Search

Tuesday, January 24, 2017

রেলমন্ত্রী যখন ‘স্লিপারে বাঁশ ব্যবহার শতভাগ যৌক্তিক’ বলেন!


মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে



চরম ঝুঁকির মাঝে বেশ কিছু দিন ধরে লালমনিরহাট ও মৌলভীবাজারে রেললাইনের ব্রিজগুলোর স্লিপারে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এতে রেলওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা মুখ না খুললেও গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকারুটে মহানগর প্রভাতী ট্রেনের নতুন কোচ উদ্বোধনকালে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক স্লিপারে বাঁশ ব্যবহার শতভাগ যৌক্তিকবলেছেন। এ ছাড়াও রেলের ক্ষতিগ্রস্ত স্লিপার পুনর্নির্মাণ না করে বাঁশ ব্যবহারকে যৌক্তিক হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। তার ভাষায়, ‘যদিও স্টিলের পাত দেওয়ার কথা কিন্তু পাত চুরি হয়ে যায় বলে সেজন্যে আমরা বাঁশের ফালি দিয়ে কাঠামোটা আটকে রাখি। এই অংশ লাইনের ভার বহন করে না। এমনকী এটা স্ট্রাকচারের অংশও না। এটা কোনোভাবেই অযৌক্তিক নয়। পাশাপাশি রেলমন্ত্রী বলেন, বাঁশের দ্বারা কখনো ট্রেন চলে না। লাইনে বাঁশ কেবল সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। জনসাধারণের অবগতির জন্য বিষয়টি খুব স্পষ্ট করে পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরছি।
 
ফলে মন্ত্রীর কথায় রেলওয়ের যাত্রীরা কিংবা জনসাধারণ কি আশ্বস্ত হতে পারেন যে, বিষয়টি শতভাগ আধুনিক, নিরাপদ দক্ষ ও বিজ্ঞানসম্মত? এমনকী মন্ত্রী ও অতিরিক্ত মহাপরিচালকের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন জাগে,কাঠামো স্ট্রাকচারবলতে কী বুঝায় এবং তাদের মাঝে পার্থক্য কী? দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের বক্তব্যের সমর্থনে কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশলগত ব্যাখ্যা নেই। বরং চুরির ভয়ে লোহার পাতের পরিবর্তে বাঁশের ফালি ব্যবহারের নজির একমাত্র বাংলাদেশই পৃথিবীতে স্থাপন করেছে। এছাড়া সেই বাঁশ ব্যবহারে প্রকৌশলগত ও পরীক্ষিত স্থায়ীত্ব কতখানি সেটা যখন রেলমন্ত্রী ও রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সাংবাদিকদের কাছে বলেননি, তখন তাতে আশ্বস্ত থাকা কিংবা জনসাধারণের  জ্ঞাতার্থে তা পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরাটাও নিরর্থক। তাই অসহায় যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের কথা ভেবে সুদূর প্রবাসে বসেও উৎকণ্ঠিত হতে হয়!

অথচ বাংলাদেশ সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিটিজেন চার্টারবা সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতির ভিশন ও মিশনে যথাক্রমে বলা হয়েছে,একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী, আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থাএবং রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশব্যাপী নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং দক্ষ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা

উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, রেল ফাসেনিং সিস্টেমহচ্ছে যে রেলপথ সুদৃঢ় কাঠামো বা ভিত্তির উপর আবদ্ধ থাকে। যেখানে স্লিপার বা টাইকে আবদ্ধ রাখতে প্রয়োজন, স্ক্রিউ বা বল্ট, ইলাসটোমেরিক প্যাড, টেনশন ওয়াশার, রেল ক্লাম্প, টেনশনিং বল্ট ও বেসপ্লেট। আর এ সকল যন্ত্রাংশই পুরো কাঠামোকে স্থিতিস্থাপক রুজ্জুতে আবদ্ধ রাখে। অর্থাৎ রেলপথের দুই ট্র্যাক গেজকে সুনির্দিষ্ট ও সঠিক দূরত্বে আবদ্ধ রাখতে এই রুজ্জু ব্যবস্থা ট্র্যাক ব্যালাস্টসাবগ্রেডচাপকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে ছড়িয়ে দেয়। কেননা স্লিপারকে ইমপ্যাক্টবা চাপ এবং ভাইব্রেশনবা স্পন্দন বা পরিস্পন্দন সইতে হয়। এটি কাঠামোগত স্থায়ীত্ব বা লংগিচুডাইনাল স্ট্যাবিলিটিসুনিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে সাধারণত কাঠের ব্যবহার রয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপ ও এশিয়ায় প্রি-স্ট্রেশড কংক্রিট, যুক্তরাজ্যে স্টিলের টাই এবং প্লাস্টিক কমপোসিট টাই ব্যবহৃত হয়।

অতএব, রেলপথের স্লিপারে রেলমন্ত্রী ও রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালকেরবাঁশের ফালিব্যবহার যে শতভাগ যৌক্তিকনয়, তা দিবালোকের মতো পরিস্কার ও সুষ্পষ্ট। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত বক্তব্য জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরাটা কতটা যৌক্তিক এবং রেল মন্ত্রণালয়ের সিটিজেন চার্টারঅনুযায়ী কতটা নিরাপদ, আধুনিক ও দক্ষতাসম্পন্ন, কেবল তারাই বলতে পারেন!

No comments:

Post a Comment