Search

Tuesday, November 13, 2018

What is the rationale for the 7-day deferral?

EDITORIAL

EC should consider the political consensus


We are quite puzzled by the Election Commission's decision to defer the general election by a week. The election is now set to take place on December 30 instead of December 23 as initially announced. The new decision comes on the heels of opposition parties' demand that the election be deferred by a month. The ruling party expressed its "no objection" to the opposition demand. We cannot help but wonder what difference a week would make in conducting all the necessary pre-poll activities and preparatory work. When there is consensus among all parties, we believe the schedule could have been shifted back to a reasonable date.

We are all happy that the nation is gearing toward a participatory national election. The EC should do everything possible to further this process. Giving political parties sufficient time is a crucial part of ensuring universal participation, especially when the EC has enough time at its disposal. The EC hurriedly announced the polls schedule earlier which is a record in itself. It only took seven days to announce the schedule after the 90-day countdown began on October 31 whereas in the past, the ECs had taken, on average, a month after the 90-day countdown began to announce the schedule. The EC has until January 28, 2019 to hold the polls which leaves ample time for the election to be deferred by more than a week—as the EC has done—at least to mid-January.

The EC has a responsibility to fulfil its constitutional obligations by ensuring that the 11th Parliamentary Election is free, fair and participatory. That should be the EC's fundamental objective, and not conducting the election with haste. We urge the EC to reconsider its decision keeping in mind its own promises, the facts on the ground, the demands of the opposition, and most importantly, its constitutional obligations. 

  • Courtesy: The Daily Star / Nov 13, 2018

Unabated transport workers’ crimes

EDITORIAL

FATAL traffic safety condition in Bangladesh is known to all. However, passengers’ lives in the high ways are not only at risk of road accidents, criminal misconduct of the transport workers have been taking lives. The murder, rape and physical assault of passengers in long-route buses has become a common affair. A middle aged woman on Friday, as reported in New Age on Sunday, was killed on a moving bus after pushing her septuagenarian father off the bus on Dhaka-Tangail highway near Ashulia. Law enforcement agencies so far failed to identify the bus operator or the assailants and they suspect that the woman may have been sexually assaulted before murder. In a similar incident, on August 25 2017, Rupa Khatun, a law student was brutally killed after being raped by the bus driver and helpers in a moving bus from Bogra to Mymensingh. Earlier this year, a student of North South University embraced similar fate when he was thrown in a canal from a Chittagong to Dhaka bound bus. The murder of Rupa and Payel shocked the nation and compelled the law enforcement agencies to bring the perpetrators to court, but they failed to prevent such deaths.

Transport workers including drivers and their helpers are recruited arbitrarily. There are no rules of conduct that legally binds the workers to maintain their moral and ethical standards. The transport workers are mostly recruited on a contractual basis. In this system, the drivers and other workers get paid on the basis of the number of trips they have completed. Therefore, they do not enter into any kind of work agreement with their employer that will compel them to adhere to higher ethical standards while in duty. This system also absolves the employers, bus operators of any liability of the action of their employees. Passengers rights activists laments, in a context, where unskilled workers are allowed to ply the road without proper driver’s training, improvement of ethical standards of transport workers are a far cry. For the unruly behaviour of the transport workers, they also blame the politicisation of the sector meaning that the workers are deployed by ruling quarters to create anarchy on the road for political gain and such purposeful use of labour force has only misguided and encouraged them in deviant activities. Therefore, the murder, rape and physical assault of passengers in the hands of transport workers is symptom of a larger problem that has completely rigged the transport sector in the country.

The government, under the circumstances, must immediately improve the training facilities for transport workers with particular emphasis on gender inequality and violence. It is time that the government involving civil society bodies draft a code of conduct for all engaged in the sector. To put an end to the contractual, arbitrary recruitment process, the authorities concerned need to install a recruitment mechanism that will ensure accountability on both worker and transport owners part. 

  • Courtesy: New Age /Nov 13, 2018

ফের চলন্ত বাসে নারী খুন

সম্পাদকীয়

সাবধান! আস্থা চূর্ণ হচ্ছে!


নারী নিগ্রহ, ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের পর হত্যা এ দেশে নতুন কিছু নয়। এগুলো বলা যায় প্রাত্যহিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রাত্যহিকতার মধ্যেও কিছু ঘটনা আছে যেগুলো নৃশংসতা ও বিকারগ্রস্ততার মাপকাঠিতে বিশিষ্টতা দাবি করে ফেলে। গত শুক্রবার রাতে সাভারের আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে এক নারীকে হত্যার ঘটনা সেই বিশিষ্টতার দাবিদার।

