মানবজমিন ডেস্ক
(সিএনএন-এ প্রকাশিত নিবন্ধের ভাবানুবাদ। নিবন্ধটি লিখেছেন মাইকেল কুগেলম্যান।)
চট্টগ্রামে ভোটের আগে ব্যালট বাক্স ভরা পেলেন বিবিসি'র সাংবাদিক |
নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে গত ৩০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের সরকার পুনঃনির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের মতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট ৩০০ আসনের মধ্যে বিস্ময়করভাবে ২৮৮টি আসনে জিতেছে। প্রত্যাশিতভাবেই বিরোধী দলগুলো ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
তিক্ত ও সহিংসতাপূর্ণ পক্ষপাতের কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি ইতিমধ্যেই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এ বিতর্কিত নির্বাচনের ফল সে রাজনীতিকে নতুন আরেকটি বিপজ্জনক যুগে ঠেলে দিতে পারে। বিরোধীদের ক্ষোভ দেখানোর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আওয়ামী লীগ কয়েক বছর ধরেই বিরোধীদের দুর্বল করে দেয়ার পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের দমন-পীড়নের অন্যতম উপায় হলো ঢালাও গ্রেপ্তার।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন শীর্ষ বিরোধী নেতা জেলে রয়েছেন। এতে দুর্বল হয়ে পড়া প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখন তার আগের সত্তার প্রতিচ্ছায়ায় পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্মম রাজনৈতিক দমন-পীড়ন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ধারণাকে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করেছে।
এসব দমন-পীড়নকে অগ্রাহ্য করে বিএনপি নতুন জোটকে নিয়ে প্রচারণা চালায় ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এটা ভাবা কঠিন যে, সন্দেহজনকভাবে ভারসাম্যহীন একটি নির্বাচনী ফল নিয়ে বিরোধী দল চুপ করে বসে থাকবে। আওয়ামী লীগের বিস্ময়কর বিজয় নিয়ে বিরেীধদলসহ অন্য সমালোচকরা বলছেন, এটা ‘ইলেকশন’ না, বরং এটা ‘সিলেকশন’। আর যারা সরকারের কঠোর আইন ও কৌশলকে সমর্থন করেন, তারা সাফাই গাইছেন যে, এটা ধর্মীয় কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের বিজয়। এতে অবদান রেখেছে দেশের আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি। যদিও আওয়ামী লীগ তাদের ভোটব্যাংক বৃদ্ধি করার জন্য ধর্মীয় দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধেছে। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলাম অন্যতম। এটি দেশের সবচেয় বড় ইসলামী সংগঠন।
প্রকৃতপক্ষে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থকরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা ও খারাপ মানবাধিকার রেকর্ডকে এড়িয়ে চলতে চান। কেননা তারা মনে করেন, দল তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর যোগান দিচ্ছে। আর এটাই তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের মানুষরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী নীতিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে।
এসব দমন-পীড়নকে অগ্রাহ্য করে বিএনপি নতুন জোটকে নিয়ে প্রচারণা চালায় ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এটা ভাবা কঠিন যে, সন্দেহজনকভাবে ভারসাম্যহীন একটি নির্বাচনী ফল নিয়ে বিরোধী দল চুপ করে বসে থাকবে। আওয়ামী লীগের বিস্ময়কর বিজয় নিয়ে বিরেীধদলসহ অন্য সমালোচকরা বলছেন, এটা ‘ইলেকশন’ না, বরং এটা ‘সিলেকশন’। আর যারা সরকারের কঠোর আইন ও কৌশলকে সমর্থন করেন, তারা সাফাই গাইছেন যে, এটা ধর্মীয় কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের বিজয়। এতে অবদান রেখেছে দেশের আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি। যদিও আওয়ামী লীগ তাদের ভোটব্যাংক বৃদ্ধি করার জন্য ধর্মীয় দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধেছে। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলাম অন্যতম। এটি দেশের সবচেয় বড় ইসলামী সংগঠন।
প্রকৃতপক্ষে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থকরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা ও খারাপ মানবাধিকার রেকর্ডকে এড়িয়ে চলতে চান। কেননা তারা মনে করেন, দল তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর যোগান দিচ্ছে। আর এটাই তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের মানুষরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী নীতিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে।
আয়ের অসমতাসহ কয়েকটি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উদ্বেগজনক হওয়ার পরেও তা শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিচে চাপা পড়েছে। আর এসব ইস্যুতে আওয়ামী লীগের কর্মকা-ের সমালোচনা দলটির সাধারণ সমর্থকদেরকে প্রভাবিত করে না।
এদিকে, বিরোধীদের নতুন নির্বাচনের দাবি প্রত্যাশিতভাবেই নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান করেছে। বাস্তবে, অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো ছাড়া বিরোধীদের হাতে ক্ষোভ প্রকাশের উপায় খুবই কম। বিএনপি ও এর মিত্রদের রাজপথে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের সামর্থ্যরে অভাব রয়েছে। যা তাদের দুর্বল অবস্থাকে ফুটিয়ে তুলেছে। বিরোধীজোটের খুব কম সংখ্যক নেতাই ক্ষমতাসীন দলের এমন একতরফা বিজয় প্রত্যাশা করেছেন। বিরোধীদের মধ্যকার এই ক্ষোভ থেকে এখনো বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা সহিংসও হয়ে উঠতে পারে। এ ধরনের বিক্ষোভ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা উস্কে দিতে পারে।
প্রশ্নবিদ্ধভাবে ক্ষমতাসীন দল আরো পাঁচবছর ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ এখন একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার খুব নিকটে রয়েছে। ভবিষ্যতে শক্তিশালী ক্ষমতাসীন দল ও গুরুত্বহীন বিরোধীদলের মধ্যে যে কোনো ধরনের সহাবস্থান কল্পনা করা খুবই কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে কোনো সমঝোতার পরিবেশও তৈরি হয় না।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট। একদিকে, জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ও উন্নয়ন জোরদার করতে বাংলাদেশ তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে, নির্বাচনী বিজয়ে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখতে পারে। যতদিন পর্যন্ত দলটি মনে না করবে যে, তাদের এই দমন-পীড়ন বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, বিনিয়োগকারীদের বাধাগ্রস্ত করছে, ততদিন দলটি তাদের এই কর্মকা- চালিয়ে যাবে। বিরোধীরা দুর্বল অবস্থায় যতটুকু সম্ভব মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে। ক্রমবর্ধমান এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ জামায়াতে ইসলামীর মতো কট্টরপন্থি দলগুলোকে উগ্রপন্থার দিকে উস্কে দিতে পারে।
আরো ব্যাপকভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশের তরুণরা আশঙ্কাজনকভাবে গণতন্ত্রের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে। যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, বাংলাদেশের সামনে সহিংস ও উদ্বেগের দিন অপেক্ষায় রয়েছে।