এম. সিরাজুল ইসলাম / বণিক বার্তা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ভারত সফর করেছেন। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দারুণ আতিথেয়তা দেখিয়েছেন। মোদি সরকার এ সফরের মর্যাদাকে একটি সরকারি সফর থেকে একটি রাষ্ট্রীয় সফরে উন্নীত করেছিল, যা ছিল পরিষ্কারভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রটোকলের ব্যতিক্রম, কেননা রাষ্ট্রীয় সফরে যান রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান নন।
২০১০ সালেও কিন্তু একই ধরনের প্রতিষ্ঠিত প্রটোকলের ব্যতিক্রম ঘটানো হয়েছিল। ওই সফরকেও একটি রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। এবার নয়াদিল্লি প্রতিষ্ঠিত প্রটোকলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজেই অভ্যর্থনা জানান। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন না।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এ দুই সফরের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য রয়েছে। সর্বশেষ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে ভারত সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার ক্ষমতায় আসার তিন বছরের বেশি সময় পর দ্বিতীয়বারের মতো ভারত সফরের আমন্ত্রণ পান। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ মেয়াদে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে উভয় পক্ষের আন্তরিকতার প্রতিফলন হিসেবে প্রায়ই দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার— যার সঙ্গে বিজেপির ক্ষমতায় আসার মিল রয়েছে— পর থেকে ওই ধরনের ঘন ঘন উচ্চপর্যায়ের সফর অনেকটাই কমে যায়। প্রকৃতপক্ষে নয়াদিল্লির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল গত বছরের ডিসেম্বরে, যখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর প্রতিরক্ষাসেবার তিনজন উপদেষ্টাসহ ঢাকা সফরে আসেন। ওই সফর ফাঁস করে দেয় যে, হঠাত্ করেই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করতে চাইছে।
প্রতিরক্ষা বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ভালো নয়, যদিও খুনি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে চূড়ান্ত ধাক্কা দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। চূড়ান্ত ধাক্কায়— তৃতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১— ভারত কয়েক হাজার সৈন্য হারিয়েছিল। তথাপি যখন ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসেন, তখনো ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করছিল। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ইন্দিরা গান্ধীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে নিতে বলেন।
ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ওই কথোপকথন ও ভালোবাসার সোনার বাংলাকে পূর্বের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দ্ব্যর্থহীনভাবে গুরুত্বারোপ করছে যে, ভারতসহ যেকোনো দেশের সঙ্গে সামরিক জোট তৈরি করার কোনো সুযোগ বাংলাদেশের নেই। অধিকন্তু হয়তো উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সামনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশকে বাংলাদেশ কখনো কোনো বহিরাগত আগ্রাসনের সম্মুখীন হয়নি।
এজন্য এটা স্বাভাবিক ছিল যে, যখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডিসেম্বরের সফরে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তাব দেন, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে উত্সাহী ছিলেন না। গুজব ও অনানুষ্ঠানিক তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর, যারা প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে মতামত জানাচ্ছিল, তাদের সঙ্গে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি দলের উদ্ধত মনোভাব নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যকে আরো জটিল করে তুলেছিল।
এটা স্বাভাবিক যে, ল্যান্ড ট্রানজিট বাংলাদেশ মেনে নেয়ার পর ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইবে। কৌশলগত বিষয় নিয়ে যারই সাধারণ জ্ঞান রয়েছে, তারাই বুঝতে পারবেন, বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামো তৈরির জন্য ভারত ‘সফট লোন’ হিসেবে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিতে চেয়েছিল, তা আদতে ছিল ওইসব সড়ক ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ব্যবহারযোগ্য করে গড়ে তোলা, যাতে এ সড়ক ব্যবহার করে কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ সেভেন সিস্টার্সে তারা যেতে পারে এবং একসময় ঠিকই ভারত ল্যান্ড ট্রানজিটকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য এ ধরনের চুক্তি করতে চাপ দেবে।
