Search

Thursday, April 12, 2018

কোটা সংস্কার আন্দোলন স্থগিত


সরকারি চাকিরতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছেন  সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে  দুপুরে একটি আনন্দ মিছিল করার কথাও রয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। তার বক্তব্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে চলমান আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

বুধবার রাতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা সবাই এ সিদ্ধান্ত নেন জানিয়ে হাসান আল মামুন বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগপর্যন্ত আমরা আন্দোলন স্থগিত রাখব।

তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন জারি করার পর যদি বুঝি আমাদের ন্যায্য দাবি প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হয়নি, তখন আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে একটি চিঠি দেব। যারা কোটার প্রাপ্য দাবিদার, তারা কোটা পাক, এটি আমরাও চাই। যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং প্রতিবন্ধী কোটার দাবিদারদের কোটা দিতে ওই চিঠিতে আহ্বান জানাব। তবে সেটি যেন প্রাপ্য পরিমাণযোগ্য হয়। এর পর তারা ছয় দফা দাবি জানান।

আন্দোলনকারীদের প্রথম দাবি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা গেজেট হিসেবে প্রকাশ করে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, সারাদেশে গ্রেফতারকৃত আন্দোলনকারীদের নিঃশর্ত মুক্তি। আন্দোলনে ‘পুলিশি নির্যাতনের’ শিকার শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে দ্রুত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের দাবি রয়েছে তৃতীয় দফায়। চতুর্থ দাবি হলো, পুলিশ ও ঢাবি প্রশাসনের দায়ের করা পাঁচটি অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। পঞ্চম দাবিতে রয়েছে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও নেতাদের পরবর্তীতে হয়রানি যাতে না করা হয়। না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ফের আন্দোলন হবে। ষষ্ঠ দফায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীর যৌক্তির দাবিতে সহমত পোষণ করা সব শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুক্ত আহ্বায়ক নূরুল হক নূর, আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, রাশেদ থান ও ফারুক হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন। প্রেস রিলিজেও তাদের চারজনের স্বাক্ষর রয়েছে।

  • Courtesy: আমাদের সময়.কম/Apr 12, 2018

ছাত্রদের আন্দোলনকে এখন বিতর্কিত করারও চেষ্টা করা হচ্ছে

মাহমুদুর রহমান মান্না


নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ভিসি’র বাড়িতে হামলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের আন্দোলনকে এখন বিতর্কিত করারও চেষ্টা করা হচ্ছে। যৌক্তিক প্রশ্ন আসতেই পারে, দিনভর আন্দোলনের মধ্যে ক্যাম্পাসে অসংখ্য পুলিশ থাকার পরও কেন এমন ভাঙচুর হতে পারলো? বুধবার এক সাক্ষাৎকারে মান্না এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কোটা-সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্রদের যে আন্দোলন চলছে- সেটা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আছে। পুলিশকে ফুল দিয়ে তারা শান্তির বার্তা রেখেই আন্দোলনে নেমেছিলো। কিন্তু সেদিনই পুলিশ আর ছাত্রলীগের যুগপৎ আক্রমণ প্রমাণ করেছে সরকার ন্যায্য দাবির পক্ষে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও করতে দিতে চায় না।

  • Courtesy: আমাদের সময়.কম /Apr 11, 2018

Banks' NPL a curse for sustainable growth

ICCB calls for further efforts to combat the menace



The International Chamber of Commerce-Bangladesh has called growing non-performing loans (NPL) a curse for sustainable growth, urging the government to do more to combat the menace.

 The ICCB said until now, only limited action has been taken to penalise defaulters, curtail risks and strengthen bank management. “To tackle the sector's deep-rooted problems of corruption and poor risk practices, further efforts are needed,” according to an editorial in the current news bulletin of the chamber.

It said now that Bangladesh was on course to become a developing country, all efforts should be made to strengthen the banking sector, which is the backbone of the economy.

The chamber, in its bulletin for the January-March period, said the best way to meet the requirements and challenges of a developing country was to strengthen the capital and liquidity ratio of banks.

The NPL is an issue that is impacting the capital adequacy of the sector.

