নিরাপদ সড়কের দাবিতে হওয়া ছাত্র আন্দোলনে ‘ফেসবুকের মাধ্যমে উস্কানি’ ও সহিংসতার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫১টি মামলা হয়েছে। এতে জ্ঞাত ও অজ্ঞাতনামাসহ আসামি হয়েছে চার সহস্রাধিক। গত ২৯শে জুলাই ছাত্র আন্দোলন শুরুর পর থেকে ১১ই আগস্ট পর্যন্ত মামলা ও আসামির এই পরিসংখ্যান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)। এর মধ্যে অন্তত কয়েক শ’ ‘উস্কানিদাতা’কে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রায় প্রতিদিনই তাদের কাউকে না কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ভোরে ফেসবুকে উস্কানির অভিযোগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুর নাহার লুমাকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ক্ষিদ্রচাপরি চর এলাকায় দাদার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ও বেলকুচি থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। লুমা ইডেন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার আগে মঙ্গলবার রাতে একই অভিযোগে রাজধানী থেকে আটক করা হয়েছে ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহমাদ হোসাইনকে (১৯)।
একই রাতে কামরাঙ্গীর চর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই এলাকার জামিয়া নুরিয়া মাদরাসার ছাত্র নাজমুস সাকিবকে (২৪)। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা এ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
ডিএমপি
সূত্রে জানা যায়, গত ২৯শে জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দু’জন শিক্ষার্থী জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় নিহত হওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর
রাস্তায় নামে তারা। তারপর
থেকে গত ১১ই আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ও ফেসবুকে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে একে একে বিভিন্ন থানায় মামলাগুলো করা হয়। এর
মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা ৪৩ মামলায় ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ২৯ জনকে আসামি করে করা মোট ৮টি মামলায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গেপ্তার করা হয়েছে। ৮টি
মামলার মধ্যে ৪টি মামলা ডিএমপি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, ১টি ডিবি পুলিশ এবং ১টি থানা পুলিশ তদন্ত করছে। ওই
৯৭ জনের সঙ্গে গ্রেপ্তারের মিছিলে গতকাল ৩ জন যোগ হলে তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০ জনে। অবশ্য
একই অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিকে শামসুন্নাহার হলের সামনে থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আটক করা হলেও মধ্যরাতে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে
ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ও ফেসবুকে উস্কানির অভিযোগে দায়েরকৃত ৫১ মামলার মধ্যে ৪৩টি করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে। গত
১১ই আগস্ট পর্যন্ত সেগুলোতে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ৮১ জনকে। এদিকে
দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ডিএমপির রমনা বিভাগে করা ১৪ মামলায় ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর
মধ্যে ১০টি মামলাই হয়েছে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে। সেগুলোতে
গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০ জনকে। আর
৮৪ জনকে আসামি করে দায়েরকৃত ৪ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে অপর ১১ জন। এর
মধ্যে ১৩টি তদন্ত সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও অপর একটির তদন্ত করছে ডিবি। আর
লালবাগ বিভাগে এজাহারনামীয় একজনসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে দায়ের করা একটি মামলায়ও ১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওয়ারী
বিভাগে দায়ের হওয়া দু’মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ৩৫০ থেকে ৪৫০ জন। তাতে
গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে একজনকে। ডিএমপির
মতিঝিল বিভাগের কয়েক থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা ৬ মামলায় ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। তেজগাঁও
বিভাগে ৬ জনকে আসামি করে দায়ের হওয়া দু’মামলায় এজাহারনামীয় ২ জন ও সন্দেহভাজনসহ ৮জন গ্রেপ্তার হয়।
মিরপুর
বিভাগের মিরপুর মডেল থানায় বিইউবিটি ইউনিভার্সিটি ও কমার্স কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ ছাত্র-শিক্ষককে আসামি করে দায়ের হয়েছে অপর এক মামলা। আর
কাফরুল থানায় অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে ১টি ও ৯৬ জনকে আসামি করে আরো ৩টিসহ ৫টি মামলা করা হয়েছে। সবচেয়ে
বেশি আসামি হয়েছে রাজধানীর কূটনৈতিক জোন গুলশান বিভাগের একাধিক থানায় করা মামলায়। গুলশান
বিভাগে অজ্ঞাতনামা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪৫০ জনকে আসামি করে ৭টি মামলা ও ৩১ জনকে আসামি করে আরো ২টি মামলাসহ মোট ৯টি মামলা করা হয়েছে। ?৯টি
মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২৬ জন। অপর
দিকে উত্তরা বিভাগে অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে ৩টি মামলা হয়েছে। আর
১১৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে আরো ১টি মামলাসহ সেই বিভাগে ৪টি মামলা করা হয়েছে। তাতে
গ্রেপ্তার হয়েছে ৩ জন।
আর
তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে করা ৮ মামলায় ২৯ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৬ জন। গতকাল
গ্রেপ্তার অপর তিনজনকে উভয় ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডিএমপির
মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. ওবায়দুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ছাত্র আন্দোলনে উস্কানি ও সহিংসতার অভিযোগে মামলাগুলো হয়েছে। সাইবার
ক্রাইম ইউনিট, ডিবি ও থানা পুলিশ মামলাগুলো তদন্ত করছে। অনেকে
শনাক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন
কয়েকজন করে গ্রেপ্তার হচ্ছে।