Search

Thursday, June 28, 2018

গাজীপুরে ৪৬.৫ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে - ইডব্লিউজি


গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)।

গাজীপুরের ৪২৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে পুরো ৫৭টি ওয়ার্ডের ১২৯টি ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থাটির প্রতিনিধিরা। এ সময় তারা ১৫৯টি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা লক্ষ্য করেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানায় ইডব্লিউজি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইডব্লিউজির পরিচালক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ইডব্লিউজি যেসব ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে, সেগুলোর মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ কেন্দ্রে ১৫৯টি নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এসব অনিয়মের ঘটনা বেশিরভাগই ঘটেছে দুপুরের পর।

অনিয়মের মধ্যে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার চালানো এবং ভোটকেন্দ্রের ভেতরে অনধিকার প্রবেশ ও অবস্থানের কথা তিনি উল্লেখ করেন।

আবদুল আলীম জানান, অনিয়মের কারণে পর্যবেক্ষণকৃত ১২টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়, এর মধ্যে ৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ পুনরায় চালু হয়।

ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রে ভোটারকে প্রবেশ করতে না দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভোটকক্ষে ভোটার প্রবেশের পর আঙুলের কালির ছাপ দিয়ে বলা হয়েছে- আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে এমন ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের প্রবেশ করতে না দেয়ার। কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়।

এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে প্রচার চালানো হয়েছে এমন ঘটনা ২৮টি। ভোটকেন্দ্রে অনধিকার প্রবেশ দেখা গেছে এমন ঘটনার সংখ্যা ৩০টি। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সহিংসতার ঘটনা আটটি। ভোটকেন্দ্রের বাইরে সহিংসতা ঘটেছে নয়টি। অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে ২১টি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন ঘটনা পাঁচটি। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে প্রার্থী কর্তৃক যানবাহন সরবরাহ করার ঘটনা ২৪ ও অন্যান্য অনিয়মের ঘটনা ১৬টি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইডব্লিউজির সদস্য আবদুল আওয়াল, হারুনুর রশীদ ও অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
  • কার্টেসিঃ যুগান্তর/ জুন ২৮, ২০১৮ 

একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি

রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির ভর্তির সময় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি অতিরিক্ত ২ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভর্তি হতে যাওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা এই অভিযোগ করেছেন। 

কলেজের শিক্ষকেরাও বিষয়টি জানেন। তবে ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেন না। এর আগেও এই কলেজে বিভিন্ন ভর্তি বা ফরম পূরণের সময় একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনা চলছে।

একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে আবেদন ও শিক্ষার্থী বাছাইয়ের পর গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার ভর্তির টাকা নিচ্ছে কবি নজরুল সরকারি কলেজ। কলেজসংলগ্ন জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। এই কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে যাওয়া একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, নির্ধারিত ভর্তি ফি ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকার মতো। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ডাউনলোড করে ফরম ও রসিদ নিচ্ছে। সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকার পরিমাণ এসে যাচ্ছে। সেখানে বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু ভর্তি হতে যাওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা ব্যাংকে এই টাকা জমা দেওয়ার সময় পাশেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী অবস্থান নিয়ে প্রত্যেকের কাছে জনপ্রতি ২ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন। যারা এই টাকা দিচ্ছে, কেবল তারাই ভর্তির নির্ধারিত টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। যারা দিতে পারছে না তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গতকাল তাঁর সন্তানকে ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু না জানার কারণে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাননি। তাই ফেরত এসেছেন।

  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুন ২৮, ২০১৮

বিবিসির চোখে গাজীপুর নির্বাচনের অনিয়ম

কাদির কল্লোল, বিবিসি বাংলা


বুথ থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে এক বিএনপি কর্মীর অবস্থান ধর্মঘট, শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র - ছবি : বিবিসি

বুধবার সকালে গাজীপুরে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ফলাফল নেয়ার সময় শত শত সমর্থক বেষ্টিত জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন উচ্ছ্বসিত। বলেছেন, ভোটারদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী মি. আলম দুই লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন বিরোধীদল বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে।

কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে তাকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এবং প্রশ্নগুলো সহসা তার পিছু ছাড়বে না।

জাহাঙ্গীর আলমের সাথে আমি যখন কথা বলছিলাম, তার বক্তব্য ছিল, ‘আপনারা অনেক প্রশ্ন তুলছেন। একটা বড় নির্বাচন হলে কিছু অনিয়ম হয়। এই নির্বাচনেও কিছু অনিয়ম হয়েছে বলেই নির্বাচন কমিশন নয়টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করেছে। কিন্তু সেটা পুরো নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে পারে না। এখানে নির্বাচন শতভাগই সুষ্ঠু হয়েছে।’

কিন্তু তার এই বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার মিল কতটা?

ভোটের দিনে অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় আমি টঙ্গী বাজারের কাছে গাছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখি ভোটারের দীর্ঘ সারি। অনেক নারী পুরুষ। কেন্দ্রের চত্বরে পরিবেশও ছিল বেশ ভাল।

কিন্তু কেন্দ্রের ভেতরে বুথগুলোতে গিয়ে দেখা যায় - বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কোনো এজেন্ট নেই।

প্রশ্ন তুললে অন্য এজেন্টরা আমাকে জবাব দিলেন, ‘তারা বাথরুমে গেছেন, এখনই চলে আসবেন।’

ঘন্টাখানেক ঐ কেন্দ্রে ছিলাম, সেই সময়েও বিএনপির এজেন্টরা বাথরুম থেকে ফিরে আসেননি।

অল্প দূরত্বেই আরেকটি ভোটকেন্দ্র কলেমেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে একই রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই।

