ করছেন। 

উপজেলা যুবলীগের একাংশের আহ্বায়ক ও চাটখিল পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ উল্যাহ পাটোয়ারী বলেন, তদন্তে শরীফ যদি অপরাধী প্রমাণ হন, তাঁর বিচার হবে। যদিও একটি মহল এই মামলায় শরীফকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল আনোয়ার বলেন, ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ নিয়ে কিশোরী ও তার মা ৮ ফেব্রুয়ারি নয়, ১০ ফেব্রুয়ারি থানায় আসেন। ওই দিনই তাঁদের দেওয়া অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। বাদীর অভিযোগে যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। পরের দিন ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে, তবে এখনও প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ওসি আরও বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে শরীফের নাম এলে তাঁকেও আসামি করা হবে বলে জানান ওসি।

  • Courtesy: ProthomAlo Feb 22, 2018

Tuesday, February 20, 2018

প্রধানমন্ত্রীর এতিম ফান্ড ছিলই না, তাহলে টাকা তছরুপ হবে কী করে?

শামসুল আলম


জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত একটি বানোয়াট মামলার রায়ে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন কারান্তরীণ। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য পদাধিকারীরা জোরছে আওয়াজ করে বেড়াচ্ছেন- ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন, তাই তার জেল হয়েছে।’ বিনা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদ অধিবেশনে এমন কথাও বলছেন, ‘তাঁর রাজনীতি শেষ করে দেয়া হয়েছে, তিনি আর কখনও নির্বাচন করতে পারবেন না, ক্ষমতায় আসতে পারবেন না!’ ৭৩ বছর বয়স্ক একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দু’শ বছরের পুরাতন এক নির্জন এলাকার পরিত্যাক্ত বাড়িতে সলিডারি কনফাইনমেন্টে রাখার পরেও কত প্রতিহিংসা-জিঘাংসার উৎকট রূপ দেখল জাতি! এরা নাকি রাজনীতিবিদ! খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেছেন, কী করেননি সে প্রশ্নের উত্তরে পরে আসছি। তবে সংসদে যে কথা বলা হয়েছে ‘খালেদা জিয়ার রাজনীতি শেষ করে দেয়া হয়েছে’, এটাই বোধ হয় আসল টার্গেট। সত্য উদঘাটন বা ন্যায় বিচার করা নয়, বর্ণিত লক্ষ্য অর্জন মূল উদ্দেশ্য। 

প্রথমেই নিজের পরিচয় দিয়ে নিই। যে সময়কার ঘটনা ১৯৯১ সালে ৯ জুন, আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সহকারী সচিব পদে কর্মরত। ঐ অফিসে তখন মাত্র ৮ জন সরকারি কর্মকর্তা ছিলাম আমরা। ভারপ্রাপ্ত সচিব কামাল সিদ্দিকী, সাবিহউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর পিএস-১, উপসচিব ম. সাফায়েত আলী (মরহুম), এম এ মোমেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস, তাজুল ইসলাম তথ্য অফিসার, তিনজন সহকারী সচিব আবদুজ জাহের (৮২ ব্যাচ, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব), আমি শামসুল আলম, এবং আলী আহমেদ। আমাদের অফিস ছিল বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বসতেন চার তলার অফিস কক্ষে (সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টের অফিস), আমরা বসতাম দোতলায়।


তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান (মরহুম) কুয়েতের আমিরের নিকট থেকে একটি ফান্ড আনেন শহীদ জিয়ার নামে এতিমখানা বানানোর উদ্দেশ্যে। কুয়েতের আমিরের সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের হিসাব হতে প্রেরিত ১২ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলারের ডিডিতে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ লেখা ছিল বটে, কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ সরকারের ঐরূপ কোনো ফান্ড ছিল না। ওটা একটা বেসরকারি অনুদান হওয়ার পরেও প্রেরকের ভুলের কারণে ঐরূপ হয়। ভারপ্রাপ্ত সচিব কামাল সিদ্দিকীকে ঐ ডিডি দেয়া হলে তিনি তা ভাঙানোর নিমিত্ত সোনালী ব্যাংক রমনা শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলেন। পরে ঐ টাকা (৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা) তুলে সেভিংস/এসটিডি/এফডিআর হিসাব খোলা হয়। ১৯৯৩ সালে সুদসহ তুলে পুরো টাকাটা ২ কোটি ৩৩ লাখ করে সমান দু’ভাগ করে এতিমখানা নির্মাণের নিমিত্ত বাগেরহাট এবং বগুড়ায় দুটি ট্রাস্টকে প্রদান করা হয়। এই চেক দু’টিতে সই করেন একাউন্ট হোল্ডার কামাল সিদ্দিকী। এর আগে দু’টি ট্রাস্ট গঠন ও রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। বাগেরহাটের জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সেটেলার হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এবং বগুড়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের সেটেলার হন তারেক রহমান। বাগেরহাটে মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্টের নামে এতিমখানা নির্মাণ করে যথারীতি পরিচালনা করেন। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা নূর আহমেদ ১১/৬/২০০৮ তারিখে জমা দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ট্রাস্টটি বেসরকারি ট্রাস্ট, এবং ‘বর্ণিত ট্রাস্টের নামে একটি এতিমখানা স্থাপন করা হয়েছে, যা চলমান রয়েছে বিধায় প্রাথমিক অনুসন্ধানে উক্ত ট্রাস্টের কোনো অর্থ আত্মসাতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে দুদকের মামলার অভিযোগকারী এবং তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদও তা মেনে নেন। ফলে বাগেরহাটের এই খন্ড নিয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি বা মামলাও হয়নি (এটা মাথায় রাখবেন)।

