Search

Tuesday, December 31, 2019

তোমরা ভুলেই গেছ সুবর্ণচরের সেই রাতের কথা

আলতাফ পারভেজ


বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই আজ ৩৬৫ দিন আগের ২৯ ডিসেম্বর রাত এবং ৩০ ডিসেম্বর দিনের স্মৃতি রোমন্থন করছেন নানাভাবে। কিন্তু সুবর্ণচরের সেই নারী ভাবছেন পরের রাতের কথা। তাঁর ছেলে-মেয়েরাও নোয়াখালীর শীতে হিম হয়ে আছে গত দুদিন। পরিবারের নবম শ্রেণির ছাত্রীটিও কেমন অস্থির হয়ে কেবল করুণ চোখে মাকে দেখে। ধর্ষকেরা তার বেলায় ব্যর্থ হয়েই মায়ের ওপর হামলে পড়েছিল। যে মা তাকে বাঁচিয়েছেন, সেই মায়ের বিষণ্নতা ছুঁতে চায় মেয়েটি।

বিপুল বেদনা আর অপমানের ভার বয়ে বেড়ানো পরিবারটিকে বয়ে চলেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক এক গৃহকর্তা। তিনি জানেন না, হতবিহ্বল হয়ে থাকা তাঁর খেয়ালই নেই বছরটি কীভাবে চলে গেল। কীভাবে আগামী বছরটি যাবে!


‘সুবর্ণচর’ থমকে দিয়েছিল দিনটাকে

না, সে-ই ডিসেম্বর থেকে এ-ই ডিসেম্বর পর্যন্ত, ‘ভোট’ এবং ‘নির্বাচন’ পরবর্তী এক বছরেও বাংলাদেশ তোলপাড় করা সুবর্ণচর গণধর্ষণের বিচার শেষ হয়নি। চরজব্বর থানায় যে মামলার ফাইলের ঠিকানা ছিল: নম্বর ১২; ৩১-১২-১৮; জিআর ২৬৪৫/১৮।

যত দূর মনে পড়ে, ২০১৯-এর প্রথম সপ্তাহে পুরো বাংলাদেশ ওই ধর্ষণের ঘটনায় লজ্জায় কুঁকড়ে চিৎকার করে উঠেছিল, ‘বিচার চাই’ বলে। মনে হয়েছিল বিচার হবেও। আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমও ভেবেছিল, এত বর্বরতার ভার বাংলাদেশ বইতে পারবে না।

কিন্তু বাস্তবতা যেন এ দেশে সয়ে যায় সব। চার সন্তানের মা, নির্যাতিত সেই নারীকে বছরজুড়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার ব্যবধানে হাসপাতাল, আদালত, বাড়ি মিলে দৌড়াদৌড়ি করে কাটাতে হয়েছে। সঙ্গে পরিবারকেও দৌড়াতে হয়েছে ৩৬৫‍+১ দিন।

হ্যাঁ, আদালতে শুনানি চলেছে। নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের বিচারকের আন্তরিকতারও ঘাটতি ঘটেনি; হাবিবুর রসুল মামুন, রবিউল হাসান পলাশসহ কয়েকজন নিবেদিতপ্রাণ আইনজীবীও রয়েছেন ভিকটিমের পাশে। রাষ্ট্রপক্ষ এবং পিপিও সক্রিয় ছিলেন। ‘ট্রায়াল অবজারভার’ হিসেবে আছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী গোলাম আকবর। ইতিমধ্যে জেরা হয়েছে বহুজনের; কিন্তু বিচার শেষ হতে আরও অনেক সময় লাগবে। কয়েকজন সাক্ষীর বক্তব্যকে ‘রাষ্ট্রপক্ষ’ প্রত্যাখ্যানও করছে আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত বলে।

অভিযুক্তদের জন্য নিকটজনের সহানুভূতি জারি আছে

এ দেশের নির্যাতিত নারীদের জন্য ‘ন্যায়বিচার’-এর ব্যবস্থাটিই এমন। শারীরিক-মানসিক ক্ষত নিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া নামের এক বিশাল সমুদ্রও পাড়ি দিতে হয় তাঁদের। বাস্তবে এটাই ‘আইনের শাসন’। আইনের মানুষেরা নন, এই বাস্তবতা বদলাতে দরকার রাজনীতির মানুষদের। কিন্তু সেই পরিবর্তনের পথে সুবর্ণচর অধ্যায়ের পরও বাংলাদেশ আদৌ এগিয়েছে বলা যায় না।

এই ৩০ ডিসেম্বর প্রথম আলো লিখেছে, কেবল অক্টোবর পর্যন্ত দেশজুড়ে ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অন্তত দেড় হাজার ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। মাদ্রাসাশিক্ষক থেকে পুলিশ পর্যন্ত—অভিযুক্তদের তালিকায় আছেন প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এসব ক্ষেত্রেও বিচারপ্রক্রিয়া হবে ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর রাতের সুবর্ণচর ধর্ষণ-মামলার মতোই। বাংলাদেশের সব উন্নয়ন গল্প এসব ক্ষেত্রে এসে আর এগোয় না। নিপীড়িত মানুষের আহাজারিতে এখানে কোনো বৈচিত্র্য নেই। বৈচিত্র্য আসার লক্ষণও নেই।

এক বছর পার হলেও বহুল আলোচিত সুবর্ণচর মামলায় এখনো অন্তত ৭-৮ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বক্তব্য শোনা বাকি আছে আদালতের। এখনো ডাক্তার, পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর জেরা হয়নি। নতুন বছরে সেই অধ্যায় শুরু হবে। তারপর জেলা আদালত থেকে হয়তো উচ্চ আদালতেও যাবে বিষয়গুলো।