তবে ঐ কেন্দ্রটিতে বাড়তি একটা দৃশ্য চোখে পড়ে, তাহলো কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ভিড়। তারা তাদের প্রতীকের ব্যাজ লাগিয়ে তাদের নির্বাচনী ক্যাম্পে এবং বাইরে সক্রিয় রয়েছেন। তাদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে কেন্দ্রের ভিতরে গিয়েও ঘুরে আসছেন।

কেন্দ্রের চত্বর এবং ভেতর যে তাদেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল, তা বুঝতে কষ্ট হয়নি।

টঙ্গী এবং গাজীপুরের দশটি ভোটকেন্দ্র আমি ঘুরেছি। তার মাত্র একটি কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট পেয়েছিলাম। সেই এজেন্টকেও তার প্রার্থীর ব্যাজ বা পরিচয়পত্র লাগাতে দেখা যায়নি। তিনি জানান, ভয়ে কোনো ব্যাজ ব্যবহার করছেন না।

গাজীপুর মোড়ে জটলা করে থাকা কিছু লোকজনের সাথে আমি কথা বলি, তারা নিজেদের বিএনপি মেয়র প্রার্থীর সমর্থক বলে পরিচয় দিলেন।

তাদেরও বক্তব্য ছিল, ভয়ে তারা তাদের প্রার্থীর ব্যাজ লাগাননি।

আমি যে ক’টি কেন্দ্র দেখেছি, বেশিরভাগ কেন্দ্রেই বাইরে এবং ভিতরে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

ভোটারদের দীর্ঘ সারি

সকালের দিকে অধিকাংশ কেন্দ্রেই ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি। তাদের অনেকে বলেছেন, অনেকদিন পর নিজের ভোট দিয়ে তারা আনন্দিত।

কিন্তু কেন্দ্রের বাইরে এবং ভিতরে ছিল আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ।

এরমধ্যেই কোনাবাড়ি এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজন যুবকের দেখা মেলে। তিনি নৌকার ব্যাজ পরে এসে ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন।

এই যুবক আমার সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে তার ভোট দেয়ার গল্পটি বলে দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়েন।

চারশ’ পঁচিশটি কেন্দ্রের মধ্যে আমি দশটি কেন্দ্র ঘুরেছি। একে নির্বাচনের সার্বিক চিত্র হয়তো বলা যাবে না, কিন্তু ঢাকার যেসব সাংবাদিক এই নির্বাচন দেখতে গিয়েছিলেন, তাদের অভিজ্ঞতাও ছিল কমবেশি আমার মতোই।

ভোট শেষে একজন সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি এবং দৃশ্যমান পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় ছিল না কোথাও কিছু সমস্যা ছিল।’

ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল

বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ একটি কেন্দ্র থেকে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট আমাকে ফোন করে বললেন, ‘আপনি কোথায়, এই কেন্দ্রে সিল মারছে দ্রুত আসেন।’

তিনি আমার মোবাইল ফোন নাম্বার কোথায় পেয়েছেন, তা আর জানা হয়নি।

দ্রুত সেই এম এ আরিফ কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখি, নৌকা মার্কার ব্যাজ লাগানো কয়েকজন যুবক বুথ থেকে বেরিয়ে গেলেন।

তবে তাদের সিল মারা দু’একটি ব্যালটের প্রমাণ সেখানে রয়ে যায়।

কেন্দ্রের একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট অভিযোগ করলেন, ঐ যুবকরা বুথের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে অন্য কক্ষে গিয়ে নৌকা মার্কায় এবং আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে সিল মেরেছে।

সেখানে বাইরে তখনও ভোটারের সারি। এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার পর আবার ভোটাররা ভোট দিতে পারেন।

এই কেন্দ্রের সাথেই একটি প্রাইমারি স্কুলের বুথেও একই অভিযোগ পাওয়া যায়।


নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপার, মদিনাতুল উলুম আলিম মাদরাসা কেন্দ্র।

গাজীপুর শহরে মদিনাতুল উলুম আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার উপস্থিতি দেখে পরিবেশ দেখে ভালোই মনে হয়েছিল।

কিন্তু এই কেন্দ্রের তিনতলায় গিয়ে দেখা যায়, দুই তিনজন যুবক প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মেরে সেই ব্যালট বাক্সে ভরছেন।

বিবিসির সারোয়ার হোসেন ক্যামেরা তাক করার সাথে সাথে তারা দ্রুত কাজ সেরে সরে পড়েন। সবার সামনে এমন ঘটনা অবাক করার মতো।

ঐ কেন্দ্রে সবকটি বুথে একই ঘটনা ঘটে।

এমন পরিস্থিতিতে সেখানে ভোট বন্ধ থাকার অনেকটা সময় পর আবার ভোট নেয়া হয়। মাদরাসাটিতে চারটি কেন্দ্র ছিল। একটির ভোট পরে বাতিল করা হয়।

ভোটের পরে গাজীপুরের রাস্তায় কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলি।

তাদের একজন বলছিলেন, ‘বড় মারামারি বা কাটাকাটি নাই। তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে আমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে... কৌশলে খেলা হয়েছে।’

তবে সেখানে কথায় কথায় বেসরকারি হাইস্কুলের একজন শিক্ষক আমাকে প্রশ্ন করলেন, নির্বাচন কী প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে?

