— ড. মোর্শেদ হাসান খান ও ফারহান আরিফ
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে একটি ইংরেজি বাক্য বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ‘Take Back Bangladesh’ -এই তিন শব্দের ইংরেজি বাক্যটি বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি- এর নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। গত বছরের ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে লন্ডনের এক সমাবেশে বিএনপি’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এই বাক্যটি উচ্চারণের মাধ্যমে তার বক্তৃতা শেষ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার হাতকে শক্তিশালী করুন, যাতে আমি আপনাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। Take Back Bangladesh!’ জনাব তারেক রহমান তার এই বক্তব্য দিয়েছেন এমন একটি মূহুর্তে এসে, যখন বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় দলটির নির্বাহী প্রধানের এমন মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে এরকম উচ্চারণের তাৎপর্য অনেক। এরকম এক মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে ভোটডাকাতি ও নিশিরাতের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাভোগী তথাকথিত সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের বাগাড়ম্বরপূর্ণ গালগল্পের বিপরীতে জনাব তারেক রহমানের এই বক্তব্যের মর্মার্থ অনেক গভীর।
গত এক যুগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। এখন একজন রাজনীতিবিদ হচ্ছেন গণবিচ্ছিন্ন দূরের মানুষ; রাজনীতির মঞ্চ বা ময়দানে সাধারণের স্থান সংকুচিত। রাজনীতিকে সম্পন্ন মানুষের ক্ষমতাচর্চার এবং উচ্চাভিলাষীর সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জনের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। দেশীয় রাজনীতির এমন পঙ্কিলাবর্ত পরিস্থিতিতে চিন্তাশীল রাজনীতিবিদের তাই ভাবা দরকার, দেশ ও বিশ্বের পরিবর্তিত বাস্তবতায় তাদের ঘোষিত নীতির ব্যাখ্যা কী হবে; কীরূপ সংযোজন, বিয়োজন ও পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে ব্রতী হওয়া জরুরী। এসব বিষয়ের তাগিদ বুঝেই তাদের বক্তব্য-বিবৃতি তৈরি করা উচিৎ। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যটি এই বিবেচনায় সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি গণতান্ত্রিক ও শ্রেণীবৈষম্যহীন বাংলাদেশে গড়ার যে অঙ্গীকার বিবেচনায় তার বক্তব্যটি সাজিয়েছেন। গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতিবিদদের স্বীয় ভূমিকা থেকে সরে যাওয়ায় দেশজুড়ে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তারেক রহমানের বক্তব্যে তা নিরসনের জোরালো প্রতিশ্রুতি লক্ষ্য করা যায়।
কথা হচ্ছে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পঞ্চাশ বছর পরেও কেন এখনো বাংলাদেশকে ফিরে পাওয়ার কথা বলতে হচ্ছে! এর উত্তর খুঁজে পেতে হলে আমাদেরকে ঘুরে দেখতে হবে যে রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এই দেশটি পেয়েছি, সেই সময়কাল ও তার চেতনার দিকে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গড়ে উঠা দুই পাকিস্তানের মাঝে ফাটল দেখা দেয়। ভাষা ও জাতিগত প্রশ্নে দুই পাকিস্তানের মাঝে মতদ্বৈততা প্রকট হতে শুরু করে। রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন-উৎকর্ষে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবদান বেশি থাকলেও, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখানকার বিপুল জনগোষ্ঠী ছিল বঞ্চিত ও নিপীড়িত। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর শোসন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির মধ্যে ক্ষোভের দানা বাঁধতে শুরু করে। সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে সকল অন্যায়, অবিচারের জবাব দেয়। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জেদ থেকে যুদ্ধাবস্থার সূত্রপাত হলো। বাঙালী জাতির মধ্যে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যয়বিচার’ –এর চেতনা জাগ্রত হলো। আর এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই এদেশের মুক্তিকামী মানুষ পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক মরণপণ যুদ্ধে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালরাতে অভিভাবকহীন, দিশেহারা ও অনিশ্চিত গন্তব্যে পা বাড়ানো জাতির মাঝে ইথারে ভেসে আসা তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি করে; যে পথ ধরে টানা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ আর অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই স্বাধীনতা ও লাল-সবুজের পতাকা।
মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা তথা ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যয়বিচার’- এই শব্দবন্ধের গূঢ়ার্থ হচ্ছে, একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও শ্রেণীবৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এ চেতনা বাস্তবায়নের পথে এদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই বাঙালীর আত্মত্যাগের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হল। মুজিবীয় শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা সর্বোপরি গণতন্ত্রের বিকাশকে টুঁটি চেপে হত্যা করা হল। রাষ্ট্রযন্ত্রের এই অন্যায় নীতি জনগণের মাঝেও যেন দ্রুত প্রসার লাভ করলো। স্বাধীনতার পরপর কিছুসংখ্যক দেশপ্রেমিক বাদে অধিকাংশ মানুষ পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল। একদল ব্যক্তিগত স্বার্থের চিন্তায় তৎপর হল; অন্য দল বাস্তবতাকে ঝুঁকিতে ফেলে একদেশদর্শী বিপ্লবের স্বপ্নে ধ্বংসাত্মক ও আত্মঘাতী তৎপরতা চালাতে শুরু করলো। এদিকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সামনে তখন অনেক চ্যালেঞ্জ- শরণার্থী পুনর্বাসন, খাদ্যঘাটতি মোকাবিলা, ধ্বংসপ্রাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণ, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা আনয়ন, সংবিধান রচনা ও নির্বাচিত সরকার গঠন, শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগীকরণ, পাকিস্তানে আটক সকল বাঙালীর প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা ইত্যাদি। কিন্তু মুজিব সরকার এসবের গুরুত্ব দিল সামান্যই; বরং ক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে সংহত করার অপচেষ্টায় বিভোর হয়ে রইলো। ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপকহারে ভোট কারচুপি, এমনকি প্রার্থী হাইজ্যাকের মত ঘটনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের চেতনায় কালি মাখানো হল। এর ধারাবাহিকতায় বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে রাজনীতি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করা হল। মুজিবীয় শাসনামলের সেই ধারা এখনো বর্তমান। মুজিবের বাকশালতন্ত্রের অবসান ঘটলেও তার উত্তরসূরিদের নব্য বাকশালবাদ ঝেঁকে বসেছে জাতির ঘাড়ে। মাঝখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা এবং তদীয় পত্নী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনা বাস্তবায়নের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশবাদি রাজনীতির ধারক ও বাহক জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আধিপত্যবাদি শক্তি ও তাদের এদেশীয় দোসররা হাত গুটিয়ে বসে থাকে নি। জিয়াকে হত্যা এবং বেগম জিয়াকে কারারুদ্ধ করে তারা আপাতদৃষ্টিতে স্বস্তির ঢেকুর গিলছে।
স্বাধীনতার মাধ্যমে যে কল্যাণমুখী সমাজব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হবার অঙ্গীকার ছিল, তার প্রতি চরম অবিচার করা হচ্ছে। যে রাজনীতি গণতন্ত্রকে লালন করে, তার অবসান ঘটানো হয়েছে। এর ফলে সহজেই নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতীতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা করা হবে- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’ আর এ ঘোষণার প্রতিধ্বনিই ঘটেছে আমাদের সংবিধানের ১১ নং অনুচ্ছেদে। এতে অঙ্গীকার করা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ সুতরাং এটি সুস্পষ্ট যে আমাদের স্বাধীনতার অঙ্গীকার ছিল, বিদ্যমান শাসনপ্রক্রিয়ায় রূপান্তর ঘটিয়ে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এটি অনস্বীকার্য যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে গণতান্ত্রিক যাত্রাপথের সূচনা তার সত্যিকার সার্থকতা নির্ভর করবে দুই নির্বাচনের মাঝখানে নির্বাচিত সরকারের ক্রিয়াকলাপের উপর। সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, একটি নির্বাচিত সরকারের সুশাসন তথা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করার সূচক হচ্ছেঃ ক) মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, খ) রাজনৈতিক অধিকারসমূহ বলবৎ রাখা, গ) আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ, ঘ) সাম্য ও ন্যয়পরায়পণতার চর্চা, ঙ) স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা এবং চ) শাসনতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। আমাদের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে এর সবগুলোই নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে সুস্পষ্টভাবে বিধৃত আছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত এক যুগের আওয়ামী শাসনামলে জনগণের এসব অধিকারকে সুরক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা তো করা হয়ই নি; বরং উল্টো রথে চলেছে সরকার। জুলুমতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে যে জনগণের মালিকানা বারবার ফেরত আনা হয়েছে, সেই মালিকানাকে কুঠারাঘাতে ক্ষত করা হয়েছে। আধিপত্যবাদি শক্তির ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির পথরোধের ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও, দেশনেত্রীর কণ্ঠে একটি সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ইশতেহার ঘোষণাকালে তার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও।’ একটা রুদ্ধদ্বার পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের অভীপ্সায় তিনি তখন ঝুঁকি মাথায় নিয়েও কোন আপস না করে নির্বাচনে গিয়েছিলেন এবং সরকারকে সহযোগীতা করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু হাসিনা সরকারের চিন্তা ছিল ভিন্ন। আধিপত্যবাদ ও স্বৈরতন্ত্রের সাথে আপস করার ইতিহাস তাদের পুরনো। সে পথ ধরেই শেখ হাসিনা ও তার সরকার বাংলাদেশবাদী সকল সহযোগীতার হাতকে উপেক্ষা করে আপন মর্জি মত ক্ষমতা পরিচালনা করতে প্রয়াস নিলো। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে জনমতের বিরুদ্ধে গেল তার সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের প্রধান ও প্রাথমিক অনুষঙ্গ নির্বাচন ব্যবস্থার অপনোদন করা হল। ২০১৪ সালে একটি একপাক্ষিক নির্বাচন ও ২০১৮ সালে নৈশকালীন ভোটডাকাতির মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে জাতীয় উত্তরণের চেষ্টাকে প্রতিহত করা হল। একটি রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়নের প্রথম পদক্ষেপকেই যখন বিনাশ করে দেয়া হল, তখন রাষ্ট্র জুড়ে এক মাৎস্যন্যয় পরিস্থিতির সূত্রপাত ঘটলো। আদতে এর বিকল্পই বা কী হতে পারতো! বাংলায় ‘বিসমিল্লায় গলদ’ বলে একটি বহুল প্রচলিত বাগধারা রয়েছে। গত একযুগ ধরে বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় এই বিসমিল্লায় গলদ বা শুরুতেই ভুল ও অন্যায্যতার প্রভাব রাষ্ট্রের সর্বত্র সংক্রামক ব্যাধীর মত ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার বাহাদুর তার এই প্রাথমিক পাপ ঢাকার চেষ্টায় নজিরবিহীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও আইনের শাসনকে দলন করে চলেছে। অবশ্য তার এতদভিন্ন কোনো পথও অবশিষ্ট নেই। কারণ তার অজনপ্রিয়তাই তাকে এই পথ বেছে নিতে প্রলুব্ধ করেছে। আর এর ফলস্বরূপ জাতিকে দিতে হচ্ছে বিরাট খেসারত। তথাকথিত উন্নয়নের ঢাকঢোলের বিপরীত চিত্রটি খুবই হতাশার।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ। মাথাপিছু আয় ও জিডিপির পরিসংখ্যান দেখিয়ে জাতিকে রঙীন স্বপ্নে বিভোর করে রাখা হলেও, ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্যের দিকটিকে চেপে রাখা হয়। ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৫টি দেশের মধ্যে ১৩৩ তম। এই সূচকে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশিদের ২৪ দশমিক ১ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি মানুষ ‘বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের’ মধ্যে জীবনযাপন করছে। করোনাকালে যা বেড়েছে অন্তত ৩ শতাংশ। বাংলাদেশের গিনি সূচক শূন্য দশমিক ৪৭৮। কোনো দেশের এই স্কোর দশমিক ৫০ এর ঘর পেরোলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়। অতিগরিব মানুষের সংখ্যায় পঞ্চম হলেও ওয়েলথ এক্সের ‘A Decade of Wealth’ গবেষণায় গত এক দশকে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারে বিশ্বের সব বড় অর্থনীতির দেশকে পেছনে ফেলে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এই হার ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে ক্ষুধা বা হাঙ্গার ইনডেক্সে বাংলাদেশ বিশ্বে ১০৩ তম।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সামাজিক উত্তরণ সূচক- ২০২০ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৮২টি দেশের মধ্যে ৭৮ তম। অর্থাৎ সুষম উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো তলানির দিকে। জাতিসংঘের Sustainable Development Solutions Network -এর এসডিজি সূচক ও ড্যাশবোর্ডস রিপোর্ট- ২০১৮ অনুযায়ী, ১৫৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১১ তম ছিল। পরিবেশ-অবান্ধব এমডিজির ৮টি লক্ষ্য সফলভাবে পূরণ করতে সক্ষম হলেও প্রকাশিত এসডিজি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮ টিতেই লাল কার্ড ছিল।