আওয়ামী ১৭ জনের ১৪ জন এখনো হাজতে। সোহেল, স্বপনসহ তিনজন পলাতক। মাঝখানে একজন উচ্চ আদালত থেকে বিস্ময়করভাবে জামিনও পেয়ে গিয়েছিলেন। সেটা অবশ্য পরে বাতিল হয়েছে। তবে কারাগারে থাকা এবং পলাতকদের হয়ে ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিরাম নেই। কেবল এসব কারণেই অন্তত ১০টা জিডি হয়েছে চরজব্বর থানায়। কেবল ক্রমবর্ধমান এই জিডির সংখ্যাই বলে দেয়, ধর্ষকদের জন্য নিকটজনদের শক্তি ও সহানুভূতির জায়গা কত সক্রিয়। এটাই বাংলাদেশের ‘সমাজ’। ‘রাজনীতি’ ছাড়া নিশ্চয়ই এই দুর্বৃত্তপনা এত শক্ত জমিন পেত না।

সেই রাজনীতি জাতীয়ভাবে এক বছরের মধ্যে সুবর্ণচর অধ্যায়ের কথা ভুলেই গেছে। সরকারি ও বিরোধী দলের নেতারা দলে দলে সুবর্ণচরে এসেছিলেন ২০১৯-এর জানুয়ারিতে। কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁদের মনোজগৎ থেকে জুবলী ইউনিয়নের দরিদ্র সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের পরিবারটি অনেকটা হারিয়ে গেছে। কিছু টাকাপয়সা, কিছু জমির আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল তখন। কিন্তু যেটা জরুরি ছিল, দ্রুত বিচার পাওয়া এবং রাজনীতির পরিবর্তন, সেটা এখনো অধরাই থাকছে।

তবে কৌতূহলোদ্দীপক দিক হলো, রাজধানী ঢাকার চোখের আড়ালে পড়ে গেলেও সুবর্ণচর গণধর্ষণ মামলাটি আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন আইনি সংস্থার বিশেষ মনোযোগে রয়েছে। তারা ‘চাঞ্চল্যকর’ এই মামলার খবরাখবর জানতে ‘পর্যবেক্ষক’ রেখেছে স্থানীয়ভাবে। নিজেরা করি, আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনও এই মোকদ্দমায় আক্রান্ত পক্ষকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে।

এসব মিলিত প্রয়াস শেষে হয়তো এই মামলায় একটা রায়ও হবে। নিশ্চয়ই হবে। তারপর, কোনো পক্ষ থেকে আবার আপিলও হতে পারে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে রাজনীতির সঙ্গে লেপটে থাকা সর্বগ্রাসী দুর্বৃত্তপনার সংযোগ কঠোরভাবে বিচ্ছিন্ন করার প্রশ্নটি অমীমাংসিতই হয়তো থেকে যাবে। রাজনৈতিক বিবাদ ও ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হওয়া জরুরি। সে-ই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ‘মোকদ্দমা’র বিচার করবে কে? সেই জাতীয় ঐকমত্যের ভার অমীমাংসিত অবস্থায় রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকছে। অথচ আবার শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্থানে ভোটের তোড়জোড়। আরেক দফা ভোটের আগে সুবর্ণচরের সেই পরিবারটিকে ন্যায়বিচারের অনুভূতি দেওয়া বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য জরুরি ছিল। সেটা হতো একটা ভালো বার্তা।

  • লেখক কলামিস্ট ও গবেষক।
  • কার্টসি —  প্রথম আলো/ ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯ 

Monday, December 30, 2019

Bangladesh economy ends 2019 in negative territory — Report

Investment has dried up with around Tk 2.5 trillion in default loans sinking the banking sector while the stock market was struggling to turn around from a propensity of diving.


Bangladesh began 2019 with things looking up on the economic front coupled with political stability, but major concerns including a dip in export earnings, rise in inflation and also a drop in import, has pushed it in the negative territory towards the end of this year, a media report said.

The pace gathered in the past few years was suddenly lost as almost all indexes bar remittances have slipped into the negative territory, the bdnews24 report said on Saturday.

Export earnings have dipped, revenue collection decreased, inflation is on the rise, import has also dropped, putting the foreign currency reserves under pressure.

Investment has dried up with around Tk 2.5 trillion in default loans sinking the banking sector while the stock market was struggling to turn around from a propensity of diving.

Bangladesh’s GDP, however, saw a robust 8.15 per cent growth in the last financial year, leading the government to set a target of an 8.2 per cent growth for fiscal 2019-20.

But, the question as to whether that growth target could be met remains unanswered.

Researcher Ahsan H. Mansur said that would be “very difficult” to achieve the target in the remaining six months of the fiscal year after languishing for the first half in a “very bad” shape.

“Our economy is really in trouble. It’s very weak now after going from strength to strength in the past few years. The weakness is getting bigger with every passing days,” Mansur, who is also the Executive Director of Policy Research Institute, told bdnews24.

And the feeble condition of the banking sector made the entire economy “weaker”, he added.

The situation with revenue collection is the worst, according to him.

“The revenue collection growth target is 40 per cent while it grew only 4 per cent (until October). There will be negative impacts on development work and other sectors as well if there is any deficit in it (revenue collection).”

