Search

Tuesday, September 11, 2018

দুই শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের দাবি বিএনপির

শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন নির্বিচার ধরপাকড়


ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের পর পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের শিকার হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঢাকার বাইরেও দেশের বিভিন্নস্থানে দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের তাগিদ দিয়েছে বিএনপি।


খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দাবিগুলো মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা। দাবিগুলো হচ্ছে- আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে নির্বাহী ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন।

সেই সঙ্গে অসুস্থ খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় তার পছন্দের একটি বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থার দাবিও জানান বিএনপি নেতারা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে ঢাকার মতো দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, শহর ও পৌরসভায় একই সময়ে এই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও অঙ্গ দলগুলোর নেতাকর্মীরা। গাজীপুরে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ। পুলিশি লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণে মহিলা দলের সাবেক সভাপতি আনোয়ারা বেগম, যুবদল নেতা সাজেদুল মোল্লাসহ ২০ জনের মতো নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন।

সরকার পতনের আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক দলের বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়ে মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন দেউলিয়া রাজনৈতিক দল। এই সরকারের দিন শেষ, জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সবাই ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখলে তাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমাদের চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার আগেই দলমতনির্বিশেষে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এখন আমাদের দরকার সে ঐক্য, ইস্পাত কঠিন ঐক্য। দল ও জনগণের মধ্যে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অচলায়তনকে ভাঙতে হবে। এই সরকার যারা বুকের ওপর পাথরের মতো বসে আছে তাদেরকে সরাতে হবে। জনগণের গণতন্ত্র ও জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাচ্ছি।

এটা কোনো করুণা চাচ্ছি না, কোনো দয়া ভিক্ষা চাচ্ছি না। তার যেটা প্রাপ্য-তিনি জামিন পেয়েছেন। সেই জামিনে তাকে মুক্ত করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, খালেদা জিয়া যদি কারাগারে থাকেন তাহলে এদেশের মানুষের কাছে কোনো নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য হবে না। আর দেশনেত্রীকে মুক্তি দিলে তাহলেই বোঝা যাবে এই সরকার দেশে নির্বাচন চায়।

তিনি বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য সরকার সারা দেশে ভৌতিক মামলা করছে। ঈদুল আজহার পর থেকে ১ লাখ মানুষকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। এ ছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ হাজার নেতাকর্মীকে। গ্রামেগঞ্জেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ঘুমোতে পারছে না। সেই সঙ্গে হুমকি-ধামকি দিয়ে গোটা জাতিকে জিম্মিতে পরিণত করেছে। কিন্তু গুম, খুন ও মিথ্যা মামলা দায়ের আর হুমকি-ধামকি দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না।

প্রশ্নে বিএনপির দাবিগুলো তুলে ধরে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি- এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে তফসিল ঘোষণার আগেই। সংসদ ভেঙে দিতে হবে তফসিল ঘোষণার আগেই। নির্বাচন পরিচালনায় একটা নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকার বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সব অর্জনকে তারা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণের ষড়যন্ত্র করছে। আর পার্লামেন্টকে পরিণত করেছে প্রহসনে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শুধু ক্ষুব্ধ হলে হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সরকারকে হটাতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু, সরকার তার চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা করছে। খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে সরকার আবারো ২০১৪ সালের ৫ই জানুুয়ারির মতো একটি যেনতেন নির্বাচন করতে চাইছে। এ জন্য আদালত থেকে জামিন হওয়ার পরও খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, কিন্তু দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আগামী নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সারা দেশের মানুষ যেমন এই দাবিতে একমত, সারা বিশ্বও বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। তাই খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না। হতে দেয়া হবে না। তফসিল ঘোষণার আগে আমাদের সকল দাবি পূরণ করতে হবে। অন্যথায় জনগণ একটি জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে আন্দোলন করবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে তার মতোই ভূমিকা পালন করতে হবে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই নির্বাচন করে এ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়াকে নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। তিনি বলেন, খালেদাকে মুক্ত করে গণতন্ত্রের লড়াই এগিয়ে নিয়ে, সব দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাবে বিএনপি। চতুর্থবারের মতো তাকে প্রধানমন্ত্রী করবে এ দেশের মানুষ।

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, সেলিমা রহমান, বরকতউল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিমউদ্দিন আলম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিম, ছাত্রদলের রাজীব আহসানসহ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতারা বক্তব্য দেন।

এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আবদুস সালাম, স্বনির্ভর সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, জোটের শরিক জাগপার খোন্দকার লুৎফর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম ও লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মোকতার হোসেনসহ বিএনপি ও জোটের শরিক দলের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে অংশ নেন।