In Bangladesh, six state-owned commercial banks account for about a quarter of the total banking sector assets. They are supplemented by two state-owned specialised banks, 40 private commercial banks and nine foreign banks.

According to a Bangladesh Bank study covering 2012 to 2016, the average ratio of NPLs to total loans was about 27.10 percent.

It was 4.9 percent for private commercial banks, 6.5 percent for foreign banks and 22.56 percent for state banks.

The percentage of the classified loan to the total outstanding stood at 10.1 percent in June 2016, with private commercial banks accounting for 5.4 percent, state banks 25.7 percent and foreign banks 8.3 percent.

Until September 2017, the total banking sector loan amounted to Tk 752,730 crore, of which Tk 80,307 crore, or 10.67 percent, was bad debt.

If the restructured loans were included, the NPL goes up to 17 percent of the outstanding loans.

At the end of September, the state banks had a combined bad debt of Tk 38,517 crore, private banks Tk 33,973 crore, and foreign banks Tk 2,298 crore.

“Naturally, these high NPLs have affected the profitability and the overall capital to risk-weighted assets ratio,” said the chamber.

The ICCB said bad loans are routinely restructured to permit further lending to the same borrowers.

An average bank rescheduled bad loans of Tk 10,910 crore annually in 2010-14, according to a study of the Bangladesh Institute of Bank Management.

Despite the regular injection of funds, state-run banks have not been able to improve their NPL positions, said the editorial. 

The government has earmarked Tk 2,000 crore in the current budget to recapitalise the state-owned banks.

  •  Courtesy: The Daily Star/Apr 12, 2018


Save Sundarbans from torment

Says rights activist Sultana Kamal; greens criticise govt decision of allowing 190 industrial units within 10km of the forest



Green activists yesterday demanded that the government keep all kinds of industrial and haphazard human activities away from the ecologically critical area (ECA) of the Sundarbans.

Activities such as cutting woods, poaching and building establishments inside the critical area should not be allowed, they added.

Bangladesh declared the 10-kilometre periphery of the mangrove forest as the ECA in 1999, a couple of years after the Unesco listed the Sundarbans as a natural world heritage site.

As per Bangladesh Environment Conservation Act 1995 (amended in 2010), no one is allowed to set up any factory in the ECA.

The ECA is the shield and protector of the Sundarbans, they said at a press conference. The National Committee to Save the Sundarbans and Bangladesh Poribesh Andolon (Bapa) organised it at Dhaka Reporters' Unity.

However, going against its own policy, the government over the last few years permitted setting up of 190 industrial and commercial units in the ECA, which, according to experts, poses a serious threat to the biodiversity of the world's largest mangrove forest.

Twenty-four of those units belong to the “red category”, meaning those are extremely harmful to the fragile biodiversity of the Sundarbans, said rights activist Sultana Kamal.

The worrisome point is that recently an amendment has been made in the related law to legitimise those “red category” units and declare them “green” or “environment friendly”, she said, reading a written statement.

“Changing scientific decisions… through such an administrative order is a rare incident,” she added. She demanded saving the Sundarbans from manmade “torment”.

“We are stunned and concerned about such an arbitrary decision,” she said. After the changes, these 24 “red category” units will not have to show any Environmental Impact Assessment (EIA), she added.

EIA is a comprehensive assessment method of analysing environmental issues that are primarily or secondarily related to the planning, implementation, operation and maintenance stages of a project for sustainable development. EIA analyses the project from the environmental point of view.

Sultana said those industries will not have to explain what measures they have taken to control pollution or inform the authorities about waste management.

She demanded a logical explanation from the government regarding the changes.

Responding to a query, she said green activists will continue their movement to protect the world's largest mangrove forest and to stop building ecologically harmful establishments such as the Rampal Power Plant near it.

Sultana, also convener of the National Committee to Save the Sundarbans, urged all conscious citizens to join the movement.

Bapa General Secretary Abdul Matin said there were also other categories in between the “red” and “green” ones. However, the government declared the “red category” industrial units “green” overlooking other possibilities, he added.

