Search

Thursday, January 3, 2019

আটক সাংবাদিককে মুক্তি দিন

ডিজিটাল আইনে মামলা


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়ের পরে যখন সাংবাদিক সমাজ স্মরণে আনছিল যে, ডিজিটাল আইন বাতিলে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছিলেন, তখনই খুলনা থেকে প্রথম খবর এল সাংবাদিক গ্রেপ্তারের। খুলনা- (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনের নির্বাচনের ফলাফলের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়েছে। একটি তথ্যগত গরমিলবিষয়ক রিপোর্ট নিয়ে যেভাবে জেলা, উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগ ডিজিটাল আইনে মামলা, গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ল, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন
যে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তঁারা হচ্ছেন অনলাইন নিউজ পোর্টালবাংলা ট্রিবিউন ইংরেজি দৈনিকঢাকা ট্রিবিউনেরখুলনা প্রতিনিধি হেদায়েত হোসেন মোল্লা এবং খুলনা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সহসভাপতি, ন্যাশনাল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মো. রাশিদুল ইসলাম। রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাতে একই তথ্য অন্তত চারটি সংবাদমাধ্যমে (সময় টিভিবাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলা ট্রিবিউন  মানবজমিন) পরিবেশিত হলো, অথচ সাংবাদিকেরাই ভুল করেছেন অনুমান করে তঁাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার রিমান্ডের মতো ঘটনা ঘটে গেল। হেদায়েত হোসেন আটক হওয়ার পর তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে আর রাশিদুল ইসলাম এখন আত্মগোপনে আছেন

যুক্তির নিরিখেই আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি, সাংবাদিকেরা ভ্রান্ত ছিলেন, সেটা অনুমানসিদ্ধ বিষয় হলে কেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ভুল করে থাকতে পারেন, সেটা অনুমানসিদ্ধ বিষয় হবে না? বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা শুরুতে যে তথ্য দিয়েছিলেন, তা প্রচার করা হয়েছে। সেই তথ্য যদি ভুল হয়ে থাকে তবে তা প্রচারের দায়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হবে কেন? আর কোনো তথ্যগত গরমিলবিষয়ক রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি এভাবে আইন তারনিজস্ব পথেচলতে শুরু করে, তাহলে তো যেকোনো সংবাদমাধ্যমের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে না। যুগ যুগ ধরে এই নিয়ম চলে আসছে যে, তথ্যগত ভুল হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রথমে প্রতিবাদ জানান। এটা আত্মপক্ষ সমর্থন দেওয়ার সর্বজন স্বীকৃত সুযোগ।

ডিজিটাল আইন সাংবাদিকদের ওপর প্রয়োগ না করার যে প্রতিশ্রুতি আমরা পেয়েছিলাম, সে বিষয়ে আমরা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করি। এই ধারায় যদি ডিজিটাল আইনের প্রয়োগ চলতে থাকে, তাহলে ইতিপূর্বে যে কারণে সমগ্র সাংবাদিক সমাজ মানববন্ধনে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিল, তা সত্যে পরিণত হবে। আর সে ক্ষেত্রে স্বাধীন সাংবাদিকতা অধিকতর হুমকির মুখে থাকবে এই ঘটনা ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিকে আরও যৌক্তিক করে তুলল। আমরা আবারও এই আইন বাতিলের দাবি জানাই। একই সঙ্গে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার আটক সাংবাদিকের মুক্তি দাবি করছি। 
Courtesy: Prothom Alo Jan 03, 2019

গণধর্ষণের ‘ইন্ধনদাতা’ সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল গ্রেপ্তার

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের একটি গ্রামে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো
সবশেষ গতকাল বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য রুহুল আমিন মো. বেচুকে
পুলিশ জানায়, ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে মো. বেচুকে গ্রেপ্তার করা হয়
চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সুবর্ণচরের উত্তর ওয়াপদা এলাকার একটি মাছের খামার থেকে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মো. বেচুকে সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় এলাকার একটি ইটভাটা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়
ওসি নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রুহুল আমিন মো. বেচুকে থানা হাজতে আনা হয়েছে। তাঁরা প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন
ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আগে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন মো. স্বপন, মো. সোহেল বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু।

স্বপনকে গত মঙ্গলবার রাতে এবং সোহেলকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়
সোহেল এই মামলার প্রধান আসামি
নির্যাতনের শিকার নারী গত রোববার সকালে এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যান। সময় কেন্দ্রে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন যুবক তাঁকে তাঁদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বলেন। তিনি তাতে রাজি না হলে যুবকেরা তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ওই দিন রাত ১২টার দিকে ছালা উদ্দিন, সোহেল, বেচু, মোশারফসহ ১০ থেকে ১২ জনের একদল যুবক ঘরে ঢুকে প্রথমে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে মারধর করেন। পরে স্বামী সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই নারীকে ঘরের বাইরে পুকুরপাড়ে এনে গণধর্ষণ করেন
নির্যাতনের শিকার নারীর অভিযোগ, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমিনের লোক
মামলার এজাহারে মো. সোহেল (৩৫), মো. হানিফ ৩০), মো. স্বপন (৩৫), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বেচু (২৫), বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু (৪০), আবুল (৪০), মোশারফ (৩৫) ছালা উদ্দিনের (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়
নির্যাতিত নারী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সারা শরীরে নির্যাতনের স্থানে রক্ত জমে আছে। তিনি নড়াচড়া করতে পারছেন না
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. খলিল উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষাকালে নির্যাতনের শিকার শরীর থেকে সংগ্রহ করা আলামত পরীক্ষার জন্য গতকাল আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে
চরজব্বার থানার ওসি নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া বাদশা আলম স্বপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা ঘটনার বিষয়ে কিছু স্বীকার করেননি। আদালতে বাদশা আলমের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নোয়াখালীতে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কেউ ছাড় পাবে না। ধরনের ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে
সুবর্ণচরে গৃহবধূকে ধর্ষণ নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন। তারা এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি নির্যাতনের শিকার নারীর সঙ্গে কথা বলেন
গতকাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ তদন্ত) আল-মাহামুদ ফয়জুল কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এবং আইন সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সেলিনা আক্তারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি দলও ঘটনার তদন্তে নোয়াখালীতে যায়
Courtesy: Prothom Alo Jan 03, 2018