ব্যাপকরপাকড়

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ পুরো এলাকাটিতে নিরাপত্তা জাল তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রিজন ভ্যান, সাঁজোয়া যান ও জলকামানসহ পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে আশেপাশের এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছিল তৎপর।

এদিকে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টা থেকেই বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। জমায়াতের পরিধি বেড়ে প্রেস ক্লাব থেকে সুপ্রিম কোর্টের সামনের কদম ফোয়ারা ও অন্যদিকে পল্টন মোড় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে।

নানা বয়সের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। একপর্যায়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েতের কারণে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওদিকে ১১টার দিকে পল্টন মোড়, সেগুনবাগিচা ও শিল্পকলার সামনে সহ কয়েকটি স্পটে মানববন্ধনে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করে পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে থেকে দ্রুত সরে যেতে থাকেন বিএনপি সহ অঙ্গ দলের কিছু নেতা। এ সময় সাদা পোশাকে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মানববন্ধন থেকে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে।

দুই শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার: বিএনপি

খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে পুলিশ সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গ দলের দুই শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল বিকালে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, আজকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ও গাজীপুর, বাগেরহাট, মেহেরপুরসহ সারা দেশে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু কর্মসূচিতে আসা-যাওয়ার পথে সরকারের আজ্ঞাবহ পুলিশ বাহিনী বিনা উস্কানিতে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে। গ্রেপ্তার করেছে নির্বিচারে।

এই গ্রেপ্তার থেকে সাধারণ মানুষ ও নেতাদের গাড়িচালকরাও রক্ষা পায়নি। বিএনপির কর্মসূচি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করেছে। রিজভী বলেন, পুলিশের যেন আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল। এই পরিকল্পনামাফিক পুলিশ গাজীপুরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গ্রেপ্তার করেছে।

রিজভী বলেন, মানববন্ধন কর্মসূচির ওপর পুলিশি এই আক্রমণ নৃশংস দস্যুতার নামান্তর মাত্র। তাহলে মানববন্ধন কর্মসূচির অনুমতি দিয়েছিলেন কী ওত পেতে গ্রেপ্তার করার জন্য? আমরা সরকারকে বলে দিতে চাই, এতে আপনাদের শেষ রক্ষা হবে না। যতই ট্রেন, লঞ্চে চড়ুন না কেন ডুবন্ত নৌকাকে আর ভাসানো যাবে না।

গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী জানান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দলের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল মতিন, লেবার পার্টির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম, গাজীপুর থেকে প্রয়াত নেতা আসম হান্নান শাহর বড় ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, জিসিসি কাউন্সিলর হান্নান মিয়া হান্নু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শরিফ হোসেন, রমনা থানা যুবদল সাধারণ সম্পাদক বাবু, কোতোয়ালি থানা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামনু, নবাবগঞ্জ থানা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুজ্জামান, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা যুবদল সভাপতি মোহাম্মদ সুলায়মান, দক্ষিণখান থানা যুবদল সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ রাসেল, গুলশান থানা যুবদল সাংগঠনিক সম্পাদক মেহরান জাবিন ফারুক, ক্যান্টনমেন্ট থানা যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামসহ যুবদলের ৫০ জন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য এইচ এম জাফর আলী খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারীসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩০ জন, বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৪০ জন, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি গাজী মনিরুজ্জামান মানিক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, কেন্দ্রীয় সহ-মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, ঢাকা কলেজ শাখার সহ সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পাভেল শিকদার, ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সদস্য আবু ওবায়েদ শাহেদসহ ৫০ জন, গাজীপুরে ২৫ জন, বাগেরহাটে ৬ জন, মেহেরপুরে ১১ জনসহ আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তিনি অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান। সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, সহ নার্সেস বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম উপস্থিত ছিলেন। ওদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবার দুই ঘণ্টার প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকার রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ বা গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ প্রতীকী অনশন পালিত হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে বিএনপি।

Courtesy: Manabzamin/ Sep 11, 2018


ভোটের আগে ব্যবসায়ীদের ছাড়

  • ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়ে দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ
  • বাজেট পাসের ৭০ দিনের মাথায় ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা
  • পোশাক রপ্তানিকারকদের উৎসে ও করপোরেট কর কমল
  • নগদ সহায়তা পেল আরও ৯ খাত
  • রাজস্ব আদায় কমবে, লাভ বাড়বে ব্যবসায়ীদের।