সংবাদপত্রের খবর বলছে, জরিনা খাতুন (৪৫) এবং তাঁর ৭০ বছর বয়সী বাবা আকবর হোসেন টাঙ্গাইল যাওয়ার জন্য আশুলিয়া থেকে বাসে উঠেছিলেন। বাসে তাঁরা ছাড়া আরও চার–পাঁচজন যাত্রী ছিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর বাসটি আবার আশুলিয়ার দিকে ফিরে আসা শুরু করে। এরপরই আচমকা যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা তাঁদের মারধর করে এবং আকবরকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে জরিনাকে নিয়ে চলে যায়। আকবর পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে জরিনার লাশ রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করে।

গত বছরের আগস্টে টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর গলা টিপে ও ঘাড় মটকে এক তরুণীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তারও আগে ধামরাইয়ে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন আরও এক তরুণী। সর্বশেষ জরিনা হত্যার উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়। জরিনা ও তাঁর বাবার কাছ থেকে কিছু ছিনতাইও করা হয়নি। জরিনাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, তা-ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মহাসড়কে যাত্রীবাহী যেসব যান চলাচল করে, তার ভেতরে নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং এসব যানের কর্মীদের ওপর আস্থা ও ভরসা রাখা যাবে—এটিই সাধারণ বিষয়। কিন্তু প্রশাসনের গাফিলতি ও কিছু অপেশাদার পরিবহনকর্মীর পৈশাচিক আচরণের জন্য সামাজিক সম্পর্কে নিহিত আস্থা ও ভরসার জায়গা নষ্ট হচ্ছে। মানুষের প্রতি মানুষের সাধারণ আস্থা ও বিশ্বাস চূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এটি ঘোর আশঙ্কার কথা।

গণপরিবহনের মতো প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় একটি খাত যদি এভাবে আতঙ্কজাগানিয়া হয়ে ওঠে তাহলে সাধারণ মানুষের পক্ষে চূড়ান্ত অসহায়ত্ব বোধ করা ছাড়া আর কী করার থাকে! খোদ পুলিশের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে আশুলিয়া সেতু থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত এলাকা অপরাধপ্রবণ। এ জন্য রাতে ওই এলাকায় পুলিশের বিশেষ টহলের ব্যবস্থা থাকে। যেহেতু এলাকাটি অপরাধপ্রবণ, সেহেতু শুধু বাড়তি টহল দিয়ে একটি এলাকার অপরাধপ্রবণতা কমানো সম্ভব হবে না। এর জন্য প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযান চালানো দরকার। সরকারি তৎপরতার বিষয়ে জনগণের আস্থা ফেরানো দরকার।

দুঃখের বিষয়, এ দেশে প্রতিনিয়ত বহু নারীকে জরিনার মতো ভাগ্য বরণ করতে হয়। কোথাও কোথাও প্রতিবাদ ওঠে। কিন্তু শেষতক প্রতিবাদীরা জানেন, তাঁরা যখন প্রতিবাদ শেষ করে বিষয়ান্তরে চলে যাবেন, তখন সামনে পড়ে থাকবে অনতিক্রম্য অন্যায়-অধ্যুষিত এক সমাজ, যার অসুস্থচিত্ততার নিরাময়ের পথ কারও জানা নেই।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ১৩, ২০১৮ 

আ.লীগের মনোনয়ন চান দুদকের পিপি


ঢাকা-১৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দুদকের কৌঁসুলি (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করে মোশাররফ হোসেন সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মিরপুর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। মিরপুর থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলাম। ঢাকা-১৬ আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করার জন্য গতকাল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলাম। আজ মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছি।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন। এ দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে।

এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলা মামলা, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ মামলা, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং জেল হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলির দায়িত্ব পালন করেছেন মোশাররফ হোসেন কাজল।


  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ১৩, ২০১৮ 

প্রশাসনে বদলি

সম্পাদকীয়

ইসিকে কর্তৃত্বশীল ভূমিকায় দেখতে চাই 

তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে যে দুটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার ক্ষেত্রে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। এর একটিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অব্যাহতি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের অন্যত্র বদলি বা ছুটি দেওয়া যাবে না। এই নির্দেশনা যাতে পালিত হয়, সে জন্য সব মন্ত্রণালয়-বিভাগ, সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়ার কথাও বলেছে ইসি। নির্বাচন কমিশন থেকে জনপ্রশাসনসচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের কাজে সহায়তা দেওয়া সব নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দেওয়া আলাদা চিঠিতে ইসি বলেছে, নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

তবে নির্বাচন কমিশনকে বুঝতে হবে পরিপত্র জারি বা নির্দেশনা দিলেই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। সেই নির্দেশনা যাতে যথাযথভাবে পালিত হয়, সে বিষয়েও তাদের শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। ইসিকে মনে রাখা প্রয়োজন এক জটিল পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির তেমন নেই। বিরোধী দল নির্দলীয় প্রশাসন তথা নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল সেই দাবি আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।

বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব এখন কমিশনকে নিতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইসির এখতিয়ারে চলে গেছেন। কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন, সেটি ঠিক করার দায়িত্ব ইসিরই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হবে সন্দেহ নেই। কিন্তু নির্বাচন শুধু অংশগ্রহণমূলক হলে হবে না, হতে হবে সুষ্ঠু ও পক্ষপাতমুক্ত। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে জন্য একটি অভয় পরিবেশও তৈরি করতে হবে। কেবল বদলির তদারকি নয়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারেও ইসিকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। অপরাধী গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও তাদের শতভাগ নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

প্রতিবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালোটাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য দেখা যায়। এবারও বিভিন্ন পক্ষ সেই একই পথ ধরার চেষ্টা করবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেসব অনাচার কীভাবে মোকাবিলা করে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে আমরা মনে করি, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে আসা অভিযোগ, আপত্তি ও দাবিগুলো আমলে নিয়ে কমিশন সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে কঠিন হলেও একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা একেবারে অসম্ভব হবে না।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন মার্কেট, রাস্তাঘাট, যানবাহন ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাঁদের নামে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুনসহ প্রচারসামগ্রী রয়েছে, তা নিজ খরচে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ মূলত ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা এসব পোস্টার–ব্যানারের প্রায় পুরোটাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাঁদের অনুসারীদের। তাঁদের উৎকট আত্মপ্রচারে নগরবাসী বিরক্ত হলেও নিরুপায়। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের যে দায়িত্ব ছিল, তা পালন করতে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে এসব অপসারণে সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ১৩, ২০১৮ 

Monday, November 12, 2018

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঝুঁকির মুখে

ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য নেই

আশরাফুল ইসলাম

ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে অর্থনৈতিক লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের কী পরিমাণ অর্থনৈতিক লেনদেন হয় তার সঠিক তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে। কিন্তু লোকবলের অভাবে দীর্ঘ তিন বছরেও এ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য না থাকায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

জানা গেছে, ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় দুই লাখ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ সমবায় অধিদফতরের অধীনে রয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার ৬৬২টি সমবায় সমিতি। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অধীনে (আইডিআরএ) রয়েছে ৭৭টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (এমআরএ) অধীনে রয়েছে ৭০০টি ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অন্তর্ভুক্ত ৪১টি মিউচুয়াল ফান্ড ও ৫৫টি মার্চেন্ট ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য যাচাইয়ের জন্য তিন বছরের আগে এ প্রস্তাব করে আইএমএফ। 

বাংলাদেশে ওয়াশিংটন হতে আগত আইএমএফের টেকনিক্যাল মিশন ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের পরিসংখ্যান তৈরি করতে প্রস্তাব করে। আইএমএফের এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে গত ২৫ এপ্রিল এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় একটি আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি অভিন্ন রিপোর্টিং ফরমেট নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। গত ২৭ জুন এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালাভাবে চূড়ান্ত করা হয়। যদিও আইএমএফ থেকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বেরের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানের প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের কোনো তথ্য-উপাত্তের প্রতিবেদন তৈরির কাজ গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত শুরু করা হয়নি। এতে আইএমএফ বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত তৈরির কাজ শেষ হওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য-উপাত্ত তৈরির কাজ শুরু করা যায়নি। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের জরিপ কাজ শুরু করার জন্য একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবল পেলে জরিপ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেনের তথ্য না থাকায় দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না। এতে ঝুঁকির মুখে পড়ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। প্রতিবেদনে আইএমএফের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেনের তথ্য নির্ধারণের জরিপ কাজ সম্পন্ন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/নভেম্বর ১২, ২০১৮ 

ডলারের বিপরীতে টাকার অতিমান - মুদ্রা পাচার ও লেনদেন ভারসাম্যে চাপ বাড়াচ্ছে

হাছান আদনান 

প্রতিবেশী ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকাসহ বিশ্বের অনেক দেশের মুদ্রার বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে মার্কিন ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ডলারের বিপরীতে রেকর্ড দর হারিয়েছে তুর্কি লিরা। রফতানি আয় বৃদ্ধি, উৎপাদনমুখী শিল্পের সুরক্ষা ও অর্থ পাচার রোধের পদক্ষেপ হিসেবে অনেক দেশই নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টো পথে। ডলারের বিপরীতে টাকার মানকে শক্তিশালী করে দেখানো হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার এ অতিমূল্যায়ন আমদানিনির্ভর বাণিজ্য বাড়াচ্ছে। বিপরীতে রফতানিমুখী শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছে উৎপাদনমুখী শিল্পের বিকাশ। অর্থ পাচারও এতে উৎসাহিত হচ্ছে। সর্বোপরি চাপ বাড়াচ্ছে লেনদেনের ভারসাম্যে।