আপনার কী মনে হয়? আমার পাল্টা প্রশ্নে ঐ শিক্ষকই বললেন - ধরপাকড়ের ভয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিল না। ভোটের দিনও তারা সংগঠিত এবং সক্রিয় ছিল না। ফলে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দিয়ে অংশ নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো না বলে তিনি মনে করেন।
  • কার্টেসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুন ২৮,২০১৮ 

গাজীপুরে নির্বাচনে ব্যাপক অস্বাভাবিক ভোট

শামছুল ইসলাম


দেশে নির্বাচনের সংস্কৃতি প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। আগে ক্ষমতালোভীরা ভোটকেন্দ্র দখল করে নিজেদের প্রতীকে সিল দিত। এ ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব থাকত। এখন চিত্র বিপরীত।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকেরা জালভোট দিতে এলে তাদের নিবৃত্ত না করে দোসরের ভূমিকা পালন করেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে উর্দি পরাদের চেয়ে সাদা পোশাকের সদস্যরাই ছিল বেশি তৎপর।

তাদের কারসাজিতে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ধানের শীষ প্রার্থীর এজেন্টদের। কোনো কোনো কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট ঢুকতেই পারেনি। কেন্দ্রের গেট থেকে সাদা পোশাকধারীরা তাদের ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ মিলেছে। অনেক কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে।

গাজীপুরের ভোট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে দুইটি কেন্দ্রে। আবার একটি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশের নিচে। ৪০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে ১৮টি কেন্দ্রে। ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ২৪ কেন্দ্রে। ৩২ নং ওয়ার্ডের বসুরা মক্তব মাদরাসা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১১৯ জন। এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২ হাজার ৯৩৪ জন। এই কেন্দ্রে শতকরা ৯৪.০৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। একইভাবে বিপ্রবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার দুই হাজার ৬৯৪ জন। এই কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২ হাজার ৪৩০ জন। এই কেন্দ্রে ভোটের হার ৯০.২০। সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে গাজীপুর হলিসন কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল কেন্দ্রে। সেখানে ভোটার ছিল ৬০৪৬ জন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এবার গড়ে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে পড়েছিল ৬৮ শতাংশ। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় ১০ শতাংশ ভোট কম পড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজীপুর সিটিতে ভাসমান ভোটার বেশি। সেখানে ৯০ শতাংশের ওপর ভোট পড়া অস্বাভাবিক। আবার চল্লিশ শতাংশের নিচে ভোট পড়াও অস্বাভাবিক।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যেসব কেন্দ্রে ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে সেগুলো হচ্ছে- কোনাবাড়ী এম এ কুদ্দুস উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ-২ (দ্বিতীয়তলা) (৮৫%), গুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮২.৮১%), ধূমকেতু প্রিক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুল-১ (৮০.১৩%), শিলমুন আব্দুল হাকিম মাস্টার উচ্চবিদ্যালয়-১ (৮৩%), গোপালপুর কিশোর বিদ্যানিকেতন (৮১.২৭%), নন্দীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০.৬৭%), বিন্দান উচ্চবিদ্যালয় (৮৯.৪৬%), বাড়ইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮২.৮১%), উধুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৩.৮১%), পুবাইল উচ্চবিদ্যালয় (৮৯.৫৩%), মেঘডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৬%), ইছালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৭.০৮%), শুকুন্দিবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৩.৮৫%), বসুরা মক্তব মাদরাসা (৯৪.০৭%), ইছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৬.৩৭%), খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ (৮১.৫৮%), খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ (৮১.৭৪%), ল্যাঙ্গুয়েজ উচ্চবিদ্যালয় (৮২.২৪%), হাতিমারা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ-২ (৮৩.২৮%),

মজলিসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৪.৯৯%), মীরেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৪.৪৬%), খালিসাবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৮.৫৮%), বিপ্রবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯০.২০%), রোভার পল্লী উচ্চবিদ্যালয় (৮৫.৭৪%)। ৪০ শতাংশের কম ভোট যেসব কেন্দ্রে পড়েছে সেগুলো হলো- পাগাড় আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় (৩২.৭৫%), টঙ্গী সানরাইজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৩১.৯৬%), বিকাশ স্কুল (২৮.৩১%), সারদাগঞ্জ মেরিগোল্ড হাইস্কুল-১ (৩০.৩১%), সারদাগঞ্জ মেরিগোল্ড হাইস্কুল-২ (৩৯.৮৫%), আমানউল্লাহ একাডেমি (৩৬.৪৫%), কোনাবাড়ী এম এ কুদ্দুস উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ-৪ (৩৮.৭৪%), কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ-১ (৩৮.৮৫%), পানিশাইল উচ্চবিদ্যালয়-২ (৩৫.৫৯%), শহীদ বৃত্তি একাডেমি-২ (৩২.২৪%), ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ (২৫.৮৪%), পশ্চিম জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ (৩৬.৫১%), মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা-৪ (৩৪.০১%), গাজীপুর হলিসান কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল (১৪.১৪%), গাজীপুর হোসাইনিয়া মাদরাসা-২ (৩১.৯৫%), আব্দুর রহমান মেমোরিয়াল স্কুল (৩৩.৭৯%), অনন্ত মডেল কিন্ডারগার্টেন (৩৮.৬০%), হাজী আহমদ আলী পাবলিক স্কুল (৩৯.৮৯%)।

রিটার্নিং অফিসারের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ৪২৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৬টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৪ লাখ ১০ ভোট পেয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছে বিএনপি। দলটির দাবি শতাধিক কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টকে বের করে দিয়ে গাজীপুরে জালভোটের ‘মহোৎসব’ হয়েছে।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন নয়। সংবিধান তাদের যে ক্ষমতা দিয়েছে তা ব্যবহার করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী ও প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকলেও কমিশন সে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। দলীয় কর্মীদের গ্রেফতার না করার নির্দেশনা দিলেও গাজীপুরে পুলিশ তাদের নির্দেশনা মানেনি। ভোটের আগের দিনেও বিএনপি কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পোলিং ও প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে দলীয় কর্মীদের। ফলে তারা নিজেরাই জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছে গণমাধ্যম কর্মীরাও। ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকায় মতাসীন দলের সমর্থকেরা গাড়ি ও মোটরসাইকেলে নৌকা প্রতীকের স্টিকার লাগিয়ে অবাধে চলাচল করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গাজীপুরে বাস্তবে ভোটের হার অনেক কম ছিল। জালভোটের কারণে ভোটের হার বাড়তে পারে। বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের হার বেশি হয়েছে বলেই কিছু কিছু কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট দেখা যাচ্ছে।