  • The Statesman /December 29, 2019

আলীগের ছত্রছায়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী দুর্নীতিবাজ ১২ কাউন্সিলর প্রার্থী

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল




ক্যাসিনোকাণ্ড, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, মাদক কারবার, সরকারি ও ব্যক্তির জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও ঢাকার আসন্ন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুনরায় দল থেকে সমর্থন বাগিয়ে নিয়েছেন অন্তত ১২ জন কাউন্সিলর। যাদের বিরুদ্ধে সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা থেকে অনুসন্ধান চলছে এবং যাদের ব্যাংক হিসাব তলব বা জব্দ করা হয়েছে। ‘দাগি’ এসব কাউন্সিলরের অনেকেরই বিদেশযাত্রায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞাও। সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে এমন বিতর্কিতদের দলীয় সমর্থন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া বিতর্কিত কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের আনিসুর রহমান, ৫ নম্বরের মো. আশ্রাফুজ্জামান (ফরিদ), ২০ নম্বরের ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন, ২৬ নম্বরের হাসিবুর রহমান মানিক, ৩৮ নম্বরের আহমদ ইমতিয়াজ মন্নাফী ৫১ নম্বরের হাবিবুর রহমান (হাবু) ও ৫৬ নম্বরের মোহাম্মদ হোসেন। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন ৪ নম্বরের জামাল মোস্তফা, ৫ নম্বরের আবদুর রউফ নান্নু, ১৮ নম্বরের জাকির হোসেন বাবুল, ২৮ নম্বরের ফোরকান হোসেন ও ৩০ নম্বরের আবুল হাসেম (হাসু)।

আনিসুর রহমান
ডিএসসিসির ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে জমি দখল ও মাদক ব্যবসার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পূর্ব গোড়ানের ঝিলের পাঁচ-ছয় বিঘা আয়তনের পুরোটাই দখল করে নেন আনিস। সেখানে মাটি ভরাট করে প্লট বানিয়ে তা বিক্রি করেন। আনিসের বর্তমান বাড়ি দক্ষিণ গোড়ানের ৪১১/এ নম্বর হোল্ডিংয়ের জমিও দখল করা। ওই জমিতে আটতলা অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করে বেশির ভাগ ফ্ল্যাট বিক্রিও করা হয়েছে। পূর্ব গোড়ান ৮ নম্বর গলির মাথায় শাহি মসজিদের সামনে আরেকটি জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে আনিসের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা আরও জানান, নতুন কোনো ভবন কেউ করতে চাইলে সেখানে এ কাউন্সিলরের লোকজন গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। আবার এলাকায় কেউ ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি করতে গেলেই তার লোকজন গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। তারা সেখানে ইট-বালু-রড-সিমেন্ট সরবরাহের কাজ দিতে হয়। এ ছাড়া এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে খিলগাঁও-গোড়ান এলাকায় অভিনব কায়দায় মাদক বিক্রির অভিযোগও বেশ পুরনো।

আশ্রাফুজ্জামান ফরিদ 
ডিএসসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশ্রাফুজ্জামান ফরিদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের অভিযোগ, জমি দখল, ভাগ্নে শাওনকে দিয়ে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ, সরকারি জমিতে বাজার বসিয়ে অর্থ বাণিজ্য, কমিউিনিটি সার্ভিসের নামে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা আদায়, বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, সিএনজি স্টেশন থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করেন তিনি। সবুজবাগে কোনো নতুন ভবন করতে হলেও কাউন্সিলর ফরিদকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা দিতে হয়।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন 
র‌্যাবের হাতে আটক ক্যাসিনোকা-ে আলোচিত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম ও ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকা ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতনও পেয়েছেন দলীয় সমর্থন। তার অবৈধ সম্পদের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অভিযোগ আছে, শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া রতন নগর ভবন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করেন। কাউন্সিলর হয়ে গুলিস্তান এলাকায় ও মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। গুলিস্তানের ফুটপাত ও মুক্তিযোদ্ধা ক্রাড়ীচক্রে ক্যাসিনো থেকে বিপুল অর্থ আয় করেন তিনি। নিজস্ব দেহরক্ষী নিয়ে নগর ভবনে প্রভাব বিস্তার করা এ কাউন্সিলর ডিএসসিসির একটি অনুষ্ঠানে দুই কর্মকর্তাকে নিজে মারধর করে আলোচনায় আসেন। সেগুনবাগিচায় ফুটপাত দখল করে দোকান ও ডিএসসিসির একটি পাঁচতলা ভবনের তিনটি ফ্লোর দখল করে রাখার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রতন বলেন, তিনি নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ ভবনে ব্যবসা করেন। আর কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ সঠিক নয়।

হাসিবুর রহমান মানিক 
হাসিবুর রহমান মানিক ডিএসসিসির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। নিজ দপ্তর নগর ভবন থেকে বেনামে ঠিকাদারিতে অংশ নেওয়া ও ঢাকেশ^রী মন্দিরসংলগ্ন মার্কেটে দোকান বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আজিমপুরের বিভিন্ন লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত পরিবহন থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, মানিক বর্তমানে যে বাড়িতে থাকেন, সেটি সেলিম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে চুক্তিতে নিয়ে তা আর ফেরত দেননি তিনি। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মানিক।

আহমদ ইমতিয়াজ মন্নাফী
আসন্ন নির্বাচনে ডিএসসিসির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সরকারদলীয় সমর্থন পেয়েছেন আহমদ ইমতিয়াজ মন্নাফী। তরুণ এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাপ্তানবাজারের মুরগিপট্টি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে সেখান থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মনির নামের এক কর্মীকে দিয়ে দৈনিক কাপ্তানবাজার শুধু মুরগিপট্টি থেকেই দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করেন তিনি। এ টাকা আদায় নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় সরকারদলীয় লোকজনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ ছাড়া ময়লা সংগ্রহের নামে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাবিবুর রহমান হাবু
ডিএসসিসির ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হাবুর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে সায়েদাবাদে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে বাধাদান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পরিবহনে চাঁদাবাজি ও সায়েদাবাদ-শ্যামপুর এলাকায় দখলের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

মোহাম্মদ হোসেন
ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের জমি, খাসজমি, নদীর তীর, খেয়াঘাট, ট্রলারঘাট, রাস্তা, ফুটপাত দখলসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ডিশ-ইন্টারনেটের ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এ ছাড়া চাঁদাবাজি ও দখলবাজির মাধ্যমে পাওয়া অর্থের বড় অংশ তার। এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা থেকে মাসিকহারে অর্থ নেন হোসেন।