বাংলাদেশ নিজে ভারতের জন্য কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে যে ধরনের নিরাপত্তা সমস্যা ছিল, তা ভারতীয় ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যৌথভাবে সামলে নিয়েছে। এটা ঠিক যে, ভারতীয় কৌশলগত বিবেচনায় চীনের কারণে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান সবসময় ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুপার পাওয়ার হওয়ার দৌড়ে শক্তিশালীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। হয়তো শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে এক নম্বর আসন দখল করবে দেশটি।
এবং চীনের সঙ্গে ভারতের বড় ধরনের দ্বিপক্ষীয় সমস্যা রয়েছে। চীন ভারতীয় অঞ্চলের একটি বড় অংশ দাবি করে এবং এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে ১৯৫২ সালে দেশটির যুদ্ধও হয়েছে। সেভেন সিস্টার্সের একটি রাজ্য অরুণাচল। চীনের আঞ্চলিক দাবির একটি বড় অংশ রয়েছে এ রাজ্যে। ওই অংশে অভিযোগ রয়েছে, চীন সেভেন সিস্টার্সে বিছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে উত্সাহিত করছে এবং ভারত ভয় পাচ্ছে যে, এ ধরনের সম্পৃক্ততা বন্ধ হয়নি। এজন্য বাংলাদেশ ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নয়াদিল্লি তত দিন পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না, যত দিন না তারা নিশ্চিত হবে যে, প্রয়োজনের সময় চীনের হুমকি মোকাবেলায় মূল ভূখণ্ড থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তাদের সেনাবাহিনী চলাচল করতে পারবে।
প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তারা যত দ্রুত পারে বাংলাদেশের সঙ্গে এটি করতে চাইছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছা, যে কারণে তিনি ভারতকে বড় ধরনের ছাড় দিয়েছেন, এটিকে ভারত তার দুর্বলতা ভেবে ভুল করেছে এবং মনে করেছে, তারা এ চুক্তি করার জন্য তাকে রাজি করাতে পারবে। তিনি সেটা করেননি এবং কয়েকবার ওই সফর বিলম্ব করেন, যাতে ওই চুক্তির বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী আরো সচেতন ছিলেন যে, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ এ চুক্তির বিরোধিতা করবে।
এজন্য যখন নয়াদিল্লি বুঝতে পারল যে, প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে পারছে না, তখন তারা আর তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো প্রচেষ্টা করেনি। প্রকৃতপক্ষে এ চুক্তির জন্য নয়াদিল্লির সবচেয়ে ভালো চেষ্টা ছিল নয়াদিল্লি সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও মমতা ব্যানার্জির মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি চেয়ে চেয়ে দেখলেন, মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তি হওয়ার পথে নতুন সমস্যা দাঁড় করিয়ে দিলেন। তিনি তিস্তার ওপর নতুন গবেষণার দাবি জানিয়েছেন। তিনি জানান, তিস্তা তার জনগণের হূদয়স্বরূপ এবং তিনি এটিকে ছিন্নভিন্ন হতে দেবেন না। এর চেয়ে বরং তিনি অন্য চারটি নদ-নদীর পানি দিতে চেয়েছেন, যেগুলোর কোনোটাই দুই দেশের মধ্যকার আলোচনায় কখনই আসেনি।
একটি দরিদ্র রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং ভারত একটি ‘আপাতদৃষ্টিতে ফেডারেশন’, যেখানে কেন্দ্র ‘ইউনিটারি স্টেটের’ মতো প্রায় একই রকম শক্তিশালী। নয়াদিল্লির কোষাগারের ক্ষমতা রয়েছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যেখানে রাজ্য কোনো ধরনের বাধা তৈরি করতে পারে না, যদি না কেন্দ্র চায়। বাংলাদেশের দাবি প্রত্যাখ্যানের যুক্তি হিসেবে নয়াদিল্লি বলছে, নদীর পানি ভাগ রাজ্যের বিষয়। কিন্তু অবশ্যই রাজ্যের ক্ষমতা আন্তর্জাতিক নদীর ক্ষেত্রে খাটে না বা খাটতে পারে না।
যদি নয়াদিল্লি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছার বিন্দুমাত্র প্রদর্শন করত, তবে তিস্তা চুক্তি অনেক আগেই হয়ে যেত। কংগ্রেসের শাসনামলে স্থানীয় রাজনীতির কারণে সংবিধানের খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে তিস্তা চুক্তি আটকে রেখেছিল নয়াদিল্লি। এ সময় প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই না করায় বাংলাদেশের ওপর নাখোশ ছিল নয়াদিল্লি। এজন্য তারা মমতা ব্যানার্জির অদ্ভুত দাবিতে সায় দিয়েছিল। নয়াদিল্লির এমন মনোভাব ছিল দুর্ভাগ্যজনক এবং যদি তারা মনে করে, ছোট প্রতিবেশীর সঙ্গে তারা যা খুশি তা-ই করতে পারবে, তবে তা সুবুদ্ধির পরিচায়ক হবে না।