Under the ECA and ECR (environment conservation rules), for the purpose of issuance of Environmental Clearance Certificate, the industrial units and projects have been classified under four categories: Green, Orange A, Orange B and Red.

The category is based on the location and its impact on the environment.

Save the Sundarbans Foundation President Sheikh Faridul Islam said the government should work as per law. It should not give any privilege to any section.

Bapa Joint Secretary Sharif Jamil said the process of turning “red category” industries into “green” ones is a “policy-level corruption”.

  • Courtesy: The Daily Star Apr/ 12, 2018

অমানবিক আচরণ

মিরপুরে স্কুলমাঠে ক্লাবঘর কেন?



মিরপুরের বাউনিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে ক্লাবঘর নির্মাণ করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত শৌচাগারগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এর ফলে সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাড়াও ৩০০ শিশু কষ্টে আছে। শৌচাগারের পয়োনালা বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ে অবস্থানকালে তারা প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেক সময় শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে কাজটি করতে হয়। দীর্ঘ সময় পায়খানা বা প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে দীর্ঘমেয়াদি অসুখে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা।

যেকোনো বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্ষালনাগার থাকা অপরিহার্য। মিরপুরে বাউনিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ছিল। প্রথম আলোর রাজধানী পাতার খবর অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিদ্যালয়ের মাঠের একাংশ দখল করে স্থানীয় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সাবেক সাংসদ হারুন মোল্লার নামে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে বিদ্যালয়ের শৌচাগারের পয়োনালা বন্ধ হয়ে যায়। এতে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমস্যাটি সমাধানে ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েও সফল হননি। কেননা ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের বরাবরই আইনের ঊর্ধ্বে ভাবেন। না হলে বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে তাঁদের ভাষায় ‘কমিউনিটি ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করবেন কেন? ক্লাবের সহসভাপতি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পয়োনালার সমস্যার কারণে আগে থেকেই ছয়টি শৌচাগারের মধ্যে দুটি বন্ধ ছিল। আর ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর সব কটি বন্ধ হয়ে গেছে। যাঁরা স্থানীয় মানুষের হিতসাধনে কমিউনিটি ক্লাব করেছেন, তাঁদের কি বিদ্যালয়ের ৩০০ শিশু শিক্ষার্থীর প্রতি কোনো দায় নেই?

ক্লাবের সহসভাপতির দাবি যে সম্পূর্ণ অসত্য, তার সাক্ষী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা । তিনি সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেও সফল হননি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসহযোগিতার কারণে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও বলেছেন, ক্লাবের কর্মকর্তারা কোনোভাবে লাইন মেরামত করে দিতে রাজি হচ্ছেন না। তাঁরা বিদ্যালয়ের জায়গায় ক্লাব নির্মাণ করে পয়োনালা বন্ধ করে দেবেন। আর সেটি চালু করার কথা বললেও শুনবেন না। সরকারি দলের নামে এই দৌরাত্ম্য আর কত দিন চলবে?

স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা, যাঁর বাবার নামে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত, তিনিও স্বীকার করেছেন, বিদ্যালয়ের জায়গায় ক্লাব হতে পারে না। কিন্তু সাংসদের এই স্বীকারোক্তি যথেষ্ট নয়। তাঁর সম্মতি ছাড়া যদি ক্লাব হয়েও থাকে, তিনি সেটি ভেঙে দিচ্ছেন না কেন? তাঁর বাবার নাম ব্যবহার করে অবৈধ দখলদারি কেন মেনে নিচ্ছেন? অবিলম্বে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে ক্লাবটি সরিয়ে ফেলা হোক। শিশু শিক্ষার্থীরা যাতে প্রক্ষালনাগারটি ব্যবহার করতে পারে, সাংসদ সেই ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।

  • Courtesy: Peothom Alo /সম্পাদকীয় /Apr 12, 2018

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জনমত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে


তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাটি একটি কালাকানুন হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার এটি টানা প্রায় নয় বছর ব্যবহার করার পর এখন প্রস্তাবিত ডিজিটাল আইনে তার অদলবদল করেছে। আমরা এতে বিস্মিত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। যদিও আমরা ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে উপযুক্ত আইন থাকার পক্ষে। সরকার আবারও প্রমাণ করল, তারা কত সহজেই জনমত উপেক্ষা করতে পারে। খসড়া ডিজিটাল আইনের যে প্রায় অর্ধডজন ধারা সম্পর্কে গণমাধ্যম, বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল, তার সবই অপরিবর্তিত রেখে সোমবার জাতীয় সংসদে বিল আকারে তা পেশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিল পাস হলে তা বাক্‌স্বাধীনতা এবং সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার প্রতি নতুন করে হুমকি সৃষ্টি করবে।

প্রস্তাবিত আইনের যেসব দিক আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে, তার মধ্যে তিনটি বিষয় জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় গুরুতর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে প্রতীয়মান হয়।

এক. এমন অনেক নতুন অপরাধ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। যেমন মানহানির সংজ্ঞা ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি অনুযায়ী আমরা বুঝব। কিন্তু অন্য অনেক অপরাধ এতটাই অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থক যে তা অপব্যবহারের পথ খুলে দেবে। এই বিল একটি অধিকতর পুলিশি রাষ্ট্রের বিপদের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ‘দেখিলে শুনিলে নীতিভ্রষ্ট’ হওয়ার মতো অপরাধের অস্পষ্ট পরিভাষা নিয়ে নাগরিক সমাজের তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ ছিল। বিশেষ করে, গত কয়েক বছরে এসব বিষয়ে অনেক সভা-সেমিনার হয়েছে এবং আইনমন্ত্রী এসব কালাকানুন বাতিলের অঙ্গীকার করেছিলেন। 

দুই. ফৌজদারি আইনের আওতায় নৃশংস অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে দণ্ডবিধিতে যে শাস্তির পরিমাণ স্থির করা আছে, শাস্তির সেই অনুপাতের তুলনায় ডিজিটাল আইনের আওতায় জেল ও জরিমানার পরিমাণ বহু গুণ বাড়ানো হয়েছে। তিন. আদালতে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলেও প্রচলিত দণ্ডবিধির আওতায় শাস্তির মাত্রা নির্ধারণে বিচারকের স্বাধীনতা অবারিত রাখা আছে। যেমন দণ্ডবিধিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। জরিমানার টাকার অঙ্ক বেঁধে দেওয়া নেই। কিন্তু ডিজিটাল আইনে ন্যূনতম কারাদণ্ড ও জরিমানার টাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ফসল যে বাহাত্তরের সংবিধান, তার ৩৯ অনুচ্ছেদে সংসদকে বাক্‌স্বাধীনতা হরণকারী আইন তৈরি করার এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। বরং সংসদ যাতে যা খুশি তা-ই করতে না পারে, সে জন্য শর্ত দেওয়া হয়েছে যে সংসদকে অবশ্যই যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে আইন করতে হবে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক্‌ ও ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক কাঠামোগুলোর মধ্যে সর্বাধিক মৌলিক। শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফাসহ তাঁর সব কর্মসূচিকে বাংলার জনগণের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে সাংবাদিকেরা অকুতোভয় ছিলেন। সেই সাহস ও ঐতিহ্যকে স্বীকার করতেই সংবিধানে বাক্‌স্বাধীনতার বাইরে সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতাকে আলাদা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, সে কারণে এ রকম অনুচ্ছেদ উপমহাদেশের অন্য কোনো সংবিধানে নেই।

সুতরাং, আজ সময় এসেছে সব স্তরের সচেতন মহলকে প্রস্তাবিত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার। আশঙ্কা করি, কোনো প্রকার সংশোধনী ছাড়াই সরকার বিলটি সংসদে দ্রুত পাস করিয়ে ফেলতে পারে। ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল হয়েও জাতীয় পার্টির তরফে যেটুকু প্রতিবাদ সংসদে করা হয়েছে, তা ইতিবাচক। দলটি কি অধিকতর ভূমিকা নিতে পারে না?
  • Courtesy: Prothom Alo/ সম্পাদকীয় /Apr 11, 2018