ডলারের বিপরীতে প্রতিবেশী দেশগুলোর মুদ্রার তুলনায় বাংলাদেশী টাকার শক্তিশালী মান ধরে রাখার কারণ অনুসন্ধান করেছে বণিক বার্তা। এজন্য কথা বলা হয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। তারা বলছেন, টাকার বিপরীতে ডলারের যে মূল্যমান, তা অনেকটাই কৃত্রিম। টাকাকে অতিমূল্যায়িত করেই শক্তিশালী দেখানো হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যও বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮০ টাকা ৬০ পয়সা। কিন্তু ওই সময় ডলারের নমিনাল ইফেক্টিভ রেট (নিয়ার) ছিল ১০১ টাকা ২০ পয়সা। একই সময়ে ডলারের প্রকৃত মূল্য বা রিয়াল ইফেক্টিভ রেট (রিয়ার) ছিল ১৩৯ টাকা ৩০ পয়সা।

ডলারের বিনিময় মূল্যের সঙ্গে নমিনাল ও রিয়াল ইফেক্টিভ রেটের বিশাল এ ব্যবধান সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডলারের নমিনাল ও রিয়াল ইফেক্টিভ রেটের সঙ্গে বিদ্যমান বিনিময় হারের বিশাল এ ব্যবধানে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। আমদানিনির্ভর বাণিজ্য এর একটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেকর্ড ৫৮ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি হয়। এ সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানি ব্যয় হয়েছে ১৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

রেকর্ড আমদানি হলেও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি গত অর্থবছর। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ সময়ে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের।

টাকার অতিমূল্যায়নের প্রভাব পড়েছে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড ৯ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও এর আগের অর্থবছরগুলোয় চলতি হিসাবে বড় অংকের উদ্বৃত্ত ছিল। চলতি হিসাবের বিশাল এ ঘাটতি দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টেও (বিওপি) ঘাটতি তৈরি করেছিল। তবে সম্প্রতি বিওপির ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে।

চলতি হিসাবের ধারাবাহিক ঘাটতির প্রভাব পড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। এক বছর ধরে

রিজার্ভের পরিমাণ না বেড়ে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। যদিও এর আগে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

টাকার অতিমূল্যায়ন উৎসাহিত করছে অর্থ পাচারকেও। ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৩ সালে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। আর ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে ২০১৪ সালে।

অর্থ পাচারের বেশির ভাগই হচ্ছে আমদানি-রফতানি চালানে জালিয়াতির মাধ্যমে। আমদানিকারকদের একটি বড় সিন্ডিকেট কয়েক বছর ধরেই আমদানির নামে অর্থ পাচার করছে। অর্থ পাচারে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যমূল্য বেশি দেখাচ্ছে, অন্যদিকে ঘোষণার সঙ্গে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণেও মিল থাকছে না। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হলেও চট্টগ্রাম, বেনাপোল ও মোংলা শুল্ক গোয়েন্দার কায়িক পরীক্ষায় মিলছে খালি কনটেইনার। কখনো আবার শিল্পের কাঁচামালের ঘোষণায় আনা হচ্ছে ছাই, ইট, বালি, পাথর ও সিমেন্টের ব্লক।

একে টাকার অতিমূল্যায়নের প্রভাব হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, যেকোনো মুদ্রার মূল্যমান নির্ধারণের ক্ষেত্রে অতিমূল্যায়ন অথবা অবমূল্যায়নের ঝুঁকি নিতে হয়। আমরা এ পর্যন্ত অতিমূল্যায়ন করার দিকেই হেঁটেছি। এর সমস্যা হলো, এটি সবসময় আমদানিকে উৎসাহিত করে। আমদানিনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যে, তথা শপিং মল, দোকান এগুলোর জন্য এটি ভালো। নন-ট্রেডেবল সেক্টর, তথা যেসব সেবা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করা যায় না, সেসব সেবা খাত উৎসাহিত হয়। কিন্তু মুদ্রার অতিমূল্যায়নের কারণে রফতানি, রেমিট্যান্সের মতো অর্থনীতির উৎপাদনমুখী খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রফতানিমুখী হোক কিংবা অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী, দুই ধরনের উৎপাদনই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে।

ডলারের বিপরীতে টাকার প্রকৃত বিনিময় মূল্য নির্ধারিত হয় একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে। যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো, পণ্য আমদানি-রফতানি বেশি, অর্থনীতির মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে, এমন দেশের রফতানি, আমদানি, মূল্যস্ফীতি, পণ্যমূল্য, উৎপাদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে এ মূল্য বের করা হয়। দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত হয়, এমন ১৫টি দেশের মুদ্রা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বাস্কেট তৈরি করে। এ মুদ্রাগুলো হলো মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড, ইউরো, কানাডিয়ান ডলার, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ভারতীয় রুপি, চীনের ইউয়ান, জাপানের ইয়েন, কোরিয়ান ইয়েন ও সিঙ্গাপুরের ডলার। এসব মুদ্রার সঙ্গে তুলনা করে ডলারের প্রকৃত বিনিময় হার বের করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ডলারের মূল্য নির্ধারণ করা হলে সেটিকে রিয়াল ইফেক্টিভ রেট বা প্রকৃত মূল্য বলে অভিহিত করা হয়। অন্যদিকে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করা হলে তাকে নমিনাল ইফেক্টিভ রেট বা নিয়ার বলা হয়।