দূর্নীতি এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারি আকার ধারণ করা এই দূর্নীতির মহোচ্ছবে রয়েছে সরাসরি রাষ্ট্রীয় মদদ। সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতাকর্মী, এমনকি আমলাদের নাম উঠে আসছে শীর্ষ দূর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের তালিকায়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘Corruption Perception Index’ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ২০১৪ সালে ছিল ২৫। ২০২০ সালে তা ২৬ –এ উন্নীত হয়েছে। তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে বাংলাদেশে দূর্নীতির ব্যাপকতা ও ভয়াবহতার যথার্থ প্রতিফলন নয় বলেই অনেকের ধারণা। উদাহরণস্বরূপ, গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সালের হিসাব বাদে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের পর থেকে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কোন তথ্য নেই। শেয়ারবাজার, ব্যাংকখাত সহ নানা আর্থিক দূর্নীতি ও অনিয়মের এই ব্যাপকতার পেছনে রয়েছে মূলতঃ জবাবদিহিতার অভাব। আর এই ক্ষেত্রটি প্রস্তুত হয়েছে সরকারের কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতায় টিকে থাকার মাধ্যমে। সাধারণ সংজ্ঞা অনুযায়ী, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে লাভবান হওয়া বা অন্যকে লাভবান করাই দূর্নীতি। তাই গত জাতীয় নির্বাচনে যারাই ভোটের অনিয়মের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তারাই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৭৩-৭৪ ধারা অনুযায়ী দূর্নীতিমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত। এর দণ্ড দুই থেকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকারের বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্রিডম হাউসের সূচকে ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯ -এ নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন ৩টি ক্যাটাগরিতে তথা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, সুশাসন ও জনগণের ওপর বিনিয়োগ সংক্রান্ত ১৯টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে, যা তারা লাল ও সবুজ রঙে প্রকাশ করে। সবুজ হলো গ্রহণযোগ্য আর লাল হলো অগ্রহণযোগ্য স্কোর। বাংলাদেশের গত ১৪ বছরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৭ অর্থবছরে যেখানে ৭টি স্কোর ছিল লাল রঙের; সেখানে ২০২১ অর্থবছরে লাল রঙের স্কোরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০০৬ সাল থেকে ১৬৭টি দেশের জন্য গণতন্ত্র সূচক প্রকাশ করে আসছে। নির্বাচনপদ্ধতী ও বহুত্ববাদ, নাগরিক স্বাধীনতা, সরকার পরিচালনা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি- এই পাঁচ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গণতন্ত্র সূচক তৈরি করা হয়, যার পরিধি ১ থেকে ১০। এই গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ২০০৬ সালে ছিল ৬ দশমিক ১১। ২০২০ সালে তা ৫ দশমিক ৯৯ –তে নেমে এসেছে। ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্সের মতে, বাংলাদেশে হাইব্রিড রেজিম বা সংকর গণতন্ত্র চালু রয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সকল আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে, কিন্তু এগুলো বহুলাংশে অকার্যকর। জার্মানির থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা বার্টেলসম্যান স্টিফটুং এর গভর্ন্যান্স সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ২০১০ সালে ছিল ১০ এর মধ্যে ৪ দশমিক ৯। ২০২০ সালে তা ৪ দশমিক ৫ –এ নেমে এসেছে। অন্যদিকে ডেমোক্রেসি সূচকে ২০১০ সালে ছিল ৬ দশমিক ১। ২০২০ সালে এর অবনমন ঘটেছে ৪ দশমিক ৪ –এ। সংস্থাটি বাংলাদেশকে ‘মডারেট অটোক্র্যাসি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএ ২৮টি দিক বিবেচনায় প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের সূচক তৈরি করে। এই সূচক অনুযায়ী ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এর পর থেকে বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পায়। ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সার্বিকভাবে আইনের শাসনের সূচকে ১২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২০ সালে ১১৫ তম। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের তথ্যানুযায়ী, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে ২০২১ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২ তম। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রয়োগ ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রণের কারণে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স যে ৩৭টি দেশকে প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটরস বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তাতে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের ‘রুল অব ল ইনডেক্স’ সূচককে আইনের শাসনের ওপর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৮ সালের প্রকাশিত সূচকে সামগ্রিক আইনের শাসনে ১১৩ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০২। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, ভোটাধিকার ইত্যাদির এমন দূরাবস্থার ফলেই সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত ‘ডেমোক্রেসি সামিট’ –এ বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। কেবল তাই নয়; মানবাধিকার হরণ ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সুস্পষ্ট অভিযোগে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা র্যাব এবং এর ঊর্ধ্বতন সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেইন ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট থেকে স্যাংশন আরোপ করা হয়েছে। এটি মূলতঃ আমাদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির দূরাবস্থার বিষয়টিকেই চিত্রায়িত করে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের এমন অপমানজনক অবস্থান যেন সেই শেখ মুজিবের বাকশাল আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
কেবল এখানেই শেষ নয়। মাফিয়াতন্ত্রের কবলে পড়ে বাংলাদেশ কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হবার পথে আন্তর্জাতিক অন্যান্য সকল সূচকে ক্রমশঃ তলানির দিকে যাচ্ছে। শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে রাষ্ট্রের এই বাড়বাড়ন্ত যৌবনকালে যখন সমৃদ্ধি ও প্রগতিশীলতার পথে দূর্বার গতিতে ছুটে চলার কথা; উৎপাদনমূখী রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ খুঁজে বের করার কথা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সার্বভৌম মর্যাদার ভিত্তিতে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার কথা, তখন রাষ্ট্রের আস্তিন থেকে বেরিয়ে আসছে ডাঃ মুরাদের মত কদর্য চেহারার প্রভাবশালী মাফিয়াশাবকেরা। এরাই যেন হয়ে উঠছে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি! গণতান্ত্রিক কাঠামোতে আমলাতন্ত্রের প্রবল দাপট এখন প্রতিরোধহীন। মূলতঃ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুণগত রাজনীতি চর্চার পথকে অবরুদ্ধ করে ফেলা এবং তরুণ সমাজকে রাজনৈতিকভাবে অসচেতন করার এক সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশকে মেধাহীন করে ফেলা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোতে আমলাতন্ত্রের এমন শক্তিশালী বিকাশের ফলে রাজনীতিতে সৃষ্টিশীলতা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ ধরণের বাস্তবতায় সমাজ-জীবনের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ নষ্ট হয়, তার স্বাভাবিক অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে যায়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিক্ষাঙ্গন, সাংস্কৃতিক জগৎ, নাগরিকের স্বাভাবিক বিনোদন চর্চার ক্ষেত্রে।
রুদ্ধশ্বাস এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বলিষ্ঠ কণ্ঠে ‘Take Back Bangladesh’ উচ্চারণ আমাদেরকে মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দীক্ষা দেয়। কর্তৃত্ববাদি শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট রাজনীতিকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস যোগায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনীতিতে যে সৃজনশীলতা ও গুণগত পরিবর্তনের আবশ্যকীয়তা রয়েছে, এই বক্তব্যে তার প্রতিশ্রুতি সুষ্পষ্ট। তত্ত্বগতভাবে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোতে বিদ্যমান সকল অপশাসনের মূলে যে ভোটাধিকার হরণের দায় রয়েছে তারেক রহমান সেদিকটাতেই ইঙ্গিত করেছেন। তিনি তাই প্রথমেই এর প্রতিকার চেয়েছেন। তার বক্তব্যের সুর ধরে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে একজন নাগরিকের প্রথম গণতান্ত্রিক অধিকার তথা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আরাধ্য একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও শ্রেণীবৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা। তবেই রাষ্ট্র ও সামাজিক কাঠামো থেকে দূরীভূত হবে সকল দূর্নীত আর অপশাসন; স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ ঘটবে সার্বভৌম মর্যাদাসম্পন্ন ন্যয়ভিত্তিক বাংলাদেশ।
লেখক—
- অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান- শিক্ষক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।
- ফারহান আরিফ- সাবেক শিক্ষার্থী, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সদস্য, আহবায়ক কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
No comments:
Post a Comment