নির্বাচনের বছরে ব্যবসায়ীদের আরও বেশি সুবিধা দেওয়া হলো। করে যেমন ছাড় দেওয়া হলো, তেমনি নগদ সহায়তাও বেড়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের উৎসে কর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের করপোরেট করও কমানো হয়েছে। এর ফলে পোশাকমালিকদের লভ্যাংশ আরও বাড়বে।
দেশের বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি করলে দশমিক ৬ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হবে। আগে ছিল দশমিক ৭ শতাংশ। আর করপোরেট করহার ১৫ থেকে ১২ শতাংশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে রপ্তানিমুখী খাতে নগদ সহায়তা দেওয়ার পরিধিও বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুরোনো খাতগুলোর পাশাপাশি আরও ৯টি নতুন খাতের রপ্তানিকারকেরা এখন থেকে নগদ সহায়তা পাবেন। নগদ সহায়তার রপ্তানি পণ্যের তালিকায় ওষুধ, মোটরসাইকেল, সিরামিকপণ্যের বড় খাত আছে।
বাজেট পাসের ঠিক ৭০ দিনের মাথায় সরকার ব্যবসায়ীদের বিশেষ এই সুবিধা দিল। এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় কমবে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী লবিংয়ের কারণেই এই সুবিধা আদায় করতে পেরেছেন। অর্থবছরের মাঝে এভাবে সুবিধা দিলে বাজেট প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গতকাল সোমবার একই দিনে ব্যবসায়ীদের এ ধরনের সুবিধা দিয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এখন থেকে তৈরি পোশাক খাতসহ সব খাতকেই (পাটপণ্য ছাড়া) রপ্তানিকালে দশমিক ৬ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হবে। গত ১ জুলাই থেকে এই হার কার্যকর করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। দেশ থেকে যত পণ্য রপ্তানি হয়, এর ৮৩ শতাংশের বেশি হয় তৈরি পোশাক। প্রতিটি রপ্তানি চালান বন্দর দিয়ে জাহাজীকরণের আগেই উৎসে কর কেটে রাখা হয়। জাহাজীকরণের আগপর্যন্ত রপ্তানি মূল্যের ওপর বা এফওবি মূল্যের উৎসে কর আরোপ করা হয়। এ ছাড়া নিট ও ওভেন পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের বার্ষিক আয়ের ওপর আগের চেয়ে কম, অর্থাৎ ১২ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে হবে। আর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সবুজ কারখানা হলে ওই মালিককে ১০ শতাংশ হারে কর দিলেই হবে। দুটি সুবিধাই আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত থাকবে।
সফল বিজিএমইএ
কয়েক বছর ধরেই তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকদের উৎসে কর দিতে হচ্ছে। এনবিআরে আয়কর অধ্যাদেশে তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ। কিন্তু তিন বছর ধরে প্রতিবছর প্রজ্ঞাপন দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকের উৎসে কর দশমিক ৭ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা হতো। ওই সুবিধার মেয়াদ এক বছর করে, অর্থাৎ জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হতো। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিভিন্ন সভায় একাধিকবার বলেছেন, এবার তৈরি পোশাক খাত আর বাড়তি কোনো সুবিধা পাবে না। তিনি কথামতো বাজেটে তা করেছেনও। বাজেটে তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর কমানো হয়নি। বরং বার্ষিক করপোরেট করহার বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ এবং সবুজ কারখানা হলে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (করনীতি) কানন কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, বাজেটের পর চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে যখন ১ শতাংশ উৎসে কর হয়ে গেল, তখন পোশাক রপ্তানিকারকদের কাছে তা বোঝা হয়ে গেল। তখন তাঁরা কর কমানোর দাবিটি আরও জোরালোভাবে করতে থাকেন। যেহেতু তাঁরা দেশের প্রধান রপ্তানিকারক, সে জন্য তাঁদের কিছুটা কর-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন, এতে অল্প কিছু রাজস্ব কমতে পারে। তবে নতুন নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে মোট রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির সুযোগও আছে। তখন কর কমানোর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
গত জুন মাসে চলতি অর্থবছরের বাজেটের পর প্রতিক্রিয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ও উৎপাদকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলে করপোরেট কর ও উৎসে কর কমিয়ে আনব।
অর্থমন্ত্রী কথা রাখতে না পারলেও বিজিএমইএ সভাপতি নিজেদের দাবি আদায় করতে পেরেছেন। বাজেট ঘোষণার তিন মাস পর এনবিআর তৈরি পোশাক খাতের উৎসে কর ও করপোরেট কর কমিয়ে দিল।
চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর হিসেবে দুই হাজার কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে। উৎসে কর কমানোর ফলে এই খাতে কর আদায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা কমে যেতে পারে।
পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর গতবারের চেয়ে কমানো হলেও খুশি নন বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। গত রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে ভারতের রুপি, তুরস্কের লিরা ও চীনের ইউয়ানের দাম কমছে। অন্যদিকে আমাদের ব্যবসার খরচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শিগগিরই পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বাড়বে। তাই আমাদের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা রাখতে ও শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে পাঁচ বছরের জন্য কোনো ধরনের কর থাকা উচিত নয়।
নগদ সহায়তা পাবে নতুন ৯ খাত
রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার তালিকায় আরও নয়টি খাতকে যুক্ত করল সরকার। গতকাল সোমবার জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন করে ওষুধ, মোটরসাইকেল, রাসায়নিক পণ্য (ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, কস্টিক সোডা ও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড), রেজার ও রেজার ব্লেডস, সিরামিকপণ্য এখন থেকে নগদ সহায়তা পাবে।
সামগ্রিক বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই তৈরি পোশাক খাতের নেতারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে লবিং করে দাবি আদায় করে থাকেন। এটা সাধারণত বাজেট প্রক্রিয়ার মধ্যেই হয়। তবে এবার তা বাজেট প্রক্রিয়ায় না হয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে করা হলো। নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের সদিচ্ছা প্রকাশের কৌশলও হতে পারে। এবার ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের উদারতা একটু বেশি মনে হচ্ছে। এভাবে নীতি পরিবর্তন করা ঠিক নয়। এটি বাজেট প্রক্রিয়াকে হীনম্মন্য করে তোলে। ব্যক্তির ক্ষমতা প্রকাশ পায়।