উপাচার্যের বাসা ভাঙচুরের বিচার চায় আন্দোলনকারীরা



বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেছেন, ‘আমাদের ছাত্ররা (আন্দোলনকারী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর করেনি। সেখানে আমাদের শিক্ষকেরা ছিলেন। গণমাধ্যম ছিল। আমরা গণমাধ্যমের ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের বের করার দাবি জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা নিয়ে সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার একটি অংশের প্রতি হাসান আল মামুনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে তাঁর বক্তব্যের একটি অংশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘ভিসির বাড়ি যারা ভেঙেছে, লুটপাট করেছে, লুটের মাল কোথায় আছে, কার কাছে আছে, ছাত্রদেরই তো বের করে দিতে হবে। যারা ভাঙচুরে জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। ছাত্র-শিক্ষকের সহযোগিতা চাই। এত বড় অন্যায় আমরা মেনে নিতে পারি না। এখনো শিক্ষক যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের সম্মান করি। গুরুজনকে অপমান করে প্রকৃত শিক্ষা হয় না।’

  • Courtesy: Prothom Alo/Apr 12, 2018

Wednesday, April 11, 2018

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছে সরকার — এএইচআরসি


কোটা সংরক্ষণ নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সৃষ্টিতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে (এনগেজড) বাংলাদেশ সরকার। এমন তথ্য পেয়েছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। 


বেশ কিছু শিক্ষার্থী এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনকে বলেছেন, রোববার রাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বিক্ষোভ প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীদের সনাক্ত করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে আবাসিক ভবনে (ডরমেটরি) অবরুদ্ধ করে রেখেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। এতে বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরতদের ওপর নির্যাতন করছে।

ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়ার জন্য তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছে। বেশ কিছু ছাত্র ও ছাত্রী তাদের হাতে আহত হয়েছেন। এসব ছাত্রছাত্রীর বিভিন্ন অংশ কেটে গেছে। তবে তাদেরকে কোনো চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে না। ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিবাদকারীদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। এতে বেশ কিছু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, এটা বলা অপ্রয়োজনীয় যে, ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা আরো পুলিশি হয়রানির মুখে রয়েছেন। 

ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার শতকরা ৫৬ ভাগ আসন কোটা পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেছে। এ নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যারা চাকরি প্রত্যাশী তারা এর প্রতিবাদ করছেন। কোটা পদ্ধতিতে দেখা যায়, একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বা তাদের ছেলেমেয়ের জন্য শতকরা ৩০ ভাগ আসন, জেলা পর্যায়ে শতকরা ১০ ভাগ, নারী কোটায় শতকরা ১০ ভাগ, জাতিগত সংখ্যালঘুরা শতকরা ৫ ভাগ ও শারীরিক বিকলাঙ্গদের জন্য শতকরা এক ভাগ আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকীকরণ করা হচ্ছে বলে সমালোচনা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কোটা সংরক্ষণের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করছেন সমালোচকরা। এই কোটা পদ্ধতি সংরক্ষণ করা হয় জনগণের আবেগকে ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানকে ব্যবহার করে। মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে নিজেদের জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করেন। ৮ই এপ্রিল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ব্যবহার করা হয় কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র বিষয়ক সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। রোববার দিনের শেষে ও সোমবারের প্রথম প্রহরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ দমনপীড়নমুলক অভিযানে ঢাকায় আহত হয়েছেন বহু ছাত্র ও ছাত্রী। 

তবে মাঠ পর্যায়ে যা পরিস্থিতি তাতে তাদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করে বলা সম্ভব নয়। খেয়ালখুশি মতো পুলিশ আটক করেছে প্রায় এক শিক্ষার্থীকে। ভবিষ্যতে আর কখনো এমন বিক্ষোভে অংশ নেবে না এমন শর্তে তাদের অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকায় এই বিক্ষোভ শুরু হয় ৭ই এপ্রিল। এটা এমন এক সময়ে ঘটেছে 

