ডিজিটাল আইনে মামলা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়ের পরে যখন সাংবাদিক সমাজ স্মরণে আনছিল যে, ডিজিটাল আইন বাতিলে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছিলেন, তখনই খুলনা থেকে প্রথম খবর এল সাংবাদিক গ্রেপ্তারের। খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনের নির্বাচনের ফলাফলের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়েছে। একটি তথ্যগত গরমিল–বিষয়ক রিপোর্ট নিয়ে যেভাবে জেলা, উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগ ডিজিটাল আইনে মামলা, গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ল, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
যে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তঁারা হচ্ছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বাংলা ট্রিবিউন’ ও ইংরেজি দৈনিক ‘ঢাকা ট্রিবিউনের’ খুলনা প্রতিনিধি হেদায়েত হোসেন মোল্লা এবং খুলনা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সহসভাপতি, ন্যাশনাল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মানবজমিন
পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মো. রাশিদুল ইসলাম। রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাতে একই তথ্য অন্তত চারটি সংবাদমাধ্যমে (সময় টিভি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলা ট্রিবিউন ও মানবজমিন) পরিবেশিত হলো, অথচ সাংবাদিকেরাই ভুল করেছেন অনুমান করে তঁাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের মতো ঘটনা ঘটে গেল। হেদায়েত হোসেন আটক হওয়ার পর তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে আর রাশিদুল ইসলাম এখন আত্মগোপনে আছেন।
যুক্তির নিরিখেই আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি, সাংবাদিকেরা ভ্রান্ত ছিলেন, সেটা অনুমানসিদ্ধ বিষয় হলে কেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ভুল করে থাকতে পারেন, সেটা অনুমানসিদ্ধ বিষয় হবে না? বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা শুরুতে যে তথ্য দিয়েছিলেন, তা–ই প্রচার করা হয়েছে। সেই তথ্য যদি ভুল হয়ে থাকে তবে তা প্রচারের দায়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হবে কেন? আর কোনো তথ্যগত গরমিল–বিষয়ক রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি এভাবে আইন তার ‘নিজস্ব পথে’ চলতে শুরু করে, তাহলে তো যেকোনো সংবাদমাধ্যমের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে না। যুগ যুগ ধরে এই নিয়ম চলে আসছে যে, তথ্যগত ভুল হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রথমে প্রতিবাদ জানান। এটা আত্মপক্ষ সমর্থন দেওয়ার সর্বজন স্বীকৃত সুযোগ।
ডিজিটাল আইন সাংবাদিকদের ওপর প্রয়োগ না করার যে প্রতিশ্রুতি আমরা পেয়েছিলাম, সে বিষয়ে আমরা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করি। এই ধারায় যদি ডিজিটাল আইনের প্রয়োগ চলতে থাকে, তাহলে ইতিপূর্বে যে কারণে সমগ্র সাংবাদিক সমাজ মানববন্ধনে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ ও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিল, তা–ই সত্যে পরিণত হবে। আর সে ক্ষেত্রে স্বাধীন সাংবাদিকতা অধিকতর হুমকির মুখে থাকবে। এই ঘটনা ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিকে আরও যৌক্তিক করে তুলল। আমরা আবারও এই আইন বাতিলের দাবি জানাই। একই সঙ্গে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও আটক সাংবাদিকের মুক্তি দাবি করছি।
Courtesy: Prothom Alo Jan 03, 2019