Courtesy: Prothom Alo Sep 11, 2018



পানির দামে আউশ বিক্রি









সম্পাদকীয়-

অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন মার খেলে তবু মনকে প্রবোধ দেওয়া যায়। কপাল খারাপবলে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া যায়। কিন্তু বাম্পার ফলন হওয়ার পরও যখন লোকসান গুনতে হয়, তখন আর সান্ত্বনার জায়গা থাকে না। ফসল উৎপাদনে যা খরচ হয়, দাম তলানিতে নেমে যাওয়ার কারণে সেই উৎপাদন খরচটুকুও যদি উঠে না আসে, তাহলে কৃষকের আবার ফসল ফলানোর মানসিকতা থাকে না।


এ বছর বরিশাল বিভাগের কৃষকেরা আউশ ধান নিয়ে এই মহাবিপদে পড়েছেন। মাঠভরা ধান দেখে তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছিল ঠিকই, কিন্তু বাজারে গিয়ে তাঁদের মলিন মুখে ফিরে আসতে হচ্ছে। ধানের দাম শোনার পর সব আনন্দ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই পকেটে আসছে না।

চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় প্রায় ২ লাখ ১ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল প্রায় ৪ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন চাল। কিন্তু আবাদ হয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি। কৃষকেরা বলছেন, এক একর জমিতে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে তাঁরা আউশের বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। কিন্তু সেই ধান তাঁদের বেচতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। তার মানে একরপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।

আমন মৌসুমের পর এই অঞ্চলের বেশির ভাগ জমি বছরের প্রায় সাত মাস পতিত থাকত। সিডরের পর তাঁরা এই জমিকে বহু ফসলি করতে আউশের আবাদ শুরু করেন। বৈশাখের মাঝামাঝি আউশের আবাদ করেছিলেন তাঁরা। ভাদ্রের মাঝামাঝি ধান পাকতে শুরু করে। এখন এ ধান মাড়াই করে প্রক্রিয়াজাতের কাজ চলছে। এবার ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি একরে দেড় মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। কৃষি বিভাগ এটাকে বাম্পার ফলন বলছে।

কিন্তু দামই যদি না পাওয়া যায়, তাহলে বাম্পার ফলন দিয়ে কৃষক কী করবেন? ধান ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, চালকলের মালিকেরা ধান কিনছেন না বলে দাম কমে গেছে। এই অবস্থায় খাদ্য বিভাগ কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনলে কৃষকেরা উপকৃত হতেন। তাঁরা ন্যায্যমূল্য পেতেন। তাই বিষয়টি খাদ্য বিভাগের বিবেচনায় নেওয়া দরকার। খাদ্য কর্মকর্তারা যদিও বলছেন, খাদ্য বিভাগ শুধু বোরো ও আমন মৌসুমে ধান কেনে; আউশ কেনার বিষয়ে তাঁরা কোনো নির্দেশনা পাননি; তথাপি অবিলম্বে সরকারের কৃষকবান্ধব সিদ্ধান্তে আসা দরকার।

আগে দক্ষিণাঞ্চলে আউশের আবাদ হতো না বললেই চলে। তাই এ মৌসুমে সরকার চাল কেনার কথা ভাবেনি। কিন্তু এখন এই ধানের প্রচুর আবাদ হয়। ফলে সিদ্ধান্তও নতুন করে নিতে হবে। দ্রুত এই মৌসুমেও চাল কেনার বিষয়টি সরকারকে মাথায় নিতে হবে। দেরি করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁরা ফসল ফলাতে নিরুৎসাহিত হবেন। তাতে দেশেরই ক্ষতি।
  • Courtesy: Prothom Alo/Sep 11, 2018

গ্রেপ্তারে’ আইনের এতটা লঙ্ঘন কেন?