এবারে বগুড়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নিয়ে আলোচনা। বগুড়ার জন্য বরাদ্দ করা ২.৩৩ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ট্রাস্টের নামে বগুড়াতে ২.৭৯ একর ধানি জমি ক্রয় করা হয়। বাদ বাকি সব টাকা ট্রাস্টের একাউন্টে আছে, তা স্বীকার করেছেন মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ। ট্রাস্টির সদস্যদের কর্মব্যস্ততার কারণে এই টাকা ব্যবহার করে এতিমখানা নির্মাণ করা হয়নি সত্য, তবে তারেক রহমান এতিমখানার ঐ টাকাকে উচ্চ মুনাফাধারী বিভিন্ন ব্যাংকে রেখে তা তিন গুণ বর্ধিত করেন। ট্রাস্টের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের পরিচিত সলিমুল হক কামালকে দায়িত্ব দেন ঐ টাকা ব্যাংকে রাখার জন্য। কামাল সাহেব তার নিজের নামে এবং তার পরিচিত গিয়াসউদ্দিন ও সৈয়দ আহাম্মদ নামে এফডিআর করেন পরে লাভসহ ভাঙ্গিয়ে সম্পূর্ণ টাকা ট্রাস্টের একাউন্টে জমা করা হয়।

২০০৬ সালে এতিমখানার জন্য ঢাকার কাছে আশুলিয়ায় জমি কেনার উদ্দেশ্যে জনৈক শরফুদ্দিনের সাথে বায়না করে ২টি এফডিআর মূলে অর্থ দেয়া হয়, যাতে মেয়াদান্তে ২.৫০ কোটি পাওয়ার কথা। কিন্তু ১/১১র পরে দেশে ধরপাকড় ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে এবং পরে তারেক রহমান গ্রেফতার হলে ঐ জমির রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হয়নি। ফলে শরফুদ্দিন উক্ত এফডিআর ভেঙে ২.১০ কোটি টাকা ট্রাস্টকে ফেরৎ দান করেন। মূলত এটাই হলো মামলার ২.১০ কোটি টাকার উৎস। বাস্তবে ট্রাস্টের কাছে এখনও ৬ কোটির বেশি টাকা আছে ব্যাংকে। এখানে দুর্নীতির মামলা হলে ৬ কোটির জন্যই হওয়ার কথা। আর কুয়েতি অনুদান সংক্রান্তে মামলা হলে ১২.৫৫ লাখ ডলার বা ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকার উপরে হওয়ার কথা। এর একটিও হয়নি। অর্থাৎ মামলাটি বস্তুনিষ্ট হয়নি, বরং বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়েছে!
মামলার শুরুতে অভিযোগ আনা হয় যে, অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। পরে আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণাদিতে যখন প্রমাণ হয় যে, কোনো টাকা কেউ আত্মসাৎ করেনি, তারপরে সরকারি পক্ষ সেটি ঘুরিয়ে দেয় অন্য দিকে। সরকারি তহবিলের অর্থ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাইভেট ট্রাস্টকে দেয়ার অভিযোগ আনা হয় এবং সেই কারণ দেখিয়ে বানোয়াট কাগজপত্র ও সাক্ষী দিয়ে ধারণার বশবর্তী হয়ে বেগম জিয়াকে সাজা দেয়া হয়।

‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ ছিলনা 

প্রকৃতপক্ষে, ১৯৯১ সালে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম ফান্ড’ নামে সরকারি কোনো তহবিল ছিল না, এখনও নাই। ১৯৯১ সালের জুন মাসে দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্বাহী ক্ষমতা ছিল না। তাই ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বরং এমন কোনো তহবিল সৃজন করতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (এতিমখানা এই মন্ত্রণালয়াধীন) অনাপত্তি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন দেয়ার আবশ্যকতা ছিল। ঐভাবে কোনো তহবিল সৃষ্টি করা হয়েছিল কি? আদতে তেমন কিছু ঘটেনি। ফলে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে কোনো সরকারি তহবিল ছিল না। ফলে ঐরূপ কোনো ফান্ডের টাকা আত্মসাত বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকা সরানো স্রেফ কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ ছাড়া আর কিছু নয়।

কেউ যদি অভিযোগ করে, আমার পকেট থেকে কেউ টাকা চুরি করেছে। পরে খুঁজে দেখা গেলো তার কোনো পকেটই নেই। তাহলে চুরির প্রশ্ন আসবে কী করে? এখানেও তেমন ঘটনা ঘটেছিল। প্রধানমন্ত্রীর এতিম ফান্ড ছিলই না, তাহলে টাকা তছরুপ হবে কী করে? ঐ ফান্ড কে সৃষ্টি করলো? এরকম কিছু গঠন হয়ে থাকলে সরকারি গেজেট কোথায়? অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি কোথায়? রাষ্ট্রপতির অনুমোদন কোথায়? সরকারি ফান্ড হলে প্রতিবছর তার অডিট হওয়ার কথা। এমন কিছু হয়েছিল কি? কোনো নিরীক্ষা হয়েছিল কি? হয়ে থাকলে সেই অডিট রিপোর্ট কই? আছে কি এমন কিছু? কিছুই নেই। তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ নিজেও তা স্বীকার করেছেন

  • লেখক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।