নির্বাচন পর্যবেক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট স্বাভাবিক। এর ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়াটাও অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

  • কার্টেসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুন ২৮,২০১৮ 

ডলারের বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কাজে আসছে না

হাছান আদনান

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে। এক বছরের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম বেড়েছে ৩ টাকার বেশি। বাজার স্বাভাবিক রাখতে এরই মধ্যে প্রায় ২৪০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে কয়েক দফা সতর্কও করা হয়েছে। যদিও কাজে আসছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব হস্তক্ষেপ। প্রতি ডলার এখনো ৮৫ টাকার উপরেই বিক্রি হচ্ছে।

ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চাহিদা থাকায় হিসাব-নিকাশ ছাড়াই ব্যাংকগুলো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলেছে। এখন এলসির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের তুলনায় বেশি আমদানি এলসি খোলা ব্যাংকগুলোর বিপদ ক্রমেই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও তুলার দাম বাড়তে থাকায় শিগগিরই ডলারের সংকট নিরসনের লক্ষণ দেখছেন না ব্যাংকাররা।

বিদ্যমান ডলার সংকট দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ বলে মনে করেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ আমদানি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে, সে পরিমাণ রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে যেসব এলসি খোলা হয়েছে, সেগুলো এখন নিষ্পত্তি হচ্ছে। এতে ডলার সংকট আরো গভীর হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিনই বাজারে ডলার বিক্রি করলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল বলে মনে করেন আনিস এ খান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। তার পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। এজন্য করণীয় বিষয়ে আবারো বসতে হবে।

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করার পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের মূল্যও নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু চাহিদার তুলনায় জোগান না থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ উদ্যোগ কাজে আসেনি। ডলারের বিক্রয় মূল্য সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার সময়ও অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক ৮৩ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করতে থাকে। পরবর্তী সময়ে দুই দফায় আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে ডলারের সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা ও পরে ৮৩ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চলতি সপ্তাহে আমদানি পর্যায়ে ডলারের বিক্রয় মূল্য ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা ঘোষণা করছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। গতকাল এনসিসি, প্রাইম ব্যাংকসহ অনেক বেসরকারি ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ডলারের মূল্য বেশি ঘোষণা করেছে। যদিও ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামেই ডলার লেনদেন করছে ব্যাংকগুলো। নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে গতকাল প্রতি ডলারের মূল্য ৮৫ টাকা নিয়েছে প্রাইম ব্যাংক।

জানা গেছে, বিদায়ী বছরের ২৮ জুন আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলার ৮০ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করেছিল এনসিসি ব্যাংক। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে গতকাল প্রতি ডলারের জন্য ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা নিয়েছে ব্যাংকটি। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ৩ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও নগদ লেনদেনে এর চেয়েও বেশি দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে।

ডলারের এ মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের আমদানিকারকরা। আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদেরও। ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ হোলসেল স্পাইসেস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিনিয়তই ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে আমদানি পণ্যের জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের এ পরিচালক।

যদিও বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলতি অর্থবছরের গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ২৪০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। একই সময়ে বাজার থেকে কোনো ডলার কেনার প্রয়োজন হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের। অথচ গত অর্থবছর বাজারে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ক্রয় করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রির প্রয়োজন হয়নি। যদিও ওই অর্থবছর বাজার থেকে ৪১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছর বাজার থেকে ৩৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনেছিল। অর্থবছরটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করেছিল ৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ৫১৫ কোটি ডলার কিনলেও সে বছর কোনো ডলার বিক্রি করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তেল আমদানির দায় পরিশোধকে এক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় এলসির দায় পরিশোধ করতে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এবিবি চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, খাদ্যশস্যসহ মেগা প্রকল্পগুলোর উপকরণের জন্য বিপুলসংখ্যক এলসি খোলা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আমদানিতে প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২৫ শতাংশ। কিন্তু রফতানি ও রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি সেভাবে না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট উত্তরণের জন্য সব পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দুই বছর ধরেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান মাধ্যম রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সপ্রবাহে ভাটা চলছে। অন্যদিকে রেকর্ড পরিমাণ চালসহ খাদ্যশস্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হওয়ায় বেড়েছে আমদানি ব্যয় পরিশোধ। ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশের চলতি হিসাবে রেকর্ড ৮৫১ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যদিও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এ সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৭৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চলতি হিসাবে ৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৬ হাজার ৭২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের; আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৫১ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। একই সময়ে ১৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে। অথচ এ সময়ে রফতানি বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আড়াই শতাংশ কমার পর গত অর্থবছর রেমিট্যান্স সাড়ে ১৪ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরে (জানুয়ারি-মে) রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। 

  • Courtesy: BanikBarta/ June 28, 2018

EC slammed as it rejects most applications

NEW PARTY REGISTRATION

Politicians and civil society members on Wednesday criticised the Election Commission as it rejected almost all applications filed by political parties for registration.
Addressing a roundtable organised by Ganasanghati Andolan, a political party seeking registration, at the National Press Club, they said the EC’s decision was illogical, and by making such a decision the EC had proved that it worked as an extended part of the government.

They criticised the EC’s system of calling application once in every five years ahead of general election and holding local elections on party basis.