নিয়ার বা রিয়ারের ভিত্তিতে ডলার বিনিময় না হওয়ায় বাজারের সঙ্গে এর খুব বেশি সম্পর্ক নেই। দেশের বাজারে গতকাল আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৩ টাকা ৯০ পয়সায়। নগদ ডলার ৮৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে ব্যাংকগুলো।

বাজারে বিদ্যমান ডলারের এ বিনিময় মূল্য ও প্রকৃত বিনিময় মূল্যের মধ্যে বড় ধরনের তফাত নেই বলে দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, প্রতিদিনই বাণিজ্য অংশীদার শীর্ষ দেশগুলোর মুদ্রার মানের সঙ্গে সমন্বয় করে ডলারের মূল্য তদারক করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে টাকার কিছুটা অতিমূল্যায়ন থাকতে পারে। দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এখনো আমদানিনির্ভর। এ অবস্থায় টাকার বড় অবমূল্যায়ন হলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে না। মূল্যস্ফীতি বেড়ে ভারসাম্য নষ্ট হবে।

যদিও ডলারের বিপরীতে টাকার অতিমূল্যায়ন কিছুটা বেশি বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যায়ন রিয়াল ইফেক্টিভ রেটের ভিত্তিতে নির্ধারণ করে না। এটি করলে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বেড়ে যাবে। তবে এটি ঠিক, টাকা কিছুটা অতিমূল্যায়িত হচ্ছে।

টাকার এ অতিমূল্যায়নের প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্সের ওপরও। ডলারের বিপরীতে টাকা কম পাওয়ায় রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

যদিও জনশক্তি রফতানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, শুধু ২০১৭ সালেই ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশী কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছেন। চলতি বছরসহ গত পাঁচ বছরে চাকরির উদ্দেশ্যে বিদেশ পাড়ি দেয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা ৩৩ লাখ ৩২ হাজার।

টাকার অতিমূল্যায়নের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদনমুখী শিল্পের বিকাশ। এর প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় এক লাখ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ১৩ লাখ, যা আগের অর্থবছর ছিল ১৪ লাখ।

এ অবস্থায় ডলারের বিনিময় মূল্য ও প্রকৃত মূল্যের ব্যবধান কমিয়ে আনা দরকার বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এক বছর আগেই টাকার অবমূল্যায়ন ঘটিয়ে ডলারের বিনিময় মূল্য ও প্রকৃত মূল্যের ব্যবধান কমিয়ে আনা দরকার ছিল। ডলারের বিপরীতে টাকার অতিমূল্যায়ন করে কোনো লাভ হচ্ছে না। এটি আমদানিকে অনেক বেশি উৎসাহিত করছে। আমদানিনির্ভর অর্থনীতি কোনো দেশের জন্যই সুখকর নয়।

টাকার অতিমূল্যায়নে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, অনেক আগে থেকেই আমি বলে আসছি, ডলারের প্রকৃত মূল্যের সঙ্গে বাজারমূল্যের সমন্বয় করে দেয়া দরকার। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে টাকাকে অতিমূল্যায়িত দেখানো হচ্ছে। নির্বাচনের আগে নীতিনির্ধারকরা অবমূল্যায়নের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। নির্বাচনের পর হলেও এটি আমাদের করতেই হবে।

২০১৩ সালের নভেম্বরে প্রতি ডলার কিনতে খরচ হতো ৭৭ টাকা ৬৫ পয়সা। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর ডলারের মূল্য বেড়ে ৮০ টাকা ৯৫ পয়সায় উন্নীত হয়। এরপর ডলারের তীব্র সংকট সত্ত্বেও এ মূল্য চলতি মাসের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সায় বেঁধে রাখা হয়েছে। এর পেছনে নীতিনির্ধারকদের মনস্তাত্ত্বিক কারণকে বড় করে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, মনস্তাত্ত্বিক কারণেই আমাদের নীতিনির্ধারকরা টাকার অবমূল্যায়নের ঝুঁকি নিতে চান না। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই ‘স্ট্রং কারেন্সি মিথ’ কাজ করে। সবাই চায়, তার নিজস্ব মুদ্রা শক্তিশালী হোক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মুদ্রা কোনো দেশের জাতীয় পতাকা নয়। মুদ্রাকে বাজার পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। তার মানে এই নয় যে ডলারের মূল্যমানকে একেবারে বাজার পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দিতে হবে। বরং নিয়ন্ত্রণে রেখেই ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটানো দরকার।