আন্তর্জাতিক আইন ও অন্যান্য কনভেনশনে নিম্ন উপকূলবর্তী বা অববাহিকার দেশের জন্য অনুমোদন রয়েছে, সেই মোতাবেক বাংলাদেশ তিস্তা ও অন্যান্য ‘কমন’ নদ-নদীর ন্যায্য ভাগ দাবি করেছে। যদি জাতি হিসেবে মৃত্যু ঘটাতে চায়, তবেই বাংলাদেশ নিজ অধিকার থেকে সরে আসতে পারে। সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজন, দেশটির অর্থনৈতিক উন্নতিতে যার অবদান অপরিহার্য। এজন্য বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়টি যদি ভারত বিন্দুমাত্র আমলে নেয়, তাতে দেশটির উচিত হবে না চুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করা। এ চুক্তি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ও দেশপ্রেমিক প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।
বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে রাজি না হলে ভারতও তিস্তা চুক্তি আরেকবার এড়িয়ে যাবে, এমনটা যে হবে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরে যাওয়ার আগেই বোঝা গিয়েছিল। এটি এ সফরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেয়। এজন্যই প্রটোকলের প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়েছে ভারতীয়রা। তারা দেখাতে চেয়েছে যে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ঠিকঠাক রয়েছে।
কিন্তু শেখ হাসিনা এটা অনুমোদন করেননি। প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লির কাছে পরিষ্কার করেছেন যে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক টেকসই করার জন্য পানি প্রধান চাবিকাঠি এবং ঢাকায় প্রস্তাবিত উদযাপন বাতিল ছিল এ বার্তাকে ভারতের কাছে আরো পরিষ্কার ও জোরালোভাবে পাঠানো। এর সঙ্গে আরো একটি বার্তা দেয়া হয়েছে তা হলো, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ইচ্ছার সমকক্ষতা অর্জন করা, যা ভারতের ধারাবাহিক দুই প্রধানমন্ত্রী দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশ বড় ধরনের ছাড় দেয়ার পরও ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশের জরুরি চাহিদা, বিশেষ করে পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার, ভারত তা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
শেখ হাসিনা এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বলটি ভারতের কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক ঝুঁকি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ইচ্ছার মতো ভারত একই ধরনের রাজনৈতিক ইচ্ছা দেখায় কিনা এবং বাংলাদেশকে তার পানির অধিকার দেয় কিনা। ভারতের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি উঠিয়ে নিতে হবে, কারণ এ সফর জানাচ্ছে যে, এটি একটি ‘জিরো সাম’ প্রস্তাব, যেটা ভারতের স্বার্থ রক্ষা করতে বাংলাদেশকে নিজের স্বার্থের ক্ষতি করে সই করতে হবে।
যদি এর পর ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে, তবে এটা বলা অনুচিত হবে না যে, এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বড় ধরনের আঘাত দেবে। এ সফর আরো বলছে, ভারতের শুধু রাজনৈতিক ইচ্ছারই অনুপস্থিতি নেই, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবেও দেশটির দূরদৃষ্টি ও মানসের অভাব রয়েছে। দেশটি এও দেখতে ব্যর্থ হয়েছে যে, বিশ্বাসের দিক থেকে বাংলাদেশে ভারতের গ্রহণযোগ্যতায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
ভারতের এটা বোঝা উচিত যে, কয়েক বিলিয়ন ডলারের ‘সফট লোন’ দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ চায় না বা তাদের প্রয়োজন নেই। একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে তারা যথাযোগ্য সম্মান চায়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে সামনে এগোতে হলে ভারতকে এটি এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তিস্তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে অদ্ভুত প্রস্তাব দিতে অনুমোদন দেয়া এবং প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তাব দিয়ে ভারত দেখিয়ে দিয়েছে যে, যত দিন পর্যন্ত তাদের স্বার্থ পূরণ হচ্ছে, তত দিন তারা বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তা করে না।
- লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
No comments:
Post a Comment