They urged the EC to drop the provision of seeking application for getting registered, and the parties should be allowed to apply any time they fulfil necessary conditions for registration.

Former election commissioner M Sakhawat Hossain said the EC made the registration mandatory from good intention during the army-backed caretaker government in 2007-08 but the rule was later used as a tool to control political parties. 

Rules complicated by Govt.

He said that the provisions of the Representation of People Order 1972 relating to giving political party registration was made complicated after the ruling Awami League assumed power in 2009.

Columnist Syed Abul Maksud said the EC did not give registration to some pro-people active parties, namely Ganasanghati Andolan, Nagarik Oikya and Oikya NAP, as the EC feared that the parties would push for strong democratic practices.

Oikya NAP president Pankaj Bhattacharya said the EC played games with them even in name of giving registration.

Sushasoner Jonno Nagorik secretary Badiul Alam Majumdar said the law was made to stop irregularities by the nominal parties, but now it had become a tool to control the real parties. 
Dhaka University professor Ahmed Kamal said the state was trying to gripe the citizens by the law.

He urged the political parties to start organised movement against the decisions of the authorities.
Nagarik Oikya convener Mahmudur Rahman Manna said the EC worked for giving teachings to politiclal leaders. 

Ganasanghati Andolan chief coordinator Zonayed Saki said the government did not give registration to new political parties as it tried to force them to get involved in its conspiracy. 

He also criticised the provision of cancelling registration of a party if it does not participate in two consecutive elections as every party reserves the right to take part in and to abstain from it. 
Among others Socialist Party of Bangladesh general secretary Khalequzzaman, Communist Party of Bangladesh general secretary Mohammad Shah Alam, lawyer Jyotirmoy Barua and Ganasanghati Andolan acting executive coordinator Abul Hasan Rubel also spoke at the roundtable.

Earlier this month, the EC selected only two parties the Bangladesh Congress and the Gana Azadi League  for further field-level investigation, out of 76 applications for registrations.

  • Courtesy: New Age/ June 28, 2018

Some insights into GAZIPUR ELECTIONS

Shakhawat Liton
The good thing about Gazipur City Corporation polls is that it was peaceful and no incident of casualty was recorded which is rare in our election history. Perhaps peace was inevitable by the fact that there were hardly any opposition men present in the field on polling day.    

Unfortunately, however, the election was marred by various electoral anomalies such as heavy showdown by the ruling party men in and outside the polling stations, ballot stuffing, casting fake votes, and driving out the polling agents of opposition BNP-nominated mayoral candidate on voting day. 

But then this is hardly a unique situation. During electioneering, the law enforcement agencies launched a drive to arrest opposition men who were facing cases for various alleged offences. To arrest the accused opposition men, the law enforcers raided their residences. Interestingly, they did not arrest a large number of opposition men as that would trigger an outcry among the public. The drives however generated panic among the men of the opposition.

However, the arrests of eight election coordinators of the BNP candidate, only a week before polling, emerged as a big threat to his electioneering. The BNP and its mayoral candidate met the EC and the returning officers and filed a complaint alleging harassment of their leaders and workers. But things remain almost unchanged. As the presence of opposition men was thin and many of their polling agents were allegedly driven away from polling stations, casting of fake votes or stuffing ballots faced little resistance. And incidents of violence were zero. The law enforcement agency members did not have to take any “action” as there was no violent incident. Thus, at the end of the day, the election was indeed peaceful!

The situation during Khulna City Corporation election held around one-and-a-half months before was no different. In fact, what happened in Gazipur had already taken place in Khulna. Thus the two mayoral elections indicate the rise of a new model of election just six months before the parliamentary polls.

As previously mentioned, such a violence-free and controlled election is rare in our election history. Take the example of the last union parishad election held in 2016. Around 100 people were killed due to widespread electoral violence, which was the deadliest election in our entire election history. The one-sided parliamentary election held in January 2014 became the bloodiest national polls with around 20 people killed on voting day. Most of the local bodies' elections held in the last five years were also marred by violence and casualties and electoral irregularities.  

SIGNIFICANCE OF THE POLLS

Khulna and Gazipur mayoral elections were free from the curse of electoral violence. But the underlying messages of the two polls are immensely significant for our national politics. Khulna election was considered as the beginning of the run-up to the next parliamentary election. But the beginning, to put it simply, was not good. The way the Gazipur polls were held did not rekindle hope for a free and fair election. Now, the fate of the elections to three other city corporations in Rajshahi, Barisal and Sylhet scheduled to be held on July 30 hangs in the balance.

Five years ago, the elections to the same five city corporations were held in the run-up to the last parliamentary election held in January 2014. Though the BNP-backed mayoral candidates clinched victories in all the five city corporation polls, the then government was able to take much of the credit for holding free and fair elections. Their sincerity to hold free elections was not questioned. Banking on this success, the government and the AL kept rejecting the BNP-led opposition's demand for restoration of a non-partisan government to oversee the 2014 parliamentary election.

This time around things are moving in the opposite direction. The way the two mayoral elections in Khulna and Gazipur have been held signals a bad start in the run-up to the next parliamentary election. Fairness and credibility of most of the elections held since the last parliamentary polls have been questioned. The electoral system has been largely damaged. The Election Commission has also proved to be weak. And lastly, the two mayoral polls exposed once again the need for reforming institutions like the EC and law enforcement agencies.

Without building democratic institutions, an electoral democracy alone cannot function. We have had some good national elections in 1991, 1996, 2001 and 2008. But sincere efforts were not taken to build effective democratic institutions such as the parliament, judiciary, EC and political parties, all of which contribute to ensuring checks and balances. Hence deficiency in democracy increases. Isn't the new model of election an outcome of all these atecedents?

  • Shakhawat Liton is a special correspondent at The Daily Star.
  • Courtesy: The Daily Star/ June 28, 2018

Seemingly a peaceful election, but…

Role of admin and police raises questions

It was a peaceful election in Gazipur—on the face of it. Noticeable by their absence were the traditional inter-party clashes, large-scale rigging and booth and ballot-paper capture—characteristics that have pervaded the system since a long time. But we are also informed that many centres were bereft of opposition polling agents; and there are pictures of ballot-paper stuffing and other incidents of violation of electoral codes.

Thus we restate what we had said after the Khulna elections. It is a self-evident truth that elections are not a one-day event. The days leading up to the date of polls and whether or not the various political parties were allowed equal space and afforded the same facilities to do their politicking, and whether all parties acted in consonance with the electoral code, are as important and indicative of the degree of “freeness” and “fairness” of the polls as the general atmosphere on the day of election. In fact the general atmosphere in many polling centres was eerily peaceful.

We wonder whether the EC had noticed the partisan role of some members of the administration or even judged their activities in the light of the electoral code when reports and pictures appeared in various media exposing the partisan role of the police. If it had then perhaps it would care to tell us what it thought of the picture showing the AL candidate in a police car, all smiles. Is chaperoning around of a candidate by the police permitted under the code? Or can the police accompany a candidate, as the police did the AL candidate, to cast his vote inside the booth, where nobody except the voter is allowed?

Peaceful election it might have been, but some fundamental questions remain.

  • Courtesy: The Daily Star /Editorial /June 28, 2018

Wednesday, June 27, 2018

সাংবাদিককে আটকে থানায় নেয়ার হুমকি

সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সাংবাদিককে আটক করে থানার নেয়ার হুমকি দিয়েছেন গাজীপুরের এসপি হারুন অর রশিদ। এ ঘটনায় উপস্থিত অন্য পুলিশ সদস্যরাও বিব্রতবোধ করেন। দুপুরে গাজীপুর সদরের শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের বিষয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাতে চটে গিয়ে তিনি মানবজমিন-এর একজন প্রতিবেদককে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে বলেন পুলিশ সদস্যদের। পরে ঘটনাস্থলেই তাকে কিছু সময় আটকে অপ্রয়োজনীয় তথ্য জানতে চাওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসপি হারুন মানবজমিনকে বলেন, ওই সাংবাদিক ঝামেলা করার চেষ্টা করছিল।

  • Courtesy: Manabzamin/ June 27, 2018


নারীকেন্দ্রে পুরুষ ভোটার!

বাইরে দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি ভোটারদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও লক্ষণীয়। কিছুক্ষণ পরপর এদিক-ওদিক ছুটে যাচ্ছে র‌্যাব-পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি। কিছু কিছু কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প পাশাপাশি। সকালের দিকে প্রায় সব কেন্দ্রে এ রকম দৃশ্যই দেখা গেছে।

দুই ঘণ্টার মতো এমন শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক ভোটগ্রহণ চলে সেখানে। এ সময় বেশির ভাগ কেন্দ্রেই উপস্থিত ছিলেন সকল প্রার্থীর এজেন্ট। সবমিলিয়ে গাজীপুর সিটিতে সকাল থেকেই ছিল উৎসব ভাব। কিন্তু এমনটা ছিল না পুরোদিনের চিত্র। প্রতিটি কেন্দ্রের মুখে সকাল থেকেই অবস্থান নেয় নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। যাদের বেশির ভাগই তরুণ-যুবক। তারা হৈ-হুল্লোড় করছেন, ভোটারদের দাঁড় করিয়ে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন নৌকা প্রতীকের ভোটার স্লিপ। নৌকার ব্যাজ ঝুলিয়ে দিয়েছেন গলায়। ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের এমন অবস্থানের কারণে ভয়ে কেন্দ্রে যেতে পারেনি এলাকায় বিএনপির চিহ্নিত কর্মী-সমর্থকরা।

কেন্দ্রের মুখে এমন সরব মহড়ার মাধ্যমে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে  প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলেও সেসব দেখেও দেখেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেতে থাকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পরিস্থিতি। বের করে দেয়া হয় ধানের শীষের এজেন্টকে। মিডিয়ার উপস্থিতিতে প্রশাসনের নীরব সহায়তায় প্রকাশ্যে সিল মারা হয় নৌকা প্রতীকে। ভোটে স্বচ্ছতা ও জালিয়াতির পরস্পরবিরোধী দুইরকম চিত্রই দেখা গেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, কেন্দ্রের মুখে আওয়ামী লীগের লোকজনের মহড়ার কারণে বিএনপির লোকজন কেন্দ্রে যেতে পারেনি। এতে ধানের শীষের ভোট কম পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর দুপুরের পর একের পর এক কেন্দ্রে জালভোট দিয়ে পাল্টে দেয়া হচ্ছে ফলাফল। অন্যদিকে বিএনপির তরফে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে দুইজন করে বিকল্প এজেন্ট রাখার কথা বলা হলেও বাস্তবতা দেখা গেছে ভিন্ন। সকাল ১০টার পর আশিভাগ কেন্দ্রেই বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। আর প্রতিটি কেন্দ্রেই জালভোটের ব্যাপারে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের উত্তর শোনা গেছে একই- আমি কিছু জানি না, কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে টঙ্গী, গাছা, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, বাসন, চান্দনা, জয়দেবপুর, সদর ও পুবাইলের অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে সরজমিন ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। 