  • Courtesy: Banikbarta/ Nov 12, 2018

শাপলা চত্বরে শতাধিক নিহত ও আহত হয়েছিল অগণিত - বাবুনগরী


হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, শাপলা চত্বরে গিয়েছিলাম বিশ্ব নবী (সা.) ইজ্জত সম্মান রক্ষা করার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখি নারায়ণগঞ্জের ছয় লাশসহ আমার সামনে আরও আটটি লাশ পড়েছিল। ওইদিন শতাধিক নিহত ও আহত হয়েছে অগণিত। সেদিন আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমার টেলিফোনে বারবার ফোন আসছিল আপনি চলে যান। 

শনিবার রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ফতুল্লার মাসদাইর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ জেলার কৃতী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ ও সংবর্ধনাসহ ইসলামী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ওইসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেফাক’র জেলা শাখার সভাপতি আল্লামা আবদুল কাদের। কোরআনের বয়ান উদ্ধৃত করে বাবু নগরী আরও বলেন, কওমি গোষ্ঠী ও মুসলমানদের পিতা ইব্রাহীম (আ.)। তাহলে কওমি জননীও সে রকম হতে হবে। দিলদার ও পরহেজগার হতে হবে। 

তিনি বলেন, কোনো কোনো মন্ত্রী সচিবরা বলছে, বর্তমান সরকার ওলামায়ে দেওবন্দিদের মূল ধারায় নিয়ে আসছে, তাহলে বোঝা যাচ্ছে এতদিন ওলামা কেরামদের কোনো মূলধারা ছিল না। সরকার আমাদের সনদের স্বীকৃতি দিয়ে মূলধারায় আনে নাই বরং সরকারই মূলধারায় চলে এসেছে।

এতদিন স্বীকৃতি না দিয়ে সরকার মূলধারায় ছিল না। আমরা আগের থেকে মূলধারায় আছি। সরকার আমাদের স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত করে নাই, সরকার নিজেই সম্মানিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওইদিন নাকি শাপলা চত্বরে কাউকে হত্যা করা হয়নি, যারা এ রকম বলে তারা মিথ্যা বলছে।
  • কার্টসিঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন/  নভেম্বর ১২, ২০১৮ 

সংলাপের পর আরও ১০০ গায়েবি মামলা

  • ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের পর ১০ দিনে ১০০ মামলা
  • হয়রানিমূলক ও গায়েবি ১০০ মামলার মধ্যে ৯৭টি মামলারই বাদী পুলিশ 


কেরানীগঞ্জের কদমতলী গোলচত্বরের কাছে ৬ নভেম্বর দুপুরে কিছু লোককে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটাতে ও গাড়ি ভাঙচুর করতে ‘দেখেছে’ পুলিশ। কিন্তু কদমতলীর স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিস্ফোরণ হলে অন্তত শব্দ শোনা যেত। ভাঙচুর হলে এলাকায় শোরগোল হতো। এ ছাড়া সেদিন সকাল থেকেই কদমতলী এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

ভাঙচুরের ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা মামলায় উল্লেখ করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সেদিন পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এ ধরনের মামলার কথা ১ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম দফার সংলাপে তুলেছিলেন বিএনপির নেতারা। তখন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হবে না।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বাইরে ২০ জেলায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১০০ টি। এর মধ্যে ৯৭টি মামলারই বাদী পুলিশ। বিএনপির নেতাদের দাবি, এই মামলাগুলো হয়রানিমূলক ও গায়েবি।

আর ৬ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের দিন ঢাকার ছয়টি থানায় ছয়টি মামলা হয়। এসব মামলায় গাড়ি ভাঙচুর, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতার ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে। ছয়টি মামলায় ঘটনাস্থল থেকে ১৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা বলেছে পুলিশ। কিন্তু যে এলাকায় এবং যে সময়ে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। উল্টো এসব ঘটনার বিবরণ শুনে স্থানীয় লোকজন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে মামলা দেওয়া উচিত নয় বলে জানান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করা ঠিক নয়।

প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়া, সিলেট, বরিশাল, বাগেরহাট, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নড়াইল, নওগাঁ, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১০০টি মামলা হয়েছে। এসব মলায় ২ হাজার ৩৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আড়াই হাজারের বেশি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, এসব মামলার সবই গায়েবি। মামলায় বর্ণিত ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। নেতা-কর্মীদের ধরে জেলে ঢোকাতেই এসব মামলা।

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে মামলা হবে না বলে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তার বাস্তবায়ন নেই। গায়েবি মামলা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের আগে বিরোধী শক্তিকে মাঠে নামতে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই মামলা ও ধরপাকড় চলছে।