সম্পাদকীয়



পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বেআইনিভাবে আটকে রেখে নির্যাতনেরযে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা দেশের সব স্তরের মানুষকে গভীরভাবে বিচলিত, বেদনাহত ও স্তম্ভিত করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। অজ্ঞাতপরিচয়ে গ্রেপ্তারের টানা পাঁচ দিন পরে সন্তানদের আদালতে আনতে অভিভাবকদের আকুল অনুরোধ জানানোর প্রেক্ষাপটে ডিবি গতকাল দুটি পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমত তারা তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়েছে; দ্বিতীয়ত তারা দাবি করেছে, এই ১২ জন শিক্ষার্থীই ছাত্রশিবিরের কর্মী।

অনেক দিন পরে একসঙ্গে এত বেশিসংখ্যক শিবির কর্মীগ্রেপ্তারের খবর দিল আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে অভিযোগের ধরন, বয়স কিংবা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, ডিবির বিরুদ্ধে বেআইনি পন্থায় শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়া’, পাঁচ দিন আটকে রাখার পর রোববার গ্রেপ্তারদেখানো এবং তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানোর যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা তারা এখন পর্যন্ত খণ্ডন করতে পারেনি। গতকাল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে যেসব ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা তেমন বিশ্বাসযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়নি।

এই প্রশ্ন এখন ক্রমশ জ্বলন্ত হয়ে উঠছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে এমন কিছু স্পর্শকাতর ঘটনা ঘটছে, যাতে এটা অনুমান করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে যে আইন অমান্য করে চলার মতো সিদ্ধান্তগুলো আসলে কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে নিচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায় এসেছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখেছি, পুলিশের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুরের ঘটনাই বেশি। সুতরাং চার দিন বিলম্বে আদালতে পাঠিয়ে দুদিন রিমান্ড পাওয়ার মতো ঘটনা গা সওয়া ব্যাপারে পরিণত হওয়ার আগেই আমরা কায়মনোবাক্যে আমাদের স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ কামনা করি।

আসন্ন সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের বিরুদ্ধে সারা দেশে পাইকারি ধরপাকড় করার যে অভিযোগ আছে, তা থেকে আমরা ডিবির মতো এলিট সংস্থার আচরণ ও মনোভাবকে কি কিছুটা হলেও পৃথক করতে পারব না? আশঙ্কা করা চলে যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে যেন বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।

সম্প্রতি টিআইবির খানা জরিপে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। সে কারণে জনপ্রশাসনের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এখনই এ বিষয়ে সজাগ হওয়া দরকার। কারণ, এমন সন্দেহ করার কারণ আছে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর ভেতরে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার মান ক্রমশ নিচে নামছে। এ ধরনের পরিস্থিতির বিপদ হলো, অসাধু কিংবা উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের আশীর্বাদ আছে ধরে নিয়ে তারা অপরিণামদর্শী অথচ বেপরোয়া পদক্ষেপ নেওয়ার প্রবণতা দেখাতে পারেন। ১২ শিক্ষার্থীর প্রতি সর্বতোভাবে যে বেআইনি ও নির্দয় আচরণ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়, তার কোনোই দরকার ছিল না।

 ১৯৯৮ সালে পুলিশি হেফাজতে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলের আলোচিত মৃত্যুর পর বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন যেসব সুপারিশ করেছিল, তা আমরা অগ্রাহ্য হতে দেখেছি। সে ঘটনার সূত্রেই পরে আমরা গ্রেপ্তার ও রিমান্ড বিষয়ক সুপ্রিম কোর্টের তরফে নির্দিষ্ট গাইডলাইন পেয়েছি। সেই গাইডলাইন প্রায় সব ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে। ডিবি তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ’–এর বরাতে যা জানা সম্ভব হয়েছে বলে গতকাল দাবি করেছে, তা রিমান্ডে বৈধভাবে জানা গেলে খুব কি ক্ষতি হতো? এসব ঘটনায় আইন না মেনে খামোখা যারা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের ভাবমূর্তির জন্য জরুরি।

  •  Courtesy: Prothom Alo /Sep 11, 2018