দুপুর তখন সাড়ে ১২টা। মাথার উপর পূর্ণ সূর্যের গণগনে রোদ। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের গাছার বড়বাড়ি এলাকার মির্জা ইবরাহিম মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়। এ স্কুলে স্থাপন করা হয় দুইটি মহিলা কেন্দ্র। কেন্দ্রের বাইরে সরকার সমর্থকদের মহড়া থাকলেও পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। স্কুল মাঠের উত্তরপ্রান্তের ভবনে ২৪৬ নং কেন্দ্র। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আধবোজা দরোজায় দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন। ঠিক পাশের কক্ষে উঁকি দিতেই দেখা গেল, ভেতরে পঞ্চাশোর্ধ একজন প্রকাশ্যেই নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ভরছেন ব্যালটগুলো। কোনো তাড়াহুড়ো নেই, একেবারে স্বাভাবিকভাবে। পরিচয় জানালেন, তার নাম আবদুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল ইসলাম দুলালের পোলিং এজেন্ট। কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট হয়েও মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট মারছেন কেনো? উত্তরে জানালেন, দুই প্রার্থী একই দলের। তাই জাহাঙ্গীর আলমের হয়েও কাজ করছেন। স্বীকার করলেন, কাজটি ভুল হয়েছে। 

সাংবাদিকদের দেখতে পেয়ে পাশের বুথে জালভোট দেয়ায় ব্যস্ত কয়েকজন যুবক দ্রুত বেরিয়ে গেলেন। এ সময় সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশের এসআই আসিফ এসে ধমক দিয়ে বললেন, বুথে ঢুকেছেন কেন? নারী কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার কেন জানতে চাইলে তারা বললেন, প্রিজাইডিং অফিসার বলতে পারবেন, তার কাছে যান। অভিযোগ পেয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ এলেন ভোটকক্ষে। এ সময় বহুসংখ্যক বহিরাগত কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টায় বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করেন। নির্বাচনী কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষণকারী সাংবাদিকরা আশ্রয় নিলেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে। একজন পোলিং এজেন্ট জানালেন, কাউন্সিলর প্রার্থী ইফতেখারুল আলম মনিরের সমর্থকরা আক্রমণ করেছে। পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের বলা হলো, বাইরে নিরাপদ নয়, আপনারা এখানেই থাকুন। কয়েক মিনিট পর দেখা গেল অন্যরকম দৃশ্য। প্রতিটি বুথ থেকে বেরিয়ে এলো নৌকার ব্যাচ পরা অর্ধশতাধিক তরুণ-যুবক। দুইটি কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটারদের বেরিয়ে যেতে উৎসাহিত করলো পুলিশ। 

পুলিশ অস্ত্র তাক করে আশেপাশের লোকজনকে সরিয়ে দিলো। তারপর বন্ধ করে দিলো কেন্দ্রের মূল গেট। বাইরে কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন গেটে আঘাত করছিল। এ সময় সাংবাদিকরা কেন্দ্রের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার কথা বলে সাংবাদিকদের প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এসময় চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তি প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে বললেন, ‘মেয়র সাহেব বলেছেন, এই কেন্দ্রটি নিয়ে নাও।’ কথাটি বলেই ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলেন তিনি। পরক্ষণে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আসিফের ফোনে একটি রিং এলো। তিনি ফোনটি প্রিজাইডিং অফিসারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়। প্রিজাইডিং অফিসার ফোনটি ধরে ওপারের প্রশ্নের জবাবে বললেন, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ৪০০। বেলা ১২টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ৯৪৪টি। ওপার থেকে যে নির্দেশনা আসে তা পুনরাবৃত্তি করে তিনি বললেন, ঠিক আছে তাহলে ১২শ’ ভোটই হবে। পরক্ষণেই সেই তরুণ-যুবকরা ঢুকে পড়ে। ৪০ মিনিট পর সাংবাদিকদের অনেকটা জোর করেই বের করে দেয়া হয়। তারপর থেকে একঘণ্টা কেন্দ্রটির ভেতরে ভোটগ্রহণ হয়েছে গেট বন্ধ অবস্থায়। বাইরে বিএনপির এজেন্ট আসলাম আলী জানালেন, পুরো বিষয়টিই একটি নাটকের অঙ্ক। প্রথমে পাশের পুরুষ কেন্দ্রটি দখল করে ভোট কাটা হয়েছে। তারপর গণ্ডগোলের কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরি করে ভোটারদের ভাগিয়ে দিয়ে এ কেন্দ্রেও কেটে নেয়া হচ্ছে ভোট। 

বিকাল তখন সাড়ে তিনটা। গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্র চান্দনা চৌরাস্তা। ভোটগ্রহণ তখনও শেষ হয়নি। চান্দনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে তখন মহাসড়ক আটকে নৌকার মিছিল করছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা। কেন্দ্রে ঢুকতেই বামপাশে দেখা গেল লাইভের যন্ত্রপাতি সেট করে রেখেছে অন্তত ৫টি টেলিভিশন চ্যানেল। সেখানে নৌকার ব্যাজধারী লোকজন ও ভোটারদের সঙ্গে খোশগল্প করছেন সাংবাদিকরা। নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মত্ত রয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশের একটি মডেল নির্বাচন চলছে এ কেন্দ্রে। ভেতরে গেলে দেখা যায়, একটি বুথেও বিএনপির এজেন্টদের পাওয়া যায় না। কেন্দ্রের পুরুষ ৩-৪-৫ নম্বর বুথের সামনে কোনো ভোটার নেই। প্রতিটি বুথের দরোজায় দাঁড়িয়ে আছেন একজন করে। সেদিকে এগিয়ে গেলে একজন যুবককে মোবাইলে বলতে শোনা যায়, ভাই- কাজ শেষ প্রায়। বিকাল সাড়ে তিনটায় বুথে উঁকি দিতেই দেখা যায় সামনে বাক্স রেখে অনবরত সিল মারছেন আর বাক্সে ভরছেন কয়েকজন তরুণ। 

