Search

Friday, January 22, 2021

স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাম 'জিয়াউর রহমান'



শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। ১৯ জানুয়ারি এই ক্ষণজন্মা মানুষটির ৮৫তম জন্মদিন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, আধুনিক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ সংগঠন সার্কের প্রতিষ্ঠা।

স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি দেশের সার্বিক উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার কার্যকর সময়ের মধ্যেই দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কাজের ক্ষেত্রে মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তন এনেছেন তিনি।

দেশ গড়ার ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। পায়ে হেঁটে নিজ চোখে তিনি মানুষের সমস্যা দেখেছেন, দেশের সমস্যা অনুধাবন করেছেন। দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নিয়েছেন। জনগণকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দেশবাসী তার ডাকে সাড়া দিয়েছিল। তিনি গড়ে তুলেছিলেন সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য।

উন্নয়ন কার্যক্রমে সঞ্চারিত হয়েছিল দুর্বার গতি। সন্ত্রাসের করাল ছায়া থেকে মুক্ত স্বদেশে প্রথমবারের মতো বইল শান্তির সুবাতাস। অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণ হলো স্থিতিশীলতায়। অবসান হলো রাজনৈতিক শূণ্যতার। তিনি প্রায় ১০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত উন্নয়নের রাজনীতির উল্লেখযোগ্য সাফল্য বয়ে আনে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সকল দলের অংশগ্রহণে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। ফিরিয়ে দেয়া হয় বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব শুরু হয়। সেচব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তায়র সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন করা হয়। গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লাখ মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দেয়া হয়। হাজার-হাজার মাইল রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা হয়। ২৭ হাজার ৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ করে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়। নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক মন্দা দূরিকরণ করা হয়।

কলকারখানায় শ্রমিকের কাজ তিন শিফট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশকে খাদ্য রফতানি পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে সম্পৃক্তকরণের উদ্যোগ নেয় হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে সকল মানুষের স্ব-স্ব ধর্ম পালনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন। হাইস্কুল, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রথম রঙিন টেলিভিশন সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামের জনগণকে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করণ এবং সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব সৃষ্টি করার জন্য গ্রাম সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন জিয়াউর রহমান।

তার সময়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আসন লাভ করে। তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি হয়। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ তিনি।

এছাড়াও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বেসরকারিখাত ও উদ্যোগকে উৎসাহিত করেন। জনশক্তি রপ্তানি, তৈরী পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্পসহ সকল অপ্রচলিত পণ্যোর রফতানির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে জিয়াউর রহমানের আমলে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় সংবিধানের প্রথমে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম (পরম দয়াময় ও করুনাময় আল্লাহর নামে) সংযোজিত হয়। আর্টিকেল ১২⁄২-এ ‘ইসলামি উম্মার সাথে ভ্রাতৃত্ববোধের আলোকে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, উন্নায়ন এবং শক্তিশালী করার নীতি’ সূচনা করা হয়।

একটি সামগ্রিক জাতীয় পরিচয় সূচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী সংখ্যালঘু সাঁওতাল, গাঁড়ো, মনীপুরী ও চাকমাদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি সংবিধান ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিচায়ক ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ শব্দটি স্থাপিত করেন।

সাংস্কৃতিক সমন্বয় ও অর্থনেতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শহীদ জিয়া ১৯৭৬ সালে একটি পার্বত্য উন্নয়ন কমিশন প্রতিষ্ঠা ও নিয়োগ করেন। সরকার এবং বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ সংঘটনের লক্ষ্যে তিনি একটি উপজাতীয় কনভেনশন আয়োজন করেন।

বাংলাদেশ পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়। সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে ৯০ হাজারে উন্নীত করা হয়। গ্রাম সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ দমন ও প্রতিরোধ কল্পে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিষ্ঠা। সারা বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক ও যুব শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশে রেডিমেড গার্মেন্টসের সূচনা এবং ব্যক টু ব্যক এলসি প্রথা প্রবর্তন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্রুত শিল্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্টকরণ ও উন্নয়ন। সৌদি আরব ও চায়নার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন-সম্প্রসারণ এবং যুগোপযোগী করণ। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ। সকল ইসলামী দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের সুনাম বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শীর্ষ সংগঠন সার্ক গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ সফর করে আঞ্চলিক ফোরাম গঠন করার প্রস্তাব করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলগুলোর ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় কাজ করা। ইতিবাচক সাড়া পেয়ে কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের কাছে চিঠি পাঠান বিশেষ দূতের মাধ্যমে। তারা সবাই মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন।  প্রথম চিঠি পাঠানো হয়েছে ১৯৮০ সালে ২৪ এপ্রিলে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কাছে চিঠি নিয়ে যান বাংলাদেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী জালালউদ্দিন আহমেদ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের কাছে কৃষিমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অবঃ) নুরুল ইসলাম শিশুকে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইউমের কাছে মন্ত্রী কেএম ওবায়দুর রহমানসহ সাতটি দেশে সাতজন প্রতিনিধি ছিলেন।

আজকের সমসাময়িক বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য আঞ্চলিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাধা হচ্ছে ‘মানসিকতা’। সম্পদে সমৃদ্ধি যতই হোক না কেন একাকী চেষ্টা করে কোনো দেশের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরো সাফল্য আর্জন সম্ভব হতে পারে না।

১৯৮০ সালে ২ মে আলোচনার মাধ্যমে বিস্তারিত প্রস্তাবনা আকারে পাঠান। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সার্ক গঠনে উদ্যোগের সাফল্য সার্ক প্রতিষ্ঠার পর ২০০৫ সালে ত্রয়োদশ সম্মেলনে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
জিয়াউর রহমানকে ‘প্রথম সার্ক এওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। প্রথম সার্ক এওয়ার্ড ঘোষণায় সার্ক চেয়ারম্যান বলেন, সার্কের ২০ বছর পূর্তিতে আমরা আপনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার (স্বামী মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। যার দূরদৃষ্টিতে এবং উদ্যোগের ফলে আমাদের এই এসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে। তাকে সার্কের প্রথম এওয়ার্ড ২০০৪ ঘোষণা করে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সংহতি অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের কথা পূর্ণব্যক্ত করলাম বলে বক্তব্য শেষ করেন ভুটানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়নপো স্যানগে নিধুপ।

সার্কের প্রথম এওয়ার্ড ২০০৫ সালে ঢাকা শীর্ষ সম্মেলনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরী দেশনায়ক তারেক রহমান (তখনকার সময়ে বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহা-সচিব) গ্রহণ করেন। তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার নেতৃত্বে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আর্দশে, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য পৌঁছাতে পারবো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনকে ধারণ করে।


—   শায়রুল কবির খান

লেখক সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী

No comments:

Post a Comment