জামাল মোস্তফা
ডিএনসিসির কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা নিজে সরাসরি অপরাধে না জড়ালেও ছেলে রফিকুল ইসলাম রুবেলকে দিয়ে নানা অপকর্ম করানোর অভিযোগ রয়েছে। কাফরুল এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এই কাউন্সিলরের ছেলে রফিকুল ইসলাম রুবেলকে ইয়াবাসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার আগে এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসা ৪৫ জন শীর্ষ মাদক কারবারির মধ্যে জামাল মোস্তফার ছেলের নাম ১২ নম্বরে রয়েছে। জামাল মোস্তফার বিরুদ্ধেও রয়েছে সরকারি জমি দখলের অভিযোগ। তবে জামাল মোস্তফা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আব্দুর রউফ নান্নু
ডিএনসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রউফ নান্নুর বিরুদ্ধে রাস্তা দখল করে মার্কেট নির্মাণ ও মাদক ব্যবসায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ কাউন্সিলর কয়েক বছর আগে মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায় সড়কের একটি বড় অংশ দখল করে অর্ধশত দোকান বানিয়েছেন। এ স্থানটি বর্তমানে ‘নান্নু মার্কেট’ নামে পরিচিত। সরকারের শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর বেশ কিছু দিন তিনি আত্মগোপনে ছিলেন বলেও জানা যায়।

জাকির হোসেন বাবুল
ডিএনসিসির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুলের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। বনানী এলাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চলমান শুদ্ধি অভিযানে বেশ কিছু দিন আত্মগোপনে ছিলেন এই কাউন্সিলর। অভিযোগ আছে, বাবুল ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেও গুলশান, বারিধারা, শাহজাদপুর, নতুনবাজার, নর্দা ও কালাচাঁদপুরসহ আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। এসব এলাকার জমিদখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকা- চলে বাবুলের নির্দেশেই। জমি দখল ছাড়াও কড়াইল বস্তিতে অবৈধভাবে গ্যাসসংযোগ দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ফোরকান হোসেন
ডিএনসিসির ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ফোরকান হোসেনের বিরুদ্ধে আগারগাঁও-শেরেবাংলা নগর এলাকায় ফুটপাত দখল ও মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আপন ভাই ও নিজস্ব লোকজন দিয়ে আগারগাঁও আইডিবি ভবন থেকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সামনের রাস্তা পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ডিএনসিসির একটি সভায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও ফুটপাত দখলের অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত ফোরকান তা প্রত্যাখ্যান করে পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ ছুড়ে দেন।

আবুল হাসেম হাসু
নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে ডিএনসিসির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসেম হাসুর বিরুদ্ধে। রাজধানী মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় নিজস্ব লোকজন দিয়ে জমি দখল ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শ্যামলী আদাবর এলাকাবাসীর কাছে ‘বড় দখলদার’ হিসেবেই পরিচিত। এ কাউন্সিলরের ভাই কাসুকে নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ‘হাসু-কাসু’ বাহিনী নামে পরিচিত এই বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হাসুর বিরুদ্ধে আদাবর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলাও হয়েছে।

  • কার্টসি — দেশরূপান্তর / ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯ 

একাদশ সংসদ নির্বাচন — ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তীব্র সমালোচনা

জমির হোসেন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নামে পাতানো নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, বিরোধী প্রার্থীর উপর হামলা, কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা, ভোটের আগের দিন ও ভোটের দিন ২১ জন হত্যার প্রতিবাদে মানবাধিকার সংগঠন ভয়েস ফর বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ৫ ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ হাউস অব লর্ডসে এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

হাউস অব লর্ডের প্রভাবশালী লর্ড সদস্য এ্যান্ড্রু স্টানেলের সভাপতিত্বে ভয়েস ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আতাউল্যাহ ফারুকের পরিচালনায় আলোচনা করে ব্রিটিশ এমপি, হাউজ অব লর্ডস সদস্য, ইউরোপিয়ান কমিশন প্রতিনিধি, অ্যামোনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক আইনজীবী সহ অনেকেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

বক্তারা একাদশ সংসদ নির্বাচন একতরফা হয়েছে বলে এর তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করেন। তারা বলেন বিবিসি, সিএনএন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে নির্বাচন কারচুপি স্পষ্টতা ফুটে উঠেছে। বিবিসির রিপোর্টে দেখা যায় আগেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে। একটা দেশের জাতীয় নির্বাচনে এটা হতে পারে না। এসব কারচুপি আন্তর্জাতিক মহল অবশ্যই অবলোকন করছে।

ইউরোপীয়ান কমিশন লন্ডন শাখা রাজনীতিক বিভাগের প্রধান ইয়ান ক্রুশ বলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইউরোপিয় ইউনিয়ন গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এধরনের নির্বাচনের পক্ষে না।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর সাবেক দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক প্রধান আব্বাস ফাইজ বলেন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করার জন্য জোর করে ক্ষমতায় আছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের দাওয়াত দেবেন এবং এ নির্বাচনকে বৈধ করবেন। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করার চেষ্টা করবেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট চুরির সত্যিকারের দৃশ্য আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক আইনজীবী ব্যারিস্টার টোবি ক্যাডম্যান বলেন- বাংলাদেশে আইনের শাসন ১০ বছর যাবৎ নেই তা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়। তিনি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অন্যায়ভাবে বন্দী রাখায় বর্তমান সরকারের সমালোচনা করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে হাউস অব লর্ডের সিনিয়র লর্ড সদস্য এন্ড্রু স্টানেল বলেন- রাজনৈতিক মামলায় আটককৃত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচার এবং অন্যায় করা হচ্ছে। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। বক্তব্য রাখেন পল স্কোলী এমপি, লর্ড হোসাইন, মানবাধিকার কর্মী স্টীব জন, বাংলাদেশ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এর আহ্বায়ক এস এইচ সোহাগ, ভয়েস ফর বাংলাদেশের যুক্তরাজ্য শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল জামিল প্রমুখ।

আয়োজক কমিটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কানিজ ফাতিমা, আব্দুর রাহিম, নূর হোসেন, আকলিমা ইসলাম, মনোয়ার মোহাম্মদ, আবুল হোসেন নিজাম, লুৎফর রহমান লিঙ্কন, ফরহাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর শিকদার, অঞ্জনা আলাম, লুনা সাবিরা, আবদুল্লাহ আল মামুন, পারভেজ আজম, আবদুল্লাহ আল নোমান, জাহাঙ্গীর চৌধুরী, সোহরাওয়ার্দি শুভ, নাজিয়া আকবর, কাওছার হোসেন, আব্দুল ওয়াহাব রুবেল, কামরুল হাসান, ফয়সাল আহমেদ, মোহাম্মদ আলামিন, আল কবির আব্দুল ওয়াহাব, একলিমুর রাজা চৌধুরী মান্না, ফজলে রহমান পিনাক, মো. সাদেকুল ইসলাম, মোহাম্মদ সালেকিন মিয়া, আবদুল কাদের জিলানী, মোহাম্মদ জে এস চৌধুরী হীরা, এইচ এম আলফি সানি রাতুল, মো. শামসুল ইসলাম, রুবেল আহমদ, মো. কামরুল হাসান, মো. মারুফ আদনান চৌধুরী, আব্দুস শুক্কুর, এম আই হোসাইন রাসেল, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ মুরাদ, মোহাম্মদ আসাদ তুসার, নাজমুল আহসান, মো. মহিন উদ্দিন (ফয়সাল), মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান জনি, মো. আসাদ প্রমুখ।

  • কার্টসি - যুগান্তর/ ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

Sunday, December 29, 2019

নিত্যপণ্যের অসহনীয় মূল্য

বেসামাল বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে


নিত্যপণ্যের বাজার ক্রেতা সাধারণের অনুকূলে আসছেই না। এমনিতেই গত সাড়ে তিন মাস ধরে বাজারে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা; এর অতিরিক্ত হিসেবে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।

গত এক মাস ধরে ভোজ্যতেলের দাম ভোক্তার সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে আর চলতি অর্থবছরে বাজেটে কর বাড়ানোর অজুহাতে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিতে সাত-আট টাকা। টিসিবি বলছে, গত এক মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ আর খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা একাধিক ভোক্তা যুগান্তরকে বলেছেন, একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা ছক করে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে। তারা ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা, অথচ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে মাথাব্যথা নেই।

বস্তুত, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের নাগরিক সমাজের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ক্যাব বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে এদেশে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। আসলে পুরোটাই কারসাজি। এ কারসাজির মাধ্যমে একদিকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি মুনাফা করছে, অন্যদিকে তারা বিব্রত করছে সরকারকেও। ক্যাব সভাপতি নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে কতগুলো পরামর্শ দিয়েছেন, যা প্রণিধানযোগ্য। বলা হয়েছে, প্যাকেটজাত ও বস্তাজাত পণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে তা গায়ে লেখা বাধ্যাতমূলক করা হলে ভোক্তারা উপকৃত হবেন। ক্যাব ভোক্তা স্বার্থ-অধিকার রক্ষায় স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় অথবা বাণিজ মন্ত্রণালয়ে পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠারও দাবি জানিয়েছে। সরকারকে এ দাবি বিবেচনায় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রমও দৃশ্যমান হওয়া দরকার।

পেঁয়াজের আকাশছোঁয়া মূল্যের কারণে ভোক্তারা ভুগেছে মাসের পর মাস। এখন যদি অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যও অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে, তাহলে নিু ও স্বল্প আয়ের মানুষদের ভোগান্তির সীমা থাকবে না। সমাজের একটি বড় অংশ হল নিু আয়ের মানুষ। নিত্যপণ্যের মূল্য যখন বাড়ে, তখন কিন্তু তাদের আয় বাড়ে না। স্বল্প আয় দিয়েই তাদের মোকাবেলা করতে হয় পরিস্থিতি এবং তা করতে গিয়ে তাদেরকে পড়তে হয় অসহনীয় বিড়ম্বনায়। এ অবস্থা থেকে তাদের পরিত্রাণ দিতে হলে সরকারকে অবশ্যই বাজার ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে যেসব সিন্ডিকেট, সেগুলো ভাঙতে হবে।
  • যুগান্তর /২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

একাদশ সংসদ নির্বাচন- পুলিশ ও প্রশাসনের 'পক্ষপাতমূলক' ভূমিকার প্রমাণ পেয়েছে টিআইবি


বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ৫০টি আসনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর এক পরিবীক্ষণের ফলাফলে ৪৭টিতেই অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।

সংস্থার বাংলাদেশ শাখার নির্বাহী পরিচালক ড ইফতেখারুজ্জামান বিবিসিকে বলেছেন, তাদের পর্যবেক্ষণের এবং বিশ্লেষণের পেছনে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।

"নির্বাচন আচরণবিধির ব্যাপক লঙ্ঘনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং একধরনের অভূতপূর্ব নির্বাচন হয়েছে যার ফলে এই নির্বাচন অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হিসাবে আলোচিত হচ্ছে।"

বিচার-বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে টিআইবি।

তবে টিআইবির এই রিপোর্ট সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরি বিবিসিকে বলেন, সুনির্দিষ্ট আইনের ভেতরেই নির্বাচন হয়েছে, এবং নির্বাচন নিয়ে যে কোনো অভিযোগের প্রতিকারের আইনি কাঠামো রয়েছে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিবীক্ষনের জন্য র‍্যানডম স্যাম্পলিং বা দৈব-চয়নের ভিত্তিতে এই ৫০টি আসন নির্ধারিত করে টিআইবি। শিডিউল ঘোষণার পরপরই সংস্থার কর্মীরা তাদের কাজ শুরু করেছিলেন। পরিবীক্ষণের প্রাথমিক রিপোর্ট আজ (মঙ্গলবার) প্রকাশ করা হয়েছে।

বড় কী কী অনিয়ম তারা দেখেছেন? বিবিসির এই প্রশ্নে ড ইফতেখারুজ্জামান একটি তালিকা তুলে ধরেন -

-নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

-প্রতিপক্ষের এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

-অনেক ভোটার ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি

-বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মারার দৃষ্টান্ত রয়েছে

-জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে

-ভোট শুরুর আগে ব্যালট ভর্তি বাক্স দেখা যায়

-ভোট শেষের আগে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায়

-গণমাধ্যমের জন্য 'অভূতপূর্ব' কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল

-নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসন প্রতিপক্ষকে দমন করার ব্যাপারে সরকারের সাথে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে ড জামান বলেন, "নির্বাচন কমিশন যে যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। পুলিশ ও প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে নির্বিকার ছিল, অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরাও এই লঙ্ঘনের অংশীদার ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।"

প্রমাণ কী রয়েছে তাদের কাছে,- এই প্রশ্নে ড জামান বলেন, "অভিযোগগুলো ব্যাপক এবং এসব অভিযোগের যথার্থতা এবং গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়েছে...আমাদের প্রতিটি পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ সম্পর্কে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।"

ইফতেখার জামান বলেন, ৫০টি আসনের ওপর পরিবীক্ষণের ফলাফল দিয়ে সারা দেশের নির্বাচনের পরিবেশ বিবেচনা করা যাবেনা।

"তবে এটি (নির্বাচনের) সার্বিক চিত্রের বহি:প্রকাশ বলে মনে করি।"

কী বলছে নির্বাচন কমিশন

টিআইবির এই রিপোর্ট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরি বিবিসিকে বলেন, সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর ভেতরেই নির্বাচন হয়েছে, এবং নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো অভিযোগের প্রতিকারের আইনি ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছিল, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে এবং ইলেকটোরাল তদন্ত কমিটিও রয়েছে।

"নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পর এমনকি ভোটাররাও এই তিনটি হাতিয়ারের যে কোনোটির শরণাপন্ন হতে পারেন। তাতে না হলে, সুপ্রিম কোর্টের ট্রাইব্যুনালও রয়েছে।"
  • বিবিসি বাংলা/১৫ জানুয়ারি ২০১৯

একাদশ সংসদ নির্বাচন- ৫০ আসনের মধ্যে ৪৭টিতে অনিয়ম — টিআইবি


সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ আসনের মধ্যে ৪৭টিতে অনিয়ম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

১৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) জানান, সংসদীয় নির্বাচনে ৫০টি আসন নিয়ে সার্ভে করা হয়। এগুলোর মধ্যে ৪৭টিতে অনিয়ম পাওয়া গেছে।

টিআইবি’র গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫০টি আসনে নির্বাচনের দিন সংঘটিত অনিয়মের মধ্যে রয়েছে: প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা, জাল ভোট দেওয়া, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে রাখা, বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া, ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো, ব্যালট বাক্স আগে থেকে ভরে রাখা এবং প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের মারধর করা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল বা জোট ও প্রার্থী, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন অংশীজন নির্বাচনী প্রক্রিয়া কতটুকু আইনানুগভাবে অনুসরণ করেছেন তা পর্যালোচনা করতে গিয়ে সংস্থাটি এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানায়। তবে তা সবার জন্যে সমানভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৩০০টি আসনের মধ্য থেকে ৫০টি আসন নির্বাচন করে প্রত্যেক আসনে স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে প্রধান দুটি দল/ জোটের প্রার্থী বাছাই করে প্রার্থী ও তাদের কার্যক্রমের ওপর তথ্য সংগ্রহ; কোনো আসনে তৃতীয় কোনো শক্তিশালী প্রার্থী থাকলে তাকেও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

টিআইবি’র গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৪৭টি আসনে কোনো না কোনো নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ বা অনিয়মের ধরনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: 

নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে রাখা, আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো বা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া, বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট, ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা, ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই ব্যালট পেপার ভর্তি বাক্স, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া এবং প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া।

সংস্থাটির প্রতিবেদনের ‘সার্বিক পর্যবেক্ষণ’ অংশে বলা হয় যে, “নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ অনেকক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হয়নি”। টিআইবি’র মতে, নির্বাচন কমিশন যেসব কাজে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া, সব দলের সভা-সমাবেশ করার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, বিরোধীদের দমনে সরকারের ভূমিকার প্রেক্ষিতে অবস্থান নেওয়া - নির্বাচন কমিশনের নীরবতা বা ক্ষেত্রবিশেষে অস্বীকার, সব দল ও প্রার্থীর প্রচারণার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, সব দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা সমানভাবে নিশ্চিত করা, নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বিশেষকরে সরকারি দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

এছাড়াও, নির্বাচন কমিশন সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করতে পারেনি উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আছে কী না তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

  • কার্টসি- The Daily Star/ জানুয়ারী ১৫, ২০১৯

৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন - কেন্দ্র-ভিত্তিক ফলাফলে অস্বাভাবিক ভোট

১৯৭ কেন্দ্রে শতভাগ, হাজারো কেন্দ্রে ৯৫-৯৯% ভোট! 



বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস পর প্রকাশিত কেন্দ্র-ভিত্তিক ফলাফলে অস্বাভাবিক ভোট পড়ার চিত্র উঠে এসেছে।

ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কমপক্ষে ১৯৭টি কেন্দ্রে ১০০% ভোট পড়েছে। আর অন্তত ১ হাজার ৮৮৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৫% থেকে ৯৯.৯৯ শতাংশ।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স'র (ফেমা) প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, বিষয়টি উদ্বেগের।
কেন্দ্র-ভিত্তিক ফলাফলে এই অস্বাভাবিক ভোট পড়ার চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় কোথাও ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়লেই সেখানে কমিশনের আলাদা নজর দেয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, "এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। যেটা হয় না পৃথিবীতে কোথাও, সেটা চলতে পারে না। আমরা শুধু এটা দেখেছি মিলিটারি আমলে ডিক্টেটরদের সময়।"

"যখন তারা গণভোট নিয়েছে তখন আমরা দেখেছি হান্ড্রেড পার্সেন্ট, নাইনটি পার্সেন্ট অনেক সময় একশভাগেরও বেশ ভোট পড়ার নজির আছে। এটা হয় একটা অটোক্রেটিক রুলের সময়।"
কেন্দ্র-ভিত্তিক ফলাফলে এই অস্বাভাবিক ভোট পড়ার চিত্র উঠে এসেছে।

"কিন্তু এখন তো আমাদের ডেমোক্রেসি। এখানে তো যে ভোট দিতে যাবে যাবে, ইচ্ছা হলে যাবে না। তাদের ওপরে তো কারো কোনো হাত নেই। সেখানে হান্ড্রেড পার্সেন্ট কিভাবে ভোট পড়লো এটা ইলেকশন কমিশনের নিজেদেরকেই বের করতে হবে," বলেন তিনি।

৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট বেশিরভাগ আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছে। আর বিরোধী ২০ দলীয় জোটে নেতৃত্বে থাকা বিএনপি এবং তাদের নির্বাচনী জোট ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৭টি আসনে জয় নিয়ে এখন সংসদে।

ভোটের ফলাফল ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক নৌকা মার্কা ও বিরোধী দল বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের তারতম্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

কারণ অনেক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তুলনায় বিএনপির প্রার্থী মাত্র দশ ভাগের এক ভাগ ভোট পেয়েছে।

কেন্দ্র-ভিত্তিক ফলাফলে দেখা যায় বহু কেন্দ্রে বিএনপি কোনো ভোটই পায়নি।

নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে শতভাগ প্রদত্ত ভোটকে অস্বাভাবিক বলে স্বীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারও।

কিন্তু গেজেট প্রকাশের পর এ নিয়ে কিছু করার নেই বলেও মনে করে কমিশন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন কমিশনারদের কেউই মন্তব্য করতে রাজী হননি।

তবে কমিশন সচিব মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, "প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয় কিন্তু অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন যে এটা যদি কোনো নির্বাচনকালীন অথবা গেজেট প্রকাশের আগে কেউ অভিযোগ করতো, সুনির্দিষ্টভাবে, তাহলে নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে দেখতে পারতো। যেহেতু এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি বা কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসেনি, গেজেট নোটিফিকেশন করার পরে আর কিছু করার থাকে না। কিন্তু কেউ যদি এটা নিয়ে এখন কথা বলতে চান তাহলে উপযুক্ত আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে।"

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের এত ভোট পড়ার তথ্য থাকলেও অনেকে ভোট দিতে পারেননি এমন অভিযোগও ছিল। ভোটের দিন এমন কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বিবিসির সাংবাদিকদের চোখে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি ৫০টি আসন পর্যবেক্ষণ করে ৪৭টিতে বুথ দখল করে জাল ভোট, এমনকি ভোটের আগে ব্যালটে সিল মারার মতো অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে।

কিন্তু ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোটের হার এত বেশি কেন সেটা নির্বাচন কমিশনকেই তদন্ত করে দেখার প্রয়োজন।

"অনেকেই জানে। অনেকেই অনেক থিওরি দিতে পারে। কিন্তু সেই থিওরি-তো লিগ্যাল হবে না। একে বৈধতা দেয়ার জন্য ইলেকশন কমিশন যদি প্রতিটা আসনে একটা কমিটি করেন এবং তাদের যদি সদিচ্ছা থাকে তারা বের করতে পারবে যে এই ঘটনাটা কী করে হলো।"

তিনি বলেন, "আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হতে হবে। ইলেকশন ঠিকমতো হওয়াটা কিন্তু গণতন্ত্রের একটা বড় স্তম্ভ। সেই স্তম্ভ যদি নড়বড়ে হয়ে যায় তাহলে গণতন্ত্রের বাকি স্তম্ভগুলোও কিন্তু নড়বড়ে হতে থাকবে।"

নির্বাচন কমিশন সচিব জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা বা এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত কমিশন এখন পর্যন্ত নেয়নি।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে নির্বাচনকে বিতর্ক ও অনিয়মের ঊর্ধ্বে রাখতে সবক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনার করছে।

যদিও নির্বাচনে ইভিএম নিয়েও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।

  • আবুল কালাম আজাদ
  • বিবিসি বাংলা/ ৪ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ছিল একপেশে — যুক্তরাষ্ট্র


বাংলাদেশে একপেশে সংসদীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০১৮’-তে এমন মন্তব্য করা হয়েছে৷ 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ বলে বিবেচিত হয়নি৷ ভরা ব্যালট বাক্স, বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট এবং ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে৷ নির্বাচন পূর্ববর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘নির্বাচনের আগে হয়রানি, হুমকি, গণ গ্রেপ্তারও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ যার কারণে অনেক বিরোধী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের জন্য বৈঠক, জনসভা, কিংবা স্বাধীনভাবে প্রচার চালানো কঠিন ছিল৷’’

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারীদের প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে অনুমতি ও ভিসা প্রদান করা হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ ‘‘২২টি ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ এনজিওর মধ্যে মাত্র সাতটিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দেয়া হয়,’’ দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর৷ এনজিও ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের পরিসংখ্যান দিয়ে তারা বলছে, নির্বাচনের মাসে বিএনপি ও তার রাজনৈতিক জোটের বিরুদ্ধে মোট ১৩২৪ টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ যেখানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এমন ঘটনা ঘটেছে ২১১ টি৷ ‘‘নির্বাচনকালীন সময়ে প্রায় ৪,৩৫,০০০ বিএনপি সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ৷ যাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এসব মামলার অনেকগুলোর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিসেবে অভিহিত করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷’’ বলা হয়েছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা দায়ের করেছে সরকার৷

গেল সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে জামায়াতের কর্মকাণ্ডে রাশ টানার প্রস্তাব উঠলেও পররাষ্ট্র বিভাগের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে জামায়াতের নেতা কর্মীদের মত প্রকাশের সাংবিধানিক স্বাধীনতা প্রয়োগ করতে দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করা হয়েছে৷ ‘‘রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিবন্ধনের সুযোগ না দেয়া, জামায়াতের নামে অফিস খুলতে না দেয়া সেই সঙ্গে নেতা ও সদস্যদের মত প্রকাশ ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার ক্রমাগত হরণ করা হচ্ছে৷’’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যেসব গণমাধ্যম সরকার ও আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তাদেরকে হয়রানি করছে সরকার৷ বিজ্ঞাপন থেকে তাদের আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে৷ গণমাধ্যমগুলো সরকারের প্রতিক্রিয়া এড়াতে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’ আরোপ করছে বলেও উল্লেখ করা হয়৷

সরকারি বাহিনীর হত্যা, গুম, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতি, সমকামীদের প্রতি সহিংসতা, শ্রমিক ইউনিয়নে বাধা দেয়া ও শ্রমিক অধিকার সহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ৷ বলা হয়েছে, ‘‘নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে৷ কিন্তু সরকার মাত্র অল্প কয়েকটি নির্যাতন ও হত্যার ঘটনার তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে৷’’

  • কার্টসি - ডয়চে ভেলে/  মার্চ ১৪, ২০১৯ 

অসঙ্গতি, অনিয়ম ও জালিয়াতির নির্বাচন ৩০শে ডিসেম্বর - সুজন

আকবর হোসেন

বাংলাদেশে ৩০শে ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের মাত্রা কতটা ব্যাপক ছিল তার কিছু খণ্ড চিত্র উঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে।

নির্বাচনের ছয় মাস পরে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্র-ভিত্তিক যে ফলাফল প্রকাশ করেছে সেটি পর্যালোচনা করেই এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, ৭৫টি আসনের ৫৮৬টি কেন্দ্রে যতগুলো বৈধ ভোট পড়েছে, তার সবগুলোই পেয়েছে নৌকা মার্কার প্রার্থীরা।এসব কেন্দ্রে ধানের শীষ কিংবা অন্য প্রার্থী কোন ভোটই পাননি।

তবে মাগুরা ২ আসনের একটি কেন্দ্রে সব ভোট পেয়েছে ধানের শীষ। যদিও সে আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করেছে।

নির্বাচনে অনিয়মের আরেকটি দিক হচ্ছে, অন্তত পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট গণনার পরে রিটার্নিং অফিসার তাৎক্ষণিকভাবে যে ফলাফল প্রকাশ করেছে, তার সাথে সর্বশেষ প্রকাশিত কেন্দ্র-ভিত্তিক ফলাফলের কোন মিল নেই।


সুজনের প্রতিবেদন বলছে, ৭৫টি আসনের ৫৮৬টি কেন্দ্রে যতগুলো বৈধ ভোট পড়েছে, তার সবগুলোই পেয়েছে নৌকা মার্কার প্রার্থীরা।

উদাহরণ হিসেবে সুজন তুলে ধরেছে, চট্টগ্রাম-১০ আসনের কথা। এই আসনে গণ-সংহতি আন্দোলনের সৈয়দ মারুফ হাসান রুমী কোন ভোট পাননি। অর্থাৎ তিনি শূন্য ভোট পেয়েছেন। এমনটাই জানিয়েছিলেন রিটার্নিং অফিসার। কিন্তু কয়েকদিন আগে প্রকাশিত কেন্দ্র-ভিত্তিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, তিনি ২৪৩ ভোট পেয়েছেন- জানাচ্ছে সুজন।

সুজনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , ১০৩টি আসনের ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এ বিষয়টি কোনক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেও তারা উল্লেখ করেছে।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ফলাফল পর্যালোচনা করে চরম অসঙ্গতি এবং কারচুপি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

মি. মজুমদার বলেন, "সুষ্ঠু নির্বাচন তো হয় নাই। এর মধ্যে অনেক অসঙ্গতি, অনিয়ম এবং জালিয়াতি আছে। এ ব্যাপারে অনেকেরই দায় আছে। তবে সবচেয়ে বড় দায় আছে নির্বাচন কমিশনের।"

সুজনের এই পর্যালোচনা প্রতিবেদন নিয়ে নতুন করে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তবে কয়েকদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, নির্বাচন-কালীন অথবা গেজেট প্রকাশের আগে কেউ যদি অভিযোগ করতো সুনির্দিষ্টভাবে, তাহলে নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে দেখতে পারতো। যেহেতু এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি বা কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসেনি, গেজেট নোটিফিকেশন করার পরে আর কিছু করার থাকে না।

কিন্তু বদিউল আলম মজুমদার এ ধরনের বক্তব্যের সাথে একমত নন। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারতো। এমনকি নির্বাচন কমিশনের ফলাফল বাতিল করারও ক্ষমতা রয়েছে বলে মি: মজুমদার উল্লেখ করেন।

  • বিবিসি বাংলা/৯ জুলাই ২০১৯