তাদের গলায় তখন ঝুলছিল জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাজ। ভোট কক্ষের জানালা দিয়ে সিলমারার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন ওই সময় সেখানে উপস্থিত এক দৈনিকের সাংবাদিক। সেটা দেখে কয়েকজন তরুণ এগিয়ে এসে মারমুখো ভঙ্গিতে ধারণকৃত ভিডিও মুছে ফেলতে বলেন। এ বুথের উপর তলায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবদুস সাত্তারের কক্ষ। তার কাছে যাওয়ার পথে দেখা গেল, প্রিজাইডিং কর্মকর্তার পাশের কক্ষেই ব্যালট নিয়ে সিল মারছেন দুজন তরুণ। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সাত্তার বললেন, তিনি কিছুই জানেন না। কেউ তার কাছে অভিযোগ করেনি। এর আগে দুপুর তখন দেড়টা। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের গাছার খন্দকার রজব আলী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্র। বাইরে নৌকার ব্যাজধারীদের ভিড়। কেন্দ্রে প্রবেশের পর জানা গেল, কিছুক্ষণ আগে এ কেন্দ্র থেকে এক বান্ডিল ব্যালট ছিনতাই হয়েছে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সাবিউল ইসলাম জানান, ‘টিফিন ক্যারিয়ার’ প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল্লাহ আলম মামুন মণ্ডলের সমর্থকরা ১০০ পাতার একটি ব্যালট বই ছিনিয়ে নেয়। এ কারণে ৪৫ মিনিট ভোট বন্ধ ছিল।

সব ব্যালট বাতিল করা হয়েছে। তাই ফলে প্রভাব পড়বে না। ব্যালট বই ছিনিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এদিকে কেন্দ্রের প্রতিটি বুথের সামনে তখন ভোটারদের লাইন। কিছুক্ষণ অবস্থান করে দেখা গেল, লাইন এগোচ্ছে না। কেন্দ্রের দুই নম্বর বুথে উঁকি দিতেই দেখা গেল ভেতরে নৌকার ব্যাজপরা কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার সময় একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটার বললেন, বুথের বাইরে যে লাইন দেখেছেন সেটা ভুয়া। দলের লোকজনকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ভেতরে ভোট কাটা চলছে। দুপুর তখন আড়াইটা। জয়দেবপুর শহীদ স্মৃতি কলেজ কেন্দ্র। কেন্দ্রের মুখে যথারীতি মহড়া। ভেতরে একটি বুথে ঢুকতেই দেখা গেল এক ভোটার অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তিনি অভিযোগ করলেন ব্যালটে আগে থেকেই ‘নৌকা’য় সিল দেয়া ছিল। এ সময় একজন এসে তাকে শাসিয়ে দেয়ার পর তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেন। 

সকাল থেকে এমন পরিস্থিতি ছিল না গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। সকালের দিকে ভোটের উৎসব দেখা গেল সালনার ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার দুটি কেন্দ্রে। বিএনপির পোলিং এজেন্টদেরও কেন্দ্রে পাওয়া গেল। এজেন্ট নজরুল ইসলাম বললেন, দায়িত্ব পালনে কেন্দ্রে আসতে পারবেন কিনা ভয়ে ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রে আসতে পেরেছেন। এখন ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকতে পারবেন কিনা সে ভয়ে আছেন। ভোটাররা জানালেন, ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। বিএনপির ক্যাম্পে বসে একই কথা বললেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সাখাওয়াত হোসেন। সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, টিঅ্যান্ডটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাড়িয়ালী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা যায়।

সকাল তখন সাড়ে আটটা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের টেকনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। স্কুল প্রাঙ্গণে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা তখনও হাতেগোনা। কেন্দ্রে প্রবেশ করে এক নম্বর পুরুষ বুথে ঢুকতেই বাধা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের একজন এজেন্ট পথরোধ করে বললেন, ভোট কক্ষের ভেতরে সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধ। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান ভোটকেন্দ্রের বারান্দাতেই ছিলেন। সাংবাদিক প্রবেশে বাধা-নিষেধের কথা শুনেই এলেন। বললেন, সাংবাদিক প্রবেশে বারণ নেই। টেকনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি কেন্দ্রের সবক’টি বুথেই ভোট চললো নির্বিঘ্নে। সময় তখন বেলা সাড়ে ১১টা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জরুন হাফেজিয়া মাদরাসা কেন্দ্র। কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে।

তিনি একজন আনসারকে ভেতরে পাঠান। ১০ মিনিট পর অনুমতি আসে। ভেতরে যাওয়ার পর প্রিজাইডিং অফিসার প্রথমেই জানতে চান সাংবাদিকরা কে কোথায় কাজ করেন। এ সময় তার কক্ষে বসে খোশগল্প করছিলেন নামসর্বস্ব একটি পত্রিকার একজন সাংবাদিক ও কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। প্রিজাইডিং অফিসার বললেন, ভোট বেশ শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। তিনি কোনো বুথের দিকে যেতে অনুমতি দিলেন না। অন্যদিকে দুপুর তখন দুইটা। নাইজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হলেও নারী ও পুরুষ দুইটি কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ হয়েছে শান্তিপূর্ণ। ভোটকেন্দ্রের ধারেকাছে ধানের শীষের লোকজন দেখা না গেলেও উপস্থিত ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকরা। বিকাল ৩টা তখন। কোনাবাড়ি এমইএইচ আরিফ কলেজ কেন্দ্র। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত কম। কেন্দ্রের ১ ও ২ নম্বর বুথ মিলিয়ে পৌনে আটশ’ ভোটের মধ্যে বিকাল তিনটা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে মাত্র সাড়ে তিনশ’ ভোট। 

  • Courtesy: Manabzamin/ June 27, 2018