যখন ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮০ হাজার। এ বছর ২০ শে মার্চ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত তথ্যে এ কথা বলা হয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন কোটা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা দাবি তুলছেন কোটা পদ্ধতি শতকরা ১০ ভাগ কমিয়ে আনতে। এই আন্দোলন এখন অন্যান্য সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন যখন এই বিবৃতি প্রকাশ করে। গত দু’দিনে দেশের বিভিন্ন  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে মাঠে নেমেছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কঠোর শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দমনপীড়ন অবিলম্বে থামানোর আহ্বান জানিয়েছে। এতে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা অবশ্যই বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলেছে, সভা সমাবেশ করার স্বাধীন অধিকার অব্যাহতভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না বাংলাদেশ সরকার। 
  • কার্টেসি - http://mzamin.com


কোটায় মার খাওয়া এক হতভাগ্য প্রজন্ম


জিয়া হাসান


৯ এপ্রিল রাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ওপরে দফায় দফায় পুলিশ এবং ছাত্রলীগের সম্মিলিত আক্রমণে গুলি চালানো থেকে শুরু করে যে ভয়াবহ তাণ্ডব ঘটেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। সামাজিক মাধ্যমে ছাত্রীরাও জানাচ্ছেন, গভীর রাতে তাঁদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালানো হয়। সামাজিক মাধ্যমে গুলিবিদ্ধ এবং আহত রক্তাক্ত ছাত্রছাত্রীদের ছবি দেখা যাচ্ছে। স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এমন তাণ্ডব অভাবনীয়।


কয়েক মাস ধরেই সুনির্দিষ্ট পাঁচটি দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন।

  • ১. কোটাব্যবস্থা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা (বর্তমান ৫৬% কোটা থেকে )।
  • ২. কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া (যদিও সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে এই দাবিটি ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে) 
  • ৩. সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা। (মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়স ৩২, যেখানে বাকি সকলের জন্য বয়সসীমা ৩০) 
  • ৪। কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। (২৭, ২৮ ও ২৯তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী ও উপজাতি কোটায় শূন্য থাকা ১ হাজার ৪৮৯টি কর্মকর্তার পদে নিয়োগের লক্ষ্যেই বিশেষভাবে ৩২তম বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া হয়) 
  • ৫. চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকার কোটার সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না। (বর্তমানে একজন কোটাধারী বিসিএস, বাংলাদেশ ব্যাংক বা সব সরকারি নিয়োগে বারবার কোটা ব্যবহার করার সুযোগ পান)



বাস্তবতা হচ্ছে, কোটাব্যবস্থা চালু করা হয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে, কিন্তু এখন কোটা নিজেই বঞ্চনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বিবিএসের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মাত্র ২৬ লাখ বেকার। কিন্তু এ তথ্য ইতিমধ্যেই বিতর্কিত এবং লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) পরিসংখ্যান মতে, পৃথিবীতে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার।

কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি বঞ্চনার বিরুদ্ধে। আজ যদি শিক্ষার্থীরা পাস করেই কাজের সুযোগ পেতেন, তাহলে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি উঠত না। কিন্তু একদিকে উন্নয়নের ঝংকারে কান বন্ধ হয়ে যায়, আরেক দিকে লাখ লাখ তরুণের কাজের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কাজ করে নিজের এবং নিজের পরিবারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের নিশ্চয়তাটি আনার আন্দোলন ছাড়া এই তরুণদের আর কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনপ্রশাসনে নিয়োগে প্রতিবন্ধী, উপজাতি বা বিভিন্ন বঞ্চিত গোষ্ঠীর জন্য কোটার প্রয়োজন কেউ অস্বীকার করে না। স্বাধীনতার দুই দশক পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটাব্যবস্থার রাখারও সংগত কারণ ছিল, কিন্তু স্বাধীনতার যখন ৫০ বছর ছুঁই ছুঁই করছে, তখন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয়, বর্তমান সরকার একটা গোষ্ঠীকে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বাকিদের সুযোগ সীমিত করতে চাইছে।

বর্তমানে শাসকগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই কোটার বিরুদ্ধে এই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলে দাবি করেছে, এমনকি কোটাবিরোধীদের রাজাকারের উত্তরসূরি বলেও গালমন্দ করা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাধীনতার পরপরই অসচ্ছল ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটাব্যবস্থার অবশ্যই যৌক্তিকতা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতির জন্য ৩০ শতাংশ কোটার মাধ্যমে শুধু অনুগত গোষ্ঠী তৈরি করা হচ্ছে। 

শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার কী দোষ করল?

বলা হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কোটাব্যবস্থা তার প্রতিদান। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন, মুক্তিযুদ্ধে সব চেয়ে বড় ত্যাগ করেছেন ৩০ লাখ শহীদের পরিবার। এই ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে ২০১৪ সালের ২৪ মার্চে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের সংসদে প্রদান করা লিখিত বক্তব্য অনুসারে তালিকাভুক্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মাত্র ৫ হাজার ৯৯১ জন।

৩০ লাখ শহীদের কোনো তালিকা করা হয়নি, সেহেতু এই ৫ হাজার ৯৯১ জন শহীদ বা আহত মুক্তিযোদ্ধা বাদে বাকি ৩০ লাখ শহীদ পরিবার কোটায় আসার সুযোগ পায়নি। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান কোটাব্যবস্থা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিদের প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে তাঁদের নানা-দাদাদের আত্মত্যাগের জন্য, কিন্তু ৩০ লাখ শহীদের পরিবারের কোনো দায় রাষ্ট্র নেয়নি।

এমনকি এই কোটাব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারাই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কারণ, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেই আছেন সমর্থ ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেই এই দেশে কোটিপতিও হয়েছেন, এঁদের কোনো ধরনের কোটার প্রয়োজন নেই। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারাই প্রকৃতই প্রান্তিক জীবনযাপন করেন, তাঁদেরই শুধু কোটাব্যবস্থায় মধ্যে নয়, বিশেষ সুবিধা দিয়ে সুন্দর জীবনের সুযোগ করে দেওয়া উচিত ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে স্বামী এবং ছয় সন্তান হারানো মেহেরজান বিবি ফেনী রেলস্টেশনে ভিক্ষা করেন। মেহেরজান বিবিদের জন্য এই রাষ্ট্রের আরও অনেক বেশি করার প্রয়োজন ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে কোটিপতি হওয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং মেহেরজান বিবির পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ এক হতে পারে না।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বনাম নকল মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযোদ্ধাদের জমি, ফ্ল্যাট, অর্থ সাহায্য সব ধরনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রশাসনে চাকরির সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা দিয়ে কখনো মেধাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে উঠতে পারবে না, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে মাত্র।

ইতিমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহের একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে, স্বাধীনতার কয়েক বছর পরে জন্ম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধা নিচ্ছেন কেউ কেউ। ২০০৯ সালের এপ্রিলে জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭২ হাজার। এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মাত্র ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, কিন্তু বাকিদের নাম এখনো বাদ দেওয়া হয়নি। এই প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ বলেছেন, তালিকায় ঢোকানো সহজ, কিন্তু কেউ একবার তালিকাভুক্ত হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বাদ দেওয়া কঠিন।

জাতীয় সংসদে এই স্বীকারোক্তির পরেও দেখা যাচ্ছে, টাকা নিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়, সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহিদুর রেজা পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রদান করে পুলিশে চাকরির সুযোগ করে দেন বলে অভিযুক্ত হন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এ কাজ করে এসেছেন।

যে কোটা এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও সুযোগবঞ্চিত এবং সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য করে না, যে কোটায় মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্ম নেওয়া ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর লোকেরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ পায়, যে কোটায় ৩০ লাখ শহীদের কোনো স্থান নেই, সেই কোটা বাংলাদেশে মেধাভিত্তিক, বৈষম্যহীন উন্মুক্ত সুযোগ দানকারী রাষ্ট্র তৈরির যে দীর্ঘ যাত্রা, তাকে পিছিয়ে দেয়। তার জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের দায় শোধের অজুহাতে সরকারের অনুগত একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করে কিছু কোটারি গ্রুপের হাতে সীমিত সুযোগ ধরে রাখবে মাত্র। আর তা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সবচেয়ে বড় বরখেলাপ।

এমনকি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরাও অনেকে এই দাবিগুলোর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। নিজের ফেসবুক পেজে বখতিয়ার আহমেদ লিখেছেন:

‘আমার বাপ বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধা।
তার ছয় সন্তানের কারও কোনো দিন কোটা লাগে নাই।
কেউ কখনো কোথাও কোটায় আবেদন করেনি।
কোটা তাদের সন্তানদেরও লাগবে না।
তোলেন এই কোঠারিতন্ত্র।
এক্ষুনি।’

তাই আমরা আশা রাখি, এ দেশের সংগ্রামী তরুণদের প্রাণের দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়ে স্বাধীনতার প্রতি, শহীদদের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কোটাব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে সীমিত করে মেধাভিত্তিক প্রশাসন ও সাম্যভিত্তিক উন্মুক্ত সুযোগ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সরকার উদ্যোগী হবে এবং আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে। ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে তাঁদের ওপরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা, গুলি ও নির্যাতনের বিচার করবে।

  • জিয়া হাসান: লেখক ও উন্নয়নকর্মী।


এমন বিক্ষোভ বাংলাদেশ বহুদিন দেখেনি


সাজেদুল হক ও শুভ্র দেব 


বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়েছে এখানে। বহু ইতিহাস। বেশিরভাগই গৌরবের। কলঙ্ক যে একেবারে নেই তা নয়। জ্ঞানে-গরিমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো দুনিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উপরের দিকে ছিল না। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্রের জন্ম ইতিহাসে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এমন নজির আর কোথাও নেই।
বুধবার।
বেলা ১১টা। 
শাহবাগ। 
পৌঁছে দেখা গেল অল্প কিছু পুলিশ। পুলিশের দমন-পীড়নের অল্প কিছু বাহনও দেখা গেল। শাহবাগ থানা পেরুতেই দেখা মেলে বিরল এক দৃশ্যের। একটি মিছিল। শুরুতেই কেবল ছাত্রী। ধারণা করেছিলাম মিছিলটি বোধ হয় শুধু নারী শিক্ষার্থীদেরই। বেশ কিছুক্ষণ পর বিভ্রম ভাঙে। যখন মিছিলের ছেলে শিক্ষার্থীদের অংশটিও চোখে পড়ে। মিছিল চলছে আর চলছে। এর যেন কোনো শেষ নেই। হাজার হাজার শিক্ষার্থী। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ক্যাম্পাস। কোটা-সংস্কার, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধেও তারা নানা স্লোগান দেন। ক্যাম্পাসের ভেতরের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখা গেল এ আন্দোলনের প্রতি একাত্ম ঘোষণা করতে। এরই মধ্যে অনেক আন্দোলনকারী জড়ো হতে থাকেন রাজু ভাস্কর্যের সামনে। ঘণ্টা দেড়েক পর ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি যখন রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হয় তখন পুরো এলাকা পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। 

এই দৃশ্য শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজু ভাস্কর্যের নয়। পুরো বাংলাদেশই যোগ দিয়েছে এ নজিরবিহীন বিক্ষোভে। দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস বা ক্যাম্পাসসংলগ্ন এলাকায় চলছে বিক্ষোভ। কোটা সংস্কারের ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত চলবে এ আন্দোলন। 

না, এটা কোন সেলিব্রেটি শো নয়। এখানে কোন লাল-নীল-হলুদ নায়ক-নায়িকা যোগ দেননি। রাজনীতিবিদরা এখানে আসতে প্রতিযোগিতা করেননি। টিভি মিডিয়ায় লাইভ সম্প্রচার নেই। শুরুতে টিয়ারশেল আর বুলেট মোকাবিলা করতে হয়েছে। রক্ত ঝরেছে অনেক। নারী শিক্ষার্থীদেরও রক্ত ঝরানো হয়েছে। কোনো ভবন থেকে এদের জন্য কোনো খাদ্য আসেনি।

তারপরও তরুণরা অপ্রতিরোধ্য। তারুণ্যের এ স্রোত রোখার সাধ্য কারো নেই। এটাই এখন সবচেয়ে বড় সত্য।