গায়েবি ঘটনায় করা মামলার বিষয়ে সম্প্রতি উচ্চ আদালতে রিটও হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গায়েবি মামলার একটি তালিকাও প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের পর ৬ নভেম্বর ঢাকায় হওয়া ছয়টি মামলার বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় প্রথম আলো।

কেউ জানে না

বিস্ফোরক আইনে করা কেরানীগঞ্জ থানার মামলায় বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে যোগ দিতে মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দক্ষিণ পাশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। পরে তাঁরা কদমতলী গোলচত্বরের লায়ন টাওয়ারের (সেতুর পাশেই) সামনে গাড়ি ভাঙচুর করেন। ঘটনাস্থল থেকেই ১৩ জনকে আটক করা হয়।

পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে কেরানীগঞ্জে যেতে হয় বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু পার হয়ে। এই সেতু পার হয়ে ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহারে যাওয়া যায়।

বাবুবাজার সেতুসংলগ্ন লায়ন টাওয়ারের পাশেই এসএস মোটরসাইকেল সার্ভিস সেন্টার। ৮ নভেম্বর সেখানে গিয়ে কথা হয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির মালিক স্বপন সরকারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ককটেল বিস্ফোরণ বা গাড়ি ভাঙচুরের কোনো ঘটনাই তিনি দেখেননি।

লায়ন টাওয়ারের নিচতলার জেজে ফ্যাশনের মালিক মো. রকি বলেন, সেদিন সারা দিনই তিনি দোকানে ছিলেন। ভাঙচুর, হামলার কোনো ঘটনা তাঁর চোখে পড়েনি।

মামলার বাদী ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, লোকজন যা বলছে, তা মোটেও ঠিক নয়।

তবে পুলিশের করা মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষী ও মাইক্রোবাসচালক সুলতান হোসেন বলেন, সেদিন তাঁর গাড়িতে করেই ওই ১৩ জন দোহার থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে যাচ্ছিলেন। সেতুর কাছে তাঁকেসহ সবাইকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে তাঁকে ছেড়ে দিলেও অন্যদের নামে মামলা দেওয়া হয়।

লেগুনা ভাঙচুর নিয়ে মালিকের বিস্ময়

তেজগাঁও থানায় পুলিশের করা আরেকটি মামলায় বলা হয়েছে, ৬ নভেম্বর গ্রিন রোডের আরএইচ হোম সেন্টার বিল্ডিংয়ের সামনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাশকতা করার জন্য ইটপাটকেল, লাঠিসহ অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে সেখান থাকা লেগুনা গাড়িসহ (ঢাকা মেট্রো-ছ ১৪০৭৩৭) বিভিন্ন লেগুনা ভাঙচুর করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি লেগুনা গাড়ি, ছয়টি ইটের টুকরা এবং বিভিন্ন লেগুনা গাড়ির কাচের টুকরা জব্দ করা হয়।

আরএইচ হোম সেন্টারের ঠিক সামনেই চা বিক্রি করেন সেন্টু নামের এক ব্যক্তি। ৮ নভেম্বর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন সারা দিনই তাঁর দোকান খোলা ছিল। লেগুনা ভাঙচুর বা পুলিশের সঙ্গে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির কোনো ঘটনা তিনি দেখেননি।

মামলার বাদী তেজগাঁও থানার এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটেছিল। তাই হয়তো কেউ খেয়াল করেনি।

গ্রিন রোডের মাথাতেই লেগুনাস্ট্যান্ড। এই স্ট্যান্ড পরিচালনা করা শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, এই এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে লেগুনা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।

আর ওই লেগুনার (পুলিশের জব্দ করা) মালিক সাদ্দাম হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন চালক লেগুনাটি আরএইচ হোম সেন্টারের সামনে রেখে চা খেতে গিয়েছিলেন। এসে দেখেন, পুলিশ লেগুনাটি থানায় নিয়ে গেছে। পরে রাতে তাঁরা থানা থেকে লেগুনা ছাড়িয়ে আনেন।

এই মামলায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।

দুই মাসেও বিএনপির সমাবেশ দেখেনি কেউ

গেন্ডারিয়া থানায় করা মামলায় পুলিশ বলছে, ৬ নভেম্বর বিকেলে সাদেক হোসেন খোকা মাঠের সামনে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে জনগণের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেন। ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে পুলিশ আটক করে।

তবে মাঠের সামনে থাকা দোকান রুবেল স্টোরের মালিক বাদশা মিয়া জানান, সেদিন এখানে বিএনপির কোনো মিছিল হয়নি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গেন্ডারিয়া থানার এসআই বাবুল হোসেনের দাবি, নাশকতা করার জন্য সেদিন বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন।

নর্থ সাউথ রোডে প্রতিবন্ধক

পল্টন থানায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় পুলিশ বলেছে, ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিজয়নগরের রেইনবো গলির মুখে নর্থ সাউথ সড়কের ওপর বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। দফায় দফায় পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর সময় ৩৮ জনকে আটক করা হয়। 
মামলার বাদী পল্টন থানার এসআই তবিবুর রহমান বলেন, যা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই মামলাটি করা হয়েছে।

রেইনবো গলির মুখে চায়ের দোকান রয়েছে আবুল খায়েরের। তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটলে তাঁর দোকান বন্ধ থাকত। সেদিন রাত আটটা পর্যন্ত তিনি দোকানে ছিলেন। 

ফাঁকা ছিল বিজি প্রেস উচ্চবিদ্যালয় এলাকা

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পুলিশ বলছে, ৬ নভেম্বর দুপুরে বিজি প্রেস স্কুলের সামনে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ২৭ জনকে আটক করে।

স্কুল ও এর পাশের একটি প্রতিষ্ঠানের দুজন নিরাপত্তারক্ষী বলেন, বাইরের কোনো লোক জড়ো হওয়া বা তাঁদের আটক করার মতো কোনো ঘটনা তিনি সেদিন দেখেননি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই বাবলুর রহমান বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে বাকিটা বলা যাবে।

মিছিল দেখেননি, আটক করতে দেখেছেন

ওয়ারী থানায় করা মামলায় পুলিশ বলেছে, ৬ নভেম্বর বিকেলে ওয়ারীর কাপ্তানবাজারের কাছে এরশাদ সুপার মার্কেট-১-এর পশ্চিম পাশের রাস্তায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে যান চলাচলে বাধা দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে আটক করে।

যদিও এরশাদ সুপার মার্কেটের সামনে থাকা দোকানের কর্মীরা বলেছেন, সেদিন বিএনপির কোনো মিছিল দেখেননি তাঁরা। তবে ঘটনাস্থল থেকে অনেককে আটক করে নিয়ে যেতে দেখেছেন। দোকানি মো. আসাদ ও এরশাদ সুপার মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষী কবির হোসেন বলেন, রাস্তায় গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়ার কোনো ঘটনাই সেদিন ঘটেনি।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, বাস্তবের সঙ্গে ঘটনার মিল নেই—এমন আজগুবি মামলা দিচ্ছে পুলিশ। যারা মিথ্যা অভিযোগে মামলা করছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। যা ঘটছে তা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ১২, ২০১৮ 

EC must take action against code of conduct breaches

EDITORIAL

THE violation of the directives that the Election Commission usually enforces on political parties during the election time comes to be worrying. The commission which has not lifted a finger, but for sounding indirect warnings, to attend to such violations, so far committed by the ruling alliance, appears not to be in a position to ensure a level playing field. Electoral violence has already started stalking the next parliamentary elections, so far scheduled for December 23, as two young people, claimed to be Awami League supporters, died on Saturday as a pick-up truck hit them during an infighting of the incumbent political party in Dhaka. The clash ensued between two Awami League leaders seeking nomination for the Dhaka 13 constituency. The motorcade of a leader of the party’s north city unit, on the way to collect the nomination form from the party president’s office at Dhanmondi, came to be attacked by the people of the party’s joint general secretary. While the home minister seeks to say that it was the Election Commission, which is now in control of the law enforcement agencies, that would look into the issue and the commission pleads ignorance of the incident, the prime minister is reported by the party’s general secretary to have asked the home minister to take action against the perpetrators.

The Election Commission, furthermore, asked the law enforcement agencies not to allow any political parties and alliances to hold rallies before the general elections. But Awami League leaders and their streaming pick-up trucks and supporters walking down the roads, especially towards the party president’s office at Dhanmondi, have gone unchecked. A situation like this has brought life there to a standstill and caused severe traffic congestion in surrounding areas for the past three days. Yet the Election Commission sees such processions and marches as something adding to the election-time festivity. It is time the Election Commission defined electoral marches and festive marches in its mental map in its preparation for action to stop the violation of electoral code. The commission has also asked individuals and political parties to remove campaign materials that they have put in public display such as posters, banners and pull down gates erected on roads in seven days. The commission has asked city and municipal mayors and representatives of other local government agencies to remove campaign materials as their display before December 1 would constitute the violation of the code of conduct. Roadside walls in Dhaka and elsewhere have already been covered with posters seeking votes for Awami League aspirants. Reports coming from outlying areas say that Awami League leaders aspiring to nomination, and in some cases representatives of local government agencies, have already begun electoral campaign. Yet no initiative has got off the ground for the commission to take action and for the authorities concerned to remove the materials.

All this suggests that the Election Commission has so far failed to take any action against violations of the electoral code of conduct by Awami League leaders and their people and even the law enforcers and elected local government representatives. Neither of the law enforcement agencies, nor local government representatives care to act, keeping to what the Election Commission asks them to, that could displease the leaders of the incumbent political party and their people. The Election Commission must rise up to the occasion.

  • Courtesy: New Age Nov/ 12, 2018