——— The New Age Report/ February 05, 2023
Gas consumers are forced to pay up to Tk 400 extra for buying a cylinder of 12-kilogramme liquefied petroleum gas from the retail markets in the capital and elsewhere in the country.
——— The New Age Report/ February 05, 2023
Gas consumers are forced to pay up to Tk 400 extra for buying a cylinder of 12-kilogramme liquefied petroleum gas from the retail markets in the capital and elsewhere in the country.
সাক্ষাৎকার : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
———
লোটন একরাম
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে কোনো সংকট নেই বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে শতভাগ আস্থাশীল এবং আনুগত্য নিয়ে কাজ করি। যে মহলটি বিএনপিতে ভাঙন, বিভ্রান্তি ও সংশয় সৃষ্টি করতে চায় — তারাই নানা গল্প তৈরি করে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে রাজনীতিকে সোজাপথে যেতে দেওয়া হয় না। এখানে একটি শক্তি আছে, তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে এ কাজ করে থাকে।
এক মাস কারাভোগের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে সমকালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করার দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে গত ৯ জানুয়ারি মুক্তিলাভের পর প্রথম একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা আলমগীর বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই রাজনীতি। সেই রাজনীতিতে অতীতেও সফল হয়েছি এবং ভবিষ্যতেও সফল হবো — ইনশাআল্লাহ। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাবে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারের পদত্যাগের আগে কোনো আলোচনা হবে না। সব সময় বেগম খালেদা জিয়া যে কথাটি বলেন, জনগণ অবশ্যই নিজ অধিকার আদায় করবে।
ভিডিয়ো লিঙ্ক —
সমকাল: এক মাস কারাভোগের দিনগুলো কেমন ছিল?
মির্জা আলমগীর: এবার কারাগারের অভিজ্ঞতাটা খুব সুখকর ছিল না। বাংলাদেশে রাজনীতি করলে কারাগারে যাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
অনেকবার কারাগারে গেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবার লক্ষ্য করলাম, সাবেক মন্ত্রী-এমপি হিসেবে আমি ও মির্জা আব্বাস ডিভিশন প্রাপ্য হয়েও প্রথম পাঁচ দিন ডিভিশন দেয়নি। কর্তৃপক্ষ সঠিক কোনো উত্তরও দিতে পারেনি। আমাদের পরিবারের সদস্যরা যখন আদালতে রিট করতে যাচ্ছিল, তখন ডিভিশন দিয়েছে।
সমকাল: সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারসহ ১০ দফা ও রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা দাবিতে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত হয়ে পড়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
মির্জা আলমগীর: প্রতিটি আন্দোলনের গতিতে উত্থান-পতন থাকে। কখনও উপরে উঠে, আবার কখনও নিচে নামে। দলের এত নেতাকর্মী কারাগারে ছিল— স্বাভাবিকভাবে আন্দোলন কিছুটা ছন্দপতন ঘটতে পারে। তার মানে একেবারে স্থিমিত হয়ে পড়েছে- তা নয়। আন্দোলন চলছে এবং আরও বেগবান হচ্ছে।
সমকাল: সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরকালে বিএনপিসহ বিরোধী দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের আরও একজন ক্ষমতাবান সিনিয়র কর্মকর্তা সফরে আসছেন। তাঁর সঙ্গে কি আপনাদের সাক্ষাৎ হবে?
মির্জা আলমগীর: যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রী বা কর্মকর্তা সফরকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রয়োজন মনে করলে তাঁদের পক্ষ থেকেই আমন্ত্রণ করা হয়। এবার ডোনাল্ড লু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেননি। তা ছাড়া সাক্ষাৎ করাটা আমাদের দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও নয়।
সমকাল: সামনে পবিত্র রমজান মাস। সাধারণত ওই সময়ে রাজপথের আন্দোলন সম্ভব নয়। কবে নাগাদ আপনাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন জোরদার করতে চান?
মির্জা আলমগীর: রমজান মাস এখনও অনেক দেরি আছে। আগামীকাল থেকে কী ঘটবে, না ঘটবে- সেটাই তো আজ বলা যায় না। নির্ভর করবে আমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, আন্দোলনটা কোথায় নিয়ে যেতে চাই — তার ওপর। রমজান মাস কোনো ফ্যাক্টর নয়।
সমকাল: বিরোধী দলের প্রতিটি কর্মসূচির দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থাকছে। কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
মির্জা আলমগীর: আওয়ামী লীগের চরিত্র সন্ত্রাসী চরিত্র। যখনই ক্ষমতায় এসেছে তারা, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে বাধা দেওয়া তাদের স্বভাবজাত। আমরা অত্যন্ত গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। তারপরও সরকার কতটা ভয় পেয়েছে- এতেই তা বোঝা যাচ্ছে। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণবিচ্ছিন্ন ও অনির্বাচিত সরকারকে সরানোর চেষ্টা করছি।
সমকাল: বর্তমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপ ডাকার আহ্বান জানাবেন কি? এ ছাড়া অতীতের মতো দূতিয়ালি করতে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ বা বন্ধুপ্রতিম প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি ও কূটনীতিকরা কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন?
মির্জা আলমগীর: আমরা কেন সংলাপের আহ্বান জানাতে যাব? আমরা বলছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে না নিলে কোনো আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। পর্দার আড়ালে কোনো দূতিয়ালি জানা নেই।
সমকাল: আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতাদের পরস্পরের মধ্যে কিছুটা সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। বিশেষ করে প্রবীণ নেতা উকিল আবদুস সাত্তার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ায় গুঞ্জনটি আরও ডালপালা মেলেছে?
মির্জা আলমগীর: উকিল আবদুস সাত্তারের ঘটনাটি আমাদের কাছে কোনো ঘটনাই নয়। তাঁকে মোকাবিলা করার মতো সেখানে কমপক্ষে ১০ জন নেতা আছেন। বিএনপির মধ্যে কোনো মতভেদ ও মতদ্বৈধতা নেই। সন্দেহ ও সংশয় নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ।
সমকাল: ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে জোট গঠনের মাধ্যমে আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এবার নামসর্বস্ব ৫৪টি দল ও সংগঠনকে নিয়ে দাবি আদায় বা আপনাদের ভাষায় গণঅভ্যুত্থান ঘটানো কি সম্ভব হবে?
মির্জা আলমগীর: বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করে। বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে। জোটের রাজনীতিরও ইতিহাস আছে। সমমনারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে। আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। ভবিষ্যৎই প্রমাণ করবে, বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে কতটা সফল হয়।
সমকাল: এরই মধ্যে বিএনপির সমমনা জোট গণতন্ত্র মঞ্চের অভ্যন্তরে টানাপোড়েন চলছে বলে খবর বেরিয়েছে। আপনিও অভিযোগ করছেন।
মির্জা আলমগীর: এগুলো ছোটখাটো ব্যাপার। কিছুটা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কোনো সমস্যা বা সন্দেহ ও সংশয় দেখিনি। তারা আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে।
সমকাল: জোট শরিক গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর অভিযোগ করেছেন, বিরোধী ৫৪ দল ও সংগঠনের অনেকে সরকারের কাছ থেকে টাকা ও প্লট নিচ্ছে এবং আসন ভাগাভাগিতে ঐকমত্যে পৌঁছে যাচ্ছে। কারা নিচ্ছে- বিএনপিকে খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মির্জা আলমগীর: উনি যেহেতু বলেছেন, এটার দায়-দায়িত্ব উনি নেবেন। তবে আমি মনে করি, এটা কোনো সমস্যা নয়।
সমকাল: ওয়ান-ইলেভেনের সময়ের মতো এবার আবারও 'কিংস পার্টি'র তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে?
মির্জা আলমগীর: দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব সময়ে একটা রহস্যময়তা থাকে। কারণ, গণতন্ত্র চর্চা সঠিকভাবে হয়নি। এখানে একটি শক্তি আছে, তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে রাজনীতিকে সঠিক এবং সোজাপথে যেতে দেয় না। নানা গল্প ও বিভিন্ন ঘটনা তৈরি করে রাজনীতিকে বিপথে পরিচালনার চেষ্টা করা হয়।
সমকাল: বিএনপিতে শীর্ষ নেতৃত্বের সংকট রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। যেমন ভিপি নুর বলেছেন, 'খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে শীর্ষ নেতা এবং ক্ষমতায় গেলে সরকারপ্রধান হিসেবে আপনার নাম এখনই ঘোষণা দেওয়া উচিত। পরে দল সিদ্ধান্ত নেবে।' আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
মির্জা আলমগীর: এ ধরনের বক্তব্য চক্রান্তমূলক। বিএনপিতে শীর্ষ নেতৃত্বের কোনো সংকট নেই। বিএনপি অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধ আছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব শতভাগ প্রতিষ্ঠিত। সেই জায়গায় যে মহল বিএনপিতে ভাঙন, বিভ্রান্তি ও সংশয় সৃষ্টি করতে চায়- তারাই এ সমস্ত গল্প তৈরি করে।
সমকাল: 'ফিরোজা' বাসভবনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কোনো পরামর্শ চান?
মির্জা আলমগীর: উনার কাছে কোনো রাজনৈতিক পরামর্শের জন্য আমরা যাই না। তিনি খুব অসুস্থ। আমরা তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে থাকি। তিনি একজন রাজনৈতিক নেত্রী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। উনি সব সময় যে কথাটি বলেন, জনগণ অবশ্যই নিজ অধিকার আদায় করবে।
সমকাল: দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের জন্য ধন্যবাদ।
মির্জা আলমগীর : সমকালকেও ধন্যবাদ।
সৌজন্যে — সমকাল/ ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩।
— কাদির কল্লোল
সংসদের মেয়াদের শেষ বছরে এসেও ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৎপরতা নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে আলোচনায় এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচন। সেখানে বিএনপির দলছুট প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তারকে জেতাতে আওয়ামী লীগ কার্যত একতরফা নির্বাচনের সব চেষ্টা চালাচ্ছে বলা যায়। উকিল সাত্তারের একতরফা জয় নিশ্চিত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নন, এমন যে কজন প্রার্থী মাঠে টিকে রয়েছেন, তাঁদের সমর্থকেরাও গ্রেপ্তারের আতঙ্কে আত্মগোপনে যাওয়ায় ওই প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ওই নির্বাচনী এলাকায় একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ছয়টি আসনে এখন উপনির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি এই উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি।
ফলে রাজনৈতিক দিক থেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এরপরও আসনগুলোতে ক্ষমতাসীন দল–সমর্থিত এবং দলের নিজের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোটে নেমেছেন যাঁরা, তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের অনেককে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অনেকে গ্রেপ্তারের আতঙ্কে মাঠছাড়া হয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী যে নির্বাচনে নেই, সেই উপনির্বাচনেও যখন ভোটে অংশ নেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মাঠছাড়া করা হচ্ছে, তখন ক্ষমতাসীন দলের এই কৌশল নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে একতরফা নির্বাচন করার সব চেষ্টাই দৃশ্যমান। সেখানে বিএনপির দলছুট প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তারকে জেতাতে আওয়ামী লীগ সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। দলটির তিনজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের শুরুতেই প্রার্থিতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির দুবারের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন এবং তাঁকেও সরকারের বিভিন্ন দিক থেকে চাপ দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আরেকজন প্রার্থী স্থানীয় বিএনপির সাবেক নেতা আবু আসিফ আহমেদ নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁর নির্বাচন পরিচালনার প্রধান শাফায়াত সুমন এবং নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব থাকা মুসা মিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে কয়েক দিন আগে। বাকি যে দুজন প্রার্থী এখনো ভোটের মাঠে রয়েছেন, তাঁরাও অভিযোগ করেছেন, তাঁদেরও কর্মী-সমর্থকদের অনেকে গ্রেপ্তারের ভয়ে মাঠছাড়া হয়েছেন এবং এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা এজেন্ট নিয়োগের লোক পাচ্ছেন না। ক্ষমতাসীনেরা সেখানে কার্যত একতরফা ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগ যে আসনগুলোতে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে, সেই আসনগুলো থেকেও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাই ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করার অভিযোগ তুলেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সাবেক জেলা সভাপতি সামিউল হক দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন। তাঁর ১৫টি নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং ৩টিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দিয়ে কোনো প্রতিকার না পওয়ায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগের এই বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ তাঁর দলের বিরুদ্ধেই।
বগুড়া-৬ সদর আসনেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীই সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আওয়ামী লীগের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন আসনে একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টার যে চিত্র বা নানা অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে, সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশনের সক্রিয় কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উকিল সাত্তারের সমর্থনে ক্ষমতাসীন দল সব ধরনের ’মেকানিজম’ ব্যবহারের বিষয়গুলো অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘটছে। কিন্তু সেখানে নির্বাচন কমিশন কোনো ভূমিকাই রাখছে না বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। অন্য আসনগুলোতেও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে অভিযোগ, প্রশ্ন বা আলোচনা-সমালোচনা, যা–ই হোক না কেন, সমর্থিত এবং নিজেদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে বিরোধীদের মাঠছাড়া করে ক্ষমতাসীন দল একতরফা ভোটের চেষ্টায় রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনেও বিরোধীদের মাঠ থেকে বিদায় করা হবে কি না? এখন উপনির্বাচনে সেই মহড়া দেওয়া হচ্ছে কি না?
— প্রথম আলো/ জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
——— ডক্টর কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র প্রেসিডেন্ট ডক্টর কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, সম্প্রতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম জাতীয় সংসদে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম-কে জড়িয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। জানি না কি কারণে পরিণত বয়সে এসে মেজর রফিক এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। জানুয়ারি ২৫, ২০২৩, দুপুরে, রাজধানীর পূর্ব-পান্থপথস্থ এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সরকারের দমন-পীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ও বিরোধী দলের গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় এলডিপি। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সমাবেশ করবে তারা। সমাবেশে কর্নেল (অব.) অলি প্রশ্ন রেখে বলেন, ১৯৮০ সালের পূর্বে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি বই লিখেছেন সেই বইতে এসব তথ্য নেই কেন? জাতি জানতে চায় কী কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দ্বারা চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন? চাকরিচ্যুত হওয়ার পর ১৯৭৭-৭৮ সালে মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম প্রায় অসহায়ের মতো জীবনযাপন করছিলেন। ঢাকায় আসার মতো টাকা তার কাছে ছিল না। ঐ সময় আমি তাকে চট্টগ্রামের কমিশনার জনাব আউয়ালের মাধ্যমে বিমানের টিকিট কেটে ঢাকায় আনি। এরপর শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অনুরোধ করে তাকে ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান বানাই। মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম ওই ধরনের ব্যক্তি যে স্বার্থের জন্য যেই প্লেটে খায় সেই প্লেটে ছিদ্র করে। সভায় বক্তব্য রাখেন এলডিপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, এডভোকেট এসএম মোরশেদ, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, উপাধ্যক্ষ মোছা. কারিমা খাতুন, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আবুল হাসেম, প্রচার সম্পাদক এডভোকেট নিলু প্রমুখ।
বগুড়া শহরের খান্দারে অবস্থিত শহিদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের মূল গেইটে প্রবেশ করে ডান দিকে তাকালেই চোখের সামনে মার্বেল পাথরে খোদাই করা নেইমপ্লেট ভেসে আসে। শহিদ চাঁন্দু ক্রীড়া কমপ্লেক্স এর এই ফলকটি ২০০৩ সালের ৩ জুন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বগুড়াকে ক্রীড়াঙ্গনের ‘সেকেন্ডহোম’ বানাতে চেয়েছিলেন বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। এই ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি ছিল সেই স্বপ্ন পূরণের মূল সুঁতিকাগার। এরপর কেটে গেছে প্রায় দুই যুগ। মার্বেল পাথরের সেই ফলক এখনো জ্বল জ্বল করলেও ক্রীড়া কমপ্লেক্স এর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করেনি।
বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর বগুড়ার উন্নয়নে এগিয়ে আসেন দুই ভাই। বড়ভাই তারেক রহমান সামগ্রিক উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলেও ছোট ভাই কোকোর স্বপ্ন ছিল ভিন্ন। তিনি বগুড়াকে উত্তরাঞ্চলে ক্রীড়ার রাজধানী করতে চেয়েছিলেন। এখান থেকেই জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়াবিদ গড়ার স্বপ্ন ছিল তার। এই লক্ষ্যে ২০০২ সালে শহিদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের আধুনিকায়ন করা হয়। পরবর্তীতে আইসিসি এই স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা দিলে ওয়ানডে এবং টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করা হয়। ২০০৪ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয় এই মাঠে।
শুধু স্টেডিয়াম নয়, এই স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করে আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কোকো। বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম আর সিদ্দিক লেমন বলেন, “কোকো
সাহেব বগুড়াকে ক্রীড়াঙ্গনের সেকেন্ডহোম বানাতে চেয়েছিলেন। শুধু ক্রিকেট নয়, সবধরনের খেলাধুলার আয়োজন একই জায়গায় করতে চেয়েছিলেন। তাঁর ক্রীড়া কমপ্লেক্স এর পরিকল্পনায় ছিল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশে একটি আধুনিক ফুটবল স্টেডিয়াম, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জিম, সর্বাধুনিক সুইমিংপুল, এ্যাথলেটিকস্ এর জন্য আলাদা মাঠ, ভলিবল মাঠ, বাস্কেটবল গ্রাউন্ড এবং শহিদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশের ফাঁকা জায়গায় আবাসিক হোটেল। এই লক্ষ্যে স্টেডিয়ামের পাশের কৃষি খামারের কিছু অংশ নিয়ে সেখানে ফুটবল স্টেডিয়াম এবং এ্যাথলেটিক্স এর জন্য ট্র্যাক নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।।” এম লেমন আরও বলেন, “কোকো সাহেব বগুড়ায় আরেকটি বিকেএসপি গড়তে চেয়েছিলেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় তিনি এসব স্বপ্নের কথা বলতেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেউ এগিয়ে আসেনি।”
শহিদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম পূণ:নির্মাণকালীন সময়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মাহবুবুর রহমান বকুল বলেন, “ক্রীড়া কমপ্লেক্স এর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে বাস্কেটবল গ্রাউন্ড করা হয়। জাতীয় দল কিম্বা বিদেশী ক্রিকেটারদের অনুশীলনের কথা ভেবেই এটা করা হয়েছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়া কমপ্লেক্স করা সম্ভব হয়নি।”
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শহিদ চাঁন্দু ক্রীড়া কমপ্লেক্স এর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে বগুড়া উত্তরাঞ্চলের ক্রীড়া রাজধানী হয়ে উঠতো। বগুড়া থেকে জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় সরবরাহ করা যেত। বিশেষ করে ক্রিকেট এবং ফুটবলে উত্তরাঞ্চলের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’ একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরি হলে এই অঞ্চলের ক্রীড়ার ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
আরাফাত রহমান কোকোর ঘনিষ্টজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি শহিদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করে গোটা ক্রীড়া জগতটাকে এক ছাতার নিচে আনতে চেয়েছিলেন। ওভার ব্রীজের মাধ্যমে এক স্টেডিয়াম থেকে আরেক স্টেডিয়ামে এবং সুইমিংপুলে সংযোগ স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল খেলোয়াড়দের নিজস্ব আবাসিক হোটেলে রেখে দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। আধুনিক ক্রিকেট একাডেমিও করতে চেয়েছিলেন তিনি। বিশ্বমানের ক্রিকেটার তৈরির জন্য শ্রীলংকান কিউরেটর নন্দসেনাকে দিয়ে স্টেডিয়ামে দুটি বাউন্সি উইকেট তৈরি করেছিলেন, যা দেশের অন্যকোন ভেন্যুতে ছিল না। সেই বাউন্সি উইকেটে অনুশীলন করেই বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখনো সেই উইকেটগুলো দেশের সেরা বাউন্সি উইকেট হিসেবে বিবেচিত। রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে সাথেই বদলে গেছে বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গনের চেহারা। অতীতের সব সাফল্য, অবদান ভুলে গেছেন কর্তারা।
যেই নির্লোভ মানুষটি শহিদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামকে সারা দুনিয়ায় পরিচিত করে তুললেন সেই আরাফাত রহমান
কোকোর মৃত্যুর দিনেও তাঁকে স্মরণ করে না। শুধু তাই নয়; একসময় যারা শহিদ জিয়ার নামে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাও কখনো এই দিনটি স্মরণ করে না! রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন সেই সময়ের সুবিধাভোগী ক্রীড়া সংগঠকরাও। ফলে একজন কীর্তিমান ক্রমেই স্মৃতির আড়ালে চলে যাচ্ছেন। মুছে ফেলা হচ্ছে তার পরিকল্পনাগুলোকেও। নতুন প্রজন্ম জানার সুযোগই পাচ্ছে না মরহুম আরাফাত রহমান কোকো এবং তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া তথা দেশের ক্রীড়ার উন্নয়নে কতটা অবদান রেখেছেন।
লেখক সাংবাদিক।
— প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খান ও খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম
এক
শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ সন্তান আরাফাত রহমান কোকো একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে সরাসরি রাজনীতির মাঠকে কর্মক্ষেত্র না করে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে তিনি প্রায় প্রকাশ্যে না এসে অনেকটা নিভৃতে নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ক্রীড়াক্ষেত্রে ঐতিহাসিক অবদান রাখেন।
দুই
আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১২ আগস্ট ১৯৬৯ সালে কুমিল্লায় বাবা জিয়াউর রহমানের কর্মক্ষেত্রে। যখন এই শিশুটির বয়স এক বছর সাত মাস তখন বাবা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন। আবার দোসরা জুলাই ১৯৭১-এ এই শিশুটির বয়স যখন মাত্র এক বছর দশ মাস বিশ দিন তখন মা বেগম খালেদা জিয়া এবং বড় ভাই তারেক রহমান পিনোর সঙ্গে পাক-হানাদার বাহিনীর কাছে বন্দি হন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে যখন মুক্তি পান তখন এই শিশুটির বয়স মাত্র দুই বছর চার মাস চার দিন! ১৯৭৫ সালের নভেম্বর বিপ্লবের সময় বাবা জিয়াউর রহমান বন্দি হন আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তখনো শিশুটি মাত্র ছয় বছরের! বাবা জিয়াউর রহমান ১৯৮১-তে যখন শহিদ হন তখন আরাফাত রহমান কোকো মাত্র এগারো বছরের কিশোর! জীবনের প্রথম দশটি বছরেই শিশুটি কিছু বুঝে উঠবার আগেই বন্দি হয়েছিলেন আবার পিতৃহারাও হয়েছেন! এরকম বিস্ময়কর শৈশব কৈশোর পেরিয়ে কোকো পরিণত হয়েছিলেন। অবুঝ শৈশবেই ১৯৭১-এ পাক-হানাদার বন্দিশালায় আটক হওয়ার পর দ্বিতীয় বার ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বন্দি হন।২০০৮ সালের ১৭ই জুলাই মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। ২০১৫ সালের ২৪শে জানুয়ারি মালয়েশিয়াতে মাত্র ৪৫ বছর বয়সেই তাঁর জীবনাবসান হয়।
তিন
আরাফাত রহমান কোকো ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সাধারণ ও অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলেন। একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ঐতিহাসিক অবদান রাখলেও প্রচারের আলো থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতেন। কোকো ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে থাকাকালীন সময়ে ক্রিকেট রাজনীতিমুক্তকরণ যেমন করেছেন, তেমনি বিরোধীদলীয় নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথে কাজ করে বাংলাদেশে অনন্য নজির স্থাপন করেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের অধিকাংশই ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন না কিন্তু ডিওএইচএস ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে ক্রিকেট খেলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে দ্বিতীয় বিভাগে খেলাটা পারিবারিক শক্তি না দেখানোর মত বিনয়!এ ধরনের বিনয় তার পুরো ক্রীড়া সংগঠক জীবনে লক্ষ্য করা যায়।
যেমন ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী সরকার যাকে ইচ্ছা তাকেই বোর্ড সভাপতি করতে পারতো। কাজেই ক্ষমতার চূড়ান্ত ব্যবহার করলে বোর্ড সভাপতি হতে পারতেন, তা না হয়ে বোর্ডের অধীনে ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আমুলে বদলে ফেলেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটকে। এমন কথা কেউ বলতে পারবেনা তার বলয়ের বাইরে বাড়তি কোনো হস্তক্ষেপ কখনো করেছেন। ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে high-performance ইউনিটের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার তৈরীর পাইপলাইনের সূচনা তার হাত দিয়ে। একথা সর্বজন বিদিত যে সাকিব, তামিম, মুশফিক, শুভ, এনামুল জুনিয়র প্রমুখ ক্রিকেটার হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের মাধ্যমেই প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। মোদ্দাকথা, খেলোয়াড় তৈরীর ধারাবাহিক পাইপ লাইন তৈরি হয়েছিল ডেভেলপমেন্ট কমিটির মাধ্যমে। তার মূল কারিগর ছিলেন কোকো।
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে ক্রিকেট খেলা হতো না। ক্রিকেট খেলোয়াড়রা এইসময় বসে থাকতেন । কোকো এই সমস্যা দূর করতে ২০০৪ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে ক্রিকেটের জন্য নিয়ে নেন। এটিকে পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে রূপান্তর করতে ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরির মাধ্যমে মিরপুর স্টেডিয়ামকে আধুনিকায়ন করেন কোকো। মিরপুর স্টেডিয়ামকে হোম অফ ক্রিকেট দেখিয়েই ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বাগতিক দেশের মর্যাদা লাভ করে বাংলাদেশ।
দেশের ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণে ভূমিকা রাখেন কোকো। দেশের ক্রিকেটকে মিরপুর ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত না করে সিলেট, খুলনা, বগুড়া ও রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করেন কোকো। দলীয় ক্ষমতা হাতে থাকার পরও বগুড়ার একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে না করে মুক্তিযোদ্ধা শহিদ চান্দু নামে নামকরণ করে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন তিনি।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়ান কোচ, ট্রেনার, ফিজিও আনার ট্রেন্ড চালু করেন কোকো। বোর্ডের প্রফেশনাল কাজেও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্ট পাওয়া যেত। ক্রিকেট বোর্ডকে করেছিলেন রাজনীতিমুক্ত। কাজটি করতে গিয়ে জনপ্রিয়তা বা বাহবা কুড়াতে যাননি কোকো। প্রেসকে ডেকে কাভারেজের আয়োজন করেননি। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হওয়া সত্ত্বেও সব মতের সংগঠকেরাই ছিলেন তৎকালীন ক্রিকেট বোর্ডে।
২০০৪ সালে প্রথম অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের আয়োজনের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ কোকোর ক্যারিশম্যাতেই। সে সময় বর্তমান ক্ষমতাসীন দল এত বড় আয়োজনের উৎসবে পানি ঢেলে দেওয়ার জন্য সারাদেশে হরতাল ডেকেছিল। সেই প্রতিকূল অবস্থাতেও একদিনে পনেরটি প্র্যাকটিস ম্যাচ আয়োজন করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। সফল এই আয়োজনের নেপথ্য কারিগর ছিলেন কোকো।
চার
এইরকম একজন নির্লোভ, নির্মোহ, অরাজনৈতিক ক্রীড়া সংগঠককে আওয়ামী মিডিয়া দুর্নীতিবাজ,মাদকসেবী-কত কি বানিয়েছে! এই কোকো র নামে গাড়ি পোড়ানোর মিথ্যা মামলা দিয়ে আবার তার মৃত্যুর পর বেগম জিয়াকে সমবেদনা জানানোর নাটক দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। শেখ হাসিনাকে জানানো হয়েছিল যে বেগম জিয়াকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে উনি উঠলে আপনাকে জানানো হবে। তারপরও তিনি তড়িঘড়ি করে বেগম জিয়ার বাসায় এসে গেট থেকে ফিরে যাওয়ার জঘন্য নাটক করেছিল। আওয়ামী মিডিয়াও এই ন্যাক্কারজনক প্রচারণায় অংশ নিল। তাতে কি খুব ক্ষতি হয়েছে?
২৪শে জানুয়ারি ২০১৫ তে মালয়েশিয়াতে কোকোর মৃত্যু হয়। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলাগুলো মাথায় নিয়ে বিদেশের মাটিতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মাত্র এক বছর দশ মাস বয়সে পাক হানাদার বাহিনীর কাছে বন্দী হওয়া এই শিশুটি পরিণত বয়সে দেশে মৃত্যুর গৌরব অর্জন করতে পারেনি কায়েমী স্বার্থবাদী মহল এর কারণে।
মহৎ মানুষদের মৃত্যুও মহিমান্বিত! শহিদ জিয়ার মৃত্যুতে গোটা দেশ ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলো! শহিদ জিয়ার জানাজায় শোকার্ত মানুষের অভূতপূর্ব উপস্থিতি ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করেছিল। এমন জানাজা অতীতে হয়নি ভবিষ্যতেও হবে কিনা সন্দেহ!তবে ২৭ শে জানুয়ারি সরকারবিরোধী কর্মসূচির সময় দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রায়-কারফিউ অবস্থার মধ্যেও যে জানাজা হয়েছিল সেটি অবিশ্বাস্য! একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে জনগণের উপস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছিল –“কোকোর জানাজায় অংশ নিতে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম,মহানগর নাট্যমঞ্চ, গোলাপ শাহ র মাজার থেকে জিপিও মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেয় মানুষ। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এলাকায় হাজারো মানুষ সমবেত হয়। ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ,গাজীপুর থেকে অসংখ্য মানুষ জানাজায় অংশ নেন।“কোকোর জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা কত ছিল বিভিন্ন দৈনিক বিভিন্ন তথ্য দেয়-কেউ বলে দশ লাখ, কেউ বলে পনের লাখ, আবার কেউবা বলে বিশ লাখেরও বেশি! অতি বিস্ময়কর! অবিশ্বাস্য! আমরা উত্তরা থেকে জানাজায় অংশ নিয়েছিলাম। রাস্তায় এয়ারপোর্ট এবং রামপুরা ব্রিজে আমাদের সিএনজি চেক করা হয়েছিল। আমাদের পরিচিত অনেকেরই এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। তারপরও প্রায় কারফিউ অবস্থার মধ্যে কোকোর জানাজায় জনগণের বিপুল উপস্থিতি এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে তিনি মহৎদের কাতারে, তাঁর মৃত্যুও মহিমান্বিত।এমন মহিমান্বিত মৃত্যু অনেক বড় নেতারও ভাগ্যে জোটেনি!
Mon, Dec 19, 2022
A BRIEF OUTLINE OF
THE STRUCTURAL REFORMS
OF THE STATE
Presented by
Mr. Tarique Rahman
Acting Chairman
Bangladesh Nationalist Party-BNP
1. A ‘Constitution Reform Commission’ will be set up to repeal/amend all unreasonable, controversial and undemocratic constitutional amendments.
2. An inclusive ‘Rainbow-Nation’ will be established based on Bangladeshi nationalism, as opposed to the politics of vengeance. A ‘National Reconciliation Commission’ will be formed in this regard.
3. An ‘Election time non-party caretaker Government’ system will be introduced.
4. The executive power of the President, the Prime Minister and the Cabinet of Ministers will be balanced.
5. No one shall serve as the President and the Prime Minister for more than two consecutive terms.
6. In addition to the existing legislative system, an ‘Upper House of the Legislature’ will be established to run the state with expertise.
7.The issue of amendment of Article 70 of the constitution will be examined, in order to ensure scope to the Members of the Parliament to express independent opinion in the Parliament.
8. The existing ‘Chief Election Commissioner and Other Election Commissioners Appointment Act, 2022’ shall be amended.
9. All constitutional, statutory and public institutions will be reconstituted.
10. Effective independence of the judiciary will be ensured.
11. An ‘Administrative Reforms Commission’ shall be set up for restructuring the administration.
12. A ‘Media Commission’ will be set up for comprehensive reforms.
13. There will be no compromise on corruption. A white paper will be published on investigating money-laundering and corruption. ‘Ombudsman’ will be appointed as given under the constitution.
14. Rule of law will be established at all levels. Human rights will be implemented as per Universal Human Rights Charter.
15. An ‘Economic Reforms Commission’ consisting of experts will be constituted.
16. Every individual will enjoy the right to perform respective religious activities based on the principle of ‘Religion belongs to respective individual; state belongs to all.’
17. Fair wages of the working class will be ensured in keeping with inflation.
18. All black laws including the Indemnity Act in the power, energy and mineral sector will be repealed.
19. The national interest of Bangladesh will be given the highest priority in case of foreign relations. No terrorist activity shall be tolerated on the soil of Bangladesh. Stern measures shall be taken against terrorism, extremism and militancy. The use of terrorism as a political tool to suppress the dissents and opposition political parties by misusing the anti-terrorist law will be stopped. This will facilitate identify the real terrorists and ensure punishment under the process of law.
20. The Armed Forces shall be appropriately developed imbibed with the supreme spirit of patriotism for safeguarding the sovereignty of the country.
21. Local government institutions will be made more independent, strong and empowered for greater decentralization of power.
22. A list of the martyrs of the liberation war will be prepared under state initiative.
23. Modern and time-befitting youth development policies will be formulated in keeping with the vision, thoughts and aspirations of the youth. Unemployed educated youth will be given ‘Unemployment Allowance’ till he/she gets employed, or for one year, whichever occurs earlier. Increase in age-limit for entry into the government service will be considered in keeping with the international standard.
24. Specific programs will be adopted to ensure women-empowerment.
25. Need-based and knowledge-based education will be given priority.
26. Based on the principle of ‘health for all’, universal health care will be introduced in line with ‘NHS’ in the United Kingdom.
27. Fair price of agricultural produce will be ensured.
Bangladesh Nationalist Party-BNP
Date: 19 December, 2022
The ownership of the state that the people of Bangladesh established with the objective of democracy, equality, human dignity, and social justice, through a war of liberation for a sea of blood is no more in their hands. The current authoritarian government has totally shattered the structure of the state of Bangladesh. The state has to be repaired and rebuilt. With the aim of returning the ownership of the country back to its people, a ‘Public- welfare government of national consensus’ will be established with all the political parties participating in the ongoing mass movement, after winning a free, fair, credible and participatory election.
The ‘National Government’ will undertake the following transformative reform measures.
The Constitution Reforms Commission, the Administrative Reforms Commission, the Judicial Commission, the Media Commission, and the Economic Reforms Commission will submit their respective reports within a definite timeframe so that relevant recommendations could be fast implemented.
Unemployed educated youth will be given ‘Unemployment Allowance’ till he/she gets employed, or for one year, whichever occurs earlier. Visible steps will be taken to achieve demographic dividend by enhancing the skill of the youth.
Multiple pragmatic programs will be taken to deal with unemployment problem. Necessary investment shall be made to develop human resources with utmost importance on health, education and nutrition.
Increase in age-limit for entry into the government service will be considered in keeping with the international standard.
This ‘Outline of the Structural Reforms of the State’ has been prepared in line with the ‘19- Points’ of Late President Ziaur Rahman and BNP’s ‘Vision- 2030’ declared by ‘deshnetri’ Begum Khaleda Zia.
———————————
Dr. Khandaker Mosharraf Hossain
Member, National Standing Committee
————————————
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
২৫ জানুয়ারি বাকশাল কায়েমের দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করুন।
গণতন্ত্রের মুখোশধারী একদলীয় বাকশালী শাসন মানি না।
ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ চাই।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন চাই।
জনগণের গণতন্ত্র চাই।
সচেতন দেশবাসী তথা বিশ্ববাসী জানে আপনাদের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক জীবন আজ ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের লুটতন্ত্রের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পতিত হয়েছে। একটি ক্ষুদ্র লুটেরা গোষ্ঠির হাতে আজ দেশের সিংহভাগ সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। আপনাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে বিগত নির্বাচনসমূহের সাজানো নাটক আর রাষ্ট্রীয় ডাকাতির মাধ্যমে।
বিনাভোটের পার্লামেন্ট, ভোটবিহীন সরকারের পক্ষে একের পর এক গণবিরোধী আইন তৈরী করছে। প্রধান বিচারপতিকে অপমান করে দেশান্তরিত হতে বাধ্য করে প্রমাণ করেছে বিচার বিভাগের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ। সকল ধরনের গণমাধ্যম একচেটিয়া ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেলফ সেন্সরশিপ কায়েমে বাধ্য করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর মাধ্যমে নাগরিকদের ডিজিটাল স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্র ক্ষমতার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে পরিণত করা হয়েছে ফ্যাসিবাদের নির্মম কার্যকর হাতিয়ারে। গোটা সমাজকে আজ বিভক্ত করা হয়েছে হিংসার ভিত্তিতে।
আজকের এই পরিস্থিতি — ১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন আওয়ামীলীগ জাতীয় সংসদে মাত্র ১১ মিনিটে স্বৈরাচারীভাবে ৪র্থ সংশোধনী জারি করে সংবিধানের মৌলিক চরিত্র বিকৃত করে যে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল, তারই আধুনিক প্রতিফলন।
ঐ ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল পদ্ধতি কায়েম করে স্বাধীনতার চেতনার মূলমন্ত্রসমূহকে গলাটিপে হত্যা করা হয়ে ছিল।
সব রাজনৈতিক দল বাতিল করে কেবল একটি মাত্র দল ‘বাকশাল’ গঠন করা হয়েছিল। জাতীয় সংসদ জনপ্রতিনিধি তথা সকল ক্ষমতা ও স্বাধীনতা সমর্পণ করা হয়েছিল রাষ্ট্র প্রধান ও বাকশাল প্রধানের হাতে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে সব পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছিল কেবল ৪টি সরকারি পত্রিকা বাদে।
মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের শেষ রক্ষক বিচার বিভাগের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল সেই ক্ষমতা। বিচারক নিয়োগ ও পদচ্যুত করাসহ তাকে নিয়ন্ত্রণের সকল ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্র প্রধান ও বাকশাল প্রধানের হাতে।
রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সকল ক্ষমতা কেবলই দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্র প্রধান ও বাকশাল প্রধানের হাতে। যিনি ছিলেন সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে।
এমনকি নবগঠিত বাকশালের গঠনতন্ত্রও এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছিল যে সেই দল হয়েছিল কেবলই একজন ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা পুরণের হাতিয়ারে।
এভাবেই দল, রাষ্ট্র ও সমাজকে এক ব্যক্তির হাতে সমর্পন করে রক্তার্জিত স্বাধীন দেশকে পরিণত করা হয়েছিল এক রাজার রাজ্যে। ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েছিল প্রবাসী সরকার প্রধান তাজউদ্দিন আহমেদ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর মত মানুষেরা। ক্ষমতার পাদপীঠে চলে এসেছিল তারই বিশ্বস্ত খন্দকার মুস্তাক আহমেদ। তিন চার জন বাদে মুজিব মন্ত্রিসভার সবাইই শপথ নিয়েছিল মুজিব হত্যাকারীদের মন্ত্রিসভায়।
আজ এ কথা ইতিহাস প্রমাণ করে যে গণতন্ত্রের পথ পরিহার করার পরিণাম কত নিষ্ঠুর হতে পারে।
সেদিন ঐ রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের পরপর একমাত্র সামরিক বাহিনীর উপপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান সাংবিধানিক পথে হাটতে চাইলেও সামরিক বাহিনীর তৎকালীন প্রধান জেনারেল শফিউল্লাহর আত্মসমর্পনের কারণে সেদিন তা সম্ভব হয়নি।
খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান ও তাহেরের বিদ্রোহের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতা বিপ্লব ও সংহতির মধ্য দিয়ে জেনেরেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে ফিরে এলে নেমে এসেছিল স্বস্তি, ফিরে এসেছিল আস্থা ও শান্তি। পর্যায়ক্রমে জনগণ ফিরে পেয়েছিল ভোটাধিকার, পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা গণতন্ত্র।
১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকায় পতন হয় স্বৈরচারী এরশাদ সরকারের। দলনিরপেক্ষ সরকরের অধীনে ১৯৯১ এ দেশনেত্রী বেগম খালেদ জিয়া নির্বাচিত হন প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ সর্বসম্মতভাবে কায়েম করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা। যা নির্বাসিত হয়েছিল বাকশালের মাধ্যমে। ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে দলনিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজিত হয় সংবিধানে।
কিন্তু ২০০৯ এ বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য শুরু করে নানা ফন্দিফিকির। সে লক্ষে তারা বাতিল করে দলনিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। সংবিধানের তিন চতুর্থাংশকে পরিণত করে দলীয় বয়ানে এবং সংশোধনের অযোগ্য। রেফারেন্ডামের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করার জনগণের ক্ষমতাকে করা হয় বাতিল। জনগণের মালিকানা চর্চা ও সংরক্ষনের দলিলের বদলে সংবিধানকে পরিণত করা হয়েছে দলীয় ক্ষমতা রক্ষার দলিলে। প্রকারন্তরে যা বাকশাল ব্যবস্থার চেয়েও ভয়াবহ। অনির্বাচিত এই সরকার এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সকল ধরনের ভিন্ন মতকে দমন করে চলছে নিষ্ঠুরভাবে। শত শত নেতা কর্মীদের গুম, খুন করছে ও নির্যাতন করে চলছে লাখো নেতা কর্মীদের। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান, বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীর নামে চলছে মিথ্যা মামলা। রাষ্ট্রীয় সকল বাহিনীক পরিণত করা হয়েছে দলীয় ক্ষমতা ও স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারে।
এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রানের জন্য আজ এই সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি দলনিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া জনগণের আর কোন বিকল্প নেই। তাই ১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার এই দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে দেশব্যাপী পালন করে চলমান ফ্যাসিবাদের পতনকে তরান্বিত করার আহ্বান জানাই দেশবাসীকে। ইতিহাস বলে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বিজয় অনিবার্য।
এবারও সে বিজয় অনিবার্য ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান
———
বাংলাদেশের জনগণ যখন দেশের গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারে আন্দোলন করছে রাজপথে, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিচ্ছে নাগরিকের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার চিৎকারে। সংবাদপত্র ও সুশীল সমাজের মুখ বন্ধ করা হয়েছে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ নামক কালা আইনের মাধ্যমে। দেশের অর্থনীতির মুলশক্তি ‘বৈদাশিক মুদ্রার রিজার্ভ’ নেমে গেছে তলানিতে।
দৈনিক সমকালে প্রকাশিত সংবাদে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মান অনুযায়ী বৃহস্পতিবার নাগাদ বাংলাদেশের রিজার্ভ দাড়িয়েছে ২৪ বিলিয়ন ডলারে। দেশের সুর্য সন্তান প্রবাসীদের রক্ত ঘামে অর্জিত ডলার দিয়ে যখন দেশের রিজার্ভের স্বাস্থ্য ভালো রাখছে, তার বিপরীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে হাজার কোটি টাকা বেনামী ঋণ নিয়ে বিদেশে ডলার পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা ও তাদের তোষামদ বাহিনী।
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি’ বলছে, বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০, ৫ বছরে পাচারকারীরা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।যার মধ্যে ২০১৫ সালে দেশ থেকে পাচার হয়ে যায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা।
পাচারকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় পাচারকারী দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। অথচ, সবচেয়ে অবাক লাগে যখন বাংলাদেশে ব্যাংকের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বলা হয়, কতটাকা পাচার হয়েছে সেটার তথ্য তাদের কাছে নেই !
২০২২ সালের ৩১ অক্টোবরের দৈনিক যুগান্তরের খবরে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে বিভিন্ন পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার হয়েছে। তবে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, সে তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ-এর প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস।
নাকি সবটাই আয়নাবাজি! এবার মুল প্রসঙ্গে আসি, সপ্তাহের শেষদিন মানুষ যখন ছুটিতে, তখন গণমাধ্যমে একটি খবর আলোড়ন তোলে সাধারণ মানুষের মনে। দেশের প্রায় সবগুলো গণমাধ্যমের উপরেরদিকে প্রচার পাওয়া খবরে বলা হয়েছে, দুদকের এক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের নাগাল না পাওয়ায় তাদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তাঁর স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সংবাদ পর্যালোচনায় এই মত দিচ্ছি না। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মনে প্রশ্ন জাগে যে দেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যখন লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তখন দেশের গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের অগ্রসৈনিক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও রাজনৈতিক রোষানলে তাকে দেশান্তর হতে হয়েছে। দেশি-বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে।
খবরের সবচেয়ে অবাক করা অংশটি হলো রাজনৈতিক রোষানলের শিকার তারেক রহমানের সাথে তার স্ত্রী বিশ্বের ৫৬ টি দেশের কার্ডিওলজিস্টদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করা চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে রায় প্রদান। দেশে বিদেশে কার্ডিয়াক চিকিৎসায় খ্যাতি অর্জন করা ডা. জুবাইদা রহমানের রাজনীতিতে অংশ গ্রহন নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র গণতন্ত্রের যোদ্ধা তারেক রহমানের ছায়াসঙ্গী হিসেবে অনুপ্রেরণাময়ী স্ত্রী হিসেবে পাশে থাকাই তার অপরাধ? এমন প্রশ্ন আসতেই পারে সাধারণ মানুষের মনে।
দেশের সকল আইন শুধু বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর প্রয়োগের জন্য? বিরোধীদল মানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। যে দলটি গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।
দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করাই বিএনপি চেয়ারপার্সন জনগণের ভোটে নির্বাচিত তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, তথা জিয়া পরিবারের অপরাধ! দেশের মানুষের জন্য অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনীতির স্বপ্ন দেখানোই তারেক রহমানের অপরাধ! একজন শিক্ষক হিসেবে অনেক শীক্ষার্থীর মনের কথাই জানতে পেরেছি। নব্বই দশকে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের কেউই এখন পর্যন্ত কোন জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।
দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে ভোট নামক শব্দকে উৎপাটন করা হয়েছে সমূলে। এমন দেশের জন্য সংগ্রামী বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ যুদ্ধ করেননি। স্বাধীনতার চেতনা নামে যে স্বৈরাচারি বিষবাষ্প ছড়ানো হয়েছে সমাজে, তা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে পারেন একজনই, তিনি তারেক রহমান।
এমন ন্যাক্কারজনক রায়ের প্রতিবাদ আমাদের জানানেই। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সংবিধানের দোহাই দিয়ে যে স্বৈরাচারীতন্ত্র কায়েম করা হচ্ছে, জনগণ এর জবাব দেবে রাজপথে, নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে। অপেক্ষা শুধু সময়ের।
লেখক — মহাসচিব, ইউনিভার